মায়া

মায়া

রাত তিন টা হয়েছে আমি ঘুমিয়ে আছি। অতিথি আমাকে ডাক দিয়ে বলে ” ওগো শুনছ? তাড়াতাড়ি উঠো। কুরআন পড়ো। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ো। “এই কথা বলে অতিথি গরম পানি করতে গেল। আমি ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা সুন্নত। বউ আমার কাছে এসে বলে ” আমি গরম পানি করছি তুমি ওযু করে আসো। ”

আমি বউয়ের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিলাম। বউ মিটমিট হাসি দিয়ে বলে ” তুমি আমাকে দেখে শুধু হাসি দেও কেন? আমার কিন্তু খুব লজ্জা লাগে। “আমি অতিথির কপালে একটা চুমু দিলাম। অতিথি আমার মুখ টা একটু স্পর্শ করল। আমি বললাম ” কি? ” বলল ” তোমার দাঁড়ি অনেক সুন্দর। “আমি কিছু বললাম না। ওযু করতে চলে গেলাম। দু’জন কুরআন তেলাওয়াত করতে শুরু করলাম। আল্লাহ্ মধ্য রাতে প্রথম আসমানে আসেন। আমাদের মালিক আল্লাহ্ নাম স্মরণ করলে আল্লাহ্ অনেক খুশি হবেন। তিনি আমাদের সব। তিনি আমাদের পালনকর্তা। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ্ ছাড়া কেউ আমাদের আপন না।

বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্’র সৃষ্টি করা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আল্লাহ্ সব থেকে বেশি দয়ালু। আমাদের জন্য কত সুন্দর করে আকাশ টা সাজিয়ে রেখেছেন। আকাশের মধ্য দিয়ে একটা পাখি উড়ে যাচ্ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম। অতিথি এসে বলে ” এই নেও চা খাও। ” আমি চায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম ” তোমার হাতের চা টা না খেলে মনে হয় মুখ টা তিতা হয়ে আছে। ” মুখে চা দিতেই লবণ বেশি অনুভব করলাম। তবুও বললাম ” অনেক মজা হয়েছে। তোমার হাতে এমন কি আছে। ইশ! বাজারের চাও তোমার কাছে কিছু ওই না। হিহিহি। ”

চা টা তেমন ভালো হয় নি। তবুও বললাম অনেক ভালো হয়েছে। আমি অতিথির সাথে ঝগড়া করতে পারতাম। কারণ অনেক কষ্ট করে টাকা রুজি করি। বাসায় এসে যদি একটু ভালো খাবার না পাই তাইলে মন টা খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু আমি তো একজনের কাছে খুব অপরাধী হয়ে যাব। আমার আল্লাহ্ ‘র কাছে খুব অপরাধী হয়ে যাব। আল্লাহ্ যদি আমাকে বিচারের দিন প্রশ্ন করেন ” আমি তোকে ভালবেসে এই মেয়েকে তোর কাছে আমানত হিসাবে দিয়েছিলাম কিন্তু তুই তোর আমানত রাখতে পারস নি তুই মেয়েটার সাথে ঝগড়া করতি। তুই মেয়ে কে বকা দিতি। তুই একটু সহ্য করতে পারলি না।তুই আমাকে ভালোবেসে মেয়ে টা কে সহ্য করতে পারলি না। তাই আমি অতিথির সাথে ঝগড়া করি না।

যোহরের আযান পড়তেই নামাজে চলে গেলাম। নামাজ পড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। একজন ছেলে কে ধরে সবাই মারছে। আমি তাদের কাছে গেলাম। সকল কে বললাম ” ছেলে কে ধরে মারছেন কেন? ” তারা বলল ” ছেলে টা একটা মেয়ে কে ডিস্টার্ব করছে তাই ছেলে টা আমরা মারছি। ” আমি সাথে সাথে ছেলে কে একটা থাপ্পড় না দিয়ে বললাম ” তুমি সব থেকে কাকে ভালবাসো? “ছেলে টা এক মিনিট ভেবে বলল ” আমার মালিক আল্লাহ্ কে সব থেকে বেশি ভালবাসি। ” আমি ছেলে টা কে বললাম ” তাইলে তুমি আমাকে একটা কথা বলো ” তোমার মোবাইল টা যদি এখন আমি ভেঙ্গে দেই তুমি আমাকে কি করবে? ” ছেলে টা চোখ মোটা করে বলল ” আপনাকে মারব। ”

আমি ছেলেটার মাথা টা হাতিয়ে বললাম ” তাইলে আল্লাহ্ সেই মেয়েটাকেও মায়া করে দুনিয়া তে পাঠিয়েছেন একজন পুরুষের জন্য। সেই মেয়ে কে পাবে সেই পুরুষ যে মেয়ে কে বিয়ে করবে । তুমি তো মেয়ে কে বিয়ে করো নি। তাইলে তুমি মেয়ে কে পাবে না। আল্লাহ্ তো সেই মেয়ে কে মায়া করে এই পৃথিবী তে পাঠিয়েছেন অথচ তুমি মেয়ে কে ডিস্টার্ব করো। আল্লাহ্ যদি রাগ করে তোমাকে ধ্বংস করে দেন তুমি কিছুই করতে পারবে না। তাই সময় থাকতে ভালো হয়ে যাও। ”

আমি বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হলাম। বাসায় আসতেই মা কে দেখতে পেলাম। মা কে বললাম ” এই নেও এক হাজার টাকা। তোমার অনেক কিছু প্রয়োজন হয় কিন্তু তুমি টাকার জন্য কিনতে পারো না। ” মা বৃদ্ধ মানুষ। এখন মা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। কিন্তু মায়ের বয়স যখন ২০ বছর ছিল তখন তো মা সব কিছু করতে পারছেন। মা বৃদ্ধ বলে এখন মাকে ভালবাসব না এটা কি হতে পারে? না হতে পারে না। তাই মাকে অনেক ভালবাসতে হবে। অতিথি গরম পানি নিয়ে এসে বলে ” মা গরম পানি খান। ”

অতিথি মুখ টা পরিষ্কার করে দিল। আমাকে বলল ” খেতে আসো। ” আমি খেতে বসলাম। আমি খাচ্ছি কিন্তু অতিথি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম ” খাও নি? ” অতিথি বলল ” পরে খাব । ” আমি ভাত হাতে নিয়ে বললাম ” বড় করে আ করো। আমি নিজে খাইয়ে দিলাম। রাতে হাঁটছি আর বাদাম খাচ্ছি। বাদাম খেতে খেতে যখন একটা ওভারব্রিজের সামনে আসলাম অতিথি আমাকে বলে ” ইশ! ছেলে টা কত কষ্ট পাচ্ছে। আমার চাদর টা ছেলে কে দিয়ে দেই। আমি বাসায় গিয়ে আরেক টা চাদর বের করে নিব। ”

অতিথি চাদর টা দিয়ে দিল। ছেলেটার গায়ে দিয়ে দিল। কিন্তু ছেলে টা বুঝতে পারে নি। ছেলে টা ঘুমিয়ে আছে। অতিথি কে আমার চাদর দিয়ে ঘুরে দিলাম। অতিথি বলল ” আচ্ছ এখন যদি আমি ঘুমিয়ে পড়ি তুমি কি করবে? ”
আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ” তোমাকে রাস্তায় ঘুম পারিয়ে দিয়ে বাসায় চলে যাব। ” একটু মজা করার জন্য বললাম। অতিথি গাল ফুলিয়ে হাঁটতে শুরু করল। বাবা একটু দেরী হলে গাল টা ফুটে যেতো। অতিথি বলল ” আমি জানতাম তো। তুমি আমাকে ভালবাসো না। শুধু অভিনয় করো। ” আমি কোলে তুলে বললাম ” এবার অভিনয় করছি তো। নাকি সেটা বাস্তবে করছি। ” অতিথি হাসি দিয়ে বলল ” পাগল ছেলে লোকজন দেখে পেলব তো তাড়াতাড়ি মাঠিতে নামাও। “

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত