– কবে ঢাকা আসবা?
— এই তো কাল সকালে চলে আসব।
— তোমাকে খুব মিস করছি।
–মি টু। লাভ ইউ
–লাভ ইউ টু
কথা হচ্ছিল সায়েম আর আনিকার সাথে।অনেক ভালবাসে ওরা একে অপরকে। ঘুরতে ঢাকার বাইরে গেছে সায়েম। আনিকা সায়েম কে ছাড়া থাকতেই পারে না। অনেকবার সায়েমের ফোনে কল দিয়েছে আনিকা কিন্তু ফোন অফ বলছে। অনেক টেনশন হচ্ছে আনিকার। এফবিতেও পাচ্ছে না,কি হল ছেলেটার। চার্জ শেষ হয়ে গেল না তো? সকালে ঢাকা আসবে সায়েম। এখন রাত ৩ টা বাজে।এত আগেই চার্জ শেষ হয়ে গেল। এত রাগ লাগছে না সায়েমের উপর। এত কেয়ারলেস হল কবে থেকে ও। বাইরে যাচ্ছে চার্জ কি ফুল দিবে না। থাক সকালে আবার কল দিব, ভালয় ভালয় বাসায় ফিরুক। সকাল ১০ টা, এখন ও ফোন বন্ধ। এতক্ষণে তো বাসায় যাওয়ার কথা। টেনশন ক্রমান্বয় বেড়েই চলছে আনিকার। কান্না পাচ্ছে। এখনো কেন ফোন অন করছে না সায়েম। কি হল ওর। এফবিতেও এক্টিভ লিখা ৯ ঘণ্টা আগে। দুপুর ২ টা বেজে গেছে এখনো ফোন অফ। আর থাকতে পারছে না আনিকা। অস্থির হয়ে উঠেছে ও। এমন সময় ওর বোন ওর ঘরে আসল,কিরে আনিকা কি হয়েছে তোর,এমন করছিস কেন??
–সায়েমের কাল রাত থেকে ফোন অফ।
–ঢাকায় আসে নি এখন ও?
–না, রাতে বাসে উঠেছে।
–হয়ত চার্জ শেষ।
— ও বলেছে সকাল ৭-৮ তার মধ্যে বাসায় যাবে কিন্তু এখনো ফোন অফ।
–হয়তো বাসায় গিয়ে দেখে কারেন্ট নাই, তাই চার্জ দিতে পারে নি।
— ওদের বাসায় কি আর কারো ফোন নাই যে আমাকে কল দিতে পারল না।
— অনেক টায়ার্ড মেই বি।তাই ঘুমিয়ে গেছে হয়ত। টেনশন করিস নাতো।
–আনিকা, সায়েম ভাই কক্সবাজার গিয়েছিল না?
— হ্যা, কেন?
–কোন বাস এ?
— হানিফে
— একটু আগে নিউজ দেখলাম হানিফ নাকি গত রাতে এক্সিডেন্ট করেছে।
–কি বলিস এসব তুই?
— আমি তো সারাদিন টিভি দেখি নি, এফবিতেও ছিলাম না কিছুই জানি নাই। একটু আগে দেখলাম, ঘটনাস্থলেই নাকি ৬ জন মারা গেছে। এই আনিকা এমন করছিস কেন?
আম্মু তাড়াতাড়ি এইখানে আস,আনিকা কেমন যেন করছে। পাগলের মত করছে আনিকা। সবাই অস্থির হয়ে গেছে।আনিকার বাবাকেউ খবর দেয়া হল, বার বার সেন্স হারিয়ে ফেলছে আনিকা। ওর বাবা মা কে সব খুলে বলেছে। এর মধ্যে সারিকা সায়েমের খোজ নিয়েছে,সায়েমের বন্ধুর মাধ্যমে। সায়েম হসপিটালে এডমিট আছে। খবর পেয়েই হাসপাতালে চলে এসেছে ওরা। আনিকার বাবা আর বোন সারিকা সাথে এসেছে। আনিকা কাঁদতে কাঁদতেইই শেষ। রিসিপসনে খোজ নিয়ে সায়েম যেখানে এডমিট হয়েছে সেখানে গেল ওরা। সায়েমের মা বাবা, আত্মীয়, বন্ধু – বান্ধবরা বসে আছে।
— সায়েমের কি খবর? কেমন আছে ও? সারিকা জিজ্ঞেস করল।
–ওর অবস্থা ভাল না। ব্রেইনে খুব আঘাত পেয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা এর মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে অঘটন ঘটে যেতে পারে।
–আসসালামুআলাইকুম আংকেল। আমি সারিকা, আনিকার বোন।
–আনিকা কে?
–আব্বু, আনিকা সায়েমের ফ্রেন্ড -বলল সায়েমের বোন।
— ওহ, ভাল আছ মা?
— জি আংকেল। ডাক্তার কি বলছে এখন?
— অবস্থা খুপ খারাপ। দোয়া কর মা।
এদিকে আনিকা আর সায়েমের মা একে অপরকে ধরে কান্না শুরু করে দিয়েছে,যেন সায়েম মরেই গেছে এক্সকিউজ মি, প্লিস আপ্নারা থামুনতো।এটা হসপিটাল। শব্দ করবেন না। নার্স এসে বলে গেল। ডাক্তারের পারমিশন নিয়ে রুম এ ঢুকলো আনিকা। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছে সায়েমের সাথে আনিকার রিলেশন আছে। সায়েম শুয়ে আছে,চোখ বন্ধ। কি নিষ্পাপ লাগছে। আনিকা কান্না থামাতেই পারছে না। নিরবে কেঁদেইই যাচ্ছে। তুমি প্লিস ঠিক হয়ে যাও। আমি প্রমিস করলাম আর তোমাকে কষ্ট দিব না। তোমার সব কথা আমি শুনব। প্লিস তুমি সুস্থ হয়ে যাও। আসলে অনেক বড় এক্সিডেন্ট করেছে সায়েম। ওর জ্ঞান ফিরাটা জরুরি। জ্ঞান ফিরলেই অপারেশন করতে হবে। কিন্তু অপারেশন টা অনেক বেশি জটিল। বাঁচার চান্স ক্ষীণ। এখন আপনাদের ডিসিশন। সায়েমের বাবাকে বলছে ডাক্তার। চেম্বারে সায়েম আর আনিকার বাবা বসে আছে।
— দেশের বাইরে যদি নিয়ে যাই তাহলে? – আনিকার বাবা বলল।
–সে সময় হয়ত পাবেন না,কেননা ওর অপারেশন জ্ঞান ফিরার ১ দিনের মধ্যেই করতে হবে।
–ওর তো জ্ঞান ফিরছে না।
— এটাই তো চিন্তার বিষয়। যদি আর ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরে, তাহলে অফিশিয়ালি মৃত ঘোষনা করতে হবে।
— প্লিস ডাক্তার, যে কোন মূল্যে ওকে ঠিক করে দিন।
— আমরা আমাদের সর্ব চেষ্টাই করব।
ভেংগে পড়বেন না ভাই। আল্লাহ ইনশাআল্লাহ ওকে সুস্থ করে দিবেন। –কথা হচ্ছে সায়েম আর আনিকার বাবার মধ্যে। অনেক ভেংগে পড়েছেন সায়েমের বাবা। অবশেষে জ্ঞান ফিরেছে সায়েমের। রাত ৮ টার দিকে জ্ঞান ফিরে ওর। আনিকা সায়েমের পাশে বসা। কথা বলতে পারছে না সায়েম।এর মধ্যে আনিকা ডিসিশন নিয়ে নিল। আজ ই বিয়ে করবে ওকে। দুনিয়াতে যদি বিয়ে না হয়, তাহলে যে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে ফেলবে সায়েমকে। বিয়ে হলে দুনিয়াতে ওকে না পেলেও বেহেস্তে ওকে পাবে। ওর বাবা কে সব বলল। মেয়ের দিকে তাকিয়ে না করতে পারল না। যদিও এখন এসবের অবস্থা না কিন্তু আনিকার জেদের কাছে হার মানল সবাই।
রাত ১১ টা। আনিকা আর সায়েম রুমে। বিয়ে হয়ে গেছে ওদের। কাজী এসে বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে গেছে। সায়েম কোন কথাই বলতে পারছে না। অঝোরে কেঁদেই চলছে আনিকা। কাল সকাল ৮ টায় অপারেশন। সকাল সকাল সবাই চলে আসবে বলে সবাই চলে গেল। আনিকা, সায়েমের বাবা আর ওর কয়েকটা ফ্রেন্ড রইল শুধু। সায়েমকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। আনিকা বসে বসে কুরআন শরিফ পড়ছে। ভোর ৪ টার দিকে হঠাৎ সায়েম কেমন যেন করা শুরু করল। আনিকা দৌড়ে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনল। ডাক্তার আসল। ফজরের আজান হচ্ছে। সায়েমের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। আসসালাতু খইরুম মিনান নাওম। আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। হঠাৎ নিরব হয়ে গেল সায়েম। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।অনেক গভীর সেই ঘুম। আর ভাংবে না ওর ঘুম কখনো।