“আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আবির। প্লীজ তুমি কিছু একটা করো। (আশা)
– কিছুই হবে না। আমি তো আছি।
– আর আছি। এদিকে বাসার সবাই বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
– কিছুই হবে না তো। আমি আছি তোমার পাশেই।
– থেকে কি এমন করবা? আমার বিয়ে হয়ে গেলে বুঝবা।
– আরে বাবা আমি তো এখনো মরে যায়নি। তোমার পাশে তো আছিই।
– তুমি মরবা কেনো? মরবো তো আমি। আমার বিয়ের পরে মরে যাবো।
– ওহহহ! তুমি একটু থামবে?
– বাসায় যাচ্ছি থাকো তুমি। এখানে থাকতে ভালো লাগছে না।
চলে গেলো আশা। তবে মনের মধ্যে ভয় দিয়ে গেলো। হারানো ভয়। মানুষের সবচেয়ে হারানোর ভয়টা বেশি থাকে মনের মধ্যে। আর যদি কাছের মানুষটা হারিয়ে যেতে বসে তখন কষ্টের আর শেষ থাকে না। কিন্তু কি করবো আমি। বাড়ির ছোট ছেলে আমি। কিছুই তো করিনা। এখনো পড়াশোনা শেষ করতে লাগবে অনেক বছর। সবে তো অনার্স সেকেন্ড এ পড়ি। আর এ দিকে বাড়ির ছোট ছেলে হয়ে বিয়ে করলে বাড়ির মান সম্মান সব শেষ হবে। আর তাছাড়া বড় ছেলে বিয়ে করেনি। আর আমি কেনো বউ নিয়ে আসবো? কিছুই মাথায় আসছে না। না পারছি আশাকে ছাড়া থাকতে না পারছি বিয়ে করতে। কি হবে পরে। সত্যিই কি সে হারিয়ে যাবে আমার থেকে। অনেক দুরে কি চলে যাবে আমাকে ছেড়ে। পারবো আমি থাকতে তাকে ছাড়া? হয়ত পারবো,কিন্তু কষ্ট আমার পিছু ছাড়বে না। সব কিছু হারিয়ে গেলে কষ্ট মানুষের কখনও হারায় না।
– কোথায় ছিলি আবির?
– এই তো মা একটু কাজে ছিলাম।
– পড়াশোনা ছাড়া তোর আর কি কাজ আছে বাবা?
– আম্মু ভাইয়া কোথায়?
– এখনো তো অফিস থেকে আসিনি। কেনো কিছু লাগবে?
– নাহ থাক
পরিবার…আপনাকে সবকিছুই দেবে। আচ্ছা পরিবার কি খালি বড়রাই দিতে শিখেছে? আর আমরা কি নিতে শিখেছি?
ভাইয়ার কথা বলতেই মা কি না বললো কিছু লাগবে নাকি?
– আবির আসবো?
– আরে ভাইয়া তুমি? এখানে আবার অনুমতির কি আছে? যখন ইচ্ছে আসবে।
– খুজতেছিলি তুই আমাকে?
– নাহ আসলে এমনি।
– আচ্ছা আবির..মা বলছিলো নাকি এ সপ্তাহে আমার বিয়ে দেবার ব্যাবস্থা করছে। তুই কি কিছু জানিস?
– কই নাতো ভাইয়া…
– ওহহ.. কিছু লাগবে তোর?
– আচ্ছা ভাইয়া…ছোটরা কি কিছুই দিতে জানে না? খালি কি বড়দের কাছ থেকে নিতে জানে?
– কিরে কি হয়েছে তোর? এমন কথা বলছিস??
– বলো না ভাইয়া..
– তোর কিছু করতে হবে না পাগল। আমি তো আছিই।
হায়রে বড় ছেলে দিয়েও গেলো। দেখো ভাইয়া আমিও একদিন তোমাকে কিছু দেবো। সেদিন হয়ত থ্যাংকস দিবে। কিন্তু বড়কিছুই দেবো।
– আবির কাল আমাকে দেখতে আসবে।
– ও
– কি ভাবছো তুমি?
– কি ভাববো?
– মানে কি আবির? তোমার কিছু করার নেই।
– আশা শোনো,,,আমি জানি ভালোবাসার জন্য অনেক কিছুই করা যায়।
– তাহলে চলো বিয়ে করে ফেলি।
– নাহ ভাইয়ার বিয়ের কথা হচ্ছে দেখি কি করতে পারি।
এখন বাসায় যাও। সন্ধ্যার একটু আগে আশাকে রেখে আসলাম বাড়িতে। জানিনা পারবো কি না কিছু করতে। মাঝে মাঝে মনে হয় কেনো বড় হলাম না?
– আবির? (মা)
– হা মা..
– কাল একটু বাড়িতে থাকিস তো বিকালের দিকে।
– কেনো?
– তোর ভাইয়ার জন্য পাত্রী ঠিক করেছি ঘটক দিয়ে দেখতে যাবো কাল।
– নাহ মা,,আমি যাবো না। এসব পাত্রী দেখা আমার দ্বারা হবে না।
তুমি টুনি আর ভাইয়া যেও। আহহহ কাল ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখবে। যাক ভালোই হবে। ভাইয়ার একজন শাষন বারনের লোক হবে। ভাইয়াটা খুব ভালো আমার। খালি দিয়ে গেছে। বাবা ৪ বছর আগে হার্ট এট্যাকে মারা গেছিলেন। এরপর থেকেই ভাইয়া সব সামলিয়েছে। দিয়েই গেলো ভাইয়া। পরের দিন সন্ধ্যার সময় রুমে শুয়ে আছি আর ভাবছি আশার কথা।
– আবির?
– আরে ভাইয়া.. মেয়ে কেমন দেখলে?
– মেয়েটা তো দেখতে ভালোই।
– হুমমম দেখতে হবে না ভাইয়াটা কার। মেয়ে ভালো হতেই হবে।
– মেয়ের নাম্বার নিয়ে এসেছি। টুনিকে দিয়ে।
– ভালো করেছো। রেখে যাইও তো ভাবির সাথে একটু কথা বলে দেখি।
– কিন্তু সমস্যা হল একটা।
– কি সমস্যা ভাইয়া?
– আমি মেয়েটার সাথে আলাদা কথা বলতে গেছিলাম।
– তো?
– মেয়েটা মনে হয় কাউকে ভালোবাসে।
– হুহহ তোমাকে কইছে??
– আরে না মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। সেকারনে তোর কাছে নাম্বার টা দিয়ে যাচ্ছি দেখ এমন কিছু থাকে নাকি?
– আচ্ছা রেখে যাও
লাইফে এত বড় ধাক্কা কোনোদিন খাইনি। যখনই ভাইয়ার দেয়া নাম্বারটাই কল দিতে যেয়ে দেখি নাম্বারটা আমার ফোনে আশা বলেই সেভ করা। তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো। এটা কি হতে যাচ্ছে আমার সাথে? আমি কি তাহলে হারিয়ে ফেলবো আমার আশাকে? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাংলো আশার ফোন কলে।
– আবির কোথায় তুমি?
– আরে কাদছো কেনো?
– এখনি দেখা করো।
– আচ্ছা আসছি.. না খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম।
– আবির আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব।
– আমিও বাসি।
– চলনা বিয়ে করে ফেলি।
– কি হয়েছে?
– আর তিন দিন পর আমার বিয়ে।
– ওহহ তাই?
– খুশি হয়েছো?
– হুমমম খুব খুশি হয়েছি।
– মানে?
– মানে সোজা,,তোমাকে কি আসি সত্যিই ভালোবাসি নাকি?
– মানে কি????
– মানে তোমাকে আমি ভালোবাসি না। তোমার সাথে এ যাবত ফান করেছি। আর কিসের ভালোবাসা যত্তসব। আমি তো তোমাকে রুমে নেবো বলেই এতদিন টাইম নষ্ট করেছি। যাও যাও এখন ভাগো। বিয়ে করোগে।
– ঠাসসস.. ঠাসসস
ছি আবির তুমি এতটা খারাপ আমি জানতাম না তো.. এভাবে তুমি বলতে পারলে? আমাকে ঠকাতে পারলে? তোমার কোনোদিন সুখ হবে না বলে দিলাম। আমাকে কষ্ট দিয়ে চলে গেলে। তোমার আমার থেকেও কষ্টে থাকতে হবে।
চলে গেলো আশা। হাহাহা… চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতাম। কিন্তু করিনি। আমি এখন তার কাছে খুব খারাপ একটা ছেলে। কারো থেকে দুরে চলে আসার জন্য তার সামনে খারাপ হতে পারলেই সে নিজে থেকেই দুরে সরে যাবে।
আজ আমি এক কঠিন বাস্তবতার সামনে। হুমম চাইলে পারতাম আমি বিয়ে করতে। চাইলে এও পারতাম। ভাইয়াকে মেয়েটার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে। কিন্তু না আমি করিনি। আমি যে ছোট। খালি নিয়েই গেছি। দেয়ার সময় এখন আমার। যে ভাইটা বাবার মৃত্যুর পর কষ্ট করে বড় করেছে আমাদের। তাকে কষ্ট দিতে পারবো না। চাইলে ভাইয়ার অন্য কোথাও বিয়ে দিতে পারতাম কিন্তু করিনি আমি। কারন আশা অনেক ভালো আর ভাইটাও অনেক ভালো। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো। আজ ভাইয়ার বিয়ে। সবচাইতে বেশি মজা করেছি আমি। আশা আমাকে দেখে খুব অবাক হয়েছিলো।
হয়ত ভাবছিলো দাওয়াত না নিয়েই খেতে এসেছি। কিন্তু না তার সাথে যে আমার ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে। সেম ক্লাসে এই কারনেই ভালোবাসা হতে নেই। হারিয়ে যাওয়াটাই ভয়ের বেশি আর স্বাভাবিক। ভাইয়ার আজ বাসর রাত। ভাইয়াকে একটু টিপস দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অন্ধকার রাস্তায়। হেটে চলেছি এক অজানার উদ্দেশ্যে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অজস্র নোনা জল। আচ্ছা চোখের পানি নোনতা হয় কেনো? কষ্টে কাদে বলে মানুষ তাই নাকি? আজ আমি কিছু নেয়নি। ভাইয়াকে দিয়ে গেলাম আমার সব চাইতে মূল্যবান জিনিষটি। হাটছি আমি পথিক হয়ে। নাকি মুসাফির বেশে? চিৎকার বরে বলতে ইচ্ছে করছে ভাইয়া বড়রাও সব দেয়না মাঝে মাঝে ছোটরাও দিয়ে থাকে। তবে বেশি কিছু দেয় না। যেটা দেয় সেটা তার কাছে অমুল্য সম্পদ।