তারা ভিনদেশি

তারা ভিনদেশি

যেদিন ছেলেটি আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলো। সেদিন আমি তার প্রোফাইল দেখে পুরো থ হয়ে গিয়েছিলাম। কেননা আমি কখনও কল্পনাতেও ভাবিনি একটা ভিনদেশি ছেলে আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবে। আমি প্রায় মিনিট পাঁচেক সময় ব্যয় করে তার প্রোফাইল ঘুরেছিলাম সেদিন। তার প্রতিটি ছবিতে আমি চায়নাদের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়েছিলাম।

চায়না কুংফু মুভিতে নায়ক-নায়িকাদের যেমন চেহারা থাকে, ঠিক তারই মাস্টার কপি যেন সেই ছেলেটি। কোনো একসময় আমার মনে ইচ্ছা জেগেছিলো চায়নাদের মতো কোনো ছেলে কিংবা মেয়েদের সাথে সম্পর্ক গড়ার। তবে এতো দ্রুত যে তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছিলো, সেটা কল্পনাতীত ছিলো। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টের সাথে ভিনদেশি ছেলেটি একটা মেসেজও পাঠিয়েছিলো, ভাইয়া আপনার গল্পগুলা পড়তে অনেক ভালো লাগে। প্লিজ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটা একচেপ্ট করবেন। মেসেজটা দেখে মনে মনে বলেছিলাম, “ওহে চায়না, তোমার রিকুয়েস্ট আমি এমনিতেই একচেপ্ট করবো।”

তারপর থেকে ছেলেটির সাথে অল্প স্বল্প কথা হতে থাকে। তার সাথে কথা বলে জানতে পারি, তার বাসা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি। ছেলেটির চায়না মতো চেহারাটা বেশ ছিলো। চেহারার মধ্যে অদ্ভুত এক ধরনের মায়া ছিলো যেন। সে প্রায়ই আমাকে নক করে বলতো, ভাইয়া নতুন গল্প কবে দিবেন। একদিন ছেলেটির সাথে কথা বলার সময় তাকে বললাম, “ছোট, তোর কোনো বোন থাকলে বলিস। তার সাথে প্রেম করবো।” সে একটা হাসির ইমুজি দিয়ে বললো, দাঁড়ান একটা ছবি পাঠাচ্ছি। দেখেন পছন্দ হয় কিনা! আমি বললাম, পছন্দ হবে না মানে? একশো বার পছন্দ হবে। আরে পিচ্চি আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ভিনদেশি টাইপের অর্থ্যাৎ তোদের চেহারার মতো কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করার। আর তুই বলছিস পছন্দ হবে না!

খানিক বাদে ছেলেটি একটা মেয়ের ছবি পাঠিয়ে বললো, ভাইয়া দেখেন পছন্দ হয় কিনা? মেয়েটির ছবি দেখে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। মেয়েটির রূপের প্রশংসা করতে গেলে কম হয়ে যাবে। আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি, বাংলাদেশেও এমন মেয়ে আছে। আসলে চায়নাদের মতো ছেলে মেয়েরা একটু বেশিই কিউট হয়। তবে মেয়েটি কিন্তু অতটাও চায়না ছিলো না। আমি ছেলেটিকে তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। পছন্দ হয়েছে বৈকি! পছন্দের উপরে পছন্দ হয়েছে। ছেলেটিকে আমি পিচ্চি কিংবা ছোট বলে ডাকতাম। সে প্রায়শই তার প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করতো। প্রতিটি পিকচারে তার মাথাতে একটা ক্যাপ থাকতো, যা সে একপাশে ঘুরিয়ে পড়তো। তাকে দেখে হিংসে হতো খুব। এত কিউট কেন সে?

একদিন ভার্সিটিতে গিয়ে নিজ ক্লাসরুমে বসে আছি। মার্কেটিং স্যার তখন ক্লাস নিচ্ছেন। পুরো মনযোগ তখন আমার ক্লাসের প্রতি। ঠিক সে সময় একটি মেয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললো, স্যার আসতে পারি? তৎক্ষণাৎ আমার চোখ চলে গেলো মেয়েটির দিকে। আরে এই মেয়ে এখানে কেন? এটা আবার কোন দেশি? আমার ইচ্ছাগুলো এতো দ্রুত পূরণ হচ্ছে কেন? আহা আহা, পানি চাইতে যেন শরবত পাচ্ছি। মেয়েটিকে দেখে ফেসবুকের সেই পিচ্চিটার কথা মনে পড়ে গেলো। মনে মনে বললাম, পিচ্চি তোর চেহারার মতো একটা মেয়েও পেয়ে গিয়েছি। তোর নাম আগে থেকেই “চায়না” সিলেক্ট করে রেখেছিলাম। তবে এই মেয়েটির নাম কী রাখা যায়! ভাবতে লাগলাম, এই মেয়েটির নাম এই মেয়েটির নাম কোরিয়ান! হ্যাঁ, এর নাম কোরিয়ান রাখা যায়। তবে তার আগে মেয়েটির সাথে আমার বন্ধুত্ব করতে হবে।

দিন যেতে থাকলো মেয়েটির সাথে একসময় আমার বন্ধুত্বও তৈরি হয়ে গেলো। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা “শুধু সম্পর্ক” থেকে একটু গভীর সম্পর্কে গিয়ে উপনীত হলো। তবে সেটা কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক নয়। পাঠকেরা আবার ভেবে বসতে পারে, মেয়েটির সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেদিন রাতে যখন গল্প লিখছিলাম, তখন আনমনেই আমার মুখ থেকে বের হয়েছিলো “তারা ভিনদেশি, তাদের চেহারায় রয়েছে ভিনদেশিদের ছাপ। তারা ভিনদেশি, ইচ্ছা পূরণে সহসাই হলো তাদের আবির্ভাব।

মাঝখানে আইডি নষ্ট হওয়ার দরুণ সাড়ে চার মাস ফেসবুকে ছিলাম না। ফোনটাও বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। হঠাৎ আজ ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করার সময় সেই পিচ্চি “চায়না” ছেলেটির মেসেজ পেলাম। ছেলেটি আমাকে বললো, ভাইয়া আপনাকে অনেক মিস করেছি আমি। আপনাকে খুঁজেছিও অনেক। কোথায় ছিলেন আপনি? ছেলেটির সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বললাম, কেমন আছিস ছোট? সে বললো, খুব ভালো ভাইয়া। ভাইয়া আপনার সাথে কথা বলা যাবে? আমি বললাম, অবশ্যই।

ছেলেটি সাথে সাথে আমাকে কল দিলো। অনেক কথা হলো ছেলেটির সাথে। পঁচিশ মিনিট বিশ সেকেন্ড কথা বলার পরেও যেন ছেলেটির কথা ফুরালো না। সে আমার সাথে কথা বলতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছে। তার প্রতিটি কথাতে গভীর আনন্দের আভাস পেলাম আমি। সে বললো, ভাইয়া খাগড়াছড়িতে এলে অবশ্যই দেখা করবেন কিন্তু!
আমি উপলব্ধি করতে পারলাম, তার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করছে। যেন সে পুরোনো কোনো কিছু ফিরে পেয়েছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত