আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কিছুকিছু সিনেমার গল্প উপন্যাসের গল্প আংশিক মিলে যায়। তখন সেই সিনেমা বা উপন্যাসকেকে ঘিরে কাজ করে বিশাল এক আবেগ। আমার সেই ব্যক্তিগত আবেগের নাম ‘অপেক্ষা’
-সেই ছোট্টোবেলা থেকে দেখে আচ্ছি রহিম চাচা নদীর পাশে বটগাছের নিছে বসে বসে কার জন্য অপেক্ষা করতো,
সবাই রহিম চাচা কে পাগলা-রহিম বলে ডাকতো, রহিম চাচা” কোথায় থাকে কেউ জানেনা,কিন্তু ঠিক সকাল থেকে সন্ধা অব্দি নদীর পাশে বটগাছের নিছে বসে থাকে, কারোর সাথে কথা পর্যন্ত বলে না,, একা নিরব থাকে সবসময়, ঝড়-তুফান ঘূর্নিঝড় হলে ও রহিম চাচা নদীর পাশে বটগাছের নিচে বসে বসে নদীর অপর দিকে এক পলকে থাকিয়ে তাকে, একদিন বন্ধু সজিবকে নিয়ে রহিম চাচার সামনে এসে বসলাম, চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
-চাচা” আপনি থাকেন কোথায়! চাচা কোন উত্তর না দিয়ে নিরবতা পালন করতেছে, আজ নিজে নিজে ঠিক করলাম যেইভাবে হোক রহিম চাচার রহস্য শুনেই ছাড়বো।
– চাচাকে অনেক জোড়াজুড়ি করার পর চাচার মুখ থেকে একটি শব্দ উচ্চারণ হলো!
– বাচ্চা আমার সে-ই মায়াবিনীর কথা শুন্তে চাস না৷
-চাচা”আপনাকে সেই ছোট্ট-কাল থেকে দেখে আচ্ছি , আপনার মায়াবিনীর কথা শুন্তে বেশ মন চাচ্ছে।
রহিম-চাচা কিছু না বলে কাঁদতে শুরু করলো, আমি চাচার প্রতি আকর্ষন করে বললাম,চাচা মায়াবিনী সেইটা কে? চাচা আমার কথা শুনে, শান্ত কন্ঠে বললো,মায়াবিনী আমার সেই স্কুল লাইফের খেলার সাথি,এই স্কুল এখন ইটের কুটা আর সেই আমাদের যুগে চিল মাটির-কুটার স্কুল মায়াবিনীর নাম ছিল” বিন্তী” কিন্তু আমি ভালোবেসে মায়াবিনী বলে ডাকতাম, আমি চিলাম বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান, বাবা/মায়ের অনেক আশা চিল, আমি অনেক বড় মানুষ হয়ে দেশ সেবা করবো,পড়ালেখায় ও বেশ ছিলাম, কিন্তু পড়ালেখার পাশাপাশি দুষ্টামি ও ছিলাম, সেই পড়ালেখার মাঝে মায়াবিনীর সাথে আমার পরিচিয়, মায়াবিনীর বাবা চিল গ্রামের মেম্বার, গ্রামের সবাই মায়াবিনীর বাবাকে ভয় পাই,
আমাদের খুনশুটি প্রেম কাহিনী স্কুলের সবাই জানতো, স্কুলের প্রতিটা দেওয়ালে শুধু একটাই নাম লেখা ছিল, ( রহিম+মায়াবিনী) স্কুলের দেওয়ালে আমার আর মায়াবিনীর নাম দেখে মায়াবিনী অনেক রাগ করতো, মাঝেমধ্যে অনেক অভিমান করতো স্কুল ফাকি দিয়ে মায়াবিনীর রাগ ভাঙ্গাতে হতো, নদীর এক পাশে আমার বাড়ী আর অন্য পাশে বিন্তীর বাড়ি, আমরা দুইজন সাড়া গ্রাম মাতিয়ে তুলতাম, রহিম চাচা আর বলতে পারলো না কাদঁতে শুরু করলো,চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা”আপনার সেই মায়াবিনী এখন কোথায়?
চাচা মুগ্ধ হয়ে শান্ত শুরে বললো, আমাদের খুনশুটি, ছুটাছুটি প্রেম বেশীদিন টিকেনি,আমার আর মায়াবিনীর প্রেমের কথা, মায়াবিনীর বাবার কানে পৌছে গেল, মায়াবিনীর বাবা জাপর মোতালেব আমাদের প্রেম টা মেনে নিতে পারে নি, গরিব পরিবারের ছেলে চিলাম আমি,বিন্তীর বাড়িতে বিয়ের কথা নেওয়ার সাহস আমাদের হয় নি, কোথায় আকাশ,আর কোথায় জমিন কতো পরিমান ব্যবধান, যেহেতু কেউ আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে চাচ্ছে না,পালিয়ে বিয়ে করে মা/বাবার মনে কষ্ট দিয়ে সুখি হতে পারবো না,সেহেতু আমি আর বিন্তী সিদ্ধান্ত নিলাম নদীর উপর জাপ দিয়ে, নদীর মাঝে আমাদের ভালোবাসা,আমাদের জীবন কোরবানি দিয়ে ,কেউ আমাদের কে একা করতে পারবে না, আমি আর বিন্তী নদীর পাশে এসে এই বটগাছের নিচে বসলাম কোথায় থেকে যেন এক ঘূর্নিঝড় এসে সব ধ্বংস করে দিলো,
মায়াবিনীর বাবা জপর মোতালেব এসে আমাকে মেরে ক্র-বিক্ষাত করে এই বট গাছের সাথে ভেদে মায়াবিনীকে নদীর উপাসে নিয়ে যাচ্ছে, মায়াবিনী শুধু একটা কথা বলেছিল অপেক্ষায় থাইকো রহিম আমি আবার পিড়ে আসবো, এই বলে আজ দীর্ঘ ২১ বছর পর্যন্ত মায়াবিনীর অপেক্ষায় রইলাম কবে যে মায়াবিনী আমার অপেক্ষায়-এর সাড়া দিবে,এই বলে রহিম চাচা কাশতে কাশতে উটে চলে গেল, সত্যি কি?, এই যুগে কি এই রক “অপেক্ষা” প্রেমের পুরুষ আছে।