রেবু কথন

রেবু কথন

ঠিক কতদিন আগে রেবু কপালে টিপ পড়েছিল তার সঠিক মনে নেই।হঠাৎ চোখ গেল আয়নাতে। আয়নাতে একটা ছোট্ট কালো টিপ দেখা যাচ্ছে।টিপটা হাতে নিয়ে দেখলো টিপটায় আঠা নেই।এ কয়েক মাসে রেবুর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে চলেছে।একটুখানি দম ফিরবার উপায় যেন নেই।ইরফানকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে সে।বাবা মা ইরফানের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয় নি।কোন বেকার ছেলের সাথে কেউই তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হয় না।রেবু ইরফানকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করবে না।তাই বাধ্য হয়েই বিয়ে দিয়েছে। রেবু ইরফানের বিয়ের পর কিছুদিন সবই ঠিকঠাক চলছিল।ওদের যা জমানো টাকা ছিল তা দিয়েই চলে গেছে।কিন্তু এখন আর চলছে না।

ইরফান চাকরির চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই চাকরির দেখা মিলছে না।রেবুর পড়ালেখা এখনো শেষ হয়নি।পড়ালেখার খরচ, সংসারের খরচ এগুলো দিনকে দিন বেরেই যাচ্ছে।বাবা মায়ের কাছেও টাকা চাইতে লজ্জা লাগে রেবুর।দুইটা টিউশনি করাছে ও।সারাদিন খাটতে হচ্ছে ওকে।সকালে উঠে রান্না করে ক্লাসে যেতে হয়।ক্লাস থেকে ফিরে বিকালে টিউশনি করতে হয়।রাতে এসে আবার রান্না করতে হয়।ইরফানও টিউশনি করাছে।ওরা যেখানে থাকে যেখানে টিউশনি করে বেশি টাকা পাওয়া যায় না।সংসার যেন চলছেই না আর।ইরফান রাত নয়টায় ঘরে আসলো।ওর শার্টটা ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। রেবু তখন জানালার কাছে দাড়িয়ে একমনে তাকিয়ে আছে দূর আকাশের দিকে।

আমাকে গ্লাস শরবত দেও তো রেবু।রেবু জানালা থেকে মুখ ঘুরিয়ে টেবিলের কাছে আসলো।শরবত করে ইরফানকে দিল।শরবতে এত বেশি চিনি দেয় কেউ!রেবুর কেন জানি কান্না পাচ্ছে খুব। অভাব যখন দেখা দেয় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালিয়ে যায় কথাটা যেন রেবু হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে।রেবু একটুপর বললো খাবার দিয়েছি খেতে আসো।ইরফান খেতে আসলো।সেই নিত্য দিনের ডিম ভাজা আর আলু ভর্তা।একই খাবার রোজ রাতে খেতে খেতে যেন বিরক্ত হয়ে গেছে ইরফান।হঠাৎ ইরফানের রেবু কষ্টের কথা মনে হলো।রেবুরও তো একই খাবার খেতে প্রতিদিন কষ্ট হয়। মেয়েটা আমার জন্য কত কষ্ট করছে আর আমি কি ওকে কথায় কথায় খারাপ ব্যবহার করছি।কি হলো খাচ্ছো না কেন?হুম কিছু বললে রেবু? খাচ্ছো না কেন জিঙ্গাসা করছি।

ও হ্যাঁ খাচ্ছি।আগে দুজনে কত কথা বলতো রাতে। ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেও যেন কথা শেষ হতো না।কিন্তু এখন দুজনে কত পাশাপাশি থাকছে তারপরও দরকারি কথা ছাড়া কথা বলা হয়ে ওঠে না।ছোট্ট খাটটার দুইপাশে দুইজন শুয়ে আছে।কারও মুখেই কোন কথা নেই।ইরফান হঠাৎ বলে উঠলো রেবু ঘুমিয়ে গিয়েছো?উহু! রেবু চললো না আজ হাটতে বেড়াই।কতদিন হলো একসাথে হাটিঁ না আমরা।রেবু কোন কথা বলছে না।হঠাৎ কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনায় রেবুর চোখে পানি চলে আছে।ইরফান এবার রেবুর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে এভাবে থাকতে তোমার আমি জানি।আমি কিছুই করতে পারছি না তোমার জন্য।রেবু এবার আর কান্না চেপে রাখতে পারলো না।জোরে শব্দ করে কেদেঁ উঠলো।

ইরফান দুহাত দিয়ে রেবুকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।ইরফান বলে উঠলো তুমি তো দেখি দিনকে দিন মোটা হয়েই যাচ্ছো?এই মেয়ে একটু কম করে খাও বুঝছো?না হলে কিন্তু অন্য মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসবো।এবার রেবু হেসে ফেললো।কান্না মিশ্রত হাসি দেখতে যে এতটা সুন্দর রেবুকে না দেখলে ইরফানের বিশ্বাসই হতো না।এবার রেবুকে জোর করে বিছানা থেকে ওঠালো ইরফান। দুজনে আজ অনেকদিন পর পাশাপাশি পায়ে পা মিলিয়ে হাটছে।তারা হাটতে হাটতে একটা ছো্ট্ট চায়ের দোকানের সামনে এলো। দোকানদার ফ্লাক্স করে চা রেখেছে।ইরফান প্রথমে দু কাপ চা দিতে বললো। কিন্তু পড়ে বললো চাচা তিন কাপ চা দেন।তিন কাপের কথা শুনে রেবুর ভ্রু একটু নাচিয়ে জিঙ্গাগা করলো তিন কাপ কেন?ইরফান শুধু হাসলো।চাচা যখন তিন কাপ চা দিল তখন ইরফান এক কাপ দোকানদার চাচাকে নিতে বললো।

চাচা যেন অপ্রত্যাশিত কিছু ভালোবাসা পেয়ে চমকে উঠলো।চাচার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে ওরা আবার হাটতে থাকলো।একটুখানি দূরত্ব রেখে হাটছিল ওরা।রেবু বললো এই ছেলে হাত না ধরে হাটছো কেন?হুম অন্য মেয়ের হাত ধরে হাটার ইচ্ছা আছে নাকি?ইরফান মুচকি হেসে রেবু হাতে হাত রাখলো।সংসারে হয়ত অভাব দেখা দেবে তাই বলে ভালোবাসাকে বিলিন হতে দেয়া যাবে না।তোমার একটুখানি ভালোবাসার পরশ বিষন্ন মনটাকে আনন্দময় করে দিতে পারে।ইরফান রেবুর মধ্যে হয়ত আবার মান অভিমান হবে।কিন্তু দিন শেষে ভালোবাসার জন্যই হয়ত ওরা আবার এক হবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত