সিনিয়র বউ

সিনিয়র বউ

– কী রে সাখাওয়াত কেমন আছিস? (নুসরাত)
– নিজের স্বামীকে কেউ তুই করে বলে!ছিঃ
– মানে কী?? তুই কবে থেকে আমার স্বামী হইলি?
– নয়তো কী! তুমি আমাকে তুই বলে ডাকো কেন?
– তো তোকে কী আপনি বলে ডাকবো?
– না আপনি বলতে হবে না। আমি তোমার বর, তাই আমাকে তুমি বলে ডাকবা।
– ইশ! শখ কত!! আজকেই তোর আম্মুকে গিয়ে সব বলবো দাড়া।
– আম্মুকে আগেই বলে রাখছি যে,নুসরাত তোমার বউমা। (ফাজলামি করে বললাম)
– তাই নাকি! তাহলে চল, এখনই আন্টির কাছে যাই।
– এ না না। সোনা বোন আমার। তোর আন্টির কাছে যাস না। এই কথা শুনলে, আম্মু আমাকে আর বাসায় ঢুকতে দিবে না।

– তোকে বাসায় ঢুকতে না দিলে আমার কী? আমার তো তখন ভালই হবে,,তাহলে তোদের বাসায় গিয়ে থাকব।
– তাই নাকি রে আপু! তাহলে ভালই হবে, দুইজনে একসাথে গিয়ে ঘুমাবো।হি হি হি
– চুপ কর শয়তান। সব সময় মাথার মধ্যে শুধু এইসব চিন্তা না??
– তোকে যে আমি অনেক পছন্দ করি,তুই এটা বুঝিস না কেন?
– আহারে! পছন্দ করি!! “এই আমি যে তোর দুই বছরের সিনিয়র এইটা বুঝিস না কেন?”
– তো কী হইছে? ভালবাসা, ভাল লাগার ক্ষেত্রে বয়স কোন ব্যাপার না।
– মার খাবি কিন্তু এখন! বাসায় যাহ্।

আমার কলেজে একটা কাজ আছে,,ওইটা শেষ করেই আমিও বাসায় চলে যাবো। আর, হ্যাঁ,,আন্টিকে বলিস, “আমি হয়তো কিছু দিন পর তোদের বাসায় যাবো। আমার সামনে পরীক্ষা রে, আমাদের বাসা থেকে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব না। অনেক দূর হয়,,তাই তোদের ওইখান থেকেই পরীক্ষা গুলো দিবো। ইশশশ! কী যে আনন্দ লাগতেছে বলে বুঝাতে পারবো না। প্রিয় মানুষটা আমাদের বাসায় একেবারে অনেক কয় দিনের জন্য আসতেছে।

– আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি এখনই গিয়ে বলবো নি।
– হুম। বাই…..

এতক্ষণ যার সঙ্গে কথা হচ্ছিল,, সে হল নুসরাত। আমার প্রিয় মানুষ। অন্তরের মানুষ। সে আমার আম্মুর বোনের মেয়ে। মানে, আমার খালাতো বোন। বয়সে আমার থেকে দুই বছরের বড়। তারপরেও, ওকে আমার বউ বানাতেই হবে, এই রকম একটা অবস্থা! মানে, সিনিয়র বউ। হি হি হি আমি ওকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি। কিন্তু, নুসরাত নব সময়ই আমাকে “তুই” বলে ডাকে। যদিও, একটা হবু জামাই_হবু জামাই ব্যাপার অাছে! তারপরেও, সে আমায় তুই বলে ডাকবেই। আমিও ওকে তুই বলেই ডাকি, আবার মাঝে মাঝে “তুমিও” বলি। পাঁচ দিন পর…..

– এই যে মিঃ ঘুম বাবু এখনও ঘুমাচ্ছিস কেনো, উঠ??
– আম্মু যাও তো,এখন বিরক্ত করো না।একটু পর উঠব…
– ওই আমি তোর আম্মু না। আমি নুসরাত….
– কসসসস্ কী??? তুই কখন আসচ্ছিস?
– সকাল ৯ টায়। এখন ১১ টা বাজে,,,ওঠ…
– হুম। উঠতেছি….
– তাড়াতাড়ি উঠ। আমার পরীক্ষা আছে ১২ টা থেকে,,তোকে আমার সাথে যেতে হবে।
– কেনো? আমি তোর সাথে যাবো কেনো? তুই কী কলেজ চিনিস না?
– এত্তো কথা বলিস কেনো উঠতে বলছি,উঠবি…
– হুহ উঠে ফ্রেশ হয়ে, খাওয়া দাওয়া শেষ করে নুসরাতের সাথে বের হলাম।

– এই ভাবে কী সারা রাস্তা হেঁটেই যাবো নাকি? তাহলে তো আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।
– আজকে না হয় হেঁটেই যাই। আর একটু পরেই তো কলেজ!
– না হবে না। তুই একটা রিক্সা ডাক
– আচ্ছা আমি একটা রিক্সাকে ডাক দিলাম। অনেক দিন পর ওর সাথে হাঁটতেছি। বেশ ভালই লাগছিল। ধুরররর, তাও হল না। তাই, একটু মন খারাপ আর একটু চুপচাপ আছি।

– এই উঠ। দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
– আমিও তোর সাথে একই রিক্সায় যাবো?
– হুম। কেনো, আমার সাথে রিক্সায় উঠলে বুঝি পাপ হবে?
– না ঠিক তা না। ( শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম)
– তাহলে কী?? আমার পরীক্ষার দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!
– হুম। চল….
– এই যে, শোন আমাকে পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দিয়ে এসে, তুই কিন্তু বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার আমাকে নিতে আসবি?

– কেন তুই কী পিচ্চি পোলাপান??
– আমি যা বলছি তাই…
– আচ্ছা, তাই। ( আবারও শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম)
– কী রে ঠিক মত কথা বলিস না কেন? শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিচ্ছিস কেনো?
– না এমনি। চল নেমে পড়ি কলেজে তো চলে এসেছি।
– হুম

নুসরাত পরীক্ষার হলে ঢুকে গেল। আর আমি কলেজের সামনে একটা দোকানে বেশ নীরব হয়ে বসে আছি। ৩ ঘন্টার পরীক্ষা,,এতক্ষণ একা একা বসে থাকতে ভাল লাগছে না আবার বাসায় যে যাবো, তাও যেতে পারছি না। প্রিয় মানুষটাকে একা রেখে একদমই যেতে ইচ্ছা করছে না…

– পরীক্ষা কেমন দিলি? ( আমি)
– হ্যাঁ, অনেক ভালই হইছে রে।
– গুড
– তুই দুপুরে বাসায় খেতে যাস নি??
– হুম,,গেছিলাম তো! ( যদিও মিথ্যা কথা বললাম ওর কাছে)
– মিথ্যা কথা বলিস কেনো? আমার সীট দো তালায় পড়ছে,,আর ওইখানে থেকে এই দোকানটা স্পষ্ট দেখা যায়। তুই এইখান থেকে কোথাও যাস্ নি। আমি সব দেখছি।

– ( আহা! মিথ্যা বলে তো ঠকে গেলাম)হুম, এমনি খাইতে যাই নি। চল, বাসায় যাই…
– আচ্ছা কী হইছে তোর বল তো? সকাল থেকেই দেখছি তুই চুপচাপ??
– আমি চুপচাপ থাকলে কার কী, বলতো?
– কার কী মানে? আমার হবু জামাইটা চুপচাপ থাকলে আমার ভাল লাগবে?
– কী বলল্লি তুইইইই???
– কই, আমি তো কিছু বলি নি। বলছি “চল বাসায় যাই”। যদিও নুসরাত দ্বিতীয় বার কথাটা বলতে চাচ্ছিল না। তারপরেও ওর কথাটা আমি ভাল ভাবেই শুনছিলাম।

– তুই আমাকে হবু জামাই বলছিস, তাই না?
– না শয়তান। আমি তোকে হবু জামাই বলতে যাবো কোন দুঃখে?
– না হবে না। তুই আমাকে হবু জামাই বলছিস!
– হুহ, বলছি। তো কী হইছে?
– কী হইছে মানে?? চল তোকে নিয়ে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরবো।
– সত্ত্যি কথা বলছিস তো???
– হুম, সত্ত্যি।

সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা বলছি, আর তাতেই উনি মহা খুশি। মেয়েদের স্বভাবটাই এমন। মনে হয়, ঠাস করে একটা গালে চড় দেই তারপরেও, দিতে পারছি না। হাজারও হলেও সিনিয়র বউ অনেক আগে থেকেই জানতাম,,মেয়েটা আমাকেও একটু একটু পছন্দ করে। কিন্তু, মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। কারন, আমি ওর ২ বছরের জুনিয়র। কিন্তু, ওর আমাকে কেয়ার করা দেখেই তখনই একটু একটু বুঝতাম। সে যাই হোক, নুসরাত সব গুলো পরীক্ষা দিয়ে আমাদের বাসা থেকে চলে গেল। মাঝে মাঝে আসতো আমাদের বাসায়। আমিও এখন আগের তুলনায় ওদের বাসায় বেশি যায়।

আন্টির বাসা আবার হবু শ্বশুর বাড়ি বলে কথা! আমাদের এই ব্যাপারটা আস্তে আস্তে দুই পরিবারই জানতে পারে এবং তখনই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের বিয়ে টা ঠিক করে রেখে দেয়। তবে, বিয়ের সব কিছু, আমাদের দুইজনের পড়াশোনা শেষ হলে। আমি তো খুশিতে অনেক বারই নাচছি, “আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাশে”। আজ পাঁচ বছর পর নুসরাত মাস্টার্স শেষ করে একটা চাকরী করছে আর আমিও অনার্স টা শেষ করে সবে মাত্র একটা ছোট খাটো চাকরীতে জয়েন করেছি আর সব থেকে বড় কথা আজ আমাদের বিয়ের ১ম রাত। বেশ ভাব ভঙ্গি নিয়েই দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলাম। নুসরাত এসে আমার পায়ে সালাম করছে…..

– তুমি আমাকে সালাম করছো কেন, তুমি না আমার থেকে দুই বছরের বড়?
– তাতে কী হইছে! তুই এখন থেকে আমার জামাই, তাই।
– ওই তুমি কিন্তু এখনও আমাকে তুই করেই বলতেছো??
– আমি তোকে কোন দিনই তুমি বলে ডাকতে পারবো না।
– সে কি!! আমি কিন্তু এখন আম্মুকে ডাক দিবো…..
– আম্মুকে ডাক দিবি মানে? তুই কী এখনও পিচ্চিই আছিস নাকি, হুহ?
– না…তাইলে, বলো তুমি আমাকে আর কখনোই ‘তুই’ বলে ডাকবা না?
– অাচ্ছা,ঠিক আছে। আমি আর কখনোই আমার জুনিয়র জামাইকে তুই বলে ডাকবো না।
– হুহ,,এবার ঠিক আছে। এই শোন না, আমার না একটা বাবু দরকার?
– যাও,নিয়ে আসো।

– নিয়ে আসবো মানে? বাবু কী বাজারে বিক্রি করে যে, তাই কিনে নিয়ে আসবো??
– তাহলে, কোথা থেকে আসাবে?
– তুমি বুঝহ্ না??
– না তো!
– আচ্ছা তোমার বুঝা লাগবে না,আমিই বুঝিয়ে দিবো নি।
– তাই???
– হুহ
– এ আমার স্যান্ডেল টা কই রে!
– তোমার পায়ে তো স্যান্ডেল নাই।
– যা আছে ওইটা দিয়েই হবে
– ওরেরেরে,,,,রে,,,রে,,,,,বাবা!

ভোঁ দৌড়ে কোন রকমে নিজের জীবনটা বাঁচালাম। বেঁচে থাকলে অনেক বাবু পাবো। বাসর রাতেই বউয়ের দৌড়ানি, না জানি সারাটা জীবন কীভাবে চলবে!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত