গোসসাময়ী বউ

গোসসাময়ী বউ

শপিংয়ে গিয়ে বউকে বললাম, ‘তুমি যদি আমাকে এই ব্যান কলারের কালো শার্টটা গিফট করো তাহলে তোমাকে আমি খুশি করে দিবো।’ বউ একটু চোখ নাচিয়ে বলল, ‘কি খুশি করবে? আমাকেও কিছু গিফট করবে নাকি?’ আমি বউয়ের চেয়েও একটু বেশি করে চোখ নাচিয়ে বললাম, ‘সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ। বাসায় গেলে দেখতে পাবে।’ বউ কনুই দিয়ে আমার পেটে একটা গুতো দিয়ে বলল, ‘দেখা যাবে! উল্টাপাল্টা যদি কিছু হয় না একদম কাঁচা খেয়ে ফেলবো।’

বউ শার্টটা গিফট করলো আমায়। প্রিয় মানুষদের থেকে আমার চেয়ে চেয়ে গিফট নিতে ভীষণ ভালো লাগে। কারণ আমি সারপ্রাইজ পছন্দ করি না। সারপ্রাইজ ব্যাপারটা আমার কাছে অনেকটা পরীক্ষার হলে প্রশ্ন কমন না পড়ার মতো। প্রশ্ন কমন না পড়লে যেমন লাগে সারপ্রাইজ পেলেও আমার ঠিক তেমনই লাগে। কেউ আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এলে উল্টা সারপ্রাইজড হয়ে যায় আমি সারপ্রাইজড হলাম না বলে। বিয়ের প্রায় পর পরই বউ আমাক দুয়েকবার সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে বেকুব হয়ে গেছে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে। শেষে, ‘বলদ একটা’ বলে হাল ছেড়ে দিয়েছে।

বউয়ের কাছেই এখন এটা ওটা হুট করে গিফট চেয়ে বসি। গত বৃহস্পতিবার রাতে বউয়ের কাছে একটা স্পেশাল গিফট চাইলাম। বউয়ের পাশে বসে ওর কানের পাশে চুল গুলো গুঁজে দিতে দিতে বললাম, ‘কি মায়াবী আমার বউটা। ইচ্ছা করে শুধু বুকে জড়িয়ে বসে থাকি।’ বউ আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, ‘মতলব কি তোমার?’ বললাম, ‘ভারী আশ্চর্য! আমার আবার কিসের মতলব। বউকে কি মায়াবীও বলা যাবে না। তার উপর আজ আবার বৃহস্পতিবার রাত। পৃথিবীর যত সুন্দর রাত আছে তার বেশিরভাগই বৃহস্পতিবার দখল করে আছে।’ বউ হাত থেকে বইটা রেখে বলল, ‘আজ এতো ভদ্র ভাবে বললে যে খুব। তোমার সেই প্যারোডি কবিতার স্টাইলে বললে না কেন।’ বললাম, ‘ও আচ্ছা তোমার সেটা শুনতে ইচ্ছে করছে- দুনিয়ার যা কিছু ভালো চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে শুক্র অর্ধেক বৃহস্পতি।’

বউ বলল, ‘এই বৃহস্পতিবার এলে তোমার যে কি হয় না? বুঝি না বাবা।’ বউকে আরেকটু কাছে টেনে বললাম, ‘সপ্তাহের এই সাতদিনের মধ্যে বৃহস্পতিবারই তো শুধু আমাদের জন্য।’ ‘মানে?’ ‘বৃহ মানে বৃহৎ এক কর্মকাণ্ডের জন্য পতিদের বিশেষ বার এই বৃহস্পতিবার। পতিদের জেগে উঠার বার বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার মানেই হলো পতি স্পেশাল বার।’ ‘ইসসস! আসছেন আমার পতিদেবতা।’ ‘আচ্ছা শোনো না। তোমার কাছে আজ রাতে একটা স্পেশাল গিফট চাইলে কি দিবে?’ ‘কি চাও বলো!’

বউকে আরো কাছে টানলাম। ওর চোখে চোখ রাখলাম। ওর ঠোঁট ঈষৎ কাঁপছে। কোমরে খামচি দিয়ে আরো কাছে টানলাম। ওর দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, ‘সত্যি দিবে তো চাইলে?’ বউও ফিসফিস করে বলল, ‘হ্যাঁ দিবো।’ বললাম, ‘প্রমিস করো।’ বউ বলল, ‘প্রমিস।’ বউয়ের গালের সাথে আলতো করে গাল লাগিয়ে বললাম, ‘আগামীকালের কাঁচাবাজারটা তুমি করবে প্লিজ। তুমি বাজার করে আনলে এটাই হবে আমার জন্য অনেক বড় স্পেশাল গিফট। প্লিজ কালকের বাজারটা করে এনো। আমি টিভির পাশে টাকা রেখে দিবো।’

বউ যেন কারেন্টের সক খেয়ে ছিটকে সরে গেলো আমার কাছ থেকে। ও চোখ রাঙিয়ে তর্জনী তুলে কি যেন বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই বললাম, ‘তুমি কিন্তু প্রমিস করেছো। কোনো কথা হবে না এটা নিয়ে আর।’ বউ একটা বালিশ আমার দিকে ছুড়ে ফেলে গটমট করে চলে গেলো রুম থেকে। ভাগ্যিস রাতের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে। নয়তো বউয়ের যেই মেজাজ দেখলাম তাতে করে খাওয়ার আগে এই স্পেশাল গিফট চাইলে আজ রাতের ভাত বন্ধ ছিল আমার। বউটা যে কি না। কথায় কথায় শুধু গোসসা করে। সবাই পায় গুনবতী, রূপবতী, মায়াবতী বউ। আর আমি পেয়েছি এক গোসসাময়ী বউ।

শপিং শেষ করে দুইজনে রিক্সায় করে আইসক্রিম খেতে খেতে বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসেই বউ বলল, ‘কই আমার সারপ্রাইজ গিফট কোথায়? দাও।’ বললাম, ‘ফ্রেশ তো হবে আগে নাকি। আস্তে-ধীরে দিবো। গিফট তো কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে না।’ দুই জনে ফ্রেশ হয়ে ধীরেসুস্থে বিছানায় গিয়ে বসলাম। যা যা শপিং করেছি তা প্যাকেট খুলে খুলে দেখছি। বউ আবার তাড়া দিলো, ‘কই দাও না। আমার আর ওয়েট করতে ইচ্ছা করছে না। কি এমন সারপ্রাইজ গিফট যে আমি অনেক খুশি হয়ে যাবো?’

আমি বিছানা থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিচে নামাতে নামাতে বললাম, ‘আগে চোখ বন্ধ করো। একদম চোখ খুলবে না কিন্তু।’ বউ চোখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসছে। আমি আস্তে আস্তে বউয়ের পাশে গিয়ে বসলাম। বউ একটু কেঁপে উঠলো মনে হয়। আমি বউয়ের একেবারে কাছে এসে ওকে ইচ্ছা মতো কাতুকুতু দিতে থাকলাম। প্রথমে ও ভড়কে গিয়েছিল। কিন্তু কাতুকুতুর কারণে হাসতে হাসতে সেটা আর বেশি স্থায়ী হয়নি। বউয়ের কাতুকুতু মারাত্মক। অনেক সময় কাতুকুতুও দেওয়া লাগে না। ওর চোখের সামনে আঙুল নিয়ে নাড়ালেই ও সুড়সুড়িতে শেষ হয়ে যায়।

বউ কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে না হাসির জন্য। সারা বিছানায় গোল হয়ে ঘুরছে এক নাগারে হাসতে হাসতে। আমিও এক মুহুর্তের জন্য কাতুকুতু দেওয়া থামাচ্ছি না। কাতুকুতু দিতে দিতেই বললাম, ‘কি বউ বলেছিলাম না তোমাকে খুশি করে দিবো। দেখলে তো তোমাকে কেমন খুশি করে দিলাম। খুশিতে হাসতে হাসতে সারা বিছানায় গোল হয়ে ঘুরছো।’ বউ হাসতে হাসতেই কি কি যেন বলছিলো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হাসির এক ফাঁকে শুধু একটু করে শুনতে পেলাম, ‘কাঁচা খেয়ে ফেলবো।’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত