শীতের গোসল

শীতের গোসল

অনেককাল আগের কথা। শীতকাল উপলক্ষে গোসল কমে গেছে চারদিকে। অধিকাংশ মানুষজন গোসল করছে এক সপ্তাহে একবার। কেউ কেউ গোসল করতে গিয়ে শুধু হাতেমুখে পানি ছিটিয়ে চলে আসে। এসব মানুষদের গোসলের প্রতি আকৃষ্ট করতে এলাকায় উইন্টার বাথিং কমিটি (উবাক) গঠিত হয়েছে।

এ কমিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মকবুল মিয়া ওরফে সাফাই মকবুল। তার কাপড় সাফাইয়ের দোকান আছে। কাপড় সাফাই যেমন করেন, তেমনি তিনি নিজেরও সাফাই করেন। এই এলাকায় তিনি সবচেয়ে পরিষ্কার মানুষ। তিনি দিনে দু থেকে তিনবার গোসল করেন। শীতকালেও কমপক্ষে দুবার গোসল করেন, তাও পুকুরের কনকনে ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপ দিয়ে। এজন্য তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।

উবাক সংগঠনের প্রধান কাজ হবে মানুষকে গোসলের প্রতি আকৃষ্ট করা। তাদের কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম হল ঘরে ঘরে গোসলের প্রয়োজনীয়তা এবং গোসল না করার অপকারিতা ব্যাখ্যাসম্বলিত লিফলেট বিতরণ। লিফলেটের সাথে সাথে সুদক্ষ মোটিভেশনাল স্পিকার পাঠিয়ে মানুষকে গোসলের প্রতি আগ্রহী করাও এই কমিটির অন্যতম কাজ। এতেও কাজ না হলে মকবুল মিয়ার একটি সিক্রেট পরিকল্পনা আছে। তিনি ভেবে রেখেছেন সর্বশেষ ধাপে মানুষের গায়ে পানি ঢেলে দেয়া হবে যা হবে কমিটির চূড়ান্ত পদক্ষেপ। কিছুটা এগ্রেসিভ হলেও ব্যাপারটা কার্যকরী।

উবাক তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, মানুষও ধীরে ধীরে গোসলে আগ্রহী হচ্ছে। অনেকেই গোসলের অঙ্গীকার করেছে, অনেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে, তখনি এলাকায় পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিল আরেকটি ঘটনা।

“শীতকালে গোসল করব না” স্লোগানে ‘গোসল দমন কমিটি’ (গোদক) গঠন করা হল স্থানীয় মতি মিয়া ওরফে খাস্তা মতির নেতৃত্বে। খাস্তা মতি এই এলাকার সবচেয়ে নোংরা লোক হিসেবে সুপরিচিত। পুরো শীতকাল গোসল না করে থাকার রেকর্ড আছে এই খাস্তা মতির। গোদক পুরো এলাকাব্যাপী গোসল বিরোধী স্লোগান দিয়ে এবং উবাকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করতে লাগলো। তারা স্লোগান দিতে লাগলো “পারফিউম অমর হোক, শীতের গোসল নিপাত যাক” “গোসল করতে বাধ্য কেন, উবাক তোমার জবাব চাই”। অনেকেই প্ল্যাকার্ডে লিখে রেখেছে, “আমার গোসল আমি করব, যখন ইচ্ছা তখন করব”। সবার হাতে পারফিউম, সবাই খুবই উগ্র হয়ে আছে।

এদিকে মকবুল মিয়া বুঝতে পারলেন এদের সাথে উগ্রতা না করে টেকা যাবেনা। তাই তিনি উইন্টার বাথিং কমিটি উবাকের কর্মীদের নিয়ে বালতি ভরে ঠান্ডা পানি নিয়ে গোদকের কর্মীদের উপর ঝাপিয়ে পড়লেন। এতে গোদকের বেশকিছু কর্মী ভিজে গেলেন। মতি মিয়া নিজের শুকনো শরীর নিয়ে কোনমতে পালালেন। মকবুল মিয়া ওরফে সাফাই মকবুল বিজয়ের হাসি হাসলেন।

এদিকে গোদক গোপনে তাদের কর্মসূচি চালাতে লাগলো। একদিন মকবুল মিয়া শুনতে পেলেন তার নিজের ছেলে আফজাল গোদকে নাম লিখিয়েছে। সে গত চারদিন ধরে গোসল না করা অবস্থায় আছে। মকবুল মিয়ার বাড়ির সামনে মানুষজন জড়ো হয়েছে এর বিচারের জন্য। মানুষের প্রতিবাদের মুখে মকবুল মিয়া ছেলের গায়ে ঠান্ডা পানি ঢালতে বাধ্য হলেন। সংগঠনের কাছে বিসর্জন দিলেন পিতার মমতা।

উবাক এলাকায় খুবই প্রভাবশালী সংগঠন হয়ে উঠলো। মানুষজন প্রতিদিন গোসল করতে লাগলো। যারা গোসল করেনা তাদের বাধ্য করা হল। প্রতিদিন সকাল হলেই ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়ে যায়। কিন্তু কিছু করার নেই, উবাকের কর্মীরা এসে সবাইকে ধরে বেঁধে গোসলে নিয়ে যেতে লাগলো। সবাই কষ্ট পেত, কেউ প্রতিবাদ করতে পারত না। এদিকে মতি মিয়া ওরফে খাস্তা মতি ভেতরে ভেতরে তার সংগঠন গোদক কে শক্তিশালী করতে থাকে। গোদক গোপনে গোপনে ঘরে ঘরে পারফিউম সাপ্লাই করতে থাকে এবং মানুষকে গোসলের বিরুদ্ধে সোচ্চার করতে থাকে। একসময় গোদকেরও বিশাল এক সমর্থন তৈরি হয়।

এরপর একদিন হঠাৎ ই উবাক আর গোদকের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষেরই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। মকবুল মিয়া আর মতি মিয়া উভয়েই বুঝতে পারেন সমঝোতা ছাড়া উপায় নেই। পরে তারা সমঝোতায় যান যে একদিন গোসল করবে আর একদিন অফ থাকবে। অর্থাৎ একদিন বাদে আরেকদিন গোসল করবে সবাই। এই সমঝোতার উপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতে থাকে। সেই থেকে শীতকালে আমরা একদিন বাদে আরেকদিন গোসল করি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত