ছাত্রীকে পড়াচ্ছি।জীবনের প্রথম টিউশনি। ছাত্রী এস এস সি পরীক্ষার্থী এবং অসম্ভব সুন্দরী। বেশ মেধাবীও বটে। মনে মনে একটা প্ল্যান আছে। মা বাবা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে খুজছেন। এ রকম মেধাবী এবং সুন্দরী মেয়ে হাতছাড়া করা যাবে না। ছাত্রী অংক করছে আর আমি ভাবছি বাসায় গিয়ে আজই এই মেয়ের কথা মাকে বলতে হবে। এই মেয়ে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। অংক দেখছি, হঠাৎ পেটে চাপ অনুভব করলাম। তীব্র চাপ। চাপ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করলো। পেট থেকে গ্যাস বেরুতে চাইছে।
আমি দুই রান চেপে বসে রইলাম। অতি কষ্টে অংক দেখতে লাগলাম। চেপে রাখার ফলে আমার চোখমুখ লাল হয়ে গেল। মহা সর্বনাশ! ছাত্রী বললো, স্যার আপনি এতো ঘামছেন কেন? কী হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাগছে? আমি বললাম, তোমাদের ওয়াশরুম কোন দিকে? আমি একটু নাকেমুখে পানি দেব। ছাত্রী ওয়াশরুম দেখিয়ে দিতে দেরি, আমার দৌড় দিতে দেরি নাই। যেই মাত্র দৌড় শুরু করেছি,রাস্তা ক্লিয়ার পেয়ে অমনি ইঞ্জিন থেকে ভটভট শব্দ বের হতে শুরু করলো। লজ্জায় আর পিছনে ফিরে তাকাতে সাহস পেলাম না।ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে সেই যে বাড়িমুখো হাটা দিয়েছি, ঐ পর্যন্তই! জীবনেও ঐ বাড়ি মুখী হইনি! ছাত্রীর বাবা দুইদিন বলছিল,স্যার পড়াতে যান না কেন?
আমি উত্তর দেইনি। হয়তো ছাত্রীও কিছু বলেনি তার বাবা মাকে। কীভাবে বলবে যে স্যার ভুটভুট করে,,,, শিক্ষকতা নাকি মহান পেশা। আমারও খুব আগ্রহ জন্মাল শিক্ষক হওয়ার। লেখা পড়া শেষ করে আমাদের এলাকার একটা নামকরা স্কুলে শিক্ষক হিসেবে চাকরি নিলাম। আমাদের স্কুলটা ছিল শিশু শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত। কিছুদিনের মধ্যেই শিক্ষক হিসেবে নাম করে ফেললাম। সব ছাত্র ছাত্রী আমাকে ভীষণ পছন্দ করতো। বেশ সন্মানও করতো। অন্যান্য শিক্ষকরা দেখি টিউশনি করে ভালো পয়সা কামায়।ওদের দেখাদেখি আমিও একটা টিউশনি নিলাম। এক বড়লোকের গাধা মার্কা ছাত্রী। একদিন ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কুয়াশা জিনিসটা কি? ছাত্রী অনেক ভেবেচিন্তে উত্তর দিল,স্যার কুয়াশাা মানে রোদের ফাঁকি!ওর বাপ বলে দিয়েছিল, মেয়ের মাথায় কিঞ্চিৎ সমস্যা আছে, ওকে বেশি চাপ দেওয়া যাবে না।
তাই আমি বললাম, শাবাস! বাপের ব্যাটা!মেয়েটা ফস করে বলে ফেললো, সার বিজ্ঞাপনে শুনেছি বাপের ব্যাটা নাকি কন্ডম লয়! স্যার বাপের ব্যাটা কন্ডম লয় কেন?এই টিউশনিটা আমাকে ছেড়ে দিতে হলো। ক্লাস ফাইভের একটা ছাত্র পড়াতাম।একদিন আমি গিয়ে বসে আছি, ছাত্রের দেখা নাই, অনেক্ক্ষণ অপেক্ষার পর ছাত্র এলো, আমি বললাম, কী ব্যাপার এতো দেরি হলো কেন? ছাত্র বললো, মাগী খাচ্ছিলাম স্যার! আমি অবাক হয়ে বললাম, কি খাচ্ছিলে? মাগী স্যার, মাগী খেতে আমার ভালো লাগে। আপনি খান না স্যার? কী উলটাপালটা কথা বলছো,তোমার বাবা আসুক, তার কাছে নালিশ করবো।কী বলছেন স্যার, আমার বাবা তো আরও মাগী পাগল! মাগী ছাড়া তার চলেই না!! আপনি খাবেন স্যার?
আমার উত্তরের তোয়াক্কা না করেই সে ভিতরে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর এক বাটি নুডলস নিয়ে এলো। বুঝলাম সে ম্যাগি নুডলসের কথা বলছিল! ম্যাগিকে বলছে মাগী!! আরেকবার সে বলছিল, স্যার চা খাবেন? আমি মেনি মাছ দিয়ে চাই খাই,খুব স্বাদ! আমি বুঝলাম না মেনি মাছ দিয়ে কীভাবে চা খায়।আমি ধমক দিতেই সে বললো, সত্যি বলছি স্যার, আমার আব্বুও মেনি মাছ দিয়ে চা খায়! আমি বললাম, ঠিক আছে, আমার সামনে এক কাপ চা বানিয়ে এনে খাও। সে ভিতরে গিয়ে এককাপ চা নিয়ে এলো। সাথে একটা ছোট্র দুধের প্যাকেট।তাতে লেখা_ মিনি মার্কস! সে মিনি মার্কস দুধ দিয়ে চা বানিয়ে এনেছে!! এই বাচ্চা একদিন পড়ানোর মাঝখানে ফট করে আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো, স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড নাই?
আমি বললাম, না।কেন? সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, স্যার, শুনেছি গার্লফ্রেন্ড ছাড়া জীবন পানসে! এই টিউশনি ও ছেড়ে দিলাম। একবার দশম শ্রেণির এক ছাত্র পড়ানোর দায়িত্ব নিলাম। ছেলের মাথার ব্রেন ইন্টারন্যাশনাল গাধা টাইপ! একদিনও পড়া দিতে পারে না। ওর মা বাবা প্রতিদিন আমার কাছে নালিশ জানায় তাদের ছেলেটা উচ্ছনে যাচ্ছে। একদিন রাগের মাথায় একটা চড় মেরে বসলাম। ছেলেটা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, স্যার আমাকে মারলেন? আপনি জানেন কেউ আমার গায়ে হাত তুলতে সাহস পায় না? পাড়ার সবাই আমাকে ভয় পায়! স্কুলে বাচ্চাদের সবাইকে শিখিয়েছি,বড়দের দেখলে আগে সালাম দিয়ে কথা বলতে হবে। শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে। তাদের সামনে বেয়াদবি করা যাবে না।
যেহেতু এলাকার স্কুল। বিকেল বেলা হাটতে বের হলে সবার সাথে দেখা হয়।ছাত্র ছাত্রীরা দেখা মাত্র ফটাফট সালাম মেরে দেয়।মাঝে মাঝে সালামের উত্তর দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠি। একদিন আমি আর আমার এক বন্ধু বিকালবেলা হাটতে বের হয়েছি। এক বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা। আমরা রাস্তা অতিক্রম করছি,হঠাৎ দেখি লুঙ্গি পড়া একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে। গ্রামের বাচ্চা পোলাপান অনেকে শখ করে লুঙ্গি পরে।বাচ্চার লুঙ্গি খুলে গেছে। দুই হাতে লুঙ্গি ধরে দৌড়াচ্ছে। আমাদের সামনে দেখে দৌড়ের উপর এক হাত তুলে সালাম দিতে গিয়ে লুঙ্গির সাথে পায়ে প্যাচ লেগে গেল। সে দুই হাত দূরে সিটকে গিয়ে পড়লো। ব্যাথা পেয়ে প্রচন্ড জোরে চিৎকার করা শুরু করলো। আমরা তুলতে গেলাম।
পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ছেলের মা ঝাড়ু হাতে দৌড়ে আসছে। সে সম্ভবত উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছিল, ছেলের চিৎকার শুনে দৌড়ে এসেছে। ছেলের মা ঝাড়ু হাতে দৌড়ে আসছে আর বলছে, কোন হারামীর পুত আমার পোলা রে মারছে! কার এতো বড় সাহস!! ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা হতচকিত হয়ে গেলাম এবং ছেলের মায়ের রনচন্ডি দেখে আমাদের পিলে চমকে গেল।আমরা ভয় পেয়ে পিছনে ফিরে দৌড় শুরু করলাম! পিছনে থেকে ছাত্রের মা চিল্লাচিল্লি করছে, এই হারামি এখন পালাচ্ছিস কেন? সাহস থাকলে কাছে আয়! কতবড় সাহস! আমার ছেলে রে কান্দায়!! সেদিনই মনে মনে পন করলাম, আর শিক্ষকতা নয়!