আমি শাফায়েত ভাই এর কথায় একটু হাসলাম। যেটাকে মুচকি হাসি বলা হয় যদিও আমার হাসি পায় নি। শাফায়েত ভাই চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আবার বলল “কি রে সুবন তোর হাসির লক্ষন কিন্তু ভাল না। জীবনে কি একটা প্রেমও করিস নি? আমি আবারো একটু হেসে কথা কাটিয়ে বললাম…
“অনেক লেইট হয়ে গেছে এবার না হয় উঠি আমরা? সবাই অপেক্ষা করছে।
“আরে তাই তো তাড়াতাড়ি চল।
চায়ের কাপে এখনো অর্ধেক চা রয়েছে। ঐ চা টুকু না খেয়েই শাফায়েত ভাই উঠে পড়লো। যদিও আমি চা খাই নি। চা যে খাই না সেটা নয়। শাফায়েত ভাই এর সাথে দেখা হওয়ার আগেই পাড়ার মোড়ের চায়ের টং থেকে এক কাপ চা আর একটা বিষ্কুট খেয়ে এসেছি। এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম শাফায়েত ভাই আমাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল.. এই সুবন দাড়া আমার সাথে করে যাস…শাফায়েত ভাই হলো আমাদের দলের লিডার। লিডার বলতে দলের সবার মধ্যে উনি একটু সিনিয়ার তাই উনাকে সবাই গ্রুপ লিডার বলেই মানে। এটা আবার কোন রাজনৈতিক দল নয়। যারা টুকটাক লেখা লেখি করে এই যেমন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, তাদের লিডার। মূলত আমি ঐখানেই যাচ্ছি। রিক্সায় চড়ে গন্তব্য যাচ্ছি আর শাফায়েত ভাই চোখ থেকে চশমাটা নিয়ে পাঞ্জাবীর কিছু অংশ দিয়ে চশমাটা মুছতে লাগল আর আমাকে বললো…
“বুঝলি সুবন জীবনে প্রেম আবশ্যক। তোর কিন্তু একটা প্রেম করা দরকার। আবার সেই একই প্রসঙ্গ নিয়ে টান দিল। প্রেম? আমাকে দিয়ে প্রেম? আমি কিছুই বললাম না, চুপচাপ রিক্সায় বসে রইলাম। শাফায়েত ভাই এর কথা শুনে তিশার কথা মনে পড়লো। মেয়েটার সাথে আজ প্রায় কয়েক বছর কথা হয় না। খুব মিষ্টি করে কথা বলতো “কুত কুত খেলবা কুত কুত?
আমি তিশার কথা শুনে হাসতাম। এই বয়সে একটা মেয়ে কুতকুত খেলবে আমার ধারনা নেই। অবশ্য আমাকে না বললে কাকেই বলবে? কুত কুত খেলা হলো… মাটি/পাকার মধ্যে অঙ্কিত বক্সের মত ঘর তৈরি করে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা। সাধারানত মেয়েরা যখন একটু বুঝতে শিখে, কি করলে অন্য পুরুষের কাছ থেকে আড়ালে থাকা যায় বা কি করলে নিজেকে সেইভ রাখা যায় তখন থেকেই মেয়েরা একটু অন্য রকমভাবে চলাফেরা করে। তখন তাদের মন থেকে বাচ্চামী সাধটা চলে যায়। কিন্তু তিশা ছিল আলাদা।
“তুমি এই বয়সে কুত কুত খেলবা?
“কেন সুবন এই বয়সে কি কুত কুত খেলা নিষেধ?
“আমি কিন্তু তা বলি নি। বাড়ির ভিতরের উঠোনে যদি হতো তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু এটা বাড়ির বাহিরে তিশা।
“ঐ তুমি কি গাধা? বাড়ির উঠোনে তোমার সাথে কুত কুত খেলি মা বাবা দেখুক আর আমাকে পিঠুনি দেক। অবশ্য বিয়ের পর তো….
তিশা পুড়ো কথাটা না বলেই একটা লাজুক টাইপের হাসি দিল। তিশা আর আমি তখন কলেজে পড়ি। একই কলেজে এক সাথে। আমার একটা সুবিধা ছিল কলেজে যে কাজ গুলা দিত ঐগুলা তিশাকে দিয়েই করে নিতাম। অবশ্য দুই/পাঁচ টাকার মত খরচ হতো মানে কলেজে ওকে তেতুই বড়ই আচার কিনে দিতাম। কলেজের মাঠেই কয়েকজন মাথায় ঝুড়িতে করে বেশ কয়েকজন আচার, ঝাল মুড়ি বিক্রি করতো। তিশাকে আমার পছন্দ আমি যখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়ি তখন থেকেই। আমাদের ভালোবাসা একটু অন্য রকম ছিল। অন্য রকম বলতে আমরা কেউ কাউকে প্রেম নিবেদন করি নি। তবে দুজনেই বুঝতাম আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।
“আমাকে কিন্তু চুড়ি কিনে দিবা। ওর সাথে যখন একটু ঘুরতে যেতাম। তখনি ও আবদার করতো ওকে চুড়ি কিনে দিতে। গ্রামে তো আর ঘোরাঘুরি করা যায় না। চারদিকে সবুজ ঘাস ধান ক্ষেত, পাখির শব্দ আর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ব্যাঙের ডাক তবে এর চেয়ে এমন জায়গা আর কোথায় পাওয়া যায়? কিন্তু আমরা প্রতি সপ্তাহে একটু শহরের দিকে ঘুরতে যেতাম। বাসে করে কুমিল্লা শহরে সিনেমা দেখতে আসতাম। গ্রাম থেকে কুমিল্লা শহরে আসতে এক ঘন্টার মত লাগত। কলেজে কিছু খাওয়ার জন্য বাবা যা টাকা দিত ঐগুলা জমিয়ে রাখতাম। সপ্তাহ শেষে ৪০/৫০ টাকা যাই হতো ওটা দিয়েই ঘোরাঘুরি কাজ শেরে যেত। এখানে একটা মজার ব্যাপার আছে এতে আমার তেমন অসুবিধা হতো না। প্রথম সপ্তাহ আমি খরচ করতাম আর দ্বিতীয় সপ্তাহ তিশা খরচ করতো যাতে করে আমার উপর তেমন চাপ না পড়ে। মূলত তিশাও না খেয়ে টাকা জমিয়ে রাখতো।
“আচ্ছা এই লাল চুড়িটা আমায় মানাবে?
“আমার বউকে না মানালে কাকে মানাবে?
“আমাকে বিয়ে করলে কোন দিন শুনি?
“যেদিন প্রেমে পড়েছি সেদিনই মনে মনে বিয়ে করে ফেলেছি।
“হইছে হইছে আমার স্বামীটাকে আর ঢং মাখা কথা বলতে হবে না। এই নাও আমার দু হাতে চুড়ি পড়িয়ে দাও।
আমাদের ভালোবাসা ছিল বাদাম, ঝালমুড়ি আর আইসক্রিমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঘুরতে আসলেই এগুলাই খেতাম। তখন আইসক্রিমের দাম ছিল আটআনা অর্থাত্ পঞ্চাশ পয়সা। “কিরে রিক্সায় কি বসেই থাকবি? শাফায়েত ভাইয়ের ডাকে বাস্তবে ফিরলাম। কখন যে এসে গেছি টেরই পাই নি। শাফায়েত ভাই রিক্সা ভাড়াটা দিয়ে দিল। তারপর যেখানে আমরা আড্ডা দেই কথা বলি একে অপরের বিষয় নিয়ে চিন্তা করি সেখানে আসলাম। আমাদের গ্রুপের সদস্য ২৫ জন। “কবিদের লেখকদের প্রেম করতে নেই। প্রেমে জড়ালে গল্প কবিতা মাথায় আসে না। সারাক্ষন প্রেমিকা নিয়ে স্বপ্নের সাগরে পড়ে থাকতে হয়। কি বলেছি বুঝা গেছে?
আমি না হেসে পারলাম না শাফায়েত ভাইয়ের কথায়। বেটায় কিছুক্ষন আগে আমায় প্রেম করতে উত্সাহ করলো আর এখন প্রেম করতে নিষেধ করছে। “সুবন দাঁত গুলা বন্ধ কর। কি প্রেমে পড়ছিস নাকি? আমার সোজা কথা কেউ প্রেম টেম করতে পারবা না আমার দলে। শাফায়েত ভাই নিজে প্রেম করেও আবার অন্যজনকে শাসন করতে ভালই পারে। শাফায়েত ভাই যে প্রেম করে গ্রুপের সাবাই জানে তবুও কেউ কিছু বলে না। ইন্টার পরীক্ষায় আমি ফেল করলাম। ঐদিন রাতে প্রচন্ড কেদেঁছিলাম। এর আগেও দুবার কেঁদেছি SSC পরীক্ষার সময়। SSC পরীক্ষায়ও দুবার ফেল করে তিনবারে বেলায় পাশ করলাম। যদিও বাবা সরাসারি কিছু বলে নি। রুমের ওপাশ থেকে শুনতে পেয়েছিলাম বাবা মাকে বলছিল “এই রকম কুলাঙ্গার ছেলে আমার দরকার নেই। ওর মুখ যেন আমি না দেখি।
ঐ দিন রাতেই কাউকে কিছু না বলে রাতের গাড়িতে ঢাকা চলে আসি। তিশা পাশ করলো। ঢাকায় আমার তেমন কেউ থাকে না। এই ইট পাথরের শহরে আমি নতুন। তবে এটা জানি রাসেল ঢাকায় থাকে। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে। রাসেল হলো আমার বন্ধু। আমি ফেল করাতে ও আমাকে টপকিয়ে উপরের ক্লাসে উঠে যায়। একটা ব্যাচেলার ঘরে থাকে। আমি ওর ব্যাচেলার ঘরেই উঠি।
আমি সারাদিন রুমে বসে থাকতাম। মাঝে মাঝে বিকেল বেলায় এই শহরটা হেটে হেটে ঘুরে ঘুরে দেখতাম। যেহেতু আমি সারাদিন রুমের ভিতরেই থাকতাম সেহেতু রাসেলের রুমমেটদের ডেক্স থেকে বই নিয়ে পড়তাম। বিভিন্ন গল্পের বই পড়তাম। রুম মেটের একজনের নাম হেলাল। ওনার ডেক্সে একদিন অন্যরকম বই পেলাম। আমি একটু পড়েই ডেক্সে আবার রেখে দিলাম আর হাসতে লাগলাম ছিহ ছিহ হেলাল ভাই এসব বই পড়ে?
ঐ দিকে তিশার সাথে আমার আর তেমন কোন যোগাযোগ নেই। রুমের সবার খাবারের জন্য আমাকে বাজার করার দায়িত্বটা দিল। যদিও আমি কোন টাকা দিতাম না। আর সালেহা খালা এসে রান্না করে যেত। বাজার করে দুই/তিন টাকা যাই পেতাম রেখে দিতাম আর সপ্তাহ শেষে মন্টু ভাই এর কাছে ফোন করতাম দোকান থেকে। মন্টু ভাই এর কাছে ফোন করলে মন্টু ভাই ফোন আম্মার কাছে নিয়ে যেত। বেশি কথা বলতে পারতাম না, কারন প্রতি মিনিট ছিল ১৫ টাকা। মাঝে মাঝে মন্টু ভাইকে বলতাম তিশার সাথে কথা বলিয়ে দিতে। কেমন আছো, দিনকাল কেমন চলছে, এইগুলা খোঁজ নিতেই নিতেই কখন যে এক দুই মিনিট হয়ে যেত টেরই পেতাম না। তাই ভাল থেকো বলে ফোন রেখে দিতাম।
“আমার সাথে চল। আমি রাসেলের দিকে তাকিয়ে বললাম “কোথায়? “গেলেই দেখতে পাবি। বাহিরের জগত্টাকে একটু উপলব্দি কর। দুনিয়াটাকে চিনতে চেষ্টা কর। সারাদিন তো রুমেই থাকিস। ও আমাকে ঢাকা ভার্সিটির নাট্য বিভাগে নিয়ে গেল। হাবিব আদনান ভাইয়ের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিল আর বললো একটা কাজে লাগিয়ে দিতে। “এই একটু দেখো তো আমার চোখে কিছু পড়েছে কিনা?
মৌ আপুর কথা শুনে আমার শরীর টা কেমন করে যেন উঠলো। মৌ আপু হলো নাট্য বিভাগের একজন সদস্য। লম্বা চুল গোলগাল চেহারা লাবন্যময় ঠোট। আপুর প্রেমে পড়ার জন্য অনেকে ঘুরপাক খাচ্ছে যা আমি এই তিন চার মাস নাট্য বিভাগে থেকে বুঝতে পেরেছি। আমি একটু ইতস্ত করে বললাম “কোথায় দেখি আপু। এই বলে চোখটাকে দুহাতে ধরে দেখতে লাগলাম আর ফু দিতে লাগলাম। নাট্য বিভাগে আমার কাজ ছিল চা এনে দেওয়া টুকটাক কথা শুনা আর মঞ্চের কাজে সহায়তা করা। ঐদিকে তিশা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে অনার্স পড়তে লাগল। সারাদিন নাট্য বিভাগের মানুষ গুলার সাথে সময় দিতাম আর রাতে ম্যাচে এসে রাত জেগে জেগে বিভিন্ন লেখকের গল্পে, উপন্যাসের বই পড়তাম। রাত ২/৩ টায় ঘুমাতাম আবার ৮/৯ টায় নাট্য মঞ্চের দিকে দৌড় দিতাম। এই ভাবেই দিন চলতে লাগলো।
ওখান থেকেই শাফায়েত ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। একটা সময় নাট্য বিভাগ থেকে সরে আসলাম। যোগ দিলাম শাফায়েত ভাইয়ের সাথে। শাফায়েত ভাই উপন্যাস লেখে। ওনার তিনটে উপন্যাসের বই পড়েছি। সেখান থেকেই ওনার ফ্যান আমি। যেহেতু আমি গল্প আর উপন্যাস পড়তে পড়তে এটার প্রতি একটা নেশা ঢুকে গিয়েছিল সেহুতু শাফায়েত ভাইয়ের পিছনে ছুটতে লাগলাম। “কিরে সুবন তোর লেখালেখির কাজ কেমন চলছে? আর তোকে দেখছি সকাল থেকেই অন্যমনষ্ক। কিছু হয়েছে? আমি সাফায়েত ভাইয়ের কথা শুনে আবার বাস্তবে ফিরলাম।
“না কিছু হয় নি। এই ভাবছিলাম লেখাটা কবে শেষ করবো। “দেখ সুবন তুই ভাবছিস তোকে দিয়ে কিছু হবে না। এটা তোর ভুল ধারনা। এবার কিন্তু তোর লেখা একটা বই চাই চাই আমরা।
আমি চুপ করে রইলাম। এরপর শাফায়েত ভাই চশমাটা নাকের ডগায় এনে আমার দিকে একটু অন্যভাবে দেখলো। এর পর সবাইকে যার যার লেখা তাড়াতাড়ি শেষ করতে বললো। “শাফায়েত ভাই আজ আমি আসি। আপনারা কথা বলুন আমার একটা কাজ আছে। এই বলে আমি সবার সামনে থেকে চলে আসলাম। সত্যি বলতে কি আমার কেন যেন একটু একা একা হাটতে ইচ্ছে করছে। শাফায়েত ভাইয়ের সাথে কিভাবে যেন আট বছর কেটে গেল। এই আট বছরে শাফায়েত ভাইয়ের সাথে থেকে অনেক কিছু শিখেছি অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছি। একটা লেকের পাশ দিয়ে হাটছি আমি। তুই ভাবছিস তোকে দিয়ে কিছু হবে না। শাফায়েত ভাইয়ের কথাটা কেমন যেন লাগলো। আসলেই কি আমাকে দিয়ে কিছু হবে? তিশাও এমন একটা কথা বলেছিল….
“দেখো সুবন তুমি আমায় ভুলে যাও।
“কেন ভুলে যাব?
“কারন তোমার ছায়া আমার জীবনে আর নেই।
“এসবের মানে কি তিশা?
“দেখো তুমি আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখিও না। কি ভবিষত্ তোমার?
আমি ওর কথা শুনে মোবাইলের এপাশ থেকে একটু চুপ করে ছিলাম। সত্যিই তো আমার ভবিষ্যত কি আমি তো নিজেই জানি না। তিশা আবার বললো “তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তুমি যদি আমাকে ভালোইবাসতে তাহলে এইভাবে দুরে গিয়ে পড়ে থাকতে না। দেখো আমি অনার্সে পড়ি আর তুমি? আমার একটা কেরিয়ার আছে। তোমাকে আমার লাইফে জড়ালে, না পারবো আমার কেরিয়ার গড়তে, না পারবো সংসার সাজাতে। কি আছে তোমার লাইফে শুনি? তাছাড়া আমার বাবা মাও তোমাকে মেনে নিবে না।
একটানা কথা গুলা বলে তিশা একটু থামল। আমার বুঝতে বাকি রইলো না। আমি কিছু বলতে যাবো তিশা আবার বললো “দেখো সুবন তুমি চলে যাওয়ায় আমি তিনবছর অপেক্ষা করেছি। আমার অপেক্ষার বাধ ভেঙে গিয়েছিল। আমি নতুন করে বাচঁতে শিখেছি এখন আমার জীবনে অন্য একজন এসেছে। ফয়সাল ডাক্তারি পড়ছে। প্লিজ আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখিও না। এইভাবে ঘোরাঘুরি না করে পারলে একটা চাকরি করো। কাজে আসবে আমি ফোনটা রেখে দিলাম। ঠিকিই তো বলেছে তিশা, এমন ছেলেকে কোন বাবা মা মেনে নিবে? কি আছে আমার জীবনে? কি খাওয়াব আমি ওকে? কোথায় রাখবো? আমার জন্য কেনই বা ওর কেরিয়ার নষ্ট করবে? নিজের পেটে ডাল ভাত জোগাতে হিমসিম খেতে হয় তারউপর আরেকজন এদিকে যে ব্যাচেলার ঘরে থাকতাম সবাই যার যার কেরিয়ার গড়ে যার যার গন্তব্য চলে গিয়েছে। রাসেল এখন একটা ব্যাংকের ম্যানেজার। আর আমি এদিক থেকে ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগলাম। আজ এখানে তো কাল ওখানে।
গ্রামের বাড়িতে দুবার গিয়েছিলাম। একবার গিয়েছিলাম ঢাকায় আসার চার বছর পর তখন বাবা কিছু বলে নি। কিন্তু আমার ভাইয়েরা আমায় দেখতো পারতো না। আমার দুই ভাই ঘৃনা করতো আমার চালচলন দেখে। একজন ইঞ্জিনিয়ার আর একজন ব্যবসায় করে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি থাকলে ওদের সম্মান হেয় হবে। তাই আবার ঢাকায় চলে আসি। আম্মাকে না বলেই আবার ঢাকায় চলে আসি কারন আম্মাকে বলে আসলে আমাকে আসতে দিত না। আর দ্বিতীয় বার গ্রামে গিয়েছিলাম আম্মার মৃত্যুর পর ঢাকায় শেষ আশ্রয় দিল এই শাফায়েত ভাই। মনজুর ভাইয়ের সাথে আমার থাকার ব্যবস্হা করে দিল। আর পাশাপাশি নিউজ পেপার বিক্রি করার একটা চাকরি নিলাম। সারাদিন সাইকেলে চড়ে বাসায় ও বিভিন্ন দোকানে পেপার দিয়ে আসতাম আর বিকেল বেলায় শাফায়েত ভাইয়ের দলে যোগ দিতাম।
শাফায়েত ভাইয়ের চালচলন লেখার স্টাইল গুলা ফলো করতাম। একদিন সাহস করে একটা গল্প লিখেছিলাম যদিও গল্পের কোন আগামাথা ছিল না। আমার প্রথম গল্প পড়ে শাফায়েত ভাই খুব হেসেছিল। বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু শাফায়েত ভাই আমাকে শিখাতে লাগল কিভাবে লিখতে হয় কিভাবে অনুভুতি গুলা তুলে ধরতে হয়। চলতে থাকে আমার লেখালেখির কাজ যদিও তেমন লিখতে পারতাম না। একপর্যায়ে লিখতে লিখতে আমার লেখার মান ভাল হতে লাগল। শেষ মেষ লেখার জগতে ডুব দিলাম। “সিগারেট খাইবেন ভাইজান? লেকের পাশে গলায় ঝুলিয়ে বক্সের মধ্যে অনেকে পান সিগারেট বিক্রি করে। ওরা গলায় ঝুলিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হেটে হেটে পান সিগারেট বিক্রি করে। “না ভাইজান সিগারেট আমার হৃদয়ে জায়গা দেই নি। “তাহলে আফনে পান খান। দিমু একখান। “না এটাও খাই না।
লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে অন্যজনকে জিজ্ঞেস করতে চলে গেল। শুনেছি তিশার বিয়ে হয়ে গেছে। এটাও জানলাম ফয়সাল নামের কেউ তার জীবনে ছিল না। আসলে আমি যেন ঠিক মত চলাফেরা করি নিজের পায়ে দাড়াই এই জন্য মিথ্যে বলেছিল যেটা আমি বুঝতে পারি নি। অসহায় ছিল মেয়েটা। একা এত বড় রাস্তা কিভাবে পাড়ি দিবে সেটা হয়তো ভাবতে পারে নি। দু বছরের নাকি একটা ছেলে আছে নাম রেখেছে সুবন। কেন যেন টুপ করে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। চোখের পানি টুকু মুছতে ইচ্ছে হয় নি। পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাটতে লাগলাম। আরেকটু দুরে যেতেই দেখলাম একদল ছেলে একটা গাছের নিচে গিটার বাজিয়ে গান গাইছে। আমি ওদের একটু দুরে গিয়ে বসলাম আর গান শুনতে লাগলাম আমাকে আমার মত থাকতে দাও আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি !! যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়ায় থাক সব পেলে নষ্ট জীবন।
তোমার ঐ দুনিয়ার ঝাপসা আলোয় কিছু সন্ধ্যের গুড়ো হাওয়া কাঁচের মত যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দাও দুরবিনে চোখ রাখবো না না না না না না এই জাহাজ মাস্তল ছারখার, তবু গল্প লিখছি বাঁচ বার। আমি রাখতে চাই না আর তার, কোন রাত দুপুরের আবদার। তাই চেষ্টা করছি বার বার সাঁতড়ে পাড় খোঁজার এবার চোখের জলটুকু মুছলাম। না আমা উঠতে হবে এখানে বসে গান শুনলে চলবে না। আমার উপন্যাসের শেষ অংশটুকু লিখতে হবে। আমার লেখা বই বের করতে হবে। আমার উপন্যাসের নামও ঠিক করে রেখেছি “ছারপোকা”। আমি পা দুখানা বাড়ালাম এখনি গিয়ে আমার ছারপোকাকে একটা নতুন জীবন দিতে হবে সেই সাথে আমাকেও নতুন জীবনের আলো খুঁজে নিতে হবে।