“শোনো মি. আমাকে ভালোবাসা এত সহজ না।” মিম এর কথা শুনে আমার বন্ধুরা সবাই হা হয়ে গেল। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। পা থেকে মাথা অবদি মিমের একবার দেখে নিয়ে বললাম।
– কেনো, তোমাকে ভালোবাসতে কি বারণ আছে?
– না সেটা নেই। কিন্তু আমি এসব হাটু মুড়ে বসে প্রপোজ করা, ফুল দিয়ে প্রপোজ করা, চিঠি দিয়ে প্রপোজ করা, কবিতার লাইন বলে প্রপোজ করা,হাত কেটে প্রপোজ করা,ভয় দেখিয়ে প্রপোজ করা এসব না একদমই সেকেলে হয়ে গেছে। এভাবে প্রপোজ করলে না কোনো মেয়েই এখন কোনো ছেলেকে পাত্তা দেয় না। এসব হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি। আর আমি এসবে পটবো না বুঝেছো মি.? এখন বাড়ি যাও যেয়ে ঘুম দাও। কথাগুলো কলে মিম হনহন করে চলে গেল। আমি কেবল কথামৃত চাহনি দিয়ে মিমের চলে যাওয়া দেখছি। কি মেয়েরে বাবা কোনো ছেলেকেই পাত্তা দেয় না। বন্ধুদের দিকে তাকালাম। আমার দিকে সবাই গন্ডা মার্কা হাসি দিয়ে তাকাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সব কয়টারে এসিড ছুড়ে মারি।
আমি যে এলাকায় থাকি তা একটি আবাসিক এলাকা। এখানে ঘুরাঘুরির জন্য বাড়ির ছাদ আর ওলিগলি ছাড়া তেমন কোনো জায়গায় নেই। আমাদের বাড়িটা হল পাঁচতলা। আর পাশে যে বাড়িটা আছে সেটাও পাঁচতলা। তবে এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে খুব সহজেই লাফিয়ে যাওয়া যায়। একদিন ছাদে উঠে দেখি পাশের বাড়ির ছাদে একটি মেয়ে ছাদের গ্রীল ধরে কানে বড় হেডফোন মাথার উপর দিয়ে গান শুনছে। আর মাঝে মাঝে হিপহপ স্টাইলে মাথা ঝাগাচ্ছে। আগের দিনের দাদুরা দেখলে নিশ্চিত বলতো মেয়েটির জ্বিনে আচড় করেছে না হয় মাথার দুটো বুঝদারি তার ছিড়ে পড়ে গেছে।
তবে মেয়েটাকে আগে কোনোদিনও দেখিনি। খোজ নিয়ে জেনেছি মেয়েটি নতুন ভাড়াটিয়া। একদিন ছাদে উঠেছি। পাশের বিল্ডিং এ চোখ পড়তেই দেখি মাথায় হেড দিয়ে গান শুনছে আর বই পড়ছে। একবার আমার দিকে তাকাল। তারপর মুুচকি এক হাসি দিল। ব্যস, হাসির উপর নিজেকে ফাঁসির মধ্যে ঝুলিয়ে দিলাম। মানে ক্রাশ খেলাম আর কি। তারপর প্রায় মেয়েটাকে দেখার জন্য ছাদে যেতাম। গলির মোড়ে মেয়েটাকে পিছু নিতাম বন্ধুরা মিলে। কিন্তু খোজ খবর বেশ ভালো করেই জেনেছি যে মেয়েটা এই এলাকার সবার ক্রাশ। সব ছেলেই মিম বলতে কেমন যেন উন্মাদ হয়ে যায়। আর সমস্যাটা ঠিক এখানেই। মাস দুই হয়নি এলাকাতে এসেছে। আর এর মধ্যেই শ খানিক প্রপোজ পেয়ে গেছে। কিন্তু সে এখনো কারোর টাই গ্রহন করেনি। তাই আজ বন্ধুদের সাথে নিয়ে যখন গলির মোড়ে দাঁড়ালাম। তখনি দেখি মিম আসছে। আমি আস্তে করে ডাক দিলাম। সে কাছে এসেই বলে..
– আমি জানি তুমি আমাকে লাইন মারছো। কিন্তু জানো তো আমাকে ভালোবাসা এত সহজ না। আমি এসব সস্তা প্রেমে পড়ি না। আমাকে প্রপোজ করতে হবে ইউনিক ভাবে। যা এখনো অবদি কেউ করেনি কোনো মেয়েকে। আর সেই প্রপোজ যদি আমার মনকে নাড়া দেয় তবেই আমি ভালোবাসবো। বুঝেছো মি..
পরের দিন..
আজ আবার এসেছি মিমকে প্রপোজ করার। ওদের বাড়ি থেকে বের হতেই একটা গলি পড়ে। সেই গলির মাথায় শাওনের কফির দোকান। আর আমরা হলাম এই এলাকাতে লোকাল। আর শাওন হল আমাদের থেকে কয়েক বছরের ছোট হওয়ায় মুরব্বিরা এই দোকানে আসে না। তাই কোনো মেয়েকে নিয়ে সময় কাটাতে শাওনের কফিশপই যথেষ্ট এই এলাকাতে। রোজ মিম এই গলি দিয়েই যাতায়াত করে। আজও সে আসছে। কাল সারারাত ইন্টারনেট,ইউটিউব থেকে প্রপোজ করার ১০০ টা পদ্ধতি দেখেছি পড়েছি এবং মুখস্থও করেছি। তাই বেশ হাসি হাসি মুখে মিমের সামনে গেলাম। আমাকে দেখেই বলে..
– কিছু বলবা?
– হুমম।
– জানি তো বলবা আমাকে ভালোবাসো।
– হুমম।
– তো বলে ফেল। কিন্তু তার আগে প্রপোজ করার ধরনটা যেন আলাদা হয়।
– হুমম।
– কি হুমম হুমম করছো?
আশে পাশে তাকালাম। শাওন মামা সহ বন্ধুরা সব উৎসুক জনতা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মিমের দিকে তাকালাম তারপর পকেট থেকে হাতে বানানো চুরি করে আনা বোনের কাপড়ের পুতুল বের করে বললাম “হু হু জানি জানি.. তুমি হেব্বি সুন্দরী আছো। কিন্তু সেটা বড় কথা না, তোমার সুন্দরীর ঠেলায় বেবাগ পোলারা তোমার পিছনে বাইক,সাইকেল নিয়ে পিছনে ঘোরে। কিন্তু আমি তোমার পিছনে হেটে হেটেই ঘুরি। এটাও আসল ব্যাপার না। ব্যাপারটা হল।
তুমি সুন্দর তাই তোমার পিছনে ঘুরি না। তুমি একটা পেত্নির মত দেখতে, তোমার নাক দেখলে মন চাই টেনে লম্বা করে দিই। কিন্তু তা করি না, কারন তোমার নাক দিয়ে যদি পুটা ঝরে তাহলে তো আবার আমার হাতে লেগে যাবে। আর চোখ দেখলে মনে হয় চোখের মধ্যে কোটি কোটি মানুষ সাঁতার কাটতে পারবে। এত বড় চোখ কেন? আর মুখের কথা কি বলবো, দয়া করে বলবা কোন বিদেশি ক্রিম ব্যবহার করো, সেটা যদি একটু মুখে না মেখে পায়ের পাতায় মাখতা তাইলে পা টু মুখ সবই ভোতা দেভাতো। যাই হোক তোমাকে যেইটা বলতে আসছি। তোমাকে ভালো লাগছে কিন্তু ভালোবাসি না। বুঝেছো? আর পুতুল নিয়ে এসেছি তোমাকে দেখানোর জন্য দেওয়ার জন্য না। কি ছুচা হা.. সব ছেলে তোমাকে এটা ওটা দিয়ে প্রপোজ করে আর তুমি তা নিয়ে নিবা সেটা তো হবে না। যাও ভাগো..
হুরর কি বলতে আসছিলাম আর কি বের হয়ে গেল। ছেয়েছিলাম কোনো রোমান্টিক কবিতা কপি করে ঝেড়ে দেবো, ভেবেছিলাম রবীন্দনাথেে কবিতা বলে দেখি ভালোবাসা যেত কি না। কিন্তু মিমের কথা শুনে মুখ দিয়ে যা বের হয়েছে তাই ঝেড়ে দিয়েছি। বন্ধুদের দিকে তাকালাম। ওরা আরো বেশি উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। তবে ওদের চোখের ভাষা বলছে “এবার হারামি তুই চড় খা”। ঘুরে মিমের দিকে তাকালাম। মিম আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি ঠোঁট টেনে মুচকি হাসি দিলাম। আর তখনি মিম জোরে জোরে হেসে দিল। এত জোরে হাসলো যেন কানের খইল বের হয়ে যাবে। হাসির চোটে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। মুখের দুপাশ লাল হয়ে গেল। বিকেলের সুন্দরী রোদ ওর মুখে এসে পড়েছে তখন। চিকন দাঁতের ঠোটে হালকা এপ্রোনে মিমকে যেন তথাকতিতহীন প্রাতকার মোহনীয় এক গ্রীস দেবি মনে হল। হাসি থামিয়ে বলল…
– প্রপোজটা অবশ্যই দারুন হয়েছে। কিন্তু আমাকে এর আগেও কেউ একজন অসুন্দরী বলে প্রপোজ করেছিল কারন সে ভেবেছিল আমাকে সবাই তো সুন্দর বলে তাই তার বিপরীত কিছু বলেকাজ হয় কি না। কিন্তু না সেটা হয়নি,কারন আমার আম্মু বলে আমি যথেষ্ট সুন্দর আর মিষ্টি একটি মেয়ে। তাই এটাতেও কোনো কাজ হবে না। যাও মি. বাসায় যাও। আর হা পুতুলটা আমার লাগবে। নিয়ে গেলাম।
আমি বোকার মত কেবল দাঁড়িয়ে মিম এর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এটা কি হল? আমি আসলেই ভেবেছিলাম যে নতুন কিছু ট্রাই করে চেষ্টা করি। কিন্তু এর আগেও প্রপোজ করেছে এরাকম ভাবে। হুরর। এখন বাড়িতে গেলে বোন পুতুল খুজবে। ধুরর ভালো লাগে না। বন্ধুরা দৌড়ে আসলো। জনতা গুলো এসে কি হয়েছে জানতে চাইল কিন্তু কোনো কথায় বললাম না আমি। এভাবেই কেটে গেল আরো কয়েকটা দিন। তবে এ কদিনে মিমের সামনে গিয়েছি বহুবার। প্রপোজও করেছি না না ভাবে। কিন্তু সে রিফিউজ করে চলে গিয়েছে। আজ ১৩ দিন পর ওর সামনে ৫০০ টা গোলাপ ফুল নিয়ে যেয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখেই হা হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম…
– তোমাকে অনেকেই ১টি,২টি,৩টি কিংবা ১০০ টা ফুল নিয়ে প্রপোজ করেছে। কিন্তু আমার মত করে এতগুলো ফুল নিয়ে তোমাকে কেউ বলেনি ভালোবাসি। হা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তবে সবার মত না। আমি তোমাকে ভালোবাসি আমার মত করে। ঠিক পড়ন্ত বিকেলে লালচে সূর্যের মত। তোমাকে ভালোবাসি সন্ধ্যা ঘন পরিবেশে ঘরে ফেরা পাখিদের মত। তোমাকে ভালোবাসি মেঘ জমা আকাশে ফিরফিরে বৃষ্টি আসার আহ্বানে ঠান্ডা বাতাস বহার মত। তোমাকে ভালোবেসে বাঁচতে চাই,ভালোবেসে পথ চলতে চাই। তোমাকে আকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করতে চাই। তুমি কি ভালোবাসবে?
চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মিম আমার দিকে বেশ খানিকটা সময় চেয়ে রইল। তারপর ফুলগুলো নিয়ে হনহন করে হেটে চলে গেল। আমি কেবল দৃষ্টিগোচর হয়ে চেয়ে দেখলাম সে চলে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম একটু পিছনে ফিরে তাকাবে কিন্তু না। এত ভাব কেন মেয়ের? কি হত একটু পিছনে তাকালে। মনডা চাইতেছে সামনে যেয়ে চড় দিয়ে ফুলগুলো উদ্ধার করি। বিষন্ন মনে বাড়িতে আসলাম। এরপর কেটে গেল আরো সাত দিন। মিমের সামনে আমি আর যায়নি। ছাদেও আর সেদিনের পর উঠিনি। কিন্তু কি করা যায়। এ কদিনে আরো অনেকগুলো প্রপোজের কথা ভেবেছি কিন্তু কিছুই ঠিকঠাক ভাবে করতে পারছি না। আরো দু দিন পর বাড়ি থেকে বের হলাম। আজই শেষ চেষ্টা করবো মিমকে প্রপোজ করার। এরপর থেকে আর কোনোদিনও ওর সামনে যাবো না যদি সে রিফিউজ করে। সন্ধ্যা হবো হবো করছে। মিমকে ফোন দিলাম বাইরে আসার জন্য। সে আসলো। আমাকে দেখে বলল..
– কি ব্যাপার ডাকলে কেনো?
– আজ তোমাকে প্রপোজ করবো বলে এসেছি। আজই শেষ।
– তো করো।
– এখানে না। চলো আমার সাথে।
মিমকে সাথে নিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে একটি বাংলোতে আসলাম। তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। চারিদিকে দিনের এক ফোটা আলো নেই। বাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সবাই জানে এটা ভূত বাংলো নামে পরিচিত। মিম আমার হাত ধরল তারপর বলল..
– এখানে কেনো?
– তোমাকে প্রপোজ করবো। চলো ভিতরে।
মিমের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে আসলাম। চারিদিক অন্ধকার। বাংলোটি অনেক পুরোনো। এখানে যারা থাকত আগে তারা নাকি সবাই কোনো এক অজানাকারনে আত্বহত্যা করে। তারপর থেকে এখানে কিসব প্যারালাল ঘটনান ঘটে। এ দিকে লোক খুব কম আসে। আর আমিই কিনা মিমকে প্রপোজ করার জায়গা বেছে নিয়েছি। ফোনের টর্চ জ্বালালাম। বাংলারো মধ্যে ধুলো জমে একাকার। চারিদিকের কোণাতে কোণাতে মাকড়সার জালে ভর্তি। মিম আমার হাত শক্ত করে ধরলো। আমি ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর বললাম
– তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমি আসছি।
– কোথায় যাবে?
– কোথাও না,একটু দাঁড়াও।
মিমকে রেখে উপরের দিকে যেতে লাগলাম। তখনি চিৎকার শুনতে পেলাম। দৌড়ে মিমের কাছে আসলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি ধোয়ার কুন্ডলি পাকিয়ে কে যেন বের হচ্ছে।
– ওটা কি? (মিম)
– জানিনা। হবে হয়ত কোনো আত্বা।
– আমি বাড়ি যাবো। আমার খুব ভয় করছে।
– হুমম চলো।
দুজনে ঘুরে বের হতে যাবো তখনি বাংলোর দরজা ধপ করে নিজে থেকেই লেগে গেল। মিম প্রায় চিৎকার দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। বিড়বিড় করে বলতে লাগল “আমি বাড়ি যাবো।” আমি ওর হাত ধরলাম শক্ত করে। বের হওয়ার রাস্তা খুজছি। কিন্তু কোথাও কোনো প্রকার রাস্তা নেই। সব জানালা নিজে থেকেই বন্ধ হচ্ছে পরপর।
– চলো উপরের দিকে যায়। হয়ত সেখানে বের হওয়ার রাস্তা থাকবে। মিম কোনো কথা বললো না। ওর হাত ধরে উপরের দিকে যাচ্ছি। কয়েক ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠতেই ধপ করে সামনে একটি কঙ্কাল পড়লো। মিম আৎকে উঠে কান্না করতে শুরু করেছে। কঙ্কালটি হাত দিয়ে ধরতে গেলাম তখনি সেই কঙ্কালটি নিজে থেকেই আমাদের আগে যেতে লাগল। মিম ভয়ে প্রায় মরমর অবস্থা। সে ভয়ে কাঁপছে অনবরত। চারিদিকে খটখট শব্দে ছেয়ে গেছে। পঁচা আঁশটে গন্ধ চারিদিকে ভরে গেছে। বড় করিডোরে উঠতেই দেখি কেউ একজন সাদা কাপড় পরে হেটে চলে যাচ্ছে শুন্যের উপর দিয়ে। মুখটা বেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে বিদঘুটে হাসি দিল।
মিম অঙ্গান হবো হবো প্রায়। কেবল আমি ওকে ধরে রইলাম। কাঁপা কাঁপা শরীরে হাটতে থাকি। হঠাৎ করেই মিম ঙ্গান হারায়। ওকে নিয়ে আমি নিচে চলে আসি। বেশ খানিকটা সময় পর মিম এর চেতনা ফিরে আসে। তখন চারপাশে আলোতে ভর্তি। ও পিট পিট করে চারিদিকে তাকাচ্ছে। চারিদিকে আলোর ছড়াছড়ি। কোনো জায়গাতে তখন কোন প্রকার ময়লা নেই। আমি ওর সামনে চেয়ারে বসে আছি। আর ও একটি চেয়ারে বসে আছে। মাঝখানে একটি টেবিল রাখা। সেই টেবিলের মাঝে মোমবাতি জ্বালিয়ে লেখা i love you। মিম আমার দিকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ওকে হাত ধরে টেনে দাঁড় করলাম। তারপর বললাম..
– ভয়ের কিছু নেই। তুমি একটু চোখ বন্ধ করো। সে চোখ বন্ধ করলো। সাথে সাথেই রুমের সব আলো নিভিয়ে দিলাম। মিমকে বললাম চোখ খুলতে। আমি তখনি ওর সামনে থেকে চলে এলাম। সে তাকাল। টেবিলের উপর মোমবাতিগুলো জ্বলছে একাধারে। সে চারপাশে দেখছে। সবকিছু আগের মতই হয়ে গেল। মিম আমাকে ডাকল কয়েকবার কিন্তু কোনো সাড়া দিলাম না। এরপর যখন সে চিৎকার করতে যাবে আমি তখনি ধোয়ার কুন্ডলি পাকিয়ে তার পিছন থেকে কঙ্কালের পোশাক পরে বের হলাম। হাতে একটি কঙ্কালের মাথা। আমাকে দেখেই সে চিৎকার করে উঠল। বদ্ধ অন্ধকার ঘরে মিম এর চিৎকার বারবার প্রতিধ্বনি হতে লাগল। আমি ওর সামনে যেয়ে মাথার খুলি বাড়িয়ে দিয়ে ভৌতিক ভাবে বললাম…
“ভালোবাসা কি কেবল প্রপোজের মাঝেই সীমাবদ্ধ? ভালোবাসলেই কি প্রপোজ করাটা খুবিই দরকার? প্রপোজ না করলে কি ভালোবাসা প্রকাশ পায় না? ভালোবাসা তৈরী হয় চোখের ইশারায়। ভালোবাসা বিশালতা ধারন করে নীরাবতায়। ভালোবাসা গাঢ় হয় দুরের অপরাতায়। তোমাকে আমি ভালোবাসি। কেউ এভাবে তোমাকে ভালোবাসি বলেছে কিনা জানিনা। তবে এটা জানি, তোমাকে ভালোবাসতে হলে প্রপোজ এর দরকার। তাও আবার তোমার মনকে নাড়া দেবে এমন প্রপোজ। আজ যদি ফিরিয়ে দাও তবে আর আসবো না তোমার কাছে। তোমাকে ভালোবাসি।
I am your man
That is what I am
And I am hare to do
Whater I can.
কথাগুলো বলে চুপ থাকলাম। ঘরের লাইটগুলো সব জ্বলে উঠল। আমি কঙ্কালের কাপড়গুলো খুলে দিলাম। মিম আমার দিকে গালে দুই হাত দিয়ে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে চেয়ে রইল। আমি আস্তে গলায় বললাম “সবটা আমারই প্ল্যান ছিল,সরি।” মিম কিছুই বলল না। কেবল গালে দুই হাত দিয়েই দাঁড়িয়ে রইল। আমি চলে আসতে যাবো তখনি সে বলল..
“I am your girt
that is what I am
And I am here to do
Whlater I cairn
গাধা একটা, এভাবে কি কেউ প্রপোজ করে। বাপরে কতটা ভয় পেয়েছি আমি।”
– কি করবো বলো। তুমিই তো বলেছিলে। এমন ভাবে প্রপোজ করতে যেন মন নাড়া দিয়ে ওঠে।
– তাই বলে ভুত হয়ে হয়ে।
– হুমম। এটা ছাড়া আর কোনো ডিফরেন্ট আইডিয়া মাথায় আসেনি।
– বান্দর ছেলে একটা।
– হুমম
– যা বন্ধু মিম কে তুই নিয়ে যা। (বন্ধুরা সব একসাথে বলল)
– ওরা এখানে?
– হুমম ওদের দিয়েই তো সবকিছু আয়োজন করা হয়েছিল।
মিম আর কিছু বলল না। কেবল এসে জড়িয়ে ধরল আমাকে। যাক বাবা ভৌতিক প্রপোজ করেও যে ভালোবাসা পাওয়া যায় তা জানতাম না। আইডিয়াটা মন্দ না।