বজ্জাত মাইয়া

বজ্জাত মাইয়া

কয়েকদিন ধরেই লক্ষ করছি একজন সুদর্শন মহিলা আমায় ফলো করেন। কেননা আমি যেখানেই যাই সেই সেইখানেই ওই মায়াবী দুটো চোখ ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে চেয়ে থাকে। আজ যখন অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম তখন আমার পিছনেই ছিল।আর দেরি না করে পিছু ফিরে সামনে চলে গেলাম।

–কি বেপার,কয়েকদিন ধরেই দেখছি আপনি আমার পিছু নিয়েছেন,কি সমস্যা?
–কই কিছু না তো(আমতা আমতা করে)আর আমি, আপনার পিছু নিব কেন?
–মিথ্যা বলার আর জায়গা পাননা।যতসব পাগল!
–কি আমি পাগল?
–না,পাগলী।

বলেই চলে এসেছি,তবে হ্যা মেয়ে কিন্তু হেব্বি খেপেছিল আমার উপর। আমি শেখ আফরান,একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ছোটখাটো একটা চাকরী করি। অফিস থেকে ফিরে এসেই শুয়ে পড়েছি, একটু ক্লান্তিকর লাগছিল।তখনই দূরবাস যন্ত্রের তর্জনগর্জন।

–হ্যালো কে?
–আমি.
–আমি কে?
–আনিকা,যার সাথে পথে কথা হল।
–আপনি!আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?
–কেন,যে মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে ফলো করতে পারে,তার কাছে নাম্বার তো ধুয়া তুলসী পাতা।
–তা আপনি আমাকে জ্বালাচ্ছেন কেন?
–ভাললাগে তাই।
–সেটা আর কাউকে দেখান গিয়ে,বজ্জাতের হাড্ডি একটা।
–কি আমি বজ্জাত,এই ছেলে মুখ সামলে কথা বল,নইলে,
–নইলে কি করবেন?
–খুন করব,আপনাকে!

এ মেয়ে না ডাইনী কে জানে, না একে বিশ্বাস করা যায় না। কখন জানি মেরে ফেলে। রাতে শুয়ে দূরবাস যন্ত্র দিয়ে ফেইসবুকে প্রবেশ করেছি।তখনই বাবা মা একসঙ্গে হাজির আমার রুমে।

–কি বেপার, রোমিও জুলিয়েট একসঙ্গে আমার রুমে!
–মস্করা কর?
–না।
–একটা কথা আছে(মা)
–বলে ফেলুন
–আমার একটা মেয়ে চাই?
–সেটা আমাকে কেন বলছ,বাবাকে বল?
–কি,(বাবা)
–না, কিছু না।
–আমি বলতে চাইছি তর বউয়ের কথা।
–বিয়ে করলাম কবে?

–করিসনি,করার জন্য বলতে আসছি!
–আমি আর বিয়ে কখনও সম্ভব নয়।
–কেন(মা)
–জানি না,
–কেন জানস না?(বাবা)
–কেন জানি না সেটাও জানি না।
–তাহলে আমার এ জন্মে নাতিনাতনির মুখ দেখা হবে না।
–আর আমি পাগল হয়ে যাব(বাবা) বাবা মায়ের কথার অবসান ঘটিয়ে আমি নিদ্রালস হয়ে পড়লাম। সকালে নিদ্রা বিচ্ছিন্ন হলাম দূরবাস যন্ত্রেরর আওয়াজে

-হ্যালো
–এখনও ঘুমে থাকলে চাকরী আর থাকবে না।
–কে আপনি?
–কেন, এখনও চিনতে পারছেন না বুঝি! মোবাইলের স্কিনে থাকাইয়া দেখি সেই বজ্জাত মাইয়ার নাম্বার!
–আপনি?
–হ্যা চিনতে পেরেছেন?
–নাম্বারটা বজ্জাত মাইয়া লিখে সেইভ দিয়েছিলাম, যার কারণে চিনতে পারলাম।
–কি?
–কানে কি কম শুনেন?( কলটা কেটে গেল) ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেলাম! নাস্তা করতেছি, হঠাৎ মা বলে উঠলেন–

–এত বড় একটা ছেলে হয়ে গেল,আর একটা প্রেম করতে পারল না।
–কাকে বলছ?
–কেন, তোকে।
–না, এসব আমাকে দিয়ে হবে না।
–কেন?
–প্রেম করতে পারিনা তার কারণ একটা!
–কি?
–কেননা, যাকেই প্রেম নিবেদন করতে যাই না কেন করতে পারিনা।আর মেয়েদের সামনে গেলেই আমার হাত পা কাঁপে।
–কি?
–হ্যা।
–তুই কি আমার সন্তান?(বাবা)
–সেটা তোমরা দুজনে যান!

বাসা থেকে বেরিয়ে হাটা শুরু করলাম।কেননা অফিস আমার বাসা থেকে আট মিনিটের রাস্তা।যা আমি প্রতিদিন হেটেই যাই। হঠাৎ চেয়ে দেখি সামনে সেই মাইয়া।

–কি বেপার, আপনি আবারও?
–কি?
–পিছু নিচ্ছেন।
–আজ পিছে নেই সামনে আছি।
–ওই হল।
–আমি বজ্জাত মাইয়া?
–তা নয় তো কি?
–মুখে লাগাম দেন?আর আমার একটা নাম আছে,পারলে ওই নামে ডাকিবেন।
–আমি ঘোড়া নই,যে মুখে লাগাম লাগিয়ে দৌড়বো।
–আপনি ঘোড়া নন ঠিকই,কিন্তু আস্তা একটা বান্দর।
–আমি বান্দর!
–হ্যা,আমার পিচ্চি বান্দর। দৌড়ে চলে গেল! অফিস থেকে ফিরার পথে আবার সেই বজ্জাত মাইয়ার সাথে দেখা।
–আপনি এখনও এখানে!
–ভালবাসি!

বলেই একেবারে আমার উপরে পড়ে যাচ্ছিল।হাত দিয়ে ওকে ধরলাম। এই প্রথম কোনো মেয়ের স্পর্শ পেলাম।
যার কারণে কিছুটা অস্বস্তিকর লাগছিল। কিন্তু একে দিয়ে এখন কি করব, বাসায় যাব না হাস্পাতালে। দেখে তো মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে গেছে। আর নেবই বা কি করে? না পারতে মেয়েটা কে কোলে তুলে নিয়ে বাসার দিকে হেটে চলছি। যা হবার হবে। চারিদিকের মানুষ গণ কেমন উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে।যেন আমি ভিনগ্রহ থেকে আগত। আমি কোলে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাটছি।হঠাৎ ওর মুখের দিকে চোখ পড়ল,কেমন নিস্পাপ একটা মুখ, একটা মেয়ের ঘুমন্ত চেহারা।যা আজ আমি প্রথম দেখলাম। যতই দেখছি ততই ওর মায়ায় পরে যাচ্ছিলাম। বাসার গেইটের ভিতর ঢোকতেই মেয়েটা ফিক করে হেসে ফেলল। তারমানে এত সময় নাটক করছিল।

–আপনি নাটক করছিলেন?
–কেন,এখনও অবিশ্বাস হয়!
–আপনি আসলেই একটা বজ্জাত মাইয়া, আর খান কি হ্যা,
–কেন?
–এত ওজন।
–কি?
–হ্যা,
–চলেন।
–কোথায়?
–আপনার মা বাবার কাছে?
–কেন?
–বিচার দিব?
–বিচার কি?এতটা জায়গা কোলে করে আনলাম তা আবার বিচার?
–হ্যা বিচার!

বলেই বাসার ভিতরে ডোকে পড়ল।আল্লায় জানে আমার কপালে আজ শনি না রবি আছে। বাসার ভিতরে ডোকেই দেখি মাইয়া টেবিলে বসে খেতে শুরু করেছে।

–এসেই খেতে শুরু করেছেন!
–সারাদিন আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে খাওয়ার কথা প্রায় ভুলেই গেছিলাম। তখনই মা বাবা এসে হাজির!
–কে এই মেয়ে(বাবা)
–কেন,আমার কথা আপনার ছেলে বলেনি?
–কি বলবে(বাবা)
–আমি ওর পাগলী প্রেমিকা!
–মানে কি?
–ওর প্রেমে আমি পাগল তো,তাই ও নাম দিয়েছে পাগলী প্রেমিকা।

–এসব মিথ্যে। (আমি)
–মিথ্যে মানে, সারাটা পথ কোলে করে নিয়ে আসলে আর এখন বলছ মিথ্যে।
–তা নয় তো কি?বজ্জাত একটা।
–কোলে করে এনেছে।(মা)
–হ্যা,মা।

–তুই না বললি, তুই প্রেম করবি না।বিয়ে করবি না, তো এসব কি?
–মিথ্যে মিথ্যে!!
–মা,চারবছর ধরে ওর সাথে আমার সম্পর্ক!
–কি?(মা)
–ওসব কি বলছেন আপনি?
–ঠিকই বলছি, মা আপনি ওর ফোনটা নিয়ে দেখেন আমার নাম্বার ওর মোবাইলে পাগলী নামে সেইভ আছে কি না?
–তর মোবাইলটা দে?
–না! প্রায় টানতে টানতে মোবাইলটা নিয়ে গেলেন।এখন আমি শেষ, কেননা নাম্বারটা সেইভ আছে পাগলী নামে।

–আর আমাকে বিয়ে করবে বলে…..
–তারপর…..
–আমি বলতে পারব না মা(কাঁদোকাঁদো গলায়)
–কি?
–হ্যা,
–আমি আজই ওর সাথে তোমার বিয়ে দেব, মা। তুমি কেঁদ না।
–মা, ও মা (আমি)
–কি(ধমক দিয়ে)
–আমাকে ফাঁসিতে ঝুলাইয়ো না মা।
–আর আমি কোনো কথা শুনব না, আজই তোর বিয়ে।
–মা হয়ে ছেলেকে একটা ডাইনীর হাতে তুলে দিচ্ছ মা।
–চুপ।

ডাইনীটা কে আমার গাড়ে চেপে দিল মা। রাত একটা বাজে। আমি এখনও বাহিরে আছি। নিজের ঘরের ভিতরে ডোকতে সাহস পাচ্ছি না।আর পাব কিভাবে, যে একটা বজ্জাত ডাইনী আমার ঘর দখল করে আছে,ভিতরে ঢোকব কিভাবে? এদিকে শীতে আমি শেষ ওপরদিক মশার কামড়ে, তাই বীর পুরুষদের মত সাহস নিয়ে ডোকে পড়লাম। বাসরঘরে বউয়ের প্রথম ককথোপকথন…

–নিচে শুয়ে পড়?
–কেন?
–দেরি করে আসলে কেন, তারজন্য?
–এর জন্য নিচে শুতে হবে, এই শীতে?
–হ্যা,
–ক্ষমা করা যায় না?
–যদি একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেও!
–কি?
–বউ মানে কি?
–বউ মানে প্যারা।
–কি??? বাকিটা ইতিহাস সাক্ষী।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত