আপন মনে রাস্তা দিয়ে হাটতেছি। গরমকালে গ্রামের রাস্তাঘাটের ধুলোগুলো অনেক সুন্দর হয়। মেয়েদের মেকাপের মতো মিহি হয়। মনে হয় এসব মেখেই মেয়েরা সাদা কাগজ হয়। আজকাল গ্রামের মেয়েরাও খুব সুন্দরি হওয়া শুরু করছে। হয়তো এই ধুলোর কারিসমা। ছোটবেলায় এমন ধুলো পা দিয়ে উড়িয়ে উড়িয়ে নিয়ে যেতাম। এখনও উড়ালে মন্দ হয় না। কারন কবি বলেছেন,, যতই বড় হও মন যেনো পিচ্চিই থাকে। ধুলো উড়ানো শুরু করলাম। সেই ছোটবেলার মজাটা পাচ্ছি।
– এই ছেলে এভাবে ধুলো উড়াচ্ছো কেন।
গ্রামের মধ্যে এমন শহুড়ে ভাষা শুনে একটু অবাক হলাম। একটা সুট টাই পড়া লোক। দেখে মনে হচ্ছে অনেক বড়লোক হবে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা,, মনে হচ্ছে চশমা ছাড়া কানা। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ৩২ পাটি খুলে একটা হাসি দিলাম।
– ননসেন্স (লোকটি)
 – ধন্যবাদ (আমি)
 – ননসেন্স মানে নির্বোধ। গ্রাম্য মুর্খ কোথাকার।
 – জানি চাচা (মুখে হাসি ধরে রেখে)
 – জানো তাহলে দাত বের করছো কেন??
 – আসলে গ্রামে কেউ ইংরেজিতে গালি দেয় না তো,, এই প্রথম আপনি দিলেন তাই খুব খুশি লাগছে।
 – ইডিয়ট!! আমি এবার প্রশান্তির হাসি দিলাম।
 – তুমি তো অন্যরকম লেভেলের ফাজিল। (লোকটি)
 – নাহ এতোটাও জ্ঞানী নই আমি। এভাবে লজ্জা দিবেন না। (আমি লজ্জিত লুকে তাকিয়ে)
 – মানে,, তোমাকে আমি কখন জ্ঞানী বললাম?
 – ফাজিল মানে জ্ঞানী। ফাজিল আরবি শব্দ চাচা। চাচা রাগে দাত কড়মড় করছে। আব্বুর মতো স্বভাব। আমার আব্বুও এমন করে।
– তুমি কি এই এলাকার? (লোকটি)
 – জ্বি (আমি)
 – তাহলে আমাকে একটু সাহায্য করো। আমি ওনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত (আপদমস্তক) দেখলাম।
 – কি দেখো ওভাবে? (লোকটি)
 – আপনাকে দেখে তো ফকির লাগতেছে না। সাহায্য চাচ্ছেন কেন? (আমি)
 – ওও গড। আমার গাড়ি ওদিকে আটকে গেছে। একটু ঠেলা দেওয়া লাগবে। তুমি কি পারবে দিতে?
 – অবশ্যই,, কেন নয় (হাসি দিয়ে)
ওনি ওনার গাড়ির কাছে নিয়ে গেলেন। গাড়িতে তিনজন বসে আছে। ড্রাইভার আর দুজন মহিলা। ওনিও গিয়ে গাড়ির ভেতর বসে পড়লেন। আমি ড্রাইভারের পাশে বসলাম।
– কি ব্যাপার তুমিও বসে পড়লে যে,, গাড়ি ঠেলবে কে? (লোকটি)
 – ওহ তাই তো,, ভুলে গেছিলাম।বের হয়ে গাড়ি ঠেলা শুরু করলাম। গ্রামের ছেলে আমি গায়ে অনেক জোর। গাড়ি জায়গা মতো নিয়ে আসার পর লোকটি বললো,
– তুমি তো এই গ্রামের? (লোকটি)
 – জ্বি চাচা। (আমি)
 – মনোয়ার চেয়ারম্যানকে চিনো?
 – হ্যা চিনি।
 – ওনার বাড়ি কোথায় বলতে পারবে?
 – একেবারে নাক বরাবর চলে যান।
 – মানে?
 – সোজা যান।
ওনারা গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। আমি আমার মতো আবার ধুলা উড়াতে শুরু করলাম। বাড়তে এসে বাড়ির সামনে দেখি সেই গাড়িটা। মনে হচ্ছে আমাদের বাড়িতেই আসছে। হ্যা আমাদের বাসায়ই আসার কথা,, মনোয়ার চেয়ারম্যান আমার বাবা। আমি বাড়ির ভিতরে ঢুকে বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসলাম। আম্মু বললো,,
– ঢাকা থেকে তোর চাচারা আসছে। (আম্মু)
 – কোন চাচা? (আমি)
 – ঢাকায় তোর মনির চাচা থাকে না? ওনারা আসছে।
 – ওহ,, ওই গাড়িতে করে আসছে?
 – হুম,, তুই একটু বাজারে যা। তোর আব্বু যেতে পারবে না।
বাজারে ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছি,, কার সাথে যেনো ধাক্কা খেলাম। আমি ও বাবা গো মা গো বলে কোকাতে লাগলাম। যার সাথে ধাক্কা খাইছি সে কিছু বলার আগে বলে উঠলাম,
– ইটস ওকে,, আমি ঠিক আছি। (আমি)
 – চোখের কি মাথা খাইছেন? (মেয়ে)
 – নাহ,, মাথাসহ চোখ খাইছি। চোখের কি মাথা থাকে নাকি? মাথার নিচে চোখ থাকে।
 – ওই আপনি সেই ছেলেটা না?
 – কোন ছেলে?
 – আমাদের গাড়ি ঠেলে দিলেন।
বাবা এটা সেই ছেলে না? (সেই লোকটাকে দেখিয়ে) সেখানে আব্বুও ছিলো। আব্বু আমার সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি ওনার ছেলে এটা তারা বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
– তুমি মনোয়ারের ছেলে? (মনির চাচা)
 – জ্বি চাচা। (আমি)
 – সেই ছোটবেলায় দেখেছি তোমাকে। কতবড় হয়ে গেছো। শুনলাম ডাক্তার হইছো নাকি। রাস্তায় তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছিলো গ্রাম্য কোন চাষা।
 – ও এরকমই। সব সময় এভাবেই বেড়ায়। (আব্বু)
 – তা বাবা এখন কি করছো? শহরে জব করবে নাকি গ্রামের থাকবে। (চাচা)
 – মেডিকেল অফিসার হিসাবে এখানকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকবো। আচ্ছা চাচা বাজারে যাই৷ না হলে আপনাদের না খেয়েই রাখা লাগবে। অবশ্য তাতে আব্বুর সুবিধা। (আমি) আব্বুর দিকে তাকিয়ে দেখি রেগে গেছেন।
 – হাহাহা। তোমার আব্বু কিপটে সেটা আমি জানি। তবে নিজের ভাইকে না খেয়ে রাখবেন না।
বাজার করে বাসায় নিয়ে আসতেছি। অনেক জিনিস। বড় ডালি (ঝুড়ি) কেনা লাগছে নিয়ে আসার জন্য। শহরের মেহমান আসছে বলেই এতো খাতির। মাথায় ডালি নিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকার সময় কিছু একটার সাথে ধাক্কা খাইলাম। সব বাজার পড়ে গেছে। তখনকার সেই মেয়েটার সাথে ধাক্কা খাইছি। মানে আমার চাচাতো বোন। তার মাথায় ডিম ভেঙে পড়ছে। আর বাকি সব আমার গায়েই পড়ছে। সে রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– এভাবে ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন সিদ্ধ হয়ে যাবে। (আমি)
 – মানে? (রেগে মেয়েটি)
 – আপনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে মাথা গরম। আবার এই সময় মাথায় ডিম রেখেছেন। মাথা যা গরম হইছে তাতে ৫ মিনিটে সিদ্ধ হয়ে যাবে। আমার কথা শুনে সবাই হাসা শুরু করলো। আর মেয়ে রেগে বেলুনের মতো ফুলছে।
 – আর একটা কাজ করতে পারেন। একটু তেল মাথায় ঢেলে নিন। তাহলে সিদ্ধ ডিমের পরিবর্তে ভাজা ডিম খাওয়া যাবে। (আমি)
এবার তার রাগ চরমে উঠে গেছে। একটা লাঠি কোথায় যেনো খুজে পেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি দৌড়ে বাথরুমে চলে গেলাম। গোসল করে বের হয়ে ঘরে বসে টিভিতে গান শুনছি,, ও সাকি সাকি রে সাকি সাকি। এমন সময় চাচাতো বোন আসলো রুমে। আমার পাশে বসে পড়লো। রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টালো। দিদি নাম্বার ওয়ান,, দিদি নাম্বার ওয়ান। মেহমান তাই কিছু না বলে উঠে আসলাম। নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ছি। ৮টার দিকে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো। বাড়তে অনেক লোক। হৈচৈ শুরু হইছে।
– এতো লোক কেন বাড়িতে আম্মু (আমি)
 – রিক্তার বিয়ে তাই। (আম্মু)
 – রিক্তা কে?
 – তোর মনির চাচার মেয়ে।
 – ওর বিয়ে আমাদের বাড়িতে কেন?
 – এতো বুঝা লাগবে না,, তুই এটা(পাঞ্জাবি) পড়ে বাহিরে আয়।
 – কেন?
 – কেন আবার তোর সাথেই তো বিয়ে।
 – যাহ,, মজা কর না তো,, আমার বিয়ের কথা তুমি কানেই নাও না। আমি জানি তুমি ফাজলামি করছো।
 – কথা না বাড়িয়ে এইগুলো পড়ে আয়।
 – আচ্ছা
আমি জানি আম্মু ফাজলামি করছে। অন্য কোন কারনে পাঞ্জাবি পড়তে বলছে। পাঞ্জাবি পড়ে বাহিরে আসলাম। অনেক মানুষ। আমাদের আঙিনা ভর্তি। আব্বু চাচা সবাই হাসাহাসি করছে। আমি তাদের কাছে এসে বসলাম। আব্বু ঘোষনা করে দিলো আমাদের বিয়ে হবে। আজ দিন তারিখ ঠিক করা হবে। আমি সেখানে না থেকে ঘরে চলে আসলাম। আম্মু ঘরে কাজ করছে,,
– আম্মু তারমানে সত্যিই আমার বিয়ে দিবে। (আমি)
 – হ্যা। (আম্মু)
 – হঠাৎ করে বিয়ে দিতে চাচ্ছো কেন?
 – কেন? তুই কি বিয়ে করতে চাস না?? তাহলে সবাইকে বলি বিয়ে যাতে না দেয়।
 – আরে কি বলো,, আমি তো দুই হাতে রাজি।
 – মানুষ তো দুই পায়ে রাজি হয়।
 – আমি উল্টো হয়ে রাজি।
 – ফাজিল (হাসি দিয়ে)
এরপর নিজের ঘরে এসে নাচতে শুরু করলাম। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর থেকেই আব্বু আম্মুকে বিয়ের কথা বলছি। কিন্তু কানে তোলে নি কখনো। আজ হুট করে বিয়ের কথা বলছে। বিয়ের সময় মেয়ে দেখার একটা পর্ব থাকে। এখানেও সে রকম পর্ব চলছে৷ যদিও মেয়েকে সবাই দেখেছে। রিক্তাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে আমাদের সামনে রাখা হইছে। অনেক সুন্দর লাগছে তাকে। বুঝাই যাচ্ছে ওর বিয়েতে মত নেই। কিন্তু কিছু করার নেই। আমার আম্মু আলাদা রকম মহিলা। যা বলেন তাই করেন। রিক্তা আর আমাকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হলো,,
– আপনি কি এই বিয়েতে রাজি? (রিক্তা)
 – রাজি মানে,, আমি তো চারপায়ে রাজি। (আমি)
 – মানে কি? মানুষের তো পা দুটো।
 – আমি হামাগুড়ি দিয়ে রাজি।
 – শুনুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
 – কিন্তু এখন তো কিছু করার নাই।
 – কেন কিছু করার নাই??
 – আপনাকে আমার জন্য কে পছন্দ করছে জানেন?
 – আপনার আম্মু।
 – হ্যা। এইজন্যই আর কিছু করার নাই। আম্মু যা বলে তাই করে।
 – আমি এতো কিছু জানি না৷ আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
 – কেন?? বিএফ আছে আপনার?
– জ্বি??
 – ওহ এই জন্য। তো বিএফের সাথে পালিয়ে যান।
 – ওই হ্যালো। আমার কোন বিএফ নাই।
 – তাহলে যে জ্বি বললেন।
 – ওটা প্রশ্নবোধক জ্বি। কি বলছেন শুনি নাই।
 – ওহ তাই বলেন। তাহলে এখন আর কিছুই করার নাই। বিয়ে তো হবেই।
 – আপনি বিয়ে ভাঙবেন না??
– প্রশ্নই উঠে না। কতদিন ধরে আমার বিয়ে করার শখ। এখন তা পুরন হচ্ছে।
 – কোন যুক্তিতে আপনার মতো একটা গ্রাম্য ছেলের সাথে আমার বিয়ে হবে বলেন তো?
 – সবকিছু তো আর যুক্তিতে হয় না। যুক্তি অনুযায়ী তো তরমুজ বাংলাদেশের জাতীয় ফল হওয়ার কথা,, হয় নি তো।
 – মানে? তরমুজ কিভাবে?
 – দেখেন না তরমুজের বাহিরে সবুজ ভিতরে লাল।
 – আপনার ফালতু প্যাচাল রেখে বিয়ে কিভাবে বন্ধ করবেন ভাবেন।
এটা বলেই সে চলে গেলো। আমি ঘরের ভিতর নাচা শুরু করলাম। কত মজা বিয়ে করবো। পরেরদিন আবার রিক্তা আমার সাথে দেখা করলো। বাসার পাশে আম বাগানে দেখা করলাম
– শুনুন আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা কোনভাবেই সম্ভব না (রিক্তা)
 – কিছুই করার নাই রে বোন,, থুক্কু বউ (আমি)
 – আপনি কি বিয়ে ভাঙবেন না? (রেগে)
 – নাহ,, কিছুতেই না।
 – দেখুন আপনি যদি আমাকে বিয়ে করেন তাহলে আমি বিয়ের রাতেই পালিয়ে যাবো।
 – তা বিয়ের আগে পালাবেন না বিয়ের পরে? বিয়ের পরে পালালে আমাকেও সাথে নিয়েন। বিয়ের পর বউ ছাড়া থাকতে পারবো না।
– আপনি আমার সাথে মজা করছেন?
 – নাহ তো।
 – এই বিয়েটা হলে আমি সুইসাইড করবো।
 – বলেন কি? এতো কম বয়সে আমাকে বিধব করবেন।
 – বিধব কি?
 – বিধবার পুরুষ ভার্সন বিধব। বিধব – বিধবা। (হাসি দিলাম। এতে রিক্তা আরো জ্বলে গেলো)
 – আপনাকে আমি,,,,,,
 – আচ্ছা কাজের কথায় আসি। কিভাবে সুইসাইড করবেন কিছু ভাবছেন? আমার কাছে ভাল ভাল প্লান আছে। ধার নিতে পারেন।
 – চুপ….
ধমক দিয়ে চলে গেলো। আসলে আমিও চেষ্টা করছিলাম যাতে বিয়েটা না হয়। কিন্তু আম্মুর কাছে গিয়ে ভয়ে বলতে পারি নি। আব্বুকে বলেছিলাম অবশ্য। কিন্তু আব্বু সেই লেভেলের ধমক দিছে। আমার হাত পা বাধা। কিছুই করার নেই।
@বিয়েরদিন অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হচ্ছে। সবাই ভীষন খুশি। শুধু রিক্তা বাদে। তবে রিক্তাকেও মন মরা দেখাচ্ছে না। কি ভাবছেন মেনে নিছে? না রে ভাই,, তিনচারটা ক্যামেরা ওর চারপাশে। বিয়ের কনে বলে কথা। বাসর রাত ঘরের ভিতর ঢুকতে ভয় লাগছে। যদিও ওটা আমারই ঘর। এক বুক সাহস নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। নিজেকে বাংলা সিনেমার নায়ক মনে হচ্ছে। সেই রকম একটা মুড নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম সিনেমার মতোই রিক্তা উঠে এসে আমাকে সালাম করবে। এমন কিছুই হল না।
রিক্তার পাশে গিয়ে বসলাম। মনে হচ্ছে না সে বিয়ের কনে। বিছানায় লম্বা করে পা দিয়ে আধশোয়া হয়ে ফোন টিপতেছে। দুই তিন বার কাশি দিলাম যাতে কথা শুরু হয়। প্রতিবারই সে আড়চোখে একটু দেখে আবার ফোনে মনযোগ দিচ্ছে। কি একটা বিরক্তিকর অবস্থা। আমিও আমার মোবাইল নিয়ে ফেসবুকিং শুরু করলাম। রিক্তার আইডিতে ঢুকে একটা পোস্ট দেখলাম,, জীবনের সব স্বপ্ন শেষ। বুঝলাম না বিয়ে হলে সব স্বপ্ন শেষ হবে কেন। ওই পোস্টে দাত বের করা একটা হাসির ইমোজি দিলাম । এতোমধ্যে আধা ঘন্টা চলে গেছে। কোন কথা হয় নি। এভাবে থাকতে ইচ্ছা করছে না। কিছু একটা করতেই হবে। গান গাওয়া শুরু করে দিলাম,, “তুমি দিও নাকো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া আমি অন্ধকারে ডাইনি দেইখ্যা যামু চমকাইয়া” রাগি চোখে সে আমার দিকে তাকালো,,
– সমস্যা কি আপনার? (রিক্তা)
 – এভাবে বোরিং লাগছে। তাই গান গেয়ে নিজের মনোরঞ্জন করছি। (আমি)
 – এতো গান খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে বাহিরে যান।
 – বাহিরে যাব কেন? আজ আমাদের বাসর রাত। রুমে থাকবো।
 – দেখুন আমার মাথা গরম করবেন না। আমি এই বিয়ে মানিই না। আপনি কি বাহিরে যাবেন নাকি আমি চিৎকার করবো।
 – আমি বলছি কি…..
 – বের হবেন,, না হলে অনেক ঝামেলা হবে কিন্তু (চিৎকার করে)
ভয় পেয়ে বাহিরে বেড়িয়ে আসলাম। কি ডাইনি রে বাবা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার কপালে বাসর ঘর নাই। বাসর বারান্দা আছে। বৃষ্টি হচ্ছে। বাহিরে যাওয়ার কোন উপায় নাই। তিনচার বার রুমে উকি দিয়ে দেখছি রিক্তা কি করছে। সেই ফেসবুকই চালাচ্ছে। আবার উকি দিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেলাম,,
– সমস্যা কি আপনার? এভাবে উকি দিচ্ছেন কেন? (রিক্তা)
 – না মানে,, আপনার জন্য একটা গিফট ছিলো। সেটা দিতে আসছি। (আমি)
 – আমি আর সহ্য করতে পাচ্ছি না আপনাকে। (রেগে)
 – আরে আপনার খুব দরকারি গিফট। খুব কাজে লাগবে আপনার। (বলতে বলতে রুমে ঢুকলাম) ওর দিকে একটা ছোট গিফট বক্স এগিয়ে দিলাম। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা রেখে সেটা হাতে নিলো। খুলে দেখতে লাগলো কি আছে ভিতরে।
– কি এইগুলো? (রিক্তা)
 – ব্লেড। (আমি)
 – ব্লেড দিয়ে আমি কি করবো?
 – সুইসাইড করবেন।
 – কিইই
– আপনিই তো বলেছিলেন এই বিয়ে হলে সুইসাইড করবেন। তাই ব্লেড দিলাম আপনাকে। দুইটা কম্পানির ব্লেড আনছি। যেটা পছন্দ হয় রেখে দিয়ে অন্যটা আমাকে ফিরত দিবেন। রিক্তা রেগে আগুন হয়ে আছে। এক্ষুনি হুংকার দিয়ে উঠবে এমন,,
– এই ব্লেড দিয়ে তোর গলা কাটবো কুত্তার বাচ্চা। যা বের হও। (রিক্তা)
আমি দৌড়ে বাহিরে বেরিয়ে আসলাম। আবার সেই বৃষ্টি দেখা শুরু করলাম। কয়েকবার উকি দিয়ে দেখছি সে কি করে। ব্লেড দিছি, সত্যি সত্যি যদি সুইসাইড করে। কিন্তু তেমন কিছু না করে আগের মতোই ফোন টিপতেছে। একটু পর রিক্তা দরজার কাছে আসলো,,
– এই যে শুনছেন? (রিক্তা)
 – কি? (আমি)
 – আমার খুব খিদা লাগছে।
 – তো?
 – আমার জন্য খাবার নিয়ে আসেন।
 – বাসায় সবাই ঘুমাইছে। এতো রাতে এই বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে যাবো কিভাবে? রিক্তা ঘরের ভিতর চলে গেলো। একটা ছাতা নিয়ে এসে আমাকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– জান আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসেন। (রিক্তা)
 – বাব্বাহ এতো উন্নতি। জান ডাকছেন। (আমি)
 – ওই হ্যালো,, এই জান সেই জান না। এই যান মানে Go
 – ওহ আমি তো ভাবলা…
 – ওতো না ভেবে চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে আসেন।
ছাতা নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। বউয়ের প্রথম আবদার রাখতে তো হবেই। আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে ভিতরে গেলাম। রিক্তা অনেক খুশি হলো। বাচ্চাদের মতো খেতে শুরু করে দিলো। আমি হা হয়ে তাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
– এমন হা করে তাকিয়ে আছেন কেন? যান বাহিরে চলে যান। (রিক্তা)
 – বলছিলাম কি (আমি)
 – কোন কথা নয়। বাহিরে যাবেন এক্ষুনি।
আবার বাহিরে চলে আসলাম। বৃষ্টি এখন অনেক কমছে। শুনছিলাম বাসর রাতে বৃষ্টি হলে সংসারে নাকি শান্তি হয় (কুসংস্কার)। আমার তো বাসর রাতই হচ্ছে না,, আর সংসার,, শান্তি। অনেকক্ষন হলো তাড়িয়ে আছি। রিক্তা এসে আমার পাশে দাড়ালো। বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকলাম।
– এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করেন? (রিক্তা)
 – গান খাই,, আর নাচি। (আমি)
 – কই আমি তো আপনার নাচ দেখছি না।
 – মনে মনে গান গাইতেছি আর নাচতেছি।
 – হইছে আর গান গাইতে হবে না। ভিতরে চলেন। শুনে আমার আনন্দে লাফাতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু সময় এসেছে আমার ভাব নেওয়ার।
– নাহ। আমি ঠিক আছি। (আমি)
 – ভিতরে আসতে বলছি আসেন। (রেগে)
 – বৃষ্টি দেখবো আমি।
 – অনেক বৃষ্টি দেখছেন এখন আমাকে দেখবেন।
এটা বলে হাত ধরে টানতে টানতে আমাকে ঘরের ভিতর নিয়ে যাচ্ছে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি? পরীক্ষা করে দেখা উচিত। রিক্তার হাতে চিমটি দিলাম।
– উহহ,, চিমটি দিলেন কেন? (রিক্তা)
 – স্বপ্ন দেখছি কি না শিওর হলাম। (আমি হেসে)
 – তো নিজের গায়ে চিমটি দেন
 – লাগে তো।
রাগি মুখে আমার দিকে তাকালো। কিছু বললো না। আমিও কিছু বললাম না। অনেক্ষন চুপ করে আছি দুজনে। সে এখন আর ফোন টিপছে না।
– কিছু বলছেন না যে (রিক্তা)
 – কি বলবো? (আমি)
 – বাসর রাতে বৃষ্টি হলে কি হয় জানেন?
 – হু জানি তো
 – বলেন তো
 – বউ জামাইকে ঘর থেকে বের করে দেয়, আবার টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে। আমার কথা শুনে সে একটু হাসলো। কত সুন্দর তার হাসি। আবার কিছুক্ষন চুপ।
– বাসর রাতে বৃষ্টি থেমে গেলে কি হয় জানেন? (আমি)
 – না তো। (রিক্তা)
 – বর বউকে নিয়ে ছাদে যায়। আমার সাথে ছাদে যাবেন একটু?
 – কেন?
 – চাঁদকে কিছু দেখাতে চাই।
 – মানে?
 – আসলে চাঁদের অনেক অহংকার নিজেকে নিয়ে। আমি তাকে দেখাতে চাই তার চেয়েও সুন্দরি আছে পৃথিবীতে।
 – তাই? (লজ্জামিশ্রিত হাসি) ছাদে আসার পর চাঁদের দেখা পেলাম না। আকাশ মেঘলা।
– কই আপনার চাঁদই তো নাই। (রিক্তা)
 – ভয় পাইছে। (আমি)
 – কেন?
 – তোমার সৌন্দর্য দেখে ভয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে। আজ আর দেখা দিবে না মনে হয়।
 – হাহাহা। (মুক্তঝড়া হাসি)
 – চাঁদ তোমাকে দেখে জেলাস করে জানো?
 – আপনার এই পাম দেওয়া কতক্ষন চলবে শুনি? আমি টায়ার না বুঝলেন?
 – চলুন চাঁদকে আর একটু জ্বালাই।
 – চাঁদই তো নাই।
 – আছে। মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আমাদের দেখছে।প
 – তাই? তো কিভাবে জ্বালাবেন?
 – আপনার জামাই আছে, কিন্তু চাঁদের নেই। আপনি যদি আপনার জামাইয়ের হাত ধরে কাধে মাথা রাখেন তাহলে চাঁদ অনেক জ্বলবে।
 – তাই?
 – হুম।
এরপর কিছুক্ষন নিরবতা। রিক্তা আমি কেউ কোন কথা বলছি না। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। চাঁদ দেখা সম্ভব না আজ। কি করে দেখা যাবে, আমার পাশে যে আছে সে চাঁদের চেয়েও সুন্দর। রিক্তা আমার কাছে এসে আমার হাত ধরলো। কাধে মাথা রাখলো।
 
  
 Loading...
Loading...













