সোমা’র মন খুবই খারাপ। কারণ, এবার ঈদে তার তেরো বছর জীবনের সবচেয়ে বেশী জামা আর গিফট পেয়েছে সে। চাচারা, আন্টি, ফুপি, মামা, নানু , এমনকি মায়ের কাজিন আন্টিরাও গিফট এনেছে। কেন আনবে তারা ! আর এইটাই তার মন খারাপের উৎস।
“আম্মু ,সব গিফট ফেরত দাও। আমি এখান থেকে একটা কিছুও পরবোনা।”
মাকে বলে সে।
– না মা …
সবাই কষ্ট পাবে। ভালোবেসে এনেছে।
-কই এতো বছর তো আনে নাই। এতো বছর ভালোবাসা ছিলোনা?
-এতো বছর তোর আব্বু ছিল..
-সেটাই , এতো বছর আব্বু ছিলো। এখন নেই, সেটা জানাবার জন্যই কি এত গিফট?
ফেরত না দিলে ফেলে দাও , আমি পরবোনা। আমি আমার আব্বু’র আনা জামা পরবো।
-এতো জিদ করতে নেই মা। মেয়েদের এতো রাগ দেখাতে নেই…
-জিদ কোথায় করছি?
-এই যে করছিস, ফেরত দাও, ফেলে দাও…
এখন তোর আব্বু নেই। সবার মন জুগিয়ে চলতে হবে তো।
-আব্বু নেই আব্বু নেই করবেনা। আমার আব্বু আছে। আল্লাহর কাছে আছে।
সোমা’র আম্মুর চোখ ভিজে উঠে মেয়ের কথায়। মেয়েটা তার আব্বু নেই সেটা মানতেই চায়না। খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলো মিজান!
ক’দিন পর….
-আম্মু , তুমি এখন ঘরের কাজ বেশি করছো কেন?
-কই বেশি করছি!
-বেশি করছো। আগে সবাই ভাগাভাগি করে কাজ করতো, একেকজন একেকটা।
-এখনো করছে তো।
-মিথ্যা কথা, এখন সারাক্ষণই তোমাকে খুঁজতে রান্নাঘর যেতে হয় কেন তাহলে!
মা গোপনে আবারো চোখ মুছে।
কিভাবে মেয়েকে বুঝায়। এখন তারা অতিরিক্ত দু’টি মুখ হয়ে গেছে। না চাইলেও বেশি কাজ করতেই হবে, এ যেন অলিখিত নিয়ম।
মায়ের ফোন বাজে।
-হ্যালো …
-হ্যালো ভাবী , ভালো আছেন ?
-আসসালামুআলাইকুম। আমি ভাবী নই, আপনি কে?
-ওয়াইলেকুম সালাম । ভালো আছো আম্মু ? আমাকে চিনবেনা। আমি তোমার বাবা’র বন্ধু ছিলাম। তোমার মাকে দাও তো মা।
-আম্মু তো কাজ করছে, ফ্রি হলে বলবো।
-ঠিক আছে।
-আম্মু আম্মু, ঐ নামের আংকেলটা তোমাকে ফোন করেছে কেন? আমি তো চিনিনা।
-বাদ দে মা , বুঝবিনা তুই। সবাই আছে তার তার ধান্দায় । ফোন আসলে ধরিসনা, কেটে দিস।
-আচ্ছা, তুমিও ধরবেনা কিন্তু।
-হ্যাঁরে, ধরবোনা।
বছর ঘুরে আবার ঈদ আসে। চাচ্চু ডাকেন জামা নিতে । এ বছর আর কেউ গিফট নিয়ে আসেনা। খাটের উপর একটা সাধারণ সুতির জামা।
-নে, তোর ঈদের জামা। পরে দেখিস ফিট হয় কিনা ।
পাশে সমবয়সী চাচাত বোন অপরাধীর মতো হাতে তার জামার পেকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওটা চকমকে কারুকাজ খচিত।
রুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে সোমা।
-বাবাটা কেন মরে গেলো, কেনো মরে গেলো মা।
-কি হলো কাঁদছিস কেনো?
-এই দেখ মা, এটা আমার ঈদের জামা।
-সুন্দর তো মা।
-সুন্দর! ঝুমা’রটা আর আমারটা এক নয় মা। প্রতিবছর বাবা’র আনা একই জামা পরে আমরা দু’জন ঈদ করতাম। সবাই বলতে, জমজ বোন। আর আজ!
-আমার মেয়েটা এমনিতেই এতো সুন্দর, কিউট, পঁচা জামাতেও সুন্দর লাগবে।
আর দেখ, এটাও কিন্তু তত অসুন্দর জামা না।
-হু আর মিথ্যা বলতে হবেনা। আমি ঠিক আছি।
-এইতো গুড গার্ল …
মা হেসে গালটা টেনে দেয়। মেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে থাকে অনেক্ষণ । যেন ভারি হয়ে থাকা বুকটা হালকা করতে চায়, মায়ের বুকের উষ্ণতায়।
২৮.০৪.১৭