তোমাকে বলছি “আভা” (আমি ভালবেসে ওকে আভা নামে ডাকতাম) লেখার শুরুতে আমি অনুরোধ করছি নির্জনে ও গভীর রাতে ছাড়া পত্রটি পড়বেনা। কারন পত্রের কথাগুলো তুমি গভীর রাতে ছাড়া অনুভব করতে পারবেনা। কা…রন, গভীর রাতে মানুষ কৃত্তিমতা ছেড়ে ধরাদেয় নিজের মনের কাছে। এখন রাত ১.৪৫ মিনিট। কেমন আছো তুমি? অবাক হচ্ছো? আসলে অবাক হবারই কথা।
যে মানুষটি আগে চোখ বন্ধ করেও বলেদিতে পারতো তুমি কেমন আছো, সে আজ নিজেই জানতে চাইছে!!! আমি ভালো নেই। ভেবেছিলাম তোমাকে ভুলে যেয়ে ভালথাকব। কিন্তু না পেরেছি তোমাকে ভুলতে, না পেরেছি ভালথাকতে। মনের উপর শাসন চলেনা, বিপরীত ফল হয় তাতে। তাই হয়ত তোমাকে যতই ভুলতে চাচ্ছি ততোই তুমি দৃড়ভাবে আঁকড়ে যাচ্ছ আমার হৃদয়পটে।
তুমি আমাকে যে নিস্বাথ্ ভালোবাসা দিয়েছ তা সত্তিই ভুলবার নয়। আসলে প্রিয় মানুষদের আগলে রাখার ক্ষমতা সবার থাকেনা। তবে তোমাকে আগলে রাখতে না পারলেও আগলে রেখেছি আমাদের স্মৃতিগুলো। আচ্ছা, তুমি কি এখন আর চাঁদ দেখ? শত ব্যস্ততার মাঝে আমি এখনো চাঁদ দেখি। আর সভাবসুলভ ভাবেই ফোন দিই তোমাকে। যদিও অপরপ্রান্ত থেকে প্রতিদিনই দুঃখিত শব্দটি ভেসে আসে। চাঁদই এখন আমার একমাত্র বন্ধু। আমি তাকে যতো কটুকথায় বলিনা কেন, সে আমার উপর একদমই অভিমান করেনা।
শুধু একদৃষ্টিতে চেয়েথাকে আমার দিকে, আর দেখে আমার সরলতাই ভরা পাগলামি। তবে যখন তার হৃদয় আকাশ মেঘলা থাকে, তখন সে আমার উপর কিছুটা অভিমান করে। পরক্ষনেই মেঘের আড়াল থেকে ছুটে আসে আমায় দেখবার জন্যে। আমি তার সাথে কথা বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ি, তখনও সে জানালা দিয়ে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে হাসতে থাকে। তাকে বিদায় জানাবার আগে আমি ঘুমিয়ে পড়লেও তার চোখে থাকেনা কোন অভিমানের চিহ্ন। চাঁদ ছিল আমাদের ভালবাসার নিরব সাক্ষী। তোমাই ভালবেসে চাঁদকে যখন দেখতাম মনেহতো, চাঁদটা টিপ হয়ে তোমার কপালে শোভা পাচ্ছে।
এখন চাঁদকে আর আগের মতো সুন্দর লাগেনা, হয়তো আমাদের ভালবাসার এমন করুন পরিনতি সইতে না পেরে চাঁদ নিজেই নিজেকে করেছে ক্ষত-বিক্ষত। আমাকে দেখলেই এখন সে মেঘের আরালে লুকায়। আভা আমি এখন বড় অগোছালো। তোমার দেয়া গোলাপের চারাগুলো যত্নের অভাবে শুকিয়ে, গেছে ঠিক আমার চোখের জলের মতোই। ছেলেরা সাধারনত তাদের কান্না কাওকে দেখতে বা অনুভব করতে দেইনা। তাই হয়তো আমার কান্নাও তুমি কখনো অনুভব করতে পারনি। মাঝে-মধ্যে আমি কখন যে কি করে বসি তা নিজেও বুঝতে পারিনা।
নিজের অজান্তেই অন্যদের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলি। মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হয়, হে নিষ্ঠুর পৃথীবি আমি আর পারছিনা। কেন জানিনা প্রিয় মানুষদের কষ্ট দিতে আমার খুব ভাল লাগে। আভা সত্যি বলছি, এগুলো আমার ইচ্ছাকৃত না। আসলে আমার জীবনটা এমনই, ঝড়ো হাওয়ার মতো গতিময় কিন্তু উদ্দেশ্যবিহীন। এই দেখ, হঠাৎ তোমার জীবনে আসলাম, ভালোবাসি বললাম, আবার হঠাৎই সব থমকে গেল। কি এমন বলেছিলাম, যে এভাবে আমাকে ছেড়ে চলেগেলে? শুধু মুখের কথাটাই দেখলে, আমার মনের ভাষাটা একবারও বুঝতে চেষ্টা করলে না।
তুমি না আমাকে অনেক ভালবাসতে!!! আমি বকাদিলে, তোমার ফোন রিসিভ না করলে তুমি খাওয়া বন্ধ করে দিতে। তোমার আম্মু ফোন দিয়ে আমাকে সব বলতো। তখন আমি ফোন দিয়ে অনেক চেষ্টা করে তোমার রাগ ভাঙ্গাতাম। খুব ভাললাগতো তোমার এই ভালোবাসা। আভা, আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি কিন্তু সেটা বোঝানোর ক্ষমতা আমার নাই। যদি পারতাম তাহলে এই নশ্বর পৃথিবীকে জানিয়ে দিতাম তোমাকে কত ভালোবাসি। আমি আগে রাত জাগতে পারতাম না।
তোমার রাতজেগে কথা বলতে ভাললাগত, তাই আমাকে অনেক রাত জেগে তোমার সাথে কথা বলতে হয়েছে। কখনো বলিনি আমার ঘুম আসছে। আমি জানি প্রত্যেকটা মেয়েই একটু অবুঝ টাইপের হয়। যতই ভালোবাসা হয় ততই শিশুর মত অবুঝ হয়ে ওঠে। হঠাৎ একটু কষ্ট পেলে সয়তে না পেরে কেঁদে ফেলে। কিন্তু তারা বোঝেনা এই কষ্টের পেছনেই ছিল প্রিয় মানুষটির দেয়া কতটা ভালোবাসা। আমি কখনো তোমাকে কাঁদাতে চাইনি। তুমি যদি আমার ভালবাসাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে তাহলে কখনই আমাকে ছেড়েযেতে পারতে না।
তোমার তো ছিল একটাই অভিযোগ, আমি খুব রাগী আর আমার ভেতর সমঝোতা নামক জিনিষটা নায়। জানো, আমি এখন আর একদম রাগ করিনা। আমার সব রাগ এখন স্বপ্নে পরিনত হয়েছে। আমার প্রিয় একটা নদী আছে। ইচ্ছা ছিল আমরা প্রায়ই সেখানে ঘুরতে যাব। নদীটার খুবকাছেই থাকবে আমাদের একটা বাংলো। বাংলোটার থাকবে অদ্ভুত সুন্দর একটা নাম। নামটা হবে অবশ্য তোমার পছন্দের। বাংলোটির খুবকাছেই থাকবে শ্বেতপাথরে বাঁধানো একটা ঘাট।
আমি ঘাটের উপরের দিকের সিঁড়িতে বসে থাকবো, আর তুমি জলের খুব নিকটে তোমার কোমল পা দুটি জলে ছুঁয়ে বসে থাকবে। আর মাঝে মধ্যে আমার দিকে একটু করে জল ছিটিয়ে দিবে। থাক এসব কথা। আমি হয়তো স্বপ্ন একটু বেশিই দেখি। সবকিছু নিজেরমত করে ভাবতে চাই। আমি মাজার শরীফ তেমন বিশ্বাস করিনা। তবু কোন বড় পীরের মাজারে ভ্রমনে গেলে শুনতাম, পীরদের নামে মান্নত করলে নাকি মনের আশা পুরন হয়।
তখন আমি আধা বিশ্বাস নিয়ে মনে মনে শুধু তোমাকেই চাইতাম। হয়তো মনে বিশ্বাসের কমতি থাকার কারনেই তোমাকে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি। শুনেছি একান্ত মনথেকে কোনকিছু চাইলে সেটা পুরন হয়। আমি আমার অন্তরের গভীর থেকে চাই, তোমার ভালবাসার মানুষ যেন পৃথীবিতে সবচেয়ে তোমাকে বেশি ভালবাসে।
তুমি যেন জীবনে অনেক সুখি হতে পার। আর আমার জীবন? আমার জীবন যেন খোদা আমার চোখের জলের মতই নিঃশব্দে ও সবার অজান্তে ইতি ঘটিয়ে দেয়। আভা, বল আমি কি করবো? আমার একদিকে প্রথম প্রেম আর একদিকে তুমি। না ভুলতে পারছি তোমাকে না ওকে। আমিতো তোমাকে সাকিলার কথা নাও বলতে পারতাম। কিন্তু আমি বলেছি যাতে তুমি আমাকে কখনো অবিশ্বাস করতে না পার। এটাই কি আমার অপরাধ? জানো, কখনো কখনো মনে হয় আমি সেই নদীটার ধার দিয়ে একমনে হাঁটছি আর ক্লান্ত হয়ে সেই শেতপাথরে বাঁধানো ঘাটটিতে বসছি।
আর কানপেতে আছি শুধুমাত্র একটি কথা শোনার অপেক্ষাই “জান আমি ফিরে এসেছি”। দেখ, হঠাৎ আবার কি পাগলামি শুরু করলাম। জানো, আমি এখন এমনই হয়েগেছি। যেখানে যা না বলার তাও বলে ফেলছি। আজ তোমাকে ফেরানোর জন্য আমার এই চিঠি নয়, আমার অপ্রকাসিত ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্যই আমার এই চিঠি।
আমি নিশ্চিত জীবনে কোন একদিন তুমি আমার ভালবাসাকে হৃদয় থেকে অনুভব করতে পারবে। আর সেদিন আমার উদ্দেশে তোমার মুখ থেকে করুনার স্বরে একটি কথাই উচ্চারিত হবে “ কিছু মানুষ হয়তো এভাবেই নিঃস্বার্থভাবে অপরকে ভালবেসে কষ্টপেতে পৃথিবীতে আসে”। আভা আমি সত্যিই আর পারছিনা। একলা নদীরতীরে হাঁটতে হাঁটতে আজ বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ভেবেছিলাম অন্যতম সার্থক LOVE STORY গুলোর মত আমাদের টারও হবে একটা HAPPY ENDING.
আর আমার মনে হয় কি জানো আমাদের LOVE STORY এর ENDING টা HAPPY না হলেও কিন্তু সার্থক। কারণ দুজনের মধ্যে এখনো রয়েছে যথেষ্ট ভালোবাসা। আভা ফেরার কি আর কোন উপাই নেই? আমি আবার তোমার সাথে রাত জেগে চাঁদ দেখতে চাই, তোমার সাথে অনেক রাত পর্যন্ত ফোনে কথা বলতে চাই। নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলা যে কত কষ্টের আর তাকে সামনে পেয়েও নিজের করে না পাওয়া যে কি দুঃসহ তা আমি তোমাকে বোঝাতে পারবনা।
কি বলবো, হয়তো হাতের রেখায়ই তুমি নাই। যদি কখনো শুনো আমি আর নেই, অবিশ্বাস করোনা। কারন বেঁচে থেকেও আমাকে এখন মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতে হচ্ছে। আমি এখন স্পষ্ট শুনতে পাই মৃত্যুর পদধ্বনি। হয়তো আমার নিয়তি এটাই। তুমি সুখে থেকো। আর বেশি লিখছিনা, রাত চারটা বেজে গেছে। আর বেশি বড় লিখলে হয়তো তুমি কখন পড়াই বন্ধ করে দেবে। তখন দেখা যাচ্ছে আমার পত্রেরও HAPPY ENDING হচ্ছে না।
তোমার কাছে আমার শেষ অনুরোধ, আমার মৃত্যুর খবর শুনে কিছু না হলেও আমার এই পত্রটি লিখতে যে ক-ফোটা চোখের জল পড়েছে, ভালবেসে আমার স্মৃতির উদ্দেশ্য অন্তত সে ক-ফোটা চোখের জল তুমি ফেলো। হয়তো সেটাই হবে আমার LIFE এর HAPPY ENDING. ইতি আর কে হবে….