সন্তান

সন্তান

– বাহ্ ভাবি তোমার এই কানের দুলটাতো খুব সুন্দর । দেওতো একটু পরে দেখি আমাকে কেমন লাগে ? ওমা!! দেখ ভাবি আমার কানে কি সুন্দর মানিয়েছে! এইটা আমি নিয়ে যাই তুমি আরেকটা কিনে নিও ।

– আমি সাধারণত নিজের জন্য কোন কিছু পছন্দ করে কিনি না । আমার যখন যা লাগবে রাশেদ কে বললে ও নিয়ে আসে । আমার শাশুড়িমা বিয়ের পর আমাকে বলে দিয়েছেন এত বেশি মার্কেটে মার্কেটে ঘুরবা না । তোমার যা লাগবে রাশেদ কে বলবে ও সময় করে নিয়ে আসবে । উনার কথা মত রাশেদ ও আমাকে নিয়ে তেমন একটা বাহিরে যেতো না ।

প্রথম প্রথম মন খারাপ হলেও আস্তে আস্তে এইটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে । গত পরশুদিন আমার ১৪ বছরের মেয়ের আবদার পূরণ করতে ওকে নিয়ে “নবরুপাতে” গিয়েছিলাম । কি যে সুন্দর লাগলো আমার কাছে । কত মেয়েরা নিজেদের মত স্বামী- সন্তান নিয়ে কেনা-কাটা করছে। নিজের অজান্তেই আমার বুক ছিরে দীঘশ্বাস বের হয়েছিল । মনে হয়েছে আহ্ আমি যদি রাশেদ আর বাচ্চাদের নিয়ে এমন করে বের হতে পারতাম ; সেই দোকান থেকেই এই দুলটা আমি পছন্দ করে কিনেছিলাম । এখন আমার একমাত্র ননদের এই কথায় আমি অসহায় ভাবে বললাম নিয়ে যাও নিতু আমি কি আর বাহিরে কোথাও যাই? শুধু শুধু ঘরে পড়ে থাকবে, তুমি নিলে তো পরে বের হতে পারবে । এই সময় আমার মেয়ে জারিন এসে ওর ফুফুর পাশে বসে বলল ফুফু তোমার গলার এই হারটা কি নতুন নিলে?

– হ্যাঁ রে সেই দিন যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে কিনলাম কি সুন্দর তাই নারে?
– হুম অনেক সুন্দর । এক কাজ কর তুমি এই হারটা মা কে দিয়ে দেও
– ওমা সেকিরে এই হারটা আমি কত শখ করে কিনলাম যে !!
– তাতে কি হয়েছে ফুফু? মা ওতো এই দুলটা পছন্দ করে কিনেছে । তুমি যে নিয়ে গেলে মা কি কিছু বলেছে?? শুধু এই দুল কেন মায়ের যা কিছু তোমার পছন্দ হয় তুমিতো সব সময় নিয়ে যাও মা কি তোমাকে নিষেধ করে ? করে না তো ।

জারিনের কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম । ও যে ওর ফুফুকে এই কথা বলল এইটা যদি ওর বাবা আর দাদির কানে যায় তাহলে দক্ষযজ্ঞ হয়ে যাবে । আমার ননদ রাশেদ আর মায়ের চোখের মনি । আমাদের সংসারের যাবতীয় সিধান্ত এখনও ওর কথা মত হয়ে থাকে । জারিনের কথা শুনে আমার ননদের মুখ অন্ধকার হয়ে গেল । আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম এই নিতু তুমি কিছু মনে করোনা জারিন দুষ্টুমি করেছে । আমার ফাজিল মেয়ে ধুম করে বলল না তো ! আমি দুষ্টুমি করেছি কে বলল মা ? আমি তো সত্যি কথাটা বললাম । ওর কথা শুনে আমার ননদ সাথে সাথে তার কান থেকে দুল খুলে নিচে ছুড়ে ফেলে দিয়ে উঠে মায়ের রুমের দিকে চলে গেল । আমি মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলাম ।

– জারিন এইটা তুই কি করলি? কি দরকার ছিল এই কথা বলার ?

– শুন মা , কিছু বলনা দেখেই এই অবস্থা । কখনো তোমার ভাল কিছু দেখলেই ফুফু নিয়ে যায় । এইটা কেমন কথা ? তুমি তো বাহিরে কোথাও যাও না । কিন্তু ফুফুতো যায় । নিজেই পারে এর থেকে ভাল জিনিস কিনতে । কিন্তু না ; সব সময় তোমার জিনিসে ভাগ বসাতে হবে বিরক্তকর । বলেই ও উঠে চলে গেল ।

কিছুক্ষন পরে আমার ননদ কাঁদতে কাঁদতে মায়ের রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল । যাবার আগে আমি কতবার ওর হাত ধরে বলেছি নিতু খেয়ে যাও । তোমার জন্য তোমার পছন্দের গরুর কালা ভুনা করেছি । ও বলল না ভাবি তোমার মেয়েকে তুমি যে কথা শিখিয়েছ তা শুনে আমার পেট ভরে গেছে । গরুর কালা ভুনা তোমার মেয়েকে খাওয়াও । তোমার জিনিস আমি নিয়ে যাই এই কথা জারিন কি ভাবে বলল ? এই জিনিস কি তুমি তোমার টাকা দিয়ে কিনেছো ? এইগুলো তো আমার ভাইয়ের টাকা দিয়েই কিনা । আমার ভাইয়ের টাকায় কিনা জিনিসে আমার কোন হক নেই ? বলেই ও হনহন করে বের হয়ে চলে গেল । আমি ওর কথা শুনে চুপ করে থাকলাম ।

মেয়েকে আমি কেন শিখাবো ? সব সময় আমার দুই ছেলে মেয়ে যদি ভাল কিছু করে তা হলে সেই গুন হয়, ওদের ফুফু থেকে পায় আর না হলে ওদের দাদা, দাদি , বাবা থেকে পায় । আর যদি খারাপ কিছু করে তখনি আমাকে শুনতে হয় আমি ওদের এই কাজের শিক্ষা দিয়েছি । কি আজব!! আমি বুঝতে পারলাম আজ রাতে আমার কপালে দুঃখ আছে ।আমার ছেলে জিসাদ এবার ইন্টার দিবে। গিয়েছিলো প্রাইভেট পড়তে । বাসায় এসে আমাকে দেখে বলল কি হয়েছে মা তোমার মুখ এমন চিন্তিত কেন? কি হয়েছে ? আমি ওকে সব বললাম । শুনে তো ছেলে আমার হাসতে হাসতে অস্থির হয়ে গেল । আমি বিরক্ত হয়ে ওকে বললাম তোরা ভাইবোন এত ফাজিল হয়েছিস কবে থেকে? এইটা কি হাসির কথা , তুই জানিস তোর বাবা বাসায় আসলে কি হবে? তোর দাদি আমাকে এখনও তাঁর রুমে ডাকেনি কিন্তু রাতে যখন তোর বাবা আসবে দেখিস কি হয় ।

– আহ মা , তুমি এত ভয় পাও কেন বলত? সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে থাকতে ভয় তোমার রক্তে মিশে গেছে । বলেই উঁচু গলায় বোনকে ডাকতে লাগলো । জারিন এসেই ভাইকে বলল ভাইয়া আজ একটা দারুন কাজ করেছি তুমি যদি ফুফুর মুখটা একবার দেখতে ।

– হু ঠিকই বলেছিস আমি খুব মিস করলাম । আমি তো মায়ের জন্য কিছু বলতে পারিনা । কিছু বলতে গেলেই মা শুধু বলে কিছু বলিসনা জিসাদ তোর বড় উনারা । বেয়াদবি হবে , তোর বাবা কষ্ট পাবে । মা আমাকে একটা কথা বলতো এই যে এত বছর থেকে তুমি দাদি , ফুফু , বাবার মন মত চলেছ কি লাভ হয়েছে? ওরা তোমাকে কোন সন্মান দিয়েছে? এখনও তো কিছু হলেই ফুফু তোমাকে কথা শুনায় , বাবার সামনেই কত কটু কথা বলে কই বাবা তো সে সময় বলে না- নিতু তুই তোর ভাবির সাথে এই রকম করে কথা বলিস কেন, ও তোর বড়ভাবি হয়।

বাবা যদি একবার এই কথা বলত ফুফু আর কখনো তোমাকে এমন করে কথা শুনাতে পারতো না । আর তুমি সব সময় বাবা কষ্ট পাবে বলে ওদের সকল অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করেছো । বিনিময়ে কিছুই পাওনি । আমি অবাক হয়ে আমার ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম । কবে আমার সন্তানরা এত বড় হয়ে গেল? আমি এত দিন ভাবতাম আমার এই কষ্ট গুলো আমার একার কিন্তু এখন দেখছি না, আমি একা না আমার সন্তানরাও আমার দুঃখে কষ্ট পায় !! আমার শ্বশুর আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করিয়েছেন । আমার শাশুড়ি চেয়েছিলেন উনার একমাত্র ছেলেকে অনেক বড় লোকের মেয়ে বিয়ে করাবেন । কিন্তু উনার সেই শখ পূরণ না হওয়াতে সব সময় আমি উনার চোখের বালি হয়ে থাকলাম । সে সাথে আমার স্বামী আর ননদেরও । শত চেষ্টা করেও উনাদের মন আমি জয় করতে পারিনি ।

আমার শ্বশুরের ভয়ে রাশেদ আমাকে বিয়ে করেছে এই কথা সুযোগ পেলেই এখনও আমাকে শুনতে হয় । আমার গরিব বাবা – মাকে বিয়ের পরে রাশেদের খারাপ ব্যাবহারের কথা বললেই মা শুনে কাঁদত আর বলত ঃ কি করবি মা , সহ্য কর , দেখবি ছেলে মেয়ে হলে ঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু কিছুই ঠিক হয়নি , ছেলে হল মেয়ে হল ওরা বড় হয়ে গেল কিন্তু আমার কপাল যেই কি সেই রয়ে গেল । আমার শ্বশুর মারা যাবার পরে আমি একদম একা হয়ে গেলাম । একই ছাদের নিচে , একই বিছানায় বছরের পর বছর পাশাপাশি থেকেও রাসেদ আমার কাছ থেকে লক্ষ যোজন দূরে ।

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি কি খেতে আমি পছন্দ করি , কি রঙ আমার পছন্দ এই সবের কিছুই রাশেদ জানেনা । আসলে জানেনা না , জানতে চায়নি । ওর জিবনে মুল হল ওর মা আর বোন । আমি কখনো বলিনি তুমি ওদের কে ভালবেস না । কিন্তু ওদের কে ভালবেসে কি নিজের বিয়ে করা বউকে ভালবাসা যায় না ? মা , বোনের ভালবাসা আর বউএর ভালবাসা কি এক ? ওদের খেয়াল রাখ আমাকেও একটু ভালবাস কি হয়? এই কথা গুলো আমি বিয়ের পরে রাশেদকে একবার বলেছি ও সেদিন স্পষ্ট করে আমাকে বলেছে আমার মা- বোনকে নিয়ে আমাকে কোন কথা বলবে না । তোমাকে কি আমি ভাল খাবার ভাল কাপড় দেইনা? ওরা তোমাকে কিছু বললে চুপ করে থাকবে কোন কথা বলবে না । তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না । সেই দিন থেকে আমি চুপ ।

আমার বাবা বলত দেখিস তোর ছেলে মেয়ে বড় হলে তোর কষ্ট বুঝবে । আজ আমার বাবা-মা বেঁচে নেই আমার চিৎকার করে বাবা- মা কে বলতে ইচ্ছা করছে বাবা তোমার কথা ঠিক আমার ছেলে মেয়ে আমার কষ্ট বুঝে , আমার এই জিবনে আর কোন কষ্টকেই আমার কষ্ট মনে হবে না । রাতে রাশেদ খেতে বসে মাকে খেতে ডাকল , কিন্তু মা বলল উনি খাবেন না । যে বাসায় উনার মেয়ে খেয়ে যেতে পারেনা সেই বাসায় উনিও কিছু খাবেন না । আমি জানতাম এইটাই হবে । সব সময় কিছু হলে মা প্রথমে আমাকে কিছু না বলে আগে উনার ছেলের কানে সেই কথা দিবেন তারপরে শুরু হবে মা- ছেলে মিলে আমাকে কথা শুনানো । আমি জারিন আর জিসাদ কে বারবার নিষেধ করে রাখলাম যেন ওরা বাবা কে কিছু না বলে । ওরা ও চুপচাপ খেতে থাকল ।

মায়ের কথা শুনেই রাশেদ মুখ কালো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল নিতু খেয়ে যায়নি কেন ? সাথে সাথে মা গড়গড় করে সব বলতে লাগলেন সব শেষে যোগ করলেন নিতু যাবার সময় তোর বউকে বলল ভাবি কিছু বলার থাকলে তুমি বলতে। বাচ্চা একটা মেয়েকে দিয়ে আমাকে কেন কথা শুনালে? আমি নাকি এর উত্তরে বলেছি খুব ভাল হয়েছে । তুমি কেন আমার বাসায় এসে আমার সব কিছুতে ভাগ বাসাও । উনার এই কথা শুনে আমি মোটেও অবাক হইনি । তার কারন এইটা আমার শাশুড়ির পুরনো অভ্যাস কিছু হলে তাঁর সাথে আর বেশি কিছু যোগ করে রাশেদ কে বলা । আর তারপরে আমি শত বারও যদি বলি এইরকম কথা আমি বলিনি কিন্তু রাশেদ আমার কথা বিশ্বাস করে না । তাই এখন আর আমি কোন প্রতিবাদ করি না । কিন্তু হায়, আজকে যে কি হল !! জিসাদ তাঁর দাদির কথা শুনে বলল দাদি এই রকম মিথ্যা কথা কি ভাবে বল ?

– দেখেছিস, দেখেছিস রাশেদ তোর ছেলে মেয়ে লায়েক হয়েছে । এত দিন তোর বউ ওদের কে আমাদের বিরুদ্ধে ট্রেনিং দিয়েছে আর এখন তোর ছেলে আমাকে মিথ্যুক বলছে । বাবা, তুই আমাকে কোন বৃদ্ধা আশ্রমে রেখে আয় । বলেই কাঁদতে লাগলেন । রাশেদ হুঙ্কার দিয়ে বললেন জিসাদ , জারিন আমি আমার রক্ত পানি করা টাকা দিয়ে তোমাদের এত ভাল স্কুলে পড়াই , এই শিক্ষার জন্য? এই শিখছ তোমরা ? দাদি ফুফুর সাথে এমন ব্যাবহার ? অবশ্য তোমাদের কি দোষ তোমাদের মা তোমাদের যা শিখিয়েছে তোমরা তো তাই করবে। বলেই রাশেদ অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল ।

– জিসাদ টেবিল থেকে উঠে দাড়াতেই আমি গিয়ে জিসাদের হাত চেপে ধরলাম । ও আমার হাত ছেড়ে দিয়ে শান্ত গলায় বাবাকে বলল – বাবা তুমি সব সময় মাকে দোষ দেও কেন সব কিছুতে? তুমি জান মা আমাদের এতদিন নিষেধ করেছে দেখে আমরা চুপ ছিলাম । তা না হলে অনেক আগেই তোমাদের এই সব ব্যাবহারের প্রতিবাদ করতাম । দাদিকে কিছু বললে তোমার যেমন খারাপ লাগে একই ভাবে আমাদের সামনে আমাদের মাকেও কেউ কিছু বললে আমাদের খারাপ লাগে ।

যদি মায়ের অন্যায় থাকতো তাহলেও কিছু বলতাম না । কিন্তু বুঝ হবার পর থেকেই দেখে আসছি কারনে অকারনে মাকে নানা কথা শুনতে হয় । ফুফু তাঁর ছেলে মেয়ে বরকে নিয়ে বাহিরের ঘুরতে পারে কিন্তু মায়ের বেলায় সেটা নিষেধ । তুমি বলতে পারবে বাবা, কোন দিন তুমি মাকে নিয়ে বাহিরে কোথাও ঘুরতে গেছ? ছোট বেলায় আমাদের নিয়ে তুমি বাহিরে যেতে কিন্তু মাকে নিতে না । বলতে মাকে নিলে দাদি একা থাকবে । দাদিকে সাথে নিতে বললে দাদি যাবে না আর তাই মারও যাওয়া বন্ধ । আমাদের বাসায় নতুন কিছু কিনা হবে সেটা ফুফু এসে কিনতে হবে , আমাদের জন্মদিন হবে কে কে মেহমান আসবে কি কি রান্না হবে সব কিছু ফুফু ঠিক করে,আমাদের কোন স্কুলে ভর্তি করবে এই ডিসিশনও ফুফু নেয় ।

এমন কি ঈদে আমাদের জন্য জামা কিনা হবে সেটাও তুমি ফুফুকে নিয়ে গিয়ে কিনে আন কেন বাবা ? যে সংসারের জন্য মা এতটা বছর নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিল সেই সংসারের কোন কিছু কি মা নিজের পছন্দ মত করতে পারে না ? নিজের ছেলে-মেয়ের ব্যাপারে কোন ডিসিশন নেয়ার অধিকার কি মায়ের নেই ? দাদি যেমন তোমাদের নিয়ে দাপটের সাথে নিজের সংসার করেছে , ফুফু যেমন নিজের সংসার করছে মা কেন পারেনা মায়ের ইচ্ছামত নিজের সংসার করতে ? ছেলে মেয়ে বরকে নিয়ে বাহিরে কোথাও ঘুরতে যেতে ।শুধু ভাল খাবার আর ভাল জামাকাপড় দিলেই কি ভাল রাখা হয়? এই কেন গুলো উত্তর তুমি আমাকে দিতে হবে না শুধু নিজে একবার ভেবে দেখো ।

বাবা, যে ব্যাবহার তোমরা এতদিন আমার মায়ের সাথে করেছো একটু ভেবে দেখো এই একই ব্যাবহার যদি ফুফুর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা ফুফুর সাথে করতো অথবা জারিনের বিয়ে হবার পরে ওর স্বামী ওর সাথে করে তাহলে তোমাদের কাছে কেমন লাগবে ? আর একটি কথা বাবা, তুমি এত বছর মায়ের সাথে সংসার করেও মায়ের ভিতরটা দেখতে চাওনি, মায়ের ব্যাথা গুলো, কষ্ট গুলো বুঝতে চাওনি কিন্তু একটা সময় আসবে বাবা, যে সময় তুমি একা হয়ে যাবে তোমার পাশে মা ছাড়া কেউ থাকবে না । সেই সময় তুমিও চাইবে মায়ের কাছে আসতে কিন্তু মা চাইলেও যে দূরত্ব তুমি এখন তৈরি করছ সে দূরত্ব পার করে তোমার কাছে আসতে পারবে না । বলেই আমার ছেলে তাঁর রুমে চলে গেল আমি হু হু করে কাঁদতে লাগলাম , জারিন আমাকে ধরে ওর রুমে নিয়ে গেল । আমি অবাক হয়ে দেখি রাশেদ কোন কথা না বলে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল ।

কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি বলতে পারবনা । জারিনের ডাকে ঘুম ভাঙল , তাকিয়ে দেখি জিসাদ কে পাশে নিয়ে রাশেদ দাঁড়িয়ে আছে । আমি ভয় পেয়ে গেলাম জিসাদ কে কি ওর বাবা মারল? কারন আমার ছেলে মেয়ে দুইজনেই কাঁদছে । আমি কিছু বলার আগেই রাশেদ আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে বলল মিলি -তুমি আমাকে মাফ করে দেও। আমি ভেবেছি আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি , আসলে যে আমি নিজেই নিজেকে ঠকাচ্ছি বুঝতে পারিনি । যদি আমি মা, বোনের পাশাপাশি তোমাকে একটু যত্ন করতাম তোমার প্রতি একটু সহানুভূতি দেখাতাম তাহলে হয়তো দিন শেষে নিজেকে একা মনে হতনা ।

কেন যে জিবনের এতগুলো বছর অনুভূতিহীন ভাবে কাটালাম , কি ভুল ভাবনা ছিল আমার ভিতরে , ভাবতাম তোমাকে ভাল কথা বললে মা কষ্ট পাবে , নিতুকে কিছু বললে ও কষ্ট পাবে কিন্তু এইটা কখনো ভাবিনি তোমার সাথে এমন ব্যাবহার করলে তুমিও কষ্ট পাবে । আজ আমার ছেলে আমাকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসলো । তা না হলে হয়তো জীবনের একটা সময় এসে দেখতাম আমি একা । আমার পাশে তোমরা কেউ নেই । যে রকম ভাবে এত বছর তোমাকে আমি একা রেখেছি ।

তুমি কেন আমাদের সব অত্যাচার মুখ বুঝে মেনে নিয়েছ, কেন প্রতিবাদ করনি ?তুমি কি পারবে আমাকে এখন তোমার মনে জায়গা দিতে ? তোমার সাথে যে অন্যায় করেছি আল্লাহ্কি  আমাকে মাফ করবে? বলেই রাশেদ ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগলো । জিসাদ আর জারিন আমাকে আর রাশেদ কে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত