“আমার কাল বিয়ে।আমায় পারলে তুমি ক্ষমা করে দিও।ভুলে যেও আমায়। ভালো থেকো।আর হ্যাঁ আমার সাথে আর যোগাযোগের চেষ্টাও করো না।” উৎস ভাইকে চিরকুটটা দিতেই উৎস ভাই ছোট্ট বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করলো।আমার উৎস ভাইয়ের কাঁন্না দেখে কষ্ট পাওয়া উচিত হলেও এই মূহুর্তে আমার কেমন জানি মজা লাগছে।পাঁচ বছরের বাচ্চাকে চকলেট কিনে না দিলে যেমন করে কাঁদে উৎস ভাইয়ের কাঁন্না দেখে আমার সেরকম লাগছে।তবুও মানবতার খাতিরে উৎস ভাইকে বল্লাম – “যে চলে গেছে তার জন্য কেঁদে কি লাভ উৎস ভাই?আর কেঁদো না তুমি।” উৎস ভাই আমার কথা শুনে আরও জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগলো।
এক পর্যায়ে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে গিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে বললো- “ইসু বলতো ও আমার সাথে কেন এরকম করলো?আমি কি ওকে কম ভালোবেসেছিলাম?কিভাবে ও দীর্ঘ দুই বছরের স্মৃতি ভুলে গিয়ে অন্যকে আপন করে নিচ্ছে?” আমি কিছু বললাম না। উৎস ভাইয়ের এরকম ঘটনা দেখে আশেপাশের অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে।আমি একটু আস্তে করে উৎস ভাইয়ের কানে বললাম-“উৎস ভাই ছাড়ো। এটা রাস্তা।” উৎস ভাই আর কোন কথা না বলে শার্টের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছে চুপচাপ হাটতে শুরু করলো।আমিও মাথা নিচু করে ভাইয়ের পিছু পিছু হাটা ধরলাম।একসময় উৎস ভাই পিছনে ঘুরে বললো -“বাড়ি চলে যা ইসু।” আমি একটু নিচু গলায় উৎস ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম-“তুমি কোথায় যাচ্ছ উৎস ভাই?” উৎস ভাই বললো -“আমার এখন অনেক কাজ।বাড়ি যা তুই।”
মাথা নিচু করে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই উৎস ভাইয়ের নাম্বার থেকে ফোন আসে।কিন্তু ওপারের মানুষটা উৎস ভাই ছিল না।অপরিচিত একটা লোক গম্ভীর কণ্ঠে বললো ফোনের মালিক গুরুতর আহত। আমায় একটা হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে বললো আমি যেনো দ্রুত সেখানে যাই।বাড়ি গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে উৎস ভাইয়ের ওখানে গেলাম।আমার মাঝে তেমন উদ্দীপনা কাজ করছে না।মনে হচ্ছে এটা হওয়ারই ছিল।কিন্তু উৎস ভাইয়ের জন্য মনের ভিতরটা খাঁ খাঁ করছে।উৎস ভাইয়ের বাড়িতে ফোন করে বিষয়টা জানালাম।উৎস ভাইয়ের মা ফোনের মধ্যেই বিকট চিৎকার দিয়ে ওঠে।আমি জানি উৎস ভাইয়ের মা উৎস ভাইকে কতটা ভালোবাসে।
উৎস ভাই মোটামুটি সুস্থ হয়েছে।সেদিনের পর থেকে উৎস ভাইয়ের মা আমার হাত ধরে বলেছিল আমি যেন উৎস ভাইকে একটু বুঝাই।তারপর থেকেই উৎস ভাইয়ের পাশে পাশে থাকতাম সবসময়।সবসময় উৎস ভাইকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে- “মায়া বাড়িয়ে যখন লাভ হয় না, মায়া কাটাতে শিখতে হয় তখন”। উৎস ভাই একসময় বুঝলো। ভুলে গেলো তার প্রাক্তন নিধি আপুকে।একসময় উৎস ভাইয়ের মা আমাকে তার পুত্রবধূ করতে চাইলেন।আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে তারাও রাজি হয়ে গেলেন।মোটামুটিভাবে বিয়েটা শেষ হলো।উৎস ভাই প্রথমে একটু আপত্তি জানালেও পরে রাজি হয়ে যায়।আমি তো সবমসময়ের জন্যই উৎস ভাইয়ের পাশে থাকতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম।
উৎসের সাথে সংসার বছরের আট বছর কেটে গেছে।কিন্তু এখনো আমরা দু’জন থেকে তিন’জন হতে পারিনি।সংসারেও শান্তি নেই তেমন।আগের মতো উৎসের প্রতি তেমন আকর্ষন নেই।সেদিন মার্কেটে কিছু জিনিস কিনতে গিয়ে নিধি আপু সাথে দেখা হয়।আমার সাথে উৎসও ছিল তখন।উৎসের মুখে নিধি আপুকে দেখে এক প্রকার ঘৃণার ছাপ ফুটে উঠলো।উৎস মুখ ঘুরিয়ে নিলো।কিন্তু উৎসের মনের কোণে তখনো নিধি আপুর জন্য ভালোবাসা উঁকি দিচ্ছে। নিধি আপু ছলছল চোখে আমার আর উৎসের দিকে তাকিয়ে রইলো।আমি জানি নিধি আপু এখন উৎসকে বেঈমান ভাবছে।হয়তো মনে মনে বলছে- “কেন সেদিন তুৃমি এলে না উৎস।তোমার জন্য কতটা সময় রাস্তায় অপেক্ষা করেছি।তোমার হাত ধরে পালিয়ে যাবো বলে।রাস্তার ছেলেরা আমায় চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিল।তবুও তুমি আসো নি।শেষে ছোট একটা ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে বললে আমি যেন বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে তোমায় ভুলে যাই।কেন করলে এটা উৎস?”
নিধি আপুর বর নিধি আপুকে ডাকতেই সে চলে গেল।আমরাও বাসায় ফিরে আসলাম।রাতে শুয়ে শুয়ে নিজেকে প্রশ্ন করলাম মানুষকে ধোঁকা দিয়ে কি পেলাম আমি।কেনইবা সেদিন নিধি আপুর চিরকুটটা পরিবর্তন করলাম।আর কেনইবা উৎসের দূর্ঘটনার সুযোগ নিয়ে নিধি আপুর কাছে একজনকে অপরাধী বানালাম।এসবের উত্তর আমার মনের জানা নেই।দু’জন মানুষ এখনো দগ্ধ হচ্ছে।কিন্তু আমিও যে উৎসকে ভীষণ ভালোবাসতাম।এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো আমার মাঝে।পাশে থাকা উৎসকে জড়িয়ে ধরলাম।কি দরকার অতো মনের সাথে যুদ্ধ করার।বাজিতে তো আমিই জয়ী।