মাছ বিভ্রাট

মাছ বিভ্রাট

সিফাত দাড়িয়ে, আমার শ্বশুর ৮ম বারের মত প্রশ্ন করলেন, আম্মাজান বলেন তো এই মাছের নাম কি? আমি ৭ম বারের মত এক ই জবাব দিলাম এটাও রুই মাছ। আমার শাশুড়ি তখন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন, দুনিয়াতে কি সব রুই মাছ জন্ম নিয়েছে আর কোনো মাছ নাই!!

আসলে উনারা গ্রাম থেকে এসেছেন। আসার পর যতবার আমি বিভিন্ন রকম মাছ রান্না করেছি ততবার আমার শ্বশুর জিজ্ঞেস করেছেন এটা কি মাছ। আমি পর পর চার দিন ই খুব খুশি হয়ে উত্তর দিয়েছি রুই মাছ। উনি খেয়ে স্বাদ বুঝে বলতেন এটা রুই না অন্য মাছ। আমি মানতাম না সবসময় রুই ই বলতাম। তাই আজ সকাল সকাল গ্রামে খবর পাঠিয়ে প্রায় ১০/১২ ধরনের বিলের মাছ আনিয়েছেন আমার শাশুড়ি। সবগুলো মাছের চেহারা একই রকম মনে হচ্ছে আমার কাছে। দেখতে তো এক রকম আমি কি করব তাতে !! আমার শাশুড়ি আম্মা খুব কড়া মেজাজের।।

১০ম বারের মত আমার শাশুড়ি চোখ রাঙিয়ে বললেন এবার যদি নাম গুলো না পারি তাহলে সব গুলো মাছ আমাকে একা ই কাটতে হবে কেউ সাহায্য করবে না। আর সব ধরনের মাছ রান্না করতে হবে। এর আগে দুই বার সবগুলো মাছের নাম বলে দেয়া হয়েছিল আমাকে। কিন্তু বলে দেওয়ার পর যখনি আমি মাছগুলোর দিকে তাকাই রুই, কাতলা, মৃগেল, কার্প আরো কি কি জানি আবার সব গোলমাল লেগে আমার কাছে রুই মাছ হয়ে যায়। সব মাছগুলো ই মোটাতাজা একটু সাইজে পার্থক্য হলে কথা ছিল তাও না।

আমি কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললাম, আম্মা আইসিটির লজিক গেইট কোনটা কি বলতে পারব ১০০%, উচ্চরত গণিতে ক্যালকুলাসের একটা সূত্রও এদিক সেদিক হবে না। বায়োলজির শ্রেণিবিন্যাসে কোন প্রাণী কে কোন পর্বে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বৈজ্ঞানিক নাম শুনে বলে দিতে পারব। পদার্থের সার্কিটে কোথায় সমান্তরাল কোথায় শ্রেণি সমবায় হবে তা এক পলকে একে দিতে পারব। ইতিহাসে ক্রুসেড যুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান কাশ্মীর নিয়ে ঝামেলার ধারাবাহিক সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে পারব। কিন্তু আম্মা এই মাছ গুলোকে তো চিনতে পারি না।

আরে বউমা, তোমার শাশুড়ি এসব কিছু কি বুঝে এখন যে তুমি যেসব বললে। ওর মাথার উপর দিয়ে গেছে সব।
বলেই আমার শ্বশুর একটা ভিলেনের মত হাসি দিলেন। তা দেখে আমার শাশুড়ি রেগে আমার শাস্তি ১০০% কনফার্ম করে দিলেন। আমি বাবার দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে বললাম ভিলেন মার্কা হাসি টা না দিলে ই পারতেন। বাবা আমাকে কানে কানে কিছু একটা বললেন তা দেখে আবার মা ধমক দিলেন বাবাকে।

সময় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট কমপক্ষে ৮ ধরনের মাছের আইটেম রান্না করতে হবে। আজকে এটাই শাস্তি। একটু ঝুল ঝুল করে রান্না করতে হবে বাবা মা শুকনো তরকারি তেমন একটা খেতে পারেন না।এসব শুনে আমার উনি দরজার পাশে থেকে হেসে হেসে আমার কাছে এসে বললেন যাও একটু রান্না শিখো। কথাটা শুনে রাগে ইচ্ছা করছিল কি করি। সবাই সুযোগে সময় বুঝে। আমি ঠিক ৪৫ মিনিট পর রান্না ঘর থেকে বেশ হাসি মুখে বেড়িয়ে এসে বললাম সব রান্না শেষ। আমার শাশুড়ি হা করে আছেন। আট প্রকারের রান্না শেষ? আমি হ্যা বলে বাকি ১৫ মিনিটের মধ্যে টেবিল সাজিয়ে নিলাম। সিফাত সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে আর মাও। এই তুমি লুকিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনাও নি তো! দেখি কত টাকা বিল এসেছে? এসব খাবার বাবা মা খেতে পারেন না একদম ই।

আমিও একটু ভাব নিয়ে বললাম। সব নিজে ই রান্না করেছি। হ্যা এখন যদি বিলের বদলে খুশি হয়ে বকশিশ দিতে চাও দিতে পারো। কম হলেও তিন হাজার দিতে হবে। আমিও ফিসফিস করে বললাম। সিফাত কিছুটা কেশে মুখ বাকা করে টেবিলে বসে পরল। টেবিলে সবাই খাচ্ছেন। কিছুক্ষন পর পর মা বলছেন কি যেন একটা গন্ডগোল লাগছে। কোথায় কিছু একটা ঘটেছে। আমি মাছের বাটি গুলো মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম দেখুন সব ধরনের মাছ রান্না করেছি কোনো ভেজাল নেই একদম পিওর। তখব সিফাত বলল, সব রান্না গুলো কিরকম এক এক মনে হচ্ছে।

আমিও জোর গলায় বললাম, আরে মাছের যার যার আলাদা স্বাদ আছে না একরকম কিভাবে হবে। মা আর সিফাত একে অপরের দিকে তাকালেন। বাবা কিছু না বলে খেয়ে যাচ্ছেন। তাতেও মায়ের সন্দেহ হল। মা কিছু জিজ্ঞেস করতে ই বাবা বললেন, আরে এত কথার কি আছে মাছ খেলে ই তো স্বাদ বুঝা যায় কোনটা কি ! আমার শাশুড়ি ভালো করে তাকিয়ে আছেন। সব প্রকার মাছের একটু একটু খেতে দিলেন আমাকে। বললেন খেয়ে বলতে হবে কোনটা কি মাছ ! স্বশরীরে চিনতে পারিনি আর এভাবে..!

আমি বললাম, আম্মা এত কষ্ট করে আট বার রান্না করার কোনো দরকার আছে ! আমি আট ধরনের মাছকে একটু আলাদা সাইজ করে এক এক টা কে এক এক সেপ করে রেখেছি যাতে চিনতে পারি। অতঃপর এক হাড়িতে সব মাছ একসাথে রান্না করেছি। শুধু বাটিতে নেওয়ার সময় একটু দেখে দেখে ঠিক মত বেছে নিয়েছি। শেষ একদম একবারে ফিনিস।

আম্মা খুব ভালো না আইডিয়া টা.? আইডিয়াটা কিন্তু মা রেগে কি বলবে বুঝতে না পেরে বললেন, এজন্য ই তো বলি স্বাদ কেন এক লাগছে। তখন বাবা আমাকে ইশারা দিচ্ছেন চুপ হওয়ার জন্য তা মা দেখতে পেয়ে বললেন, বাকি কাহিনি টা কি বল.. আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম, রান্না টা আমি করেছি ঠিক কিন্তু আইডিয়া টা বাবার। মা আবার শাস্তি সরুপ একমাস আমার রান্নার ট্রেনিং সাথে মাছের নাম শিখা + আমাকে উল্টোপাল্টা শিখিয়ে দেওয়ার জন্য বাবাকেও শাস্তি সরুপ রান্নার সব কিছু কেটে দিতে হবে যতদিন ট্রেনিং চলবে।

রান্নাঘরে পেয়াজ কাটতে কাটতে বাবা বললেন, আম্মাজান সাহায্য করলাম আর তুমি সব বলে দিলা। আব্বা, বুদ্ধি টা আপনার ছিল শাস্তি টা একা ভোগ করি কেমনে তাই ভাবলাম বাবা মেয়ে মিলে করি। ভালো লাগবে। দুঃখ ভাগ করলে কমে আমার মতে। হাসছিলাম আমরা। আমার শ্বশুর একটু সহজ সরল খুব ভালোবাসেন আমায়। তখন শাশুড়ি এসে বললেন কি হচ্ছে এত হাসাহসি কিসের? আর কি রান্না হচ্ছে?? আমি খুব খুব খুশি হয়ে হাসি মুখে জোরে জোরে বললাম, রুই মাছ আবার রুই মাছছছছছছছ ! বাবা মেয়ের রুই মাছ রান্না।। হরেক পদের রেসিপি এক হাড়িতে!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত