রাজপুত্র

রাজপুত্র

সীমা মা শোন আজ বিকেল বেলায় তোকে এক জায়গায় যেতে হবে। ঘটক এক ছেলের সন্ধান দিয়েছে। সব দিক দিয়েই ভাল,ছেলের বাসা থেকে ফোন করেছিল রেস্টুরেন্টে তোর জন্য অপেক্ষা করবে ছেলেটা ডক্টর লম্বা সুদর্শন চেহারা তার, আমি আর তোর বাবা ছেলের ছবি দেখেছি।ছেলে তোকে দেখতে চায় বাহিরে কোথাও।

সীমা তার মা এর দিকে অবাক চোখে তাকালো তার মা যেনো এক দমেই এক নাগাড়ে কথা গুলো বললো খুশিতে।
আর খুশি হবেই বা না কেন? সীমার গায়ে রং একটু চাপা বলে কত ছেলেই রিজেক্ট করলো। সীমার বাবার ধন সম্পত্তি নেহাত কম নয় তাই ভালো ভালো সমন্ধই আসতো সীমার জন্য কিন্তু যখনি সামনা সামনি দেখতো সীমা কে রিজেক্ট করতো। এইবার যে সমন্ধ টা এসেছে তা হলো ডক্টর ছেলের জন্য পাত্রীর সন্ধান। ঘটক কে সীমার বাবা মোটা অংকের টাকা দিয়েছে সেজন্য ঘটক এইবার উঠে পড়ে লেগেছে সীমার জন্য যোগ্যের চেয়েও যোগ্য ছেলের সন্ধান। সীমা তার মা এর দিকে চেয়ে বললো কি দরকার এসবের বলোতো মা? সেই তো ওদের সামনে সঙ সেজে যেতে আর রিজেক্ট নামক বাক্যটা তে আবার জড়িতো হতে হবে।

মা রে সব সময় এসব ভেবে মন খারাপ করিস না তুই আমার কাছে রাজকন্যা আর আমার রাজকন্যার জন্য উপযুক্ত ছেলেই আসবে দেখিস। আর শোন তুই একাই যাস ছেলের সাথে দেখা করতে ছেলে একাই তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছে অবশ্য ছবি চেয়েছিল আমরাই দেইনি সরাসরি ই দেখুক তারপরে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিক। সীমার অস্বস্তি লাগছে কলেজ থেকে মাত্র ফিরেছে এখন ফ্রেশ হতেই মা এর মুখে এসব শুনে তার উপর আজ বিকেলেই যেতে হবে দেখা করতে, সীমা মনে মনে বললো আল্লাহ লিফট ফেলাও উপরে উঠে যাই হু হু আর ভালো লাগেনা। লাঞ্চ সেড়ে বেডে বসে ফোন টা হাতে নিয়ে নিরা কে ফোন দিল সীমা। হ্যালো নিরা?

নিরাঃ হ্যাঁ বল।

আজ বিকেলে ফ্রি আছিস? আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। ওকে বাবা যাবো কিন্তু কোথায় আর কি করতে সেটাতো বল? পরে শুনিস আর শোন খুব সুন্দর করে সাজবি ওকে? ওকে ওকে মাই প্রিসেন্স অবশ্যই সাজবো। থ্যাংক্স নিরা সোনাটা উহু থ্যাংকস দিতে হবে না তোর কথা কি ফেলতে পারি? তুই আমার একমাত্র কলিজার বান্ধবি বেস্ট ফ্রেন্ড সীমা। ফোন টা কেটে দিয়ে সীমা মনে মনে ভাবছে নিরা কত সুন্দরী, কলেজের সব ছেলেরা অর জন্য পাগল অথচ মেয়েটার বিন্দু মাত্র অহংকার নেই ।কতটা ভাল মানুষ হলে এতটা আপন ভাবে আমায় বলেই হেসে উঠলো সীমা। বিকেলে সীমা একটা পিংক কালারের থ্রি পিচ পরে নিলো আর তার লম্বা সিল্কি চুল গুলো খোলাই রাখলো হাতে ফোন নিয়েই নিরা কে কল করে চলে আসতে বললো।

নিরা যথা সময়ে সীমাদের বাসার সামনে এসে উপস্থিত হলো। সীমা অবাক চোখে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে এতটা সুন্দর লাগছে ভাবাই যায়না আকাশী কালারের থ্রি পিচ পরা কোকঁড়া চুল কারলি করে ছেড়ে রেখেছে আর চোখে সানগ্লাস, হাতে ফোন, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। ওর পাশে নিজেকে অসহায় ভাবতে লাগলো সীমা। সীমার উদ্দেশ্য ছিল যে কেউ তাকে কেউ পছন্দ করলে তার চেহারা দেখে নয় তার মন কে দেখে ভালবাসুক। কিরে সীমা এইবার তো বল আমরা কোথায় যাচ্ছি?

সীমা বললো একটা বিয়ের সমন্ধ এসেছে সেই ছেলের সাথে দেখা করতে এবং সেই ছেলেটার সামনে তুই পরিচয় দিবিনা ওকে যে কে বিয়ের আসোল পাত্রী । সে নিজেই খুজে নিক কে আসোল পাত্রী। নিরা অবাক হয়ে কিন্ত কেন? আমি চাই সে বাহিরের রুপ নয় মন কে দেখে ভালবাসুক।(সীমা) রেস্টুরেন্টে পৌছে দেখে একটা ছেলে এক টেবিলে একাই বসে আছে আর কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর ফোন টিপসে। সীমা আর নিরা সেখানে যেয়ে দাড়ালো, এইবার চোখ তুলে তাকালো আবির। আপনারা? জ্বী ঘটক এখানে আসতে বলেছিল।(নিরা) হ্যা বুঝেছি বসুন আপনারা। তারপরে কেমন আছেন আপনারা? আর আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে নিরার উদ্দেশ্যে বললো।তারপরে ওয়েটার কে ডেকে খাবার অর্ডার করলো। (আবির) সীমা আর নিরা এখনো পরিচয় দেয়নি ,কে আসোল বিয়ের পাত্রী।

কিন্ত আবিরের মুখে নিরাকে সুন্দর লাগছে শুনে ভিতর ভিতর সীমা চুপসে গেলো।আজ তার আফছোস হচ্ছে কেন উপরওয়ালা নিরার মত তাকে সুন্দর বানায়নি।সীমা চুপচাপ কফিতে চুমুক দিচ্ছে মাথা নিচু করে।এইদিকে আবির নিরার সাথে মোটামুটি গল্প জুড়ে দিয়েছে আর মাঝে মাঝে সীমার দিকে আঁড়চোখে দেখছে। প্রথম প্রথম নিরা আবিরের সাথে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করলেও এখন ফ্রেন্ডলি আচরণ করছে। আবির প্রশ্ন করলো আপনাদের নাম কি? নিরা তার নাম বললো আর সাথে সীমার নাম ও বলল। কিসে পড়ে কেমন বান্ধবি কেমন আড্ডা দেয় এইসব আরকি। নিরা যেমন সুন্দর তেমন বাচাল টাইপ ও একবার গল্প জুড়লে আর থামতেই চায়না।

আবির নিরার কথা শুনতেছে আর কফি খাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে, একটু আঁড়চোখে সীমাকেও দেখছে।
হঠাৎ আবির বলে উঠলো তোমাকে খুব ভালো লেগেছে নিরা। এইবার সীমা চোখ তুলে চাইলো আবিরের দিকে তার ভিতর টা যেনো কেউ ছুরিকাহত করতেছে।আগেই জানতো এইবার ও রিজেক্ট হবে সে কিন্তু ততটাও কস্ট পেতোনা যতটা না, আবিরের মুখে তার নিজের না তার বান্ধবি নিরার সুনাম শুনে। নিরা মুখে একটা মলিন হাসি দিলো। তারপরে আর কিছুক্ষন তাদের গল্প চললো এক পর্যায়ে আবির বলে উঠলো আমাকে উঠতে হবে, ওয়েটার কে ডেকে বিল পেমেন্ট করলো আর বললো সন্ধ্যায় একটা অপারেশন আছে।আমাকে এখুনি বের হতে হবে।

তিন জনই উঠে দাড়ালো রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা ডাকলো তাতে নিরা আর সীমাকে বসতে বললো আপনারা রিক্সায় যান,আমার সাথে আমার গাড়ি আছে আমি সেটাতে হসপিটালে যাবো।আপনাদের ড্রপ করে দিতে পারতাম কিন্তু আজ জরুরি অপারেশন বুঝতেই তো পারছেন। নিরা যেয়ে রিক্সাতে উঠলো আবির কে বাই বলে। সীমা ও উঠতে যাবে এমন সময় আবির বলে উঠলো।সীমা তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছি।বাসায় যেয়ে বাবা মা কে জানাবো যাতে বিয়ের দিন পাকা করে হ্যা আমি কিন্তু প্রথমেই বুঝতে পেরেছি তুমিই পাত্রী।কিন্তু তোমার এক্সপ্রেশন টা বুঝার জন্য নিরার সাথে এত বকবক করলাম।

নিরাকে ভালোলেগেছে তবে বোনের মত এজ এ ফ্রেন্ড সে খুব মিশুক। আর আমার কাছে শ্যামলা মেয়েদেরি বেশি ভাল লাগে তোমার মায়াবী চোখের অধিকারী এরকম মেয়ে বলেই, সানগ্লাস টা চোখে পরেই গাড়িতে যেয়ে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করলো আবির। সীমা অবাক এতক্ষন কি শুনলো? আবির বুঝতে পেরেছে সেই পাত্রী আর পছন্দ ও করেছে? মনে মনে ভেবেই চলেছে খুশিতে জল বয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে। খুশিতে লাফাতেও ইচ্ছে করছে। আজ সত্যি মা এর কথাটা ফললো তার রাজকন্যার জন্য রাজপুত্রই আসবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত