প্রেম টেডি বিয়ার এবং একটি বিয়ের প্রস্তাব

প্রেম টেডি বিয়ার এবং একটি বিয়ের প্রস্তাব

সমুদ্র পুতুলের দোকানটা থেকে বের হয়ে সোজা হাঁটা ধরল । বিকেলের ঠাণ্ডা হাওয়ায় সমুদ্রের ঘাড়-লম্বা চুল বাতাসে উড়তে লাগল । গায়ে লাল পাঞ্জাবি সাথে গলায় নীল রঙের স্কার্ফ আর হাতে হলুদ একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগে টেডি বিয়ার দুলিয়ে দুলিয়ে রাস্তা দিয়ে গুন গুনিয়ে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছে ।

মনে কিঞ্চিৎ ভয় কাজ করছে সাথে কিছুটা উত্তেজনাও । শ্রাবণী বলেছিল ওদের প্রেমের ৩ বছর পূর্তির দিন ওকে একটা ডায়মন্ড রিং দিতে হবেই হবে । ওর সাথের বান্ধবীদের বয়ফ্রেন্ড কতকিছু গিফট করে আর ডায়মন্ড রিং তো সামান্য ( ! ) একটা জিনিস । সমুদ্র চাইলেই একটা ডায়মন্ড রিং কিনতে পারত । কিন্তু ইচ্ছে করেই টেডি বিয়ার কিনেছে । যে সময় শ্রাবণী ব্যাগ খুলে ডায়মন্ড রিঙের জায়গায় টেডি বিয়ার দেখবে তখন যে রাগান্বিত মুখটা দেখা যাবে সেটা দেখতে সমুদ্রের অনেক ভাল লাগে । বেশি রেগে গেলে তখন না হয় একটা ডায়মন্ড রিং কিনে দেয়াই যাবে কিন্তু আগে সেই রাগান্বিত মুখটা তো দেখা লাগবে ।

হেলতে দুলতে সমুদ্র প্রায় সন্ধ্যার দিকে পার্কে পৌঁছাল । শ্রাবণী এমনিতেই অনেক রেগে আছে । অনেক সময় লেইট হয়ে গেছে । রাগারই কথা । সমুদ্র স্বাভাবিকভাবে কাছে গিয়ে বলল , ” তারপর ? কি খবর তোমার ” । শ্রাবণী আস্তে করে গালের উপরের চুলগুলো কানের পিছনে নিয়ে গেলো – “কথা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে” , এই হল তার ইঙ্গিত । আজকে শ্রাবণীকে অনেক সুন্দর লাগছে । গায়ে চাদর পরলে শ্রাবণীকে অনেক সুন্দর লাগে । সাথে চুলটাও বেঁধেছে খোঁপা করে । একেবারে প্রেমে ফিদা হওয়ার মত সৌন্দর্য । মুখে একটু হাসি থাকলে আরও সুন্দর লাগত । ” আমার খবর ভাল । ২ ঘণ্টা ধরে একা একা পার্কে বসে কারো জন্যে অপেক্ষা করলে যে কারো খবর ভাল থাকে ” , শ্রাবণী একদমে বলে গেলো । ” ও ভাল থাকলে তো ভালই । আর এই লাল চাদরে তোমাকে সুন্দর লাগছে । একটু রূপা রূপা ভাব ” , সমুদ্র বলল । ” লাল চাদরে ভাল লাগছে এতে আবার ওই রূপা কোথা থেকে এলো শুনি ? আমি কি আমার মত হতে পারি না ? ” রেগে গিয়ে প্রশ্ন করল শ্রাবণী ।

” না মানে , রূপার সুন্দর্যে একটা অন্যরকম ভাব আছে , তোমার মাঝে আজ সেটা দেখতে পাচ্ছি ” , শ্রাবণীকে শান্ত করার চেষ্টায় বলল সমুদ্র । ” ভাল ” , বলে অন্যদিকে ঘুরে গেলো শ্রাবণী এবং চুল ঠিক করতে লাগল । এই ফাকে সমুদ্র ব্যাগ থেকে টেডি বিয়ার বের করে শ্রাবণীর সামনে দিয়ে গিয়ে বলল , ” আমার রূপার জন্য আমার তরফ থেকে এই ছোট টেডি বিয়ারটাকে গিফট দিলাম ” । বলে সমুদ্র টেডি বিয়ারতাকে শ্রাবণীর হাতে তুলে দিল । শ্রাবণী কিছুক্ষণ টেডি বিয়ারটার দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর এক হাতে টেডি বিয়ারটাকে নিয়ে বলল , ” আমি তোমার কাছে এই টেডি বিয়ার চেয়েছিলাম না একটা ডায়মন্ড রিং ? ” । ” না মানে চেয়েছিলে তো রিংই তবে … ” , সমুদ্র কথা বলে শেষ করতে পারে নি , শ্রাবণী টেডি বিয়ারকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিল । ” সমুদ্র প্রথম অবাক হয়ে কিছুক্ষণ শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে থাকল তারপর বলল , ” শ্রাবণী ? কি ? মানে তুমি একটু আগে কি করলে ?।

বলে সমুদ্র দৌড়ে রাস্তায় গেলো টেডি বিয়ারটা কুড়াতে । সমুদ্র রাস্তায় গিয়ে হাঁটুতে বসে টেডি বিয়ারকে হাতে নিলো । তারপর ঘুরে যেসময় রাস্তা থেকে সরে আসবে তখনই তখনই একটা বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে দূরে ছিটকে পড়ল সমুদ্র । বাস না থেমে চলে গেলো । শ্রাবণী জোরে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রর পাশে গিয়ে বসল । শ্রাবণী কিছু বলতে পারছে না । একটু আগেই কত সুন্দর ছিল সবকিছু । কত ভাল ছিল সবকিছু । শুধু একটা ভুলের জন্য এখন পুরো দুনিয়া উলটপালট হয়ে যাবার উপক্রম । সমুদ্র কিছু বলতে চাইল তারপর বলতে পারবে না জেনে হাতে টেডি বিয়ারটাকে নিয়ে শ্রাবণীর কাছে আস্তে করে দিল । তারপর শ্রাবণী চোখের ইশারায় কাছে ডেকে এনে গালের উপরের চুলগুলোকে সরিয়ে দিল । তারপর একটা হাসি দিয়ে আস্তে করে বলল , ” রাগলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে ” ।

সমুদ্রের দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে । গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেয়া হয়েছে সমুদ্রকে দাফন দেয়ার জন্য । শ্রাবণীও এসেছে । এক রুমে বসে পাগলের মত , অসহায়ের মত কাঁদছে । কাছে কেউ আসছেও না । এসে কি বুঝাবে । আর কেইবা বুঝাবে । সবাইরই একই অবস্থা । দাফন শেষ হবার পর বাড়িতে সবাই চলে এলো । শ্রাবণী ব্যাগ থেকে টেডি বিয়ারটাকে বের করে আনল ।

তারপর সমুদ্রের শেষ কথাটা মনে করে টেডি বিয়ারকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলল । টেডি বিয়ারের বুকে একটু চাপ পরতেই একটা ম্যাশিনের মত শব্দ হল । ভিতর থেকে টেডি বিয়ারটা যান্ত্রিক মুখে বলে উঠল , ” উইল ইউ ম্যারি মি ? রিং ইজ ইন মাই পকেট / will you marry me ? ring is in my pocket ” শ্রাবণী বোবার মত হা করে টেডি বিয়ারের দিকে তাকিয়ে রইল । টেডি বিয়ারের কথা শ্রাবণীর কানে প্রতিধ্বনির মত বাজতে লাগল ” উইল ইউ ম্যারি মি ? রিং ইজ ইন মাই পকেট”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত