-” তোমার ভাই কোক এনে একা একা খায় ? আমার জন্যে আনে না কেন ? ”
-” ও বাচ্চা মানুষ। একা খেয়েছে তো কি খেয়েছে ? ”
-” কি তুমি আমাকে বুড়ী বললা ? ”
-” বুব বুব বুড়ী কখন বললাম ? ”
বাস!শুরু হলো ঝগড়া। শান্তিমতো খেলা দেখবো তা আর সম্ভব না। রোজ রোজ পর্তুগালের খেলা না থাকলেও ভাইয়া আর ভাবীর ঝগড়া ঠিকই থাকে। খেলা রেখে ভাইয়া আর ভাবীর ঝগড়াতে ফিরে যাই।
-” বুড়ী বলো নি তো কি বলেছো ? ”
-” জান প্লিজ কথা বারিও না। আমি শান্তকে ছোট বলেছি। তোমাকে বুড়ী বলি নি। আর তোমার কাছে তো টাকা দিয়েই রাখি। তুমি কিনে এনে খেলেই পারো। ”
-” কি তুমি খাবার খোটা দিলা ? সামান্য ক’টা টাকার খোটা দিলা ? আমি কালই বাপের বাড়ী চলে যাবো। ”
বাপের বাড়ীর কথা শুনে আমি আর হাসী আটকে রাখতে পারলাম না। বিয়ের পর দিন থেকেই ভাবী শুরু করেছিলো বাপের বাড়ী চলে যাবে ; কিন্তু আজ দু’বছর হয়ে গেলো।ভাবীর আর বাপের বাড়ী যাওয়া হয় না। ভাইয়ার সাথে ঝগড়ার পার্ট শেষ করেই ভাবী ড্রয়িংরুমে আসলেন। এসেই চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, ” এই শান্ত! তোমার মাঝে কি কোন ম্যাচুরিটি নাই ? সোফায় পা তুলে কেউ বসে ? ” কথাটা শুনেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। চেঁচিয়ে বললাম, ” এইটা আমার বাপের বাড়ী। আমার বাপের শোফা। আমি এই শোফায় উপতা হইয়া ঘুমাবো নাকি পা তুলে বসবো এইটা আমার ইচ্ছা। ”
ভাই হয়তো ভালবেসে কিছু না বললেও ; আমি তো আর ভাই না। তাই চুপচাপ থাকতেও পারি না। কথা বললেই কথা শুনিয়ে দেই। ভাবী আর কিছু না বলে টেবিলের উপর থেকে রিমোট নিয়ে জি বাংলা দিয়ে বললেন, ” ডিশওয়ালা ছেলেটারে কতোবার বলছি লাইনটা ঠিক করে দিতে। জি বাংলাটা ক্লিয়ার আসে না। ভাড়া নেওয়ার সময় কুকুরের মতো এসে ধরনা দেয়। লাইন ঠিক করার বেলা খবর নাই। ” আমি বললাম, ” ভাবী একটা কথা জিজ্ঞেস করি ? ” চেঁচিয়ে জবাব দিলেন,” কি কথা ? ”
-“যাদের বেডরুমে টিভি থাকা স্বত্তেও ড্রয়িংরুমে এসে টিভি দেখে- কি ধরণের ম্যানার? ”
-” কিহ ? টিভি দেখি বলে খোটা দিয়ে দিলা ? ” ভাবী এবার কান্না শুরু করে দিলেন। বললাম এক কথা বুঝলো আরেক কথা। ভাবীর কান্না শুনে ড্রয়িংরুমে ভাইয়া হাজির।
-” কি হলো ? ”
-” কি হবে ? কই থেইকা নিয়া আইছো জিনিসটা আল্লাহ জানে। মায়কান্না ছাড়া আর কিছুই পারে না। ”
ভাইয়াকে কথা বলেই চলে গেলাম রুমে। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে পরোটার টুকরো ছিড়ে কেবল ডিমের উপর বসিয়েছি এমন সময় ভাই এর রুম থেকে ভাবীর কণ্ঠে ভেসে আসলো, ” তোমার মাঝে কি ম্যাচুরিটি নাই ? তুমি এখনো গামছা ইউজ করো।” পরোটার টুকরোটা ডিমের উপর রেখেই শার্টের হাতা গুটাতে লাগলাম। আম্মু বলে বসলো,” তোর ভাইয়ের রুমে গেলে খবর আছে। ”
-” ভাবী এগুলো কি শুরু করছে ? ”
-” এই বয়সে একটু আধটু পাগলামো করে। তোর বউও করবে। ”
-” আমারে কি পাগল মনে হয় ? খাল কেটে কুমির আনবো ?”
আম্মু কিছু বলতে যাবে এমন সময় ভাইয়া আর ভাবী রুম থেকে বের হয়ে আসলো। আমি চুপ হয়ে ডিমের উপর থেকে পরোটা নিয়ে মুখে দিলাম। ভাবী চেয়ারে এসে বসলেন। এরপর উঠে চলে গেলেন। কি হলো ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না। ভাইয়াও ভাবীর পেছন পেছন ছুটলেন। একটু পরে ভাবীর আওয়াজ শুনতে পেলাম। চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,” তোমার মা এর চোখ কি নষ্ট ? তোমার ভাইকে ডিম দিছে। আর তোমাকে চা দিছে। ” ভাইয়া বোঝাতে লাগলেন,” আহা! আমি সেদ্ধ ডিম খাই। তাই মা ভাজা ডিম দেন নি। ”
-” জ্বী না। তোমার ডিম আমাকে ডিম দিছে। আমি যে এই বাড়ীতে খাই এইটা তোমার মা এর পছন্দ না। ”
রেডিও আবার বাজা শুরু করে দিছে। নাস্তা না খেয়ে আমিও বের হয়ে গেলাম। দুপুরবেলা ঘরে এসে দেখি ফুল স্পিডে ভাইয়া আর ভাবীর ঝগড়া চলছে। আমি একটু কান পাতলাম শোনার জন্য কি নিয়ে ঝগড়া। ভাবী বলছে, ” দেখো! জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না । তোমাদের সবার জন্য রান্না করাও আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি কাজের বুয়া না। ”
-” এটা কি ধরণের কথা। ঘরের মানুষদের জন্য রান্না করলে কাজের বুয়া হয়ে যায় ? ”
-” অতোকিছু জানি না। তোমার বাবাকে গিয়ে বলে দাও আমরা এখন থেকে আলাদা রান্না করে খাবো। ”
আলাদা খাবার কথা শুনেই ভাইয়া গেলো রেগে। ক্ষীপ্ত হয়ে বললেন, ” তোর বাপের বাড়ী যা। গিয়া আলাদা রান্না কইরা খা। ” বাস আর ভাবীকে থামায় কে। ভাবী একটু পরেই ভাইয়ার রুম থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো। পেছন পেছন ভাইয়া। আমাকে দেখেই ভাইয়া বললো, ” ওই ওরে ডাস্টবিনে ফালাইয়া দিয়া আইতো ? ”
-” ডাস্টবিনে কেন ? ”
-” ওর জন্য ওটাই ঠিক জায়গা। ”
এমন সময় বাবা রুম থেকে বের হয়ে আসলো। এসেই ভাবীকে বললো, ” বৌ মা রাগ করলে হবে ? আচ্ছা কাল থেকে তোমরা আলাদা খেয়ো। ” তা শুনে ভাইয়া বললো, ” আব্বু আপনি এইটা কি কথা বললেন ? আমি আলাদা খেতে পারবো না। আপনাদের বৌ মা রে বইলেন নিজে আলাদা খেতে। ” বাবা কিছু না বলে ভাবীর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে বললেন, ” যাও মা রুমে যাও। ” ভাবী এবার রুমে চলে গেলেন। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম, ” আটকালেন কেন ? চলে যাচ্ছিলো যাক না। আরেকটা ভাবী নিয়ে আসতাম। ”
-” থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো। দুপুরের পর থেকে আর ঝগড়া করে নি ভাইয়া ভাবী। আলাদা করে দেয়াতে বুঝি ঝগড়া থেমে গেলো। রাতে খেয়ে দেয়ে প্রায় ঘুমিয়ে পরছিলাম ; হঠাৎ প্রচণ্ড চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো। বিছানা থেকে উঠে বসতেই শুনতে পেলাম ভাবীর কণ্ঠ,” খুব তো বাবা বাবা করো । দেখেছো আলাদা করে দিলো। একবারো বললো না একসাথেই থাকো। আমাকে কেউ সহ্য করে না। আমি কালই বাপের বাড়ী চলে যাবো। ”
কি মানুষরে ভাই। যেটা চায় সেটা দিলেও দোষ। না দিলেও দোষ। ক’দিন ধরে বাবা আমার জন্য পাত্রী দেখছিলেন। কিন্তু ভাইয়ার মতো এতো অত্যাচার আমার দ্বারা সহ্য করা সম্ভব না। বাবাকে কাল বলতে হবে -” বাবা!আমি সন্ন্যাসী হবো। বিয়ে থা করা সম্ভব না। আমাকে জলদী হিমালয়ে পাঠিয়ে দিন। “