— আমাদের রিলেশানের প্রায় চার বছর শেষ,এখন এসব কথা বলার মানে কি মায়াবতী?
— মানে নেই।আমাদের চারপাশে যা হবে তার সবকিছুর মানে থাকবে এমন তো কথা নেই।
— তোমার এই সব অদ্ভুত টাইপের কথা বলা বন্ধ করো।তুমি সত্যিই কি চাইছো সেটা বলো।
— মিহাদ আমি সত্যিই চাইছি আমাদের ব্রেক-আপ হোক।রিলেশান টা কন্টিনিউ করা কোনো ভাবেই সম্ভব না।
মেয়েটার কথা শুনে মিহাদ দিক ভ্রষ্টের মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।যে মেয়েটাকে মিহাদ চিনতো তার সাথে আজকের এই মেয়েটার কোনো মিল নেই। আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে মায়াবতীর সাথে মিহাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।ওর অবশ্য অন্য একটা নাম আছে তবে সেটা মিহাদের কাছে বিশেষত্বহীন মনে হয়।
মেয়েটা সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তা দিয়ে হাটছিলো।ওর দিকে চোখ পরতেই চোখ আটকে গেছিলো মিহাদের।শ্যাম বর্নের একটা মেয়ে,অথচ মনে হয় চোখ জোড়ার কাছে পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দয্য হার মানতে বাধ্য।
একসময় ওদের মাঝে প্রেম হলো।যত দিন যাচ্ছিলো ততই মেয়েটাকে অসাধারণ মনে হয়েছে। এই মেয়ের হাসির কাছে চাঁদের আলোও ম্লান মনে হয়েছে মিহাদের। গত চার বছরে তাদের মাঝে কোনোদিন ঝগড়া হয়েছে বলে মনে পরছে না।ঝগড়া হবে কি করে?ভুল যেই করুক মেয়েটাই আগে স্যরি বলতো।তাতেও যখন কাজ হতো না মেয়েটা তখন কেঁদে কেটে একাকার করতো। কোন একদিন জোড় গলায় কথাও বলেনি,সে কিনা আজ ব্রেক-আপ চাইছে!
ভাবতে ভাবতে মিহাদের মনে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।তাহলে কি মায়াবতী এতদিন তার সাথে অভিনয় করলো?
এত কেয়ারিং এত এত সুন্দর কথা এসবের মানে কি?আমার প্রতি ওর কোনো ভালোবাসা ছিলোনা বলেই কি ঝগড়া হয়নি? নাকি ও অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছে? বাসায় গিয়ে মিহাদ মায়াবতীকে আবার ফোন দিলো।অনেক বোঝানের চেষ্টা করেও লাভ হয়নি কোনো। মিহাদ সিদ্ধান্ত নিলো যেই মেয়ের কাছে ওর কোনো দাম নেই সেই মেয়েকে ও কিছুতেই আর মনে জায়গা দেবে না। মিহাদের ফ্যামিলির লোকজন কিছুদিন আগে থেকে মিহাদকে বিয়ে করানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে।তারা মেয়েও ঠিক করে রেখেছে শুধু মিহাদের সম্মতির অপেক্ষায় ছিলো সবাই।
মিহাদ ঠিক করলো ফ্যামিলির পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করবে। একটা প্রতারকের জন্য বাবা মা কে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয়না। কয়েকদিনের মধ্যে ধুম-ধাম করে মিহাদের বিয়ে হলো।ওর বউ মায়াবতীর চেয়ে সব দিক থেকে এগিয়ে ভেবে মনে মনে এক প্রকার শান্তি পাচ্ছে মিহাদ। মায়াবতীর প্রতি রাগ অভিমান বিয়ের ব্যস্ততা সব মিলিয়ে মিহাদ মায়াবতীকে প্রায় ভুলে গেলো। যখন একা একা থাকে ওই সময়টুকো ছাড়া মেয়েটার কথা তার একে বারে মনেই পরেনা।অথচ আগে কয়েকঘন্টা মেয়েটার সাথে কথা না হলে মনে হতো অনন্ত কাল কথা হয়নি। (প্রায় মাস দুয়েক পরে)
মিহাদ রাস্তায় দাড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে।যে দিন বাসা থেকে বের হতে দেরি হয় সে দিন রিক্সাও পাওয়া যায়না সহজে।সে বিরক্ত মুখে ভাবছে আজ অফিসে গেলে বসের কথা শুনতে হবে।হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে মিহাদের নাম ধরে ডাকলো। ঘুরে তাকাতেই দেখে মায়াবতীর এক কাজিন দাড়িয়ে। মেয়েটাকে দেখে মিহাদ ভ্রু কুচকালো।সে প্রথমে ভাবলো মেয়েটার সাথে কথা বলবে না পরে মনে হলো মেয়েটাকে বলবে,বিয়ে করেছি।আমার বউ তোমার বোনের চেয়ে হাজার গুন বেটার। মিহাদ কিছু বলার আগেই মেয়েটা বললো,
— ভাইয়া এতদিন আপনাকে হন্য হয়ে খুজেছি।আপনাদের পুরনো বাসায়ও গিয়েছিলাম,বাড়িওয়ালা বললো আপনারা বাসা পাল্টে ফেলেছেন।
— বাসা পাল্টেছি বিয়ের আগে।আমাকে কেনো খুজেছো?কোনো বিশেষ প্রয়োজন ছিলো কি?
— আপু মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে তাকে যখন হস্পিটালে ভর্তি করা হয়েছিলো তখন ও আপনাকে দেখার জন্য খুব পাগলামী করেছিলো।
— মানে?মারা যাওয়ার আগে মানে?কি বলতেছো এই সব?
— আপনি কিছু জানেন না?
আপনার এক বন্ধুকে তো বলা হয়েছিলো,ইভেন আপুর লেখা একটা চিঠিও দেওয়া হয়েছিলো।আপনি পাননি? মিহাদের হঠাৎ মনে পরলো কিছুদিন আগের কথা। সেদিন বিয়ের জন্য শপিং করতে গিয়েছিলো মিহাদ।ওর বন্ধু সাকিল সেদিন ফোন দিয়ে বলেছিলো দেখা করতে কি যেন জরুরী কথা আছে। মিহাদ দেখা করেছিলো।সাকিল তাকে এক টুকরো কাগজ দিয়েছিলো আর বলেছিলো,মেয়েটার কথা আর একবার ভেবে দেখ। মিহাদ কাগজটা পকেটে রাখতে রাখতে বলেছিলো প্রতারকদের কথা ভাবার জন্য এত সময় কই?চিঠি পড়ে নেবো কখনও সময় পেলে।
মিহাদ পাগলের মতো ছুটে বাসায় দিয়ে ড্রয়ার খুজে চিঠিটা বের করলো।চিঠি খুলতে তার হাত কাঁপছে। ঝাপসা চোখে চিঠি পড়া শুরু করলো মিহাদ- ক্যান্সার বাধিয়ে ফেলেছি মিহাদ।কিছুদিন আগে ডাক্তার বললো সময় বেশি নেই।তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি বলে অমন বাজে বিহেভ করেছি।কিন্তু এখন আর পারছি না।তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে,কত দিন দেখিনা। মিহাদ আমি স্যরি।সম্মুখে অনন্তকাল।সেখানে তোমাকে দেখার সুযোগ পাবো কিনা কে জানে!তুমি কি শেষ বারের মতো এক বার আসবে?