রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে মাথায় জোরে একটা টোকা দিল।লজ্জায় পরে গেলাম! এই বয়সে এত মানুষের ভীড়ে কে আবার আমার মাথায় টোকা মারল? একরাশ সংকোচ নিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখলাম ইফতির মত কেউ একজন দাড়িয়ে আছে।আর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। হঠাৎ ইফতিকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম।সেই ইফতি, আজ ত্রিশ বছর পর যার কালো চুলগুলো হালকা সাদা রং ধারন করেছে।
__অতঃপর
_কি রে মিথি!আমাকে দেখে চিনতে পারছিস না?আরে আমি ইফতি।সেই ইফতি যে তোর সাথে সবসময় ঝগড়া করত আর তোকে খুব খেপাত ।আর তুই তখন মুখ ভার করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতিস।এখনো তোর বর তোকে কিছু বল্লে তুই ওরকম কাদিঁস নাকি?
_ইফতি,জীবন থেকে এতগুলো বছর কেটে গেল।অনেককিছু বদলে গেল।আর তুই এখনো বদলালি না?আগে বল এতদিন তুই কই ছিলি? জানিস তোকে আমি প্রতিটা মুহূর্তে খুঁজেছি। যখন যেখানে গিয়েছি চোখ মেলে চারদিকে শুধু তোকেই খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি।কই ছিল তুই এতগুলো বছর?
_আরে! কই ছিলাম মানে! আমি তো এই পৃথিবীতেই ছিলাম। কিন্তু ভুলেও তোর সামনে পড়িনি শুধু একটা কথার উত্তর দেয়ার ভয়ে।কিন্তু কি আজব ব্যাপার দেখ! জীবনের এই শেষ মুহূর্তে এসেও তোর সাথে দেখা হয়ে গেল।আর আড়ালে থাকতে পারলাম না।
_আচ্ছা ইফতি! কি ছিল অবন্তীর মাঝে যেটা আমার মাঝে ছিল না?যার কারনে তুই আমাকে রেখে পাড়ি জমিয়েছিলি অজানা পথে অবন্তীর হাত ধরে?আচ্ছা ইফতি আমি না হয় তোর ভালবাসার পাবার যোগ্য ছিলাম না কিন্তু এজন্য কি তোদের এই ব্যাপারটা আগে জানার যোগ্যতা টাও আমার ছিল না?কিভাবে পারলি আমাকে ভালবেসে অবন্তীর হাত ধরতে?আমার ভালবাসায় কি কোনো কমতি ছিল? বল!!তুই জানিস না কতটা অভিমান জমে ছিল এই হৃদয়ের ঠিক মাঝখানটায়।যেই অভিমানটা এতদিন হৃদয়ের আকাশে মেঘ হয়ে জমে ছিল কখনো বৃষ্টি হয়ে ঝরে নি।
_মিথি প্লিজ এগুলো বাদ দে।পিছনে যা হয়েছে সব ভুলে যা।আসলে আমি তোকে ভালবাসতাম সত্যি কিন্তু হঠাৎ বাবা মা অবন্তীকে আমার জন্য পছন্দ করে ফেলে।আর হঠাৎ কিছুদিন কথা বলে আমিও কিভাবে যেন অবন্তীর প্রতি দুর্বল হয়ে গেলাম।আর আমিও কিভাবে যেন স্বার্থপরের মত রাজি হয়ে গেলাম বিয়েতে।তারপর বিয়ের করে নিলাম ওকে। কিন্তু বিশ্বাস কর বিয়ের পর আমি প্রতিনিয়ত একটা মানসিক চাপে ভুগতাম। খুব কষ্ট পেতাম এই ভেবে কিভাবে তোকে আমি ঠকাতে পারলাম।বিশ্বাস কর মিথি আমি শান্তি পাইনি এক মুহূর্ত ও।প্রতিনিয়ত একটা পাপ আমাকে ঘিরে রাখত।আর সেটা হলো কাউকে ঠকানোর পাপ।প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটা রক্ষা করতে না পারার পাপ।
_না ইফতি,তুই আমাকে সত্যি ভালবাসিস নি।যদি সত্যিই ভালবাসতি তাহলে কখনো আমাকে ভুলে অন্য কাউকে আপন করে নিতে পারতি না। কেন যেন হঠাৎ আবার ইফতির মায়ায় পরে গেলাম।ত্রিশ বছর আগেরকার সেই মায়া।যেটা এতদিন কুড়ে কুড়ে খেয়েছে আজ আবার সেটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।আচ্ছা,ঠিক আছে ইফতি বাদ দে এগুলো।মানুষ উপরের রুপটা দেখে এতদিন ধরে নিয়েছিল আমি খুব ভালো আছি কিন্তু সত্যি আমি ভাল ছিলাম না।শুধু এতটুকুই মাথায় ঘুরত কিভাবে তুই আমাকে ঠকাতে পারলি। আজ সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলাম।জানি মরার আগ পর্যন্ত ভুলতে পারব না কিন্তু ভুলে থাকার অভিনয় করতে দোষ কি! আমিও না হয়ে এরকম একটা অভিনেত্রী হয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিলাম। তারপর তোর কি খবর?ভালো আছিস তো?
_হুম খুব ভালো আছি রে! অবন্তী মারা গেছে আজ প্রায় বছর পাঁচেক হলো।দুই ছেলেমেয়ে তারা বাহিরে থাকে। আর আমি যাযাবরের মত আজ এখানে তো কাল সেখানে ঘুরে বেড়াই। আর এভাবেই কাটছে আমার জীবন আর বাকি জীবনটুকুও এভাবে কাটিয়ে দিতে চাই।বিশ্বাস কর! তোকে ঠকিয়ে এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ছিলাম এতদিন।মিথি আমাকে ক্ষমা করেছিস তো!
_তোকে ক্ষমা করেছি সেই তখনি যখন শুনেছি তুই অবন্তীকে বিয়ে করে কোথায় যেন চলে গিয়েছিস।তখনই কামনা করেছিলাম তুই যেন সুখে থাকিস।কিন্তু এতগুলো বছর কেটে গেল তুই আর সামনেই এলি না।
_হঠাৎ পিছু ফিরতেই ইফতিকে আর দেখতে পেলাম না।কোথায় গেল ও?
আচ্ছা ও কি ইফতি ছিল?নাকি ইফতির মত অন্য কেউ? আরে আমি তো একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম ওকে।আর সেটা হলো ইফতি বিশ্বাস কর আজো তোকে খুব মিস করি।এক মুহূর্তের জন্যও তোকে ভুলতে পারিনি। তুই কি আজো সেটা অনুভব করতে পারিস!!!!