“মাইয়া রে,,মাইয়া রে,,তুই অপরাধী রে” প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে কলেজ যাওয়ার পথে এলাকার বখাটেরা রাত্রি কে উদ্দেশ্য করে বলে। শহরাঞ্চল হওয়ায় সবাই দেখেও না দেখার ভান করে। বখাটেগুলো যদি শুধু গান হিসাবেই বলতো তাহলে হয়তো ওতটা খারাপ লাগতনা। কিন্তু ওরা রাত্রির দিকে বাজেভাবে তাকিয়ে কথাগুলো ছুড়ে। রাত্রির কাছে খুবই বিরক্ত লাগে কথাগুলো। বাসা থেকে কলেজ যাওয়ার রাস্তা একটাই তাই যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও যেতে হয়। ধীরে ধীরে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। কাকে বলবে ও এ কথা যেখানে তাকে সাহায্য করবে। বন্ধুদের বলেও লাভ হয়নি। তারা এটা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে গেছে। একজনকে রাত্রীর ভালো লাগতো সে অনেকবার রাত্রীর সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করেছে, রাত্রী পাত্তা দিয়েছিলোনা। আজ তারও দারস্থ হয়েছে। কিন্তু সেও রাত্রীর কথাগুলো আমলে নেয়নি।
ধীরে ধীরে রাত্রীর ভিতরে মানসিক রোগ জন্মে গেছে। এলাকার মাথাদের বলেছিলো রাত্রী। তারা বললো, ” এখনকার ছেলেপেলেরা এট্টুআট্টু করবেই ওমন মা। তুমি কান দিওনা। তুমি দেখতে বেশ সুন্দরী তো। লেখাপড়ায় মনোযোগ দাও মা। এলাকায় কেও সমস্য করলে বাড়িতে এসো একদিন। ” কথাগুলো রাত্রীর কানে যখন প্রবেশ করছিলো মনে হচ্ছিলো মাটির নিচে চলে যেতে। কথাগুলোতে যে বাজে ইঙ্গিত করেছে উনি বুঝতে অসুবিধে হয়নি ওর। চলে আসে সেখান থেকে মনে একরাশ ঘৃণা নিয়ে।
অবশেষে সকল লজ্জা ত্যাগ করে রাত্রী ওর বাবাকে বললো সবটা। রাত্রীর বাবা শুনেই বলে উঠলেন, ” আমাকে এসব বলতে আসবেনা তুমি। অনেকবার বলেছি ম্যাট্রিক পাশ করেছো ব্যাস অনেক পড়াশোনা করেছোএবার বিয়ে করো। ও পাড়ার হাবিব ব্যাপারীর সাথে তোমার বিয়ে দেবো। তুমি তো শুনলেনা…কিসব ডাগতার না কি হবে!” অথচ রাত্রীর স্বপ্ন বিয়ে নয় সে ডাক্তার হয়ে সেবা করবে সবার। রাত্রী বুঝতে পারলো এখানেও কোনো সমাধান নেই। তাই সব অপমান সহ্য করে যেতে লাগলো ওই পথে। একদিন দুপুর এ কলেজ শেষে একাই বাড়ি আসছিলো। পথে মাঝে ওদের লিডার রাত্রীর হাত চেপে ধরে গোলাপ দিয়ে বলে, ” তুমি কি আমার কথাগুলো বোঝনা। তোমার জন্য আমার বুকের মাঝো হাহা করে। কবে তুমি আমার হবে..!”
খুব বাজে ভাবে রাত্রীর হাত ধরে ছিলো আর নোংরা কথা বলছিলো। রাত্রীর আর সহ্য হলোনা। একটা ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিলো ওর গালে, ” হাত ছাড় অসভ্য। তোর মতে নোংরার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তোর মুখ দেখাও পাপ।” বলেই আরেকটা চড় মারলো ওর গালে। হাতটা হ্যাচকা টান দিয়ে রাত্রী চলে যাচ্ছিলো। লিডার তখন রাত্রীর দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। কয়েকদিন পরেই পত্রিকায় বড় করে হেডলাইন হলো, “মেধাবী ছাত্রী রাত্রী নিখোঁজ” ব্যাস শুরু হলো গনমাধ্যম কর্মীদের উন্মাদনা। নতুন নাটক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল আরো অঅনেককিছু। কয়েকদিন পরেই ফোন আসলো রাত্রীর বাবার কাছে,
” আপনি কি রাত্রীর বাবা বলছেন..
” জ্বী.”
” রাত্রীকে পাওয়া গেছে। আপনি হাসপাতালে আসুন।”
মধ্যরাতেই সবাই দৌড়ে গেলো হাসপাতালে। সবার মনে অনেক আনন্দ। শেষমেশ মেয়েটাকে পাওয়া গেছে! নার্স তাদের কোনো কেবিন এর সামনে নিয়ে গেলো না, বরং নিয়ে গেলো হাসপাতালের মর্গের সামনে! লাশ সনাক্তকরণ এর জন্য ডাকা হয়েছে তাদের। রাত্রীর মা এর সামনে পড়ে আছে জানোয়ারদের খুবলে খাওয়া মেয়েটির নিথর দেহ!
আর কেও বলবেনা রাত্রীর মাকে” মাগো কলেজে আর যাবোনা, মাগো ওরা না বাজে ভাবে তাকায় আমার দিকে,.. “আর কেও সকালে উঠে চিৎকার করে বলবেনা,” আমাকে ডাকোনি কেনো সকালে প্রাইভেট ছিলো” ওর ভাইয়াকে আর কেও বলবেনা ” ভাইয়া আমাকে আজ একটু কলেজ এ দিয়ে আসবি পিছন থেকে কারা যেনো বলছে, এই মেয়েটাকে নাকি কলেজের পিছনের ঝোপে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। ছ্যা ছ্যা কি বাজে মেয়ে কয়েকদিন খুব ত্যানাছিড়া হলো এগুলো নিয়ে। ধীরেই সব নিস্তব্ধ। ঘরের কোনে ডুকরে ওঠে রাত্রীর মা।
আজ রাত্রীর এ করুন পরিণতির জন্যা কে দায়ী? কে আসল অপরাধী !মোড়ের ওপর বসা বখাটে গুলো, না পাড়ার মাথাগুলো, নাকি রাত্রীর বাবা যিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। কোনোভাবে আসল অপরাধী আমাদর সভ্য সমাজ নয়তে, যে সর্বদা চোখে ঠুলি পরে থাকে !