অনার্স কালের দিনগুলো

অনার্স কালের দিনগুলো

মাষ্টার বাবু মাথা বাঁকিয়ে খানিকটা নিচু করে। বেশ অদ্ভুত ভঙ্গিতে অামাকে ঠাট্টার সুরে বলল। ‘তোমার পেছনে একটা লেজ লাগিয়ে দেয়া উচিত।’ ক্লাসের সবাই বেশ খিলখিল করে হাসছে। ছাত্রদের প্রতি ছুড়ে দেয়া তার এক প্রশ্নের। অামার দেয়া উত্তরের প্রেক্ষিতে স্যারের এরূপ মন্তব্য। স্যার হয়তো ভেবেই বসেছিলেন, তার এমন ধরনের প্রশ্নের উত্তরে কেউ সাহস করবে না। কিন্তু তার সে ভাবনায় জালনার কাঁচের মত কিঞ্চিৎ ধুলো পরে গেলো। ছোট থেকেই অামার কথা হজমের শক্তি খুব একটা ভালো না। তাই কম সামান্য প্রতিবাদের মত করে বললাম।

— স্যার অামরা এখানে শিখতে এসেছি। ছাত্ররা ভুল বলবে, শিক্ষক শেখাবে এটাই নিয়ম।

সে গোটাগোটা চোখে অামার দিকে তাকিয়ে। পেছন থেকে কেউ একজন শার্ট টেনে বলল, বন্ধু সরি বলে বসে পর। স্যার কিন্তু ভয়ংকর লোক, মাথা ঠাণ্ডা করো। অামি কিছু একটা ভেবে খুব বিনয়ী ভঙ্গিতে সরি বললাম। স্যার চোখের ইশারায় অামাকে বসতে বলল। পরে জানতে পারলাম, সে অামাদের ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যান ‘প্রফেসর হেমায়েত উদ্দিন।’

স্যার খুব কঠিন ভঙ্গিতে কথা বলে। শুরুর দিকে স্যারকে খুব একটা ভালো লাগত না। ছাত্র কিংবা ছাত্রী সবাইকে মুখের উপর খুব বীভৎস ভাবে অপমান করে ফেলত। পরে অবশ্য স্যারের প্রতি সম্মানটা দিনেদিনে বেড়েছে। এই শেষ সময়ে এসে এখনো অামার স্যারের ক্লাস গুলোর কথা মনে অাছে। স্যার অামাদের বানান ধরেধরে পড়া মুখস্থ করাতেন। অথচ অামার ছিলাম অনার্স পড়ুয়া। তার ক্লাসে মুখস্থ করা শব্দ গুলো এখনো মনে গেঁথে অাছে। সেদিন ক্লাসের সবাই মুখটিপে হাসছে। রানা স্যার বেশ সহজ ভঙ্গিতে বলল।

— বুঝতে পারার মত যথেষ্ট বয়স তোমাদের হয়েছে। এখনো এসব সামান্য বিষয় নিয়ে লজ্জা পাবার মত কিছু নেই। সব কিছু সহজ ভাবে নিতে শিখতে হবে। নীতিবিদ্যা ক্লাস চলাকালীন স্যার কোন বিষয় বুঝাতে গিয়ে। সামান্য রোমান্টিক ধরনের তুলনা দিয়ে ফেললেন। তাতেই সবাই লজ্জায় এমন ভাবে অদ্ভুত করে হাসছে। এই মানুষটা অামার খুব পছন্দের। সব সময় বেশ সহজ করে কথা বলতেন। রানা স্যার ছিলো ছাত্রদের অাস্থার স্থল। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কটা কেমন হওয়া উচিত। তার জ্বলন্ত উদাহরণ ছিলো মাসুদ রানা স্যার। অাজ ডিপার্টমেন্টের শেষ সময় এসে স্যারের মত একটা ভালো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষকে খুব মনে পরছে। স্যার খুব মিষ্টি করে হাসতেন।

অথচ ডিপার্টমেন্টের শুরুর গল্পটা ভিন্ন ছিলো। অবশেষে একটা সাবজেক্ট পেলাম, যার নাম দর্শন। দর্শনের প্রতি অনেক অাগে থেকেই মোটামুটি বেশ অাগ্রহ ছিলো। কিন্তু অাগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে কখনই ছিল না। মনের মধ্যে বেশ খুঁতখুঁতে একটা অবস্থা। ইতি মধ্যেই সবাই তামাসা করে দার্শনিক বলতে শুরু করে দিয়েছে। পরে ভাবলাম, কোন রকমের প্রস্তুতি ছাড়া কত মেয়ের হুটকরে বিয়ে হয়ে যায়। পরে তারা সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে দিব্যি সংসার করে যাচ্ছে। অার অামি একটা সাবজেক্ট সামলাতে পারব না ? যা পেয়েছি তার একান্তই অামার। তাকে মেনে নেয়া উচিত। অামার ছিলো বলেই অামি পেয়েছি।

প্রথম ক্লাসের দিনক্ষণ ঠিক হলো। মনের মধ্যে অজানা এক রকমের ভয় কাজ করছে। বুকের ভেতর থেমে থেমে হুহু করে ওঠে। রাতে ঠিকঠাক ঘুম হলো না। অথচ কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে। অামি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অাছি। মসজিদ গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকলাম। সব কিছুর মধ্যে এক ধরনের অচেনা ভাব। অসংখ্য মানুষ এখানে। সবাই বেশ সাবলীল ভাবে হাসিঠাট্টা করছে। অনেকে গোল দিয়ে বসে বেশ জমিয়ে অাড্ডা দিছে। কোথাও একটা কোনে দুজন বসে, বেশ অপ্রস্তুত ভাবে মুচকি করে হেসে কথা বলছে।

কতকত মানুষ, অথচ এদের মধ্যে কেউ একজন নেই যে অামার পরিচিত। তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। যেনো অচেনা একটা দেশে অামি প্রথম পা ফেলেছি। এখন অামি ঠিক সেই ক্যম্পাসের বড় ভাই সম্প্রদায়ের মধ্যে পরি। সবার সাথে কত রকমের পরিচয়। অাশেপাশে সবখানে পরিচিত মুখ। ডিপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে নিচে তাকালে অনায়াসে দু’চার জনের সাথে হাতের ইশারায় কথা বলতে পারি। কারও সাথে হাত মিলিয়ে। কেউ অাবার বুকে বুক মিলিয়ে অালাপ করে। এমন কয়েকজন অাছে যাদের সাথে অামার চরথাপ্পরের সম্পর্ক। অার এই চরথাপ্পর দেয়া মানুষ গুলো অামার খুব কাছের বন্ধু। বিদেশি ভাষায় যাদের বলে বেস্টফ্রেন্ড।

ছাত্রের মধ্যে ব্রিলিয়ান্ট একটা জাতের নাম। মুরগির মধ্যে যেমন অাছে দেশি মুরগি। এদিকে অাবার দেশি মুরগি অামার খুব পছন্দের খাবার। অার এখানেই অামাদের মুরুব্বী সমাজ বড়সড় ভুলকরে বসে। প্রকৃত ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র বুঝতে’ই তাদের যত গোলমাল। যারা সারা বছর কোন ক্লাস তো দূরের কথা। পাঠ্য বইয়ের ধারে কাছেও থাকে না। শুধুমাত্র পরিক্ষার অাগের কয়েকটা রাত অাকাশ পাতাল পড়ে, ডানে বামে মাথাঘুরিয়ে কোনমতে পরিক্ষা দেয়। এদের কোনমতে শব্দটার সাথে থাকে অাত্মার সম্পর্ক। সবকিছু কোনমতে ভাবে করে। কোনমতে করে লিখে ফেলে। এবং কোনমতে ভাবে পাশটাও করে। অামার চোখে এই কোনমতে ধরনের ছাত্ররাই প্রকৃত ব্রিলিয়ান্ট।

যারা ভালো রেজাল্ট করে। অথচ তার পেছনে পর্যাপ্ত লেখাপড়া করে। তারা কখনই ব্রিলিয়ান্ট হতে পারে না। তারা হবে স্বাভাবিক ব্রেইন শক্তির মানুষ। সেদিক থেকে অামি কোনমতে ব্রিলিয়ান্ট জাতের ছাত্র। ক্যম্পাসে অামার প্রদত্ত এই মতবাদ মাথায় এসেছিল দুটো মেয়েকে কেন্দ্র করে। অামরা প্রায় দশ জনের মত বসে অাড্ডা দিচ্ছি। পদ্ম দীঘির পারে বড়সড় ঘেড়াও দেয়া সিঁড়ির মত বসার যায়গা। এক কোনে দুটো মেয়ে বসে, বেশ মনোযোগ দিয়ে স্টাডি করছে। মামুন বলল — বন্ধু অামরা অাস্তে কথা বলি। পাশে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট অাছে, তাদের ডিস্টার্ব হচ্ছে।

অামি তখন দীপ্ত কন্ঠে এই ব্রিলিয়ান্টের এই মহান মতবাদ ব্যক্ত করলাম। অাশেপাশে বসে থাকা দুচার বেঞ্চির সবাই অামাকে অাবাক চোখে দেখছে। যেন তারা বরিশালে কোন নিউটনকে দেখছে। পাশের মেয়ে দুটো অামার দিকে কপাল কুচকে বেশ রহস্যজনক চোখে তাকিয়ে উঠে গেলো। অামার ধারনা তারা ঠিক অামার মতবাদ অনুযায়ী বেশ স্বাভাবিক ধরনের জাতের স্টুডেন্ট। অামাদের ডিপার্টমেন্টে অামার মতবাদের ব্রিলিয়ান্টে প্রচন্ড রকমের ছড়াছড়ি।

একদিন ক্যম্পাসে হঠাৎ সেই মেয়ে দুটোর একজনের সাথে দেখা। অামি বন্ধুদের সাথে বসে অাছি। মেয়েটা সামান্য দূরে, সাথে অারও কয়েকটা মেয়ে। মেয়েটা অামাকে লক্ষ্য করে তর্জনী তুলতেই। তারা সবাই মিলে খিলখিল করে হেসে উঠল। অামি অবশ্য বেশ কঠিন ভঙ্গিতে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তার গালে একটা তিল অাছে। যখন সে হাসে তখন অদ্ভুত সুন্দর লাগে। অথচ সেদিন মুখটা ভয়ংকর গম্ভীর করে চলে গিয়েছিল।

প্রতিটা ডিপার্টমেন্টের কিছু ছাত্র থাকে। যদের বদনখানি শুধু পরিক্ষার দিন গুলোতে চোখে পরে। ক্লার্ক থেকে শুরু করে নিয়মিত ছাত্র পর্যন্ত সবাই এদের ঈর্ষার চোখে দেখে। যদিও অামার সাথে অনেকের’ই বেশ ঠাট্টাতামাসার সম্পর্ক। ইনকোর্স পরিক্ষার দিন গুলো অামার কাটানো ক্যম্পাসের শ্রেষ্ঠ সময়। হলে বেঞ্চে বসে এদিক সেদিক করছি। স্যার বেশ বিদ্রূপ করে অনেক কথা শুনিয়ে দিত। কথা গুলো অামাদের গায়ে না লেগে, পাশ ঘেষে জানালা দিয়ে লাইব্রেরি ভবনে দিক চলত। কে জানে সেখানে সে কথা গুলো হয়তো। রবীন্দ্রনাথ হাতে কোন সুন্দরীর মাথার উপর দিয়ে যেত।

কোনমতে একজন খাতা দিয়ে ফেললেই হতো। মুহূর্তের মধ্যে পরিক্ষার হল খালি। স্যার অবাক চোখে অামাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। তারপর শুরু হতো ক্যম্পাস চষে বেড়ানো। ঘন্টার পর ঘন্টা এক সাথে জমিয়ে অাড্ডা। সামনে থেকে হেটে যাওয়া সুন্দরী মেয়রটাকে নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করা। বৃদ্ধ সেই চাচার অামড়ার ঝাঁঝাল গন্ধ। ততদিনে চাচার সাথে অামাদের বাকীর সম্পর্ক হয়ে গেছে। কেন জানি না, তবে এত মানুষ থাকতে তিনি অামাদের নিজ থেকে ডেকে খাওয়াতেন।

একদিন বললাম, চাচা অাজকে একটা গান হয়ে যাক। চাচা নতুন বউয়ের মতকরে লজ্জা পেল। সে তার অল্প বয়সের মন ভাঙার গল্প অামাদের শুনিয়ে, গলা ছেড়ে গান শুরু করে দিল। দিনটা খুব ভালো কেটেছে। জুবায়ের চাচার সেই গানের ভিডিওটা এখনো যত্নকরে রেখে দিয়েছে। সেদিন দেখলাম চাচার বিজনেস এখন বেশ জমেছে। অামড়া পেয়ারার সাথে এখন ঝালমুড়ি যোগ করেছে। দেখা হতেই চাচা বলল — বাপ নতুন বিজনেস শুরু হরছি। তোমাগো ট্রিট না ফ্রিট কি যেন হেইয়া দিমু। চাচার কথা শুনে মনের মধ্যে কোথাও একটা ঝাঁকুনির মত লাগল। কদিনের পরিচয় অথচ মানুষটা কত অাপন ভেবে ফেলল। অাল্লাহ্ চাচাকে অনেক ভালো রাখুন।

এই শেষ সময়ে এসে সবাই খুব ছোটছোট বিষয় গুলো ক্যামেরা বন্দি করছে। ছবির মধ্যে স্মৃতি জমিয়ে রাখার একটা বিষয় অাছে। কিন্তু অামি ছবি তুলতে পছন্দ করি না। এই নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে অভিযোগের অন্ত নেই। অামার মতে, ছবি একদিন মুছে যাবে। কিন্তু ভেতরে যে জিনিসটা একবার গেঁথে গেছে, তা কখনই শেষ হাবার নয়। বন্ধু মামুন অামার এই কথার ঘোর বিরোধী। তার মতে, জগতের সাথে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। মামুন এখন অাগের থেকে অনেক সুস্থ। দুমাস বেড রেস্টে অাছে। ওর গায়ের ওজন এখন স্বাভাবিক। তৃতীয় বর্ষ ফাইনালের ঠিক দুদিন অাগে মামুন অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে ভর্তি।

অামি, জুবায়ের, ফিরোজ মিলে মামুনকে দেখতে গেলাম। শুয়ে থাকা রোগা মামুনকে নিয়ে অনেক ঠাট্টাতামাসা করলাম। দিনকে দিন মামুনের অবনতি। ডাক্তার বাবু ঢাকায় রেফার করল। কদিন পর শুনতে পেলাম মামুনকে ক্যান্সারে ধরেছে। খবরটা শুনে অামার চারিপাশ অন্ধকারের মত লাগল। রাতে ঘুম হয়নি বহুদিন। পরিক্ষার হলে অামার ঠিক সামনের সিটটা খালি। সাক্ষরের দায়িত্বে থাকা স্যার প্রতিদিন অাব্দুল্লাহ্ অাল মামুনের খবর জানতে চায়। অামি বাধ্য ছেলের মত দাড়িয়ে বলি — স্যার ওর ক্যান্সার ধরা পরেছে। হলভর্তি সব মানুষ অামার দিকে করুণাময় চোখে তাকিয়ে।

অনেক কষ্টে দিন গুলো পার করেছি। বুকের মধ্যে যেন কেউ পাথর রেখেছে। ডিপার্টমেন্টের সকল ছাত্রছাত্রী ভাই বোনদের কাছে অামি অনেক কৃতজ্ঞ। তারা মামুনের জন্য রোদবৃষ্টি মাথায় করে টাকা তুলেছে। ডিপার্টমেন্টের বর্তমান চেয়ারম্যান স্যারকে ধন্যবাদ। তার অান্তরিক চিন্তাভাবনা অামাদের কাজটা সহজ করে দিয়েছে। অাল্লাহ্ স্যারকে দীর্ঘায়ু দান করুন।

মামুন এখন প্রায় সুস্থ। শুনলাম ওর প্রেমিকা এখন অাগের থেকে বেশ সুন্দর হয়ে গেছে। মামুনের সাথে সেদিন অনেকক্ষণ কথা হলো। অামার দুজনে অনেকদিন পর বেশ ঠাট্টাতামাসা করে কথা বলেছি। তার কথার ভঙ্গিতে এখন এক ধরনের চিন্তামুক্ত বিষয় অাছে। অাল্লাহ্ মামুনকে পুরোপুরিভাবে সুস্থতা দান করুন।

জীবনে ভুল বলে কিছু নেই, সবই শিক্ষা। অামার কাছে জীবনের সংজ্ঞা বলতে, এই সামান্য কটা শব্দের একটা লাইন। দর্শন বলতে অামি বুঝি অনেক গুলো প্রশ্নের সহজ একটা উত্তর। দর্শন অামাকে বড়কে বড়, ছোটকে ছোট বলতে সাহায্য করেছে। দার্শনিক গন তাদের মত করে দর্শনকে দেখেছে। এই দীর্ঘসময় দর্শনের পেছনে দিয়ে যদি নিজের মত করে দর্শনকে উপলব্ধি করতে না পারি। তবে অামার মতে জীবনের ষোলআনাই বৃথা। কারন বালিকার ঠোঁটটিপে বাঁকা হাসির মধ্যেও দর্শন লুকিয়ে অাছে। প্রতিটা ইয়ারে ফেল করে মান উন্নয়ণ দেয়ার মধ্যেও দর্শন অাছে।

চার বছর কিন্তু দীর্ঘসময়। এই সময়ে গোটা পৃথিবীর হাজরটা বদলের মধ্যে। অামার কাছে বিস্ময়কর বদল হলো, মুরুব্বি সমাজের হাতে স্মার্ট ফোন। তারা খুব অাগ্রহের সাথে, কুঁচকানো চোখে খুটিয়ে খুটিয়ে ফেইসবুকের সেটিং ভুলকরে বসে। নিচতলা ডিপার্টমেন্টের মেয়েটার সেই চকচকে হাসিটা এখন ম্লান হয়ে গেছে। অাশেপাশে বিস্তর বদল। অামার গালে ভর্তি দাড়ি উঠেছে। গলার স্বরে গভীরতা এসেছে। চিন্তার মধ্যে সামান্য পরিপক্বতা হলেও অাছে। এত কিছুর মধ্যেও, এই দীর্ঘ সময়টা অামি দর্শনকে দিয়ে দিলাম। শুরুর দিকে যেই অামি অসহায় ভাবে ক্যম্পাসে ঢুকেছিলাম। অাজ সেই অামি এখানকার বড় ভাই সম্প্রদায়ের মধ্যে পরি। অামার এই চার বছরের সবথেকে বড় অর্জন হলো, চরথাপ্পরের সম্পর্কের মানুষ গুলো। তাদের সাথে রক্তের মত টান কাজ করে।

অামি বরাবর পেছনের বেঞ্চর ছাত্র। তবে অামার অন্যান্য বিদ্যাপীঠে শিক্ষকদের কাছে বেশ পরিচিত মুখ ছিলাম। কিন্তু এখানে বেশ অনিয়মিত মুখ অামি। কত পরিক্ষা শেষ হবার অাগে দল দলবেঁধে শেষ করে ফেলেছি। ক্যাম্পাসের প্রতিটা ঘিঞ্জি কোনা চষে বেড়িয়েছি। এত কিছুর মধ্যেও এই ক্যম্পাসে অামার শুধু একটা বীভৎস রকমের হতাশা। এই ক্যম্পাসে এতশত মুখের মধ্যে, অামি তেমন কোন মুখ খুঁজে পেলাম না। যে মুখে গাছের পাতার ঘিঞ্জি ফোঁকড় থেকে, এক ফোঁটা রোদ এসে পরে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত