বেতন কাব্য

বেতন কাব্য

অফিসের সবাই বেতন পেয়েছে।অথচ আজ মাসের দশ তারিখ;এখনো আমার একাউন্টে বেতন জমা হয় নি।কয়েকবার গিয়ে ব্যাংকে চেক করেও এসেছি।কোন লাভ হয় নি। তাই বাধ্য হয়ে অফিসের একাউন্ট সেকশনে গিয়ে একাউন্ট ম্যানেজারকে বললাম,” ভাই সবাই বেতন পাইছে ?আমার বেতন কই?”

কম্পিউটার এর মনিটর থেকে মুখ না সরিয়েই একাউন্ট ম্যানেজার জবাব দিলো,” আপনার বেতন নাই।বেতন দিয়া কি করবেন?আপনি ছুটি কাটান।চেয়ারম্যান স্যারের মেয়ে এই কথাই কইছে।” আমি চটজলদি পকেট থেকে মোবাইল বের করে ভিডিও অন করে আবার জিজ্ঞেস করলাম,” কি বলছে?আবার কন।”

আবারো কম্পিউটার এর মনিটর থেকে মুখ না সরিয়েই একাউন্ট ম্যানেজার বললেন,” চেয়ারম্যান স্যারের মেয়ে বলছে- আপনি ছুটি কাটান।বেতন নিতে হবে না।” এবার মোবাইলটা পকেটে ভরে বললাম,” ধন্যবাদ।” এমডি ম্যামের রুমে নক করতেই জবাব এলো,” কাম ইন প্লিজ।” আমি ভেতরে প্রবেশ করতেই এমডি ম্যাম বললেন,” আরে শুভ তুমি। তা কি অঘটন ঘটিয়েছো?নাকি নতুন কোন বায়না নিয়ে হাজির হলে।”

-” বেতন।”
-” কি বেতন?”
-” ম্যাম সবাই বেতন পেয়েছে।আমি পাই নি এখনো? ”
-” তো আমি কি করবো?চেয়ারম্যান স্যারের মেয়েকে বলো গিয়ে।”
-” ম্যাম তারে কই পামু ?আপনি বেতনটা দিতে বলেন ।বাসা ভাড়া দিতে হবে।বাজার করতে হবে।গ্যাস আর বিদ্যুতের যে কার্ড কিনবো সে টাকাও নেই।”

আমার এমন করুন পরিস্থিতি দেখে এমডি ম্যাম মনে হলো খুশি হলেন। হাসতে হাসতে বললেন,” তাহলে এক কাজ করো।বিছানা,বালিশ,হাড়ি,পাতিল সব নিয়ে অফিসে চলে এসো।”

এমডি ম্যামের রুম থেকেও নিরাশ হয়ে ফিরতে হলো। তবে আমিও দমবার পাত্র নয়।অফিসের কাজ জমিয়ে রেখেই বাসায় চলে আসলাম। এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে অফিসে আসলাম।সাথে বিছানা,বালিশ,হাড়ি,পাতিল সব রয়েছে।এমডি ম্যাম এখনো আসে নি। এমডি ম্যামের রুমে গিয়ে ফ্লোরে বিছানা পাতলাম। তারপর হাড়ি পাতিলগুলো কিচেনে সাঁজিয়ে ব্রাশের আগায় পেস্ট লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ করা শুরু করলাম।

খালি গায়ে লুঙ্গি পরে দাঁত ব্রাশ করছি।আর অফিসের সব ফ্লোরে ফ্লোরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।কেউ কিছু বলছে না;তবে অবাক হচ্ছে আমাকে খালি গায়ে লুঙ্গি পরা দেখে।আমার অবশ্য এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। একটু পরেই অফিসের পিয়ন ছুটতে ছুটতে এসে বলতে লাগলো,” শুভ ভাই।জলদী করেন।এমডি ম্যাডামের রুমে চলেন।” পিয়নের কথা শুনে বুঝলাম বড়সড় কোন ঝামেলা হয়েছে।দৌড়ে এমডি ম্যামের রুমে আসলাম। আমায় দেখেই মনে হলো তিনি কোন ভুত দেখলেন। চেঁচিয়ে বললেন,” শুভ তুমি খালি গায়ে লুঙ্গি পরে অফিসে দাঁত ব্রাশ করছো কেন?”

-” ঘরেও এভাবেই দাঁত ব্রাশ করি।”
-” এটা তোমার ঘর না;এটা অফিস।”
-” কিন্তু ম্যাম..”
-” কোন কিন্তু না। আগে তুমি গায়ে জামা দিয়ে আসো।প্লিজ।তোমার পায়ে পরি।”

এতো বড় মানুষটা এতো করে বলছে তাই আমার ডেস্কের উপর রাখা ব্যাগ থেকে গেঞ্জি পরে আবার ম্যামের রুমে আসলাম।

-” এসব কি শুভ?”
-” বিছানা।”
-” আমার রুমে কেন?” আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই অফিসের পিয়ন হাজির।ম্যামের সামনেই আমাকে বললো,” শুভ ভাই!আপনার ভাত পরে।”
-” বলো কি ?জলদি চুলা কমিয়ে দাও।” পিয়ন চলে যেতেই ম্যাম বললো,” মানে কি?কিসের ভাত পরে?”

-” ম্যাম আপনি বলেছিলেন না বিছানা,বালিশ,হাড়ি,পাতিল সব নিয়ে অফিসে চলে এসো।আমি তাই করেছি।আর..”

লুঙ্গির কোছা থেকে মোবাইল বের করে একাউন্ট ম্যানেজারের ভিডিওটা প্লে করে দিয়ে বললাম,” এই দেখেন ম্যাম!একাউন্ট ম্যানেজার বলছে- চেয়ারম্যান স্যারের মেয়ে আমাকে ছুটি কাটাতে বলেছে। তাই এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে বিছানা,বালিশ ,হাড়ি,পাতিল নিয়ে হাজির হয়ে গেছি।ভাবছি বিয়ের পর তিথিকে অফিসের কোন খানে রাখবো?” এমডি ম্যাম ধপাস করে চেয়ারে বসে পরলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অফিসের টিএণ্ডটি থেকে কাকে যেনো কল দিলেন। তবে কথা শুনে মনে হলো চেয়ারম্যান স্যারের মেয়েকে কল দিয়েছেন।

-” আপনি কি শুভর বেতনটা পাঁচ মিনিটের ভেতর দিবেন?”

ওপাশ থেকে কি বললো জানি না। ম্যাম আবার বললেন,” আপনি এখনই একাউন্ট সেকশনে বলে দিন শুভর বেতন দিতে।নয়তো ওর জ্বালায় আমিই এখন জব ছেড়ে দিবো।প্লিজ এখন মানে এখনই।আমি আর টলারেট করতে পারছি না।” কলটা কেটে ম্যাম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,” একাউন্টসে যাও।বেতন দিয়ে দেবে।আর এখনই তোমার গেটাপ চেঞ্জ করো।আর এইসব বিছানাপাতি সরাও।”

-” তবে ম্যাম!এখানে কিন্তু একটা কিন্তু আছে।” ম্যাম বিরক্ত হয়ে বললেন,” আবার কিন্তু কেন?”
-” অনেক টাকা খরচ করে বিছানাপাতি ,হাড়ি,পাতিল নিয়ে অফিসে শিফট হয়েছি।আবার বেতনের থেকে টাকা খরচ করে এসব নিয়ে যেতে পারবো না।”

ম্যাম কোন কথা বললেন না।ভ্যানিটিব্যাগ থেকে দু’টো এক হাজার টাকার নোট বের করে দিয়ে বললেন,” ধরো।আর এসব সড়াও।” আমি টাকা দুই হাজার হাতে নিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,” আর পাঁচশো হলে ভালো হতো ম্যাম।” ম্যাম আমার কথা শুনে দু’হাতে কপালের উপরের চুলগুলো ধরলেন,তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললেন,” বাপ তোর পায়ে ধরি।তুই আমার সামনে থেকে যা।”

কি আর করা?এতোবড় মানুষটা কাঁদতে কাঁদতে চলে যেতে বলছে ; না শোনে আর উপায় কি?পাঁচশো টাকা না নিয়েই ম্যামের রুম থেকে বের হলাম। বের হবার পর মনে হলো বাসা তো ছেড়ে দিয়েছি।এখন তো বাসা খোঁজা লাগবে।ভাবছি ম্যাম কে গিয়ে বলবো,” ম্যাম কিছু দিন ছুটি দেন।আমি বাসা খুঁজবো।”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত