দুইপক্ষের মতামত নিয়ে যথেষ্ঠ ধুমধামের সাথেই আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো। সারাদিনের উপোষী আর বিয়ের ধকলও তো কম কিছু না। মর মর অবস্থা। ক্লান্ত দেহটা নেতিয়ে পড়তে চাইছে বারবার। একটু বিশ্রামের জন্য মনটাও আঁকুপাঁকু করছে। গৃহপ্রবেশের যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান ঘন্টাখানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো। একটু বসবার সুযোগ পাওয়া মাত্র হাত পা ছড়িয়ে দিতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ গুষ্টির যত মহিলা ছিলো সকলের একত্রে প্রবেশ। আবারো মোমের পুতুলের মতো ঠাঁই বসে থাকা।
আত্মীয়ামন্ডলী আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন যেন আমি ভিনগ্রহের প্রাণী হঠাৎই পৃথিবীতে চাঁদবদনখানা নামিয়ে এনেছি। যাইই হোক, দেখাদেখির এক পর্যায়ে আমার শাশুড়ির ননদের দেবরের মেয়ের শাশুড়ি প্রশ্ন তুললেন, “মেয়ে তো দেখতে মন্দ না, তা বাপের কি সাজানোরও পয়সা ছিলো না নাকি! দুটো পাউটার ডলে মেয়ে পাঠিয়েছে! ” পেছন থেকে খুড় শাশুড়ির মেয়ের ঘরের নাতনি মুখ বেঁকিয়ে উঠলো,” আমার বিয়েতে আমি তমুক পার্লার থেকে সাজবো বলে দিলাম। না হলে বিয়েই করবো না।”
বাকিরা দূর সম্পর্কের অমুকের ঘরের বিনা নিমন্ত্রিত তমুক আঁতকে উঠলেন,” ও মা গো মা গো মা আআআআ, গয়না গাটিও নেই দেখছি! এক কাপড়েই মেয়ে পাঠিয়েছে! বড় বউ শেষ পর্যন্ত ঠকলো!” অভ্রের মায়ের পুত্রবধু দেখে লজ্জায় যেন সবার নাক কান মাথা কেটে টুকরো হয়ে যাচ্ছে। ঢুলুঢুলু চোখে এইসব লেজমাথা ছাড়া কথা গিলছিলাম। মাঝখানে হঠাৎ গভীর পর্যায়ের হাই চলে আসবে কে জানতো! উমাআআ হাও হাও হাও করে হাই তুলে আবার চুপ করে বসে রইলাম। শাশুড়ি মা দেখছি মাঝ নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। কোনোমতে টাল সামলে বললেন,”কেন এইভাবে বলছেন খুঁড়ি মা! বেয়াই কোনো কার্পণ্য করেননি। ও সাজেনি সেটা সম্পূর্ণ ওর নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিলো।”
হঠাৎই যেন মুখটা বেঁকা হয়ে গেলো খুঁড়ি মা নামক বুড়িমার। “অহ, তা দেখিদেখি কি হাতি ঘোড়া এনেছে! অ বউ দেখাও দেখাও তাড়াতাড়ি”। বউ দেখতে আসাটা বাহানা। যৌতুক দিয়েছে কি না দেখাটাই আসল। আর কিছু হাতানোর আকাঙ্ক্ষা। এর মধ্যে কে যেন হঠাৎ মাথার ওড়না সড়িয়ে চুলে টান দিলো। সাথে সাথে শাশুড়ির চিৎকার,” একি করলেন! ” সহ্যের সীমা মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে। অসহায় শাশুড়ি এতক্ষণ নিরসমুখে পুত্রবধুর অপমান সহ্য করছিলেন। এবার ভয় পেয়ে গেলেন।
শাশুড়ির ভয় ছিলো রেগে আবার কারো টুঁটি না চেপে ধরি। লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে আমি সেইরকম কিছুই করিনি। দেখতেই তো চাইছে এর বেশি কি! ২/১জন তেল মারছে জিনিস হাতানোর লোভে এ আর তেমন কি! একটু নড়ে চড়ে বসলাম। সুটকেসটা খুলতে খুলতে বললাম, সবাই লাইনে দাঁড়ান। বাপের বাড়ি থেকে এক শিশি বিষ এনেছি। চিৎকার করবেন না সবাইকে সমান ভাবেই দেওয়া হবে।” তারপরটা ইতিহাস স্বাক্ষী। কানাঘুষোয় কান দেওয়ার সময় নেই। মনে হয় না উত্তরটা খারাপ দিয়েছি। শাশুড়ি মায়ের হাসিই সেটা বলে দিচ্ছে।।