ফাঁসির রায় হওয়া স্বত্তেও ভরা আদালতে জোরে জোরে হাসছে তনু। অদ্ভূত মেয়ে তো। পাগল নাকি? তনুর বাবা মা আবার তনুকে বাঁচাতে আবেদন জানাচ্ছে কিন্তু সে চায় তার ফাঁসিই হোক। তনুর বাবা মা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে ৩ বছর যাবৎ কোর্টে দৌড়াতে দৌড়াতে। শেষ চেষ্টাটুক করে যাচ্ছে তারা। রায় শেষে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পুরোটা রাস্তা সে থেকে থেকে হেসে উঠে। তার সাথে যে লেডি কন্সটেবল ছিলেন সে রীতিমতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে তনুর হাসি দেখে।
– এই দাঁতের গুড়ায় এত পানি জমছে কেন? এত কেলাচ্ছো কেন? তনু কোন উত্তর না দিয়ে আবার হাসতে লাগলো। মহিলা আবার বিরক্ত হয়ে গেলো।
– বেশিরভাগ আসামী শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য এমন পাগলের ভান ধরে । এটা নতুন কিছু না। তোমার মত এমন নাটক অনেকেই করছে। এইটা বাংলা সিনেমা না যে অভিনয় করলেই মুক্তি পায়া যাবা। তোমার উপর এমন তেমন চার্জ না স্বামীকে হত্যা করার অভিযোগ। বুঝছো?
তনু হাসি থামিয়ে দিলো। সে ঘামাচ্ছে। সে স্তব্ধ হয়ে রইলো। তার মনে হচ্ছিলো সে মারা যাচ্ছে। সে বসা থাকা অবস্থায় মহিলা কন্সটেবলের শরীরে এলিয়ে পড়ে গেল। তারা ধরেই নিলো এটা তনুর নতুন অভিনয়।
তবুও আইন মোতাবেক তাকে হাসপাতালে ইমারজেন্সি বিভাগে নেওয়া হলো চিকিৎসার জন্য। ডিউটি ডাক্তার তনুর প্রেসার , পালস মেপে তাকে দ্রুত অক্সিজেন মাক্স পড়িয়ে দিল। কন্সটেবল তখন পুরাই অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে। হচ্ছে টা কি এসব? আধা ঘন্টা আগেও তনুও জোরে জোরে হাসছিলো এখন তার শারিরীক অবস্থা খুব বাজে। ডাক্তারের কাছে কন্সটেবল জানতে চাইলেন
– হইসে কি উনার? কি সমস্যা?
– উনার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল মনে হচ্ছে। পরীক্ষা নীরিক্ষার পর বাকীটা বুঝা যাবে। আপাতত তাকে অবজারভেশনে রাখতে হবে।
– হইসে টা কি?
– উনার হার্ট এট্যাক বলে মনে হচ্ছে। পরীক্ষার পর বুঝা যাবে ।
– আচ্ছা।
তনু চোখ খুলে সব শুনছে। সে অজ্ঞান না। সে সজ্ঞানেই আছে। তবে তার শরীরে কোন শক্তি নেই মনে হচ্ছে। হাতটা নাড়তে নিয়ে বোধ করলো হাতটায় হাতকড়া এখনো লাগানো। এই হাতকড়ার বদলে আজ তার হাতে চুড়ি থাকার কথা ছিলো। তনুর মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। তার দুই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে অঝোরে। তার অনেক কথা মনে পড়ছে আজ। অনেক কথা।
এইতো সেদিন। বাসা থেকে পছন্দ করা পাত্রের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। ৭ বছর প্রেম করে আজ তাকে অন্য জনের সাথে বিয়ে করাটা তার কাছে ভয়াবহ অনুভূতি। তাছাড়া ইফতিও পাগলের মত ভালোবাসতো তাকে। ইফতি হ্যাঁ ইফতির জন্যই তো রাতের আঁধারে পালিয়ে গিয়েছিলো তনু। এই সে ইফতি যার এক টাকাও আয় রোজগার ছিলনা। কিন্তু তনুকে সে হারাতে দেয় নাই। রোদে রোদে পুড়ে সে একটা বাস কাউন্টারে ৬০০০ টাকার চাকরি করেছে। সংসার চালিয়েছে সাথে সরকারি কলেজে নিজের লেখাপড়াটাও। তনুকেও পড়াটা চালিয়ে যেতে বলেছিলো কিন্তু সংসারের অভাবের কথা ভেবে সে আর নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যায় নি। যা ছিলো যেমনই ছিলো ইফতি কখনো তনুকে কষ্টে রাখে নি।
নিজে খায় নি কিন্তু তনুকে খালি পেটে ঘুমাতে দেয় নি। বুঝতেই দেয় নি তার পেটেও ক্ষুধা। যা তাকে রাতে ঘুমাতেও দেয় নাই। আর তনু ? সে সংসারের জন্য শুরুতে বাড়িওয়ালার বাসায় মাঝে মাঝে কাপড় ধুয়ে দিয়েছে যাতে বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া নিতে আসার সময় ইফতিকে বকাবাজি না করে। দিনশেষে তারা ভালো ছিলো। খুব ভালো ছিলো। দুইজনের অভাব অথবা পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া স্বত্তেও নিজেদের সম্পর্কে এর রেশ আনে নি। ভালোই ছিলো ওরা। যেই মানুষটার হাত ধরে লোকলজ্জার ভয়কে উপেক্ষা করে তনু পালিয়ে গিয়েছিলো তারই উপর আজ ইফতিকে খুন করার আরোপ। এমনকি আজ সে বিচারের শাস্তি হিসেবে তনু পেয়েছে ফাঁসির আদেশ।
তনুর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। অক্সিজেন মাক্স নিশ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার জন্য ঘোলা হয়ে আসছে। তনু চিৎকার করে কাঁদতে চাইছে। তার অনেক কিছু বলার ছিলো। হয়ত এমন কাউকে যে শুনেও কাউকে বলবে না। যে তনুর মাথায় হাত রেখে বলবে “ এমন কেন হলো?
যেদিন তনু ইফতি পালিয়ে গিয়েছিলো সেদিনই রাতে বিয়ে করেছিলো তারা। প্রথম ২ বছর তো তনুর বাসার মানুষ সমাজে সবাইকে বলত তনু মারা গিয়েছে। তনু ফোন দিলে কেউ কথা বলতো না। লাইন কেটে দিতো। তনু কষ্ট পেত কিন্তু ইফতিকে বুঝতে দিত না। ইফতির পরিবার আগে তাদের বিয়ে মেনে নেয়। তার কয়েকমাস পর একদিন ইফতির মা বাবা মিলে তনুর মা বাবার কাছে যায়। পারিবারিক ভাবে আলোচনা করে তারা এই বিয়ে মেনে নেয়। আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হতে শুরু করে।
ইফতির চাকরি হয়। তনুকে এখন আগের মত কষ্ট করতে হয় না। ইফতিকে এখন রোদে পুড়তে হয় না। ভালো একটা প্রাইভেট কম্পানীতে একাউন্টেন্ট হিসেবে চাকরি করে সে। দুই পরিবারের আসা যাওয়া এবং সামাজিক ভাবে তাদেরকে মেনে নেওয়াও হয়। দিব্যি সব ভালোই চলছিলো। সেদিন পর্যন্ত যেদিন অনু আসলো ঠিক তার আগের দিন পর্যন্ত। অনু তনুর ছোট বোন। বয়সে ৭ বছরের ছোট। খুব বেশি সুন্দরি না হলেও সে খুব মিশুক। কোন কারণে তনুর বাবা মায়ের সাথে রাগ হয়ে সে এই বাসায় এসে উঠে। প্রথমে তনু তাকে খুব করে বুঝায় বাসায় ফিরে যেতে কিন্তু পরবর্তীতে তনুকে সে ভুল বুঝে যে সে তার বোনের কাছেই বোঝা হয়ে গিয়েছে। তনু তাকে আর যাওয়ার কথা বলে না। ইসসসসস আজ খুব দুঃখ হচ্ছে তনুর কেন যে সে অনুকে সেদিন জায়গা দিয়েছিলো। তনুর হার্টবিট বেড়ে চলেছে।
ইফতি তাকে ছোট বোনের মতই আদর করতো। এমনটাই ভাবতো তনু। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার সময় একবার হলেও সে জিজ্ঞাসা করতো অনু কিছু খাবে কিনা? প্রতিদিন চকলেট, আইসক্রিম, চিপস নিয়েই ঘরে ফিরত ইফতি। তনুর আম্মা অনুকে ফিরিয়ে নিতে এসেছিলো সে যায় নি। খুব একরোখা টাইপের একটা মেয়ে অনু। এমন কোন ঘটনাই ঘটে নি যে সে এই বাসায় এসে উঠেছে। তার সন্ধ্যার পর বাড়িতে দেরীতে ফেরার কারণে তনুর বাবা তাকে দুইটা থাপ্পড় মেরেছে। তা সে সহ্য করতে না পেরে বাবার পকেট থেকে টাকা নিয়ে চলে এসেছে। অনু এ বাসাতেই রয়ে যায়। এখান থেকেই সে কলেজে যেতো।
মাঝে মাঝে ইফতির সাথে ফিরতো। বোনের মত আদর করুক আর যেভাবেই আদর করুক না কেনো অনু ইফতির এত মেলামেশা তনুর একেবারেই ভালো লাগছিলো না। অনু ইফতি বলতেই পাগল। সে তনুর সাথেও এত কথা বলে না যতটা ইফতির সাথে বলে। হিংসা বললে হিংসা ই প্রতিটা মেয়ে মানুষই তার স্বামীর আশে পাশে অন্য মেয়েদের ছায়া পছন্দ করে না। সেটা যদি সেই মেয়ের আপন বোনও হয় তাও না। স্বামীর কোন মেয়ের সাথে নির্দিষ্ট দূরত্ব পার করে যখন সম্পর্ক হাতের স্পর্শে চলে যায় তখন স্ত্রীকে শক্ত হওয়া উচিৎ। সে যে ই হোক না কেন। তনু তার মাকে আবার ফোন করে বাসায় ডাকে যাতে অনুকে তার সাথে নিয়ে যায়। তনুর মা আসেনও কিন্তু সে যেতে চায়না। তনু এর কোন মানেই খুঁজে পাচ্ছে না। সে ইফতিকে ঐ রাতেই বলল
– ইফতি অনুকে আম্মা নিতে এসেছিলো সে যেতে চাছে না।
– না যেতে চাইলে জোর কেন করছো? থাকুক ও। তনু খুব রাগ হয়ে বলল
– থাকুক মানে? এটা আমার বাসা। অনেক কষ্টে গুছানো সংসার। আমি ওকে আর এখানে থাকতে দিব না। ব্যাস এটাই আমার শেষ কথা।
– ধুর যত্তসব যন্ত্রণা। তোমার যা মন চায় করো।
ইফতি রেগে গিয়ে শোবার ঘর থেকে বালিশ নিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো। তনু এমন রূপ ইফতির আগে কখনো দেখে নি। ইফতি কখনো তনুকে রেখে এভাবে অন্য ঘরে ঘুমায় নি। সে রাতে তনুর একেবারেই ঘুম হচ্ছিলো না। রাগের বশে হয়ত ইফতি বের হয়ে গিয়েছে কিন্তু সেও হয়ত তনুর মত ছটফট করছে ঘুমাতে পারছে না। তনু বিছানা ছেড়ে ড্রয়িং রুমের দিকে গেলো। বাইরের হালকা আলোয় বোঝা যাচ্ছে যে ইফতি সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে আর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অনু।
দুনিয়ার কোন স্ত্রীর এই দৃশ্য সহ্য হবার কথা না। তনু রাগে ক্ষোভে ঘরের বাতি জ্বালিয়ে অনুর চুলের মুঠ ধরে অনুকে দরজা দিয়ে বের করে দিলো। আশে পাশের কয়েক বাসার মানুষ তাদের কে দেখছে। ইফতি কোন ভাবেই তনুকে শান্ত করতে পারছে না। অনু এ বাসা থেকে যাবে না বলে চিৎকার করতে লাগলো। ছি কি বাজে পরিস্থিতিই না তৈরি হয়েছিলো সেদিন।
অনুকে বের করে তনু ঘরে ঢুকে আর কোন কথাই বলল না ইফতির সাথে। এভাবে আরো ৪ থেকে ৫ দিন কেটে গেলো । ইফতি অফিসে আসে যায়। রাতে এসে ঘুমায়। কেউই কারো সাথে কথা বলে না। দুজনের সম্পর্কটা মুহূর্তে পাল্টে গেলো। এমন হওয়ার কথা ছিলো না। ইফতির রাতের পর রাত সিগারেট খায়। ধোঁয়া দিয়ে ঘর কালো হয়ে যায়। তনুর সারারাত ঘুম আসে না।
সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। তনুর কষ্ট হচ্ছিলো ইফতির সাথে কথা বন্ধের কারণে। শেষ কয়দিনে তনু মায়ের বাড়িতেও ফোন করে নি। চুলায় রান্না বসিয়ে ভাবছিলো “ এমনও তো হতে পারে সে যা দেখেছে সবই ভুল। ইফতির দোষ আছে তবে তা অনুর চেয়ে কম”। এসব ভাবতে ভাবতে দরজায় কলিং বেল বাজলো। তনু দরজা খুলে দিতেই এক ভদ্র লোক একটা খাম হাতে ধরিয়ে দিলো। খাম খুলতেই তনু ধাপ করে মাটিতে বসে পড়লো। একটা মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট আর একটা চিঠি। মেডিক্যাল রিপোর্টটি অনুর যাতে লেখা সে অন্তঃসত্ত্বা। আর দ্বিতীয়টিতে লেখা –
“ আপা আমাকে মাফ করে দিও। তুমি চাইলে তার সাথে সংসার করতে পারো। আমিই বরং দূরে কোথাও চলে যাবো। আমার সাথে যা হয়েছে ভালো হয় নি আপা। আমার বাচ্চার কোন বাবার নামও দিতে পারবো না আমি। আমি দুলাভাইকে ভালোবাসি আপা। সে বলেছিলো সেও বাসে। তারপরও আমি চাই তোমরা ভালো থাকো। আল্লাহ হাফেজ আপা”। তনুর কান্না সেদিন কে দেখে? সে কান্না করতে করতেই ফোন হাতে নিয়ে ইফতিকে ফোন করলো।
– হ্যলো ব্যস্ত তুমি?
– না বলো।
– কংগ্রাচুলেশন।
– কেন?
– তুমি বাবা হতে চলেছো।
– সত্যি? ওয়াও! তনু আমি আজ অনেক খুশি।
– ইফতি অনু মা হতে চলেছে।
– কি? কিভাবে?
– ইফতি অনু তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছে।
– কিসব বলতেছো? আশ্চর্য। যা মুখে আসবে তাই বলবা নাকি? ফাজলামি পাইসো?
– আমি চলে যাচ্ছি ইফতি। আমাকে আর কেউ খুঁজে পাবা না। এমনটা না করলেও পারতা। আমি তোমাকে কখনোই মাফ করবো না ইফতি।
– তনু তুমি কোথাও যাবে না। আমি এখনি বাসায় আসছি। হ্যলো তনু শুনতে পাচ্ছো?
তনু ফোন কেটে দিলো। সে খালি পায়ে খামটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। দরজায় তালাও দিলো না। চুলার রান্নার দিকেও তার খেয়াল নাই। সে হেটে গেলো যেদিকে তার দু চোখ যাচ্ছিলো। ইফতি বাসায় ফিরে তনুকে পেলো না। তনু ফোন বাসাতেই রেখে গিয়েছে তাই ফোন করেও লাভ হলো না। অতিরিক্ত মাত্রার চিন্তায় পরে ইফতি সিগারেট হাতে নিয়ে আগুন ধরাতে আশ পাশে বিকট আওয়াজ হয়ে উঠলো। তনু চুলাটা নিভিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলো আর ইফতি ঘরে ঢুকে গ্যাসের গন্ধ শুকতে ভুলে গিয়েছিলো।
তনু যখন জানতে পারলো এই দুর্ঘটনার কথা সে এসে ফিরতেই পুলিশ তাকেই ধরে নিয়ে গেলো। আশ পাশের মানুষের মতামত নিয়ে তারা শুনেছিলো এই দম্পতি প্রায়ই রাত বেড়াতে ঝগড়া করতো। তাই স্ত্রীই তাকে পরিকল্পনা করে মেরে ফেলেছে। ইফতির লাশটাও নেই। একদম ছাই হয়ে গিয়েছে আগুনে পুড়ে। তনু সেদিন কাঁদছিলো না। কিছু বলছিলোও না। তাকে গাড়িতে উঠানোর সময় সে শুধু অনুকে দেখছিলো। অনু খুব কাঁদছিলো। কান্না করাটাই স্বাভাবিক। তার বাচ্চার বাবা আর এই দুনিয়ায় নাই। কিন্তু তনু কাঁদছিলো না।
তনু কেঁদেছিলো সেদিন যেদিন সে থানায় কয়েকজন মহিলার কথা শুনছিলো। কে কেন জেলে এসেছে সেই গল্প করতে গিয়ে একজন বলে উঠলো সে এক হাসপাতালের নার্স ছিলো। ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে দেওয়ার কারণে পুলিশ আটক করেছে তাকে। সেই হাসপাতালের নামটা শুনে তনুর পরিচিত মনে হলো। সে তার সাথে যে খামটা নিয়ে এসেছিলো সেই খামটা এখনো তার সাথেই আছে। সে খামটা তার বালিশের নিচে থেকে বের করে মহিলাকে দেখিয়ে বললেন
– দেখেন তো খালা এটা কি আপনি বানাইসেন? মহিলা পান চাবাতে চাবাতে বলুলেন
– আরে হ এইটাও আমার হাতেরই করা। একটা মাইয়া করাইসিলো। পুরা ১০০০ টাকা দিছিলো।
তনু কেঁদেছিলো সেদিন। খুব কেঁদেছিলো। যেদিন তার সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হলো।। যেদিন সে জানতে পারলো তার বোন তার স্বামীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিলো। সে অন্তঃসত্ত্বা ছিলোই না। তনু এরপর নিজেকে মাফ করতে পারে নি। সে আদালতে সবার সামনে স্বীকার করে ইফতিকে সে ই খুন করেছে। কারণ সে ইফতিকে সন্দেহ করতো। সে পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আজ তাকে শাস্তি হিসেবে ফাঁসি মঞ্জুর করেছে।
তনুর বুকটা ভার হয়ে আছে। সে আই সি ইউ তে থাকা মেশিনগুলোর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না। তার চোখে ভাসছে সে ইফতির সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। তার কানে ভাসছে “বলুন আলহামদুলিল্লাহ কবুল”। তনুর দু চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সে শেষবারের মত মুখ দিয়ে একবার উচ্চারণ করলো “ কবুল এরপর ডাক্তার ফিরে আর তনুকে জীবিত পেলো না। ছেড়ে গেলো নিশ্বাস। হারিয়ে গেলো সুন্দর গুছানো সম্পর্ক আর বিশ্বাস। বেঁচে থাকুক সম্পর্ক তৃতীয়পক্ষ বিহীন। বেঁচে থাকুক ভালোবাসা সন্দেহবিহীন।