উইশ

উইশ

“ভাইয়া ১০০ টা টাকা দে না স্কুলে যাব।” আরামের ঘুম টা হারাম করে দিলো নীলা। পরীক্ষার টেনশনে কিছুদিন ঘুমোতে পারিনি হোস্টেলে থেকে। আজ বাসায় এসে একটু ঘুম দিয়েছিলাম আর ছোট বোনটা এসেই ডাকাডাকি শুরু করে দিল। স্কুলে যাবে টাকা নিতে।

“যাতো আমার কাছে এখন ১০ টাকা নেই পরে দিব নে।
“ওই আমি কি ১০ টাকা চাইছি নাকি ১০০ টাকা চাইছি।
“আরে বইন এখন ১০ টাকা নাই বললাম তো।
“দেখ রাফসাইন্না ভালোয় ভালোয় দে কইতাছি, নাহলে কিন্তু তোর ১২ টা বাজামু। তোরে তো এমনি হাতের কাছে পাইনা আর এখন পাইছি টাকা না দিয়ে যাইবা কই হু.?
“আচ্ছা শোন টিফিন টাইমে ১০ টাকার বেশি লাগে.? আমাদের সময় তো ৫টাকা করে দিত আম্মু।
“দেখ আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। তারাতারি টাকা দে। না হলে তোর সারাদিনেও একটুও ঘুমাতে দিব না। স্কিলে না গিয়ে তোকে জ্বালাবো।

” আমি তোকে মেরে ফেলবো।
“ভূত হয়ে জ্বালাবো। তবুও ঘুমাতে দিব না।
“দেখ বইনা আমার কাছে টাকা নাই।
“আচ্ছা ভাইউ তোর মানিব্যাগ টা দেখি।
” না থাক দেখতে হবে না।

ঘুম ঘুম চোখে মানিব্যাগ দিয়ে কতটাকা দিলাম ওকে খেয়াল নেই। কিন্তু টাকা হাতে পেয়োই “ইয়াহু” বলেই আমার গালে একটা চুমু দিয়েই পালিয়ে গেছে। কিছু একটা হয়েছে কিন্তু ঘুম চোখে তার দিকে খেয়াল করলাম না। অনেকটা সময় ঘুমিয়ে উঠে মানিব্যাগ বিছানার উপর দেখে মনে পরলো আমি নীলা কে তো টাকা দিলাম, কিন্তু কত টাকা.? মানিব্যাগ চেক করতেই দেখি আমাকে উপহার দেওয়া ১০০০ টাকার নোট টা নেই। আব্বু দিয়েছিল এই টাকা টা H.S.C পরীক্ষার প্রথমদিন। সেটা দিয়ে দিছি। আম্মু আম্মু তোমার মেয়ে কোথায়.? বাসায় আসছে নাকি.??

“কী হয়েছে এত চিৎকার করছিস কেনো.? (আম্মু)
“তোমার মেয়ে আমার টাকা নিয়ে পালিয়েছে। কোথায় তোমার মেয়ে.?
“ও তো স্কুলে আর ও তোর টাকা নিবে কেনো, আমি ই তো ওকে ২ হাজার টাকা দিলাম আজকে।
“কিহ্ ২ হাজার টা। ওবাক হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছি।
“কি বলো মা। ২ হাজার টাকা দিছো, কেনো দিছো.?
“হাত খরচা।
“কিহ্ হাত খরচা, দাড়াও আজ আসুক নীলা এত টাকা কেনো লাগবে ওর।

তোমার থেকে নিছে ২ হাজার আমার থেকে ১ হাজার। ওমা ৩ হাজার টাকা। এ তো আমার পুরো বছরের হাত খরচ একসাথে। মা আমি শেষ।

“দেখ রাফু ওভার একক্টিং করা বন্ধ কর। অন্তঃতোপক্ষে আজকের দিনে এমন করিস না।
” আজকের দিনে নয় কেনো.? আজ কী স্পেশাল কিছু.?
“সেটা নীলা আসলেই বুজতে পারবি।
” উহু এখন বলবা।
” না এখন না,

অনেক কাজ করতে হবে আমার আমি গেলাম। বলেই আম্মু চলে গেলো। “এই আম্মু খাবার কিছু দিবা তো। “ফ্রিজে খাবার রাখা আছে খেয়ে নে। রান্নাঘর থেকে আম্মু কথাটা জানিয়ে দিলো। আমি আর কী করবো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল ও শেষ হয়ে আসছে নীলার কোনো খোঁজ নেই। আমি ওর অপেক্ষায় দরজার সামনে বসে আছি কখন আসবে নীলা, আর কী এমন স্পেশাল দিন। ভাবতেছি। সন্ধা ৬টা বেজে গেলো। চিন্তা কেবল বেরেই চলছে আমার। হঠাৎ বাড়ির সামনে একটা এম্বুলেন্স এসে থামে। দৌড়ে বাসার বাহিরে চলে আসি।

এম্বুলেন্সের দরজা টা খুলতেই দেখতে পেলাম নীলার বান্ধুবী ভিতরে বসে আছে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে। ট্রেজার করে একটা মানুষকে বাহির করলো দুজন নার্স, নীলার বান্ধুবীর মুখ গম্ভীর হয়ে আছে কিছু বলছে না। চোখ দুটো ফুলে আছে। দৌড়ে এসে নীলার বান্ধুবী তার হাতের ব্যাগ টা আমার কাছে দিলো। রক্তে মাখা ব্যাগ টা হাতে পেতেই ভিতরে থাকা একটা সাদা কী জেনো আর একটা বক্স। বক্স টা বের করে খুলতেই। “Happy Birthday To You” বলে উঠলো একটা পুতুল। তার মানে আজ না আজ না কাল তো আমার জন্মদিন। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া এসেই ট্রেজারের উপর মানুষ টার মুখ দিয়ে সাদা কাপড় টা সরে যায়। নীলা বলে এক চিৎকার। তারপর ই স্তব্ধ, দু’চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছি। নীলার লাশের দিকে। পাশ দিয়ে ওর বান্ধুবী বললো। শপিং করে বাহির হতেই একটা মিনি বাস এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় নীলাকে।

সেদিন দু’চোখ শুধু নীলার দিকেই ছিল। নীলা আমাকে কী জেনো বলতে চাইছিলো। সেটা ভেবেই আজ ৪বছর পর ও রাফসান নিলার সাথে কথা বলে। নীলা তাকে উইশ করে। প্রতিদিন উইশ করে। আর রাফসান সেটা শুনে। আনন্দ করে। তবে সে আনন্দ সাভাবিক কেউ দেখতে পায় না। একটা পাঞ্জাবী পরে আছে আজ চার বছর ধরে। গন্ধে রাফসানের পাশে যাওয়া অসম্ভব হয়ে আসছে। তবুও চারদিকে পারফিউম ছড়িয়ে রাখে রাফসানের আম্মু। “কীরে আজো কী উইশ করলো নীলা.?” এই কথাটা প্রতিটা সন্ধায় রাফসানের আম্মু রাফসানকে বলে আসে। আর উত্তরে রাফসান বলে। “এইতো মা কেক দেও। আমি কেক কাটবো নীলা আমার সামনেই তো আছে”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত