অফিসে যাওয়ার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগানোর সময় খেয়াল করলাম শার্টের একটা বোতাম ছিড়ে গেছে। শার্টটা হাতে নিয়ে অনুর রুমে গেলাম। অনু আমার মামাতো বোন। ছোটবেলা থেকেই আমাদের এইখানে থাকে। মামী মারা যাবার পর মামা আরেকটা বিয়ে করে। আর অন্য সব সৎ মার মত অনুরও সৎ মা অনুর উপর নানা রকম অত্যাচার শুরু করে। তাই মা অনুকে আমাদের এইখানে নিয়ে আসে। আমি অনুর থেকে ৩ বছরের বড় হলেও। আমরা একে অপরকে তুই করেই বলি। রুমে এসে দেখি অনু ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে একমনে কি যেন টাইপ করছে। আমি ওর মুখের মধ্যে শার্টটা ছুড়ে মেরে বললাম,
— দে তো শার্টের বোতামটা তাড়াতাড়ি লাগিয়ে অনু শার্টটা হাতে নিয়ে আমার মুখে ছুড়ে মেরে রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-বিয়ে করেছিস এখন নিজের বউকে বলতে পারিস না? আমি মুচকি হেসে অনুকে বললাম,
–আমার বউ হলো রাজরানী। আর তুই হলি এই সংসারের চাকরানী। প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি বোতামটা লাগিয়ে দে। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার স্ত্রী শ্রাবণী দাঁড়িয়ে আছে। অল্প কয়েকদিন হলো আমার আর শ্রাবণীর বিয়ে হয়েছে। আমি তখন শ্রাবণীকে বললাম,
— কিছু বলবে তুমি? শ্রাবণী কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেলো অফিসে যাওয়ার জন্য যখন বাসা থেকে বের হবো তখন অনু বললো,
– পিয়াস, তুই একটু গাড়ি করে আমায় ভার্সিটিতে নামিয়ে দিতে পারবি? আমি মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকার একটা নোট বের করে অনুর হাতে দিয়ে বললাম,
— অফিসের গাড়ি শুধু অফিসের জন্য।তাছাড়া তোর ভার্সিটি উত্তর দিকে আর আমার অফিস দক্ষিণ দিকে। তাই তুই বরং রিকশা করেই চলে যা অনু মুখটা মলিন করে বললো,
– রিকশা দিয়ে তো যাওয়াই যায় কিন্তু কয়েকদিন ধরে রাস্তায় কয়েকটা ছেলে আমায় ডিস্টার্ব করে। অনুর মুখ থেকে এমন কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমি রাগে ওরে জোরে ধমক দিয়ে বললাম,
— কয়েকদিন ধরে তকে ডিস্টার্ব করছে আর তুই আমাকে আজ বলছিস। চল গিয়ে দেখি কোন বাপের ছেলে তকে ডিস্টার্ব করে ভার্সিটির গেইটের সামনে যখন আসলাম তখন অনুকে বললাম,
— কিরে, কোন ছেলে তকে ডিস্টার্ব করে? অনু হাসতে হাসতে বললো,
-তকে মিথ্যা বলেছি। যদি বলতাম আমার ভার্সিটির দেরি হয়ে যাচ্ছে তুই আমাকে একটু ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে আয়। তুই কি রাজি হতি? তাই বাধ্য হয়ে মিথ্যা বললাম। অনুর কথা শুনে আমি মুখটা গোমড়া করে বললাম,
— আমার বুঝা উচিত ছিলো ছেলেদের পছন্দ এতটা খারাপ হয় নি, যে তোর মত পেত্নীকে ডিস্টার্ব করবে শ্রাবণীকে নিয়ে শপিংয়ে আসলাম। শ্রাবণীর জন্য আর আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্য শ্রাবণী নিজে কাপড় পছন্দ করে কিনলো। শ্রাবণীর কিনাকাটা শেষ হলে আমি শ্রাবণীকে বললাম,
— চলো এখন আমি শপিং করবো শ্রাবণী অবাক হয়ে বললো,
-তোমার জন্যও তো শার্ট প্যান্ট কিনেছি। আমি তখন বললাম,
— আরে, অনুর জন্য শপিং করবো…
শপিং করে বাসায় ফেরার সময় কেন জানি শ্রাবণী আমার সাথে একবারও কথা বলে নি রাত ১টা বাজে।আমি বার্সেলোনার খেলা দেখছি। খেলা দেখার সময় আমার পপকর্ন না খেলে ভালো লাগে না। অনুর রুমে গিয়ে দেখি ও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি অনুকে ডাকতেই অনু চিৎকার করে বলতে লাগলো,
– আমি এত রাতে কিছু করতে পারবো না। তোর বউ আছে না? তোর বউকে গিয়ে বল। আমি শুধু মুচকি হেসে বলাম,
— আমি ফুটবল খেলা দেখছি…
এই কথাটা বলে আমি ড্রয়িং রুমে চলে আসি। আমি জানি অনু ঘুম ঘুম চোখে আমার জন্য পপকর্ন বেজে নিয়ে আসবে আমি ছোট বেলা থেকেই সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দিতে পারি। এজন্য আমি সব সময় অনুকে মেহদী দিয়ে দিতাম। ড্রয়িং রুমে যখন সবাই বসে আছি তখন অনু এসে আমায় বললো,
-বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবো। হাতে একটু মেহেদী লাগিয়ে দে তো আমি যখন অনুর হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছি তখন হঠাৎ শ্রাবণী মাকে বললো,
– আপনাদের ঘরেই যখন মেয়ে ছিলো তাহলে শুধু শুধু আমার সাথে আপনার ছেলের বিয়ে দিলেন কেন? আমি অবাক হয়ে শ্রাবণীকে বললাম,
— মানে? শ্রাবণী তখন আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,
– তোমার শার্টের বোতাম ছিড়ে গেলে অনুকে বলো ঠিক করে দিতে। কেন আমি তো পাশে দাঁড়িয়ে থাকি আমাকে কি বলা যায় না?
আমি যেখানে ৩ হাজার টাকা দামের শাড়ি কিনেছি সেখানে তুমি অনুকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে শাড়ি কিনে দাও। মাঝ রাতে অনুর রুমে গিয়ে অনুকে বলো পপকর্ন বেজে দিতে। কেন একটা বার কি আমায় ডাকা যায় না? তোমার সব কিছু জুড়ে যেহেতু অনুই থাকবে তাহলে আমায় বিয়ে করে আমার জীবনটা নষ্ট করলে কেন? আমি শ্রাবণীকে অনেককিছু বলতে চাইলাম কিন্তু শ্রাবণী কিছু না শুনেই বাপের বাড়ি চলে যায় রাতে আমি শ্রাবণীকে যখন আনতে যায় তখন শ্রাবণীর বাবা মানে আমার শ্বশুর আমায় বললো,
~ কোথাকার কোন বাহিরের মেয়ের জন্য স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা করা একদম ঠিক না। ঐ মেয়েকে যেকোন একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও নয়তো যেখান কার মেয়ে সেখানে পাঠিয়ে দাও। আমি অবাক হয়ে শ্বশুরের দিকে তাকালাম তারপর মাথাটা নিচু করে শ্বশুরকে বললাম,
— আমি শ্রাবণীর সাথে একটু একা কথা বলতে চাই শ্রাবণী আর আমি পাশাপাশি সোফায় বসে আছি। আমি তখন শ্রাবণীকে বললাম,
— তোমার যেমন স্বামীর প্রতি রাগ করাটা স্বাভাবিক তেমনি স্বামী হিসাবে আমার কর্তব্য তোমার রাগটা ভাঙানো। আমি আর অনু একসাথে বড় হয়েছি। আমার যাবতীয় সব কাজ অনু করে দিতো। অভ্যাসটা আমার একদিনেই পরিবর্তন হবে না। আমার একটু সময় লাগবে। আমার শার্টের বোতাম অনু লাগিয়ে দিয়েছিলো দেখে তোমার খারাপ লেগেছিলো। তুমি ভালোবেসে আমায় বলতে পারতে, নেক্সট টাইপ বোতাম ছিড়ে গেলে যেন আমি তোমায় বলি। তুমি ১০ হাজার টাকা দামের শাড়ি কিনলেও আমি অনুকে ৫ হাজার টাকা দামের শাড়িটাই কিনে দিতাম কারণ ঐ শাড়িটা অনুর জন্য আমার পছন্দ হয়েছিলো।
আমি খেলা দেখার সময় পপকার্ন খাই। তুমি আজ না রেগে অন্য কোনদিন আমি খেলা দেখার সময় নিজ হাতে পপকর্ন বেজে খাওয়াতে পারতে তুমি আমায় ভুল বুঝেছো এতে আমি কষ্ট পাই নি। কষ্ট পেয়েছি এটা ভেবে তুমি আমার আর অনুর সম্পর্কটাকে অসম্মান করেছো। একটা কথা মনে রেখো, কেউ কারো জায়গাটা এমনি এমনি পায় না। সেটা ভালোবেসে অর্জন করে নিতে হয় প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে না আশা করি আমার আর অনুর সম্পর্কটাকে সম্মান দিয়ে তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে। আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবো যাবার সময় শ্বশুরের চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বললাম,
— শুনেছি ১৫টা ছেলে যাচাই আপনি আপনার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। আমি অনুকে যার তার সাথে বিয়ে দিবো না। অন্তত আপনার থেকে ১টা ছেলে বেশি যাচাই করে ওকে বিয়ে দিবো | শ্রাবণীদের বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসতেই মা ফোন দিয়ে বললো। অনু বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। অনেক খোঁজার পর অনুকে রেলস্টেশনে খুঁজে পাই। আমি অনুর গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললাম,
— চল বাসায় চল অনু এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আমি যখন ওর হাত ধরে টান দিলাম তখন ও কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– হাতটা ছেড়ে দে পিয়াস। আমরা বড় হয়ে গেছি আমি নিজের চোখের জলটা আড়াল করে বললাম,
— থাপ্পড় কি আরেকটা দিবো, না কি চুপচাপ আমার সাথে বাসায় যাবি?