বিয়ে

বিয়ে

বুবুর বিয়ে হচ্ছে এক টকলা লোকের সাথে সেটাও মা আমাকে বিয়ের ৪ দিন আগে জানায়।মা অবশ্য জানায়নি কার সাথে বিয়ে হচ্ছে। শুধু বলছে তোর বুবুর বিয়ে ঠিক হয়েছে শুক্রবার তুই জলদি আসিস। তারপর বুবু কে ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করতেই বল্লো আরে মিয়া বাড়ির পিছনে যে কামাল ভাইদের বাড়ি আছে না সেই বাড়ির ছেলে মিজান তুই তো চিনিসই। সে আর বলতে দেখতে পুরাই টকলা। মাঝে মাঝে আমাদের দেখলে তাকিয়ে থাকতো। বুবুও মুচকি হাসতো। শুনেছি বিদেশও গিয়েছিল কয়েকবার পড়াশুনার জন্য । বাপের টাকা থাকলে যা হয়। কয়বার যে তারে মারতে গেছি তার হিসেব নাই। আমার কাছে মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে অপছন্দের ব্যাক্তিটি সে। ভেবেছিলাম বান্ধবীদের নিয়ে যাবো সেটা আর হচ্ছে না আমি যাবো বৃহস্পতিবার। আগে গিয়ে লাভ নাই আরো বিরক্ত বাড়বে।

কিন্তুু বোধবার আবার মা ফোন দিছে বল্লো তোকে কখন আসতে বলছিলাম?? আজকে আসবি নাকি তোর বাবারে বলবো??আমি পৃথীবিতে একমাত্র বাবাকেই ভয় পাই। তাই কথা না বাড়িয়ে ভদ্র ভাবেই চলে গেলাম। বাড়িয়ে গিয়ে দেখলাম বেশ আয়োজন। বুবুও খুশি, আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম এতো খুশি হচ্ছিস ক্যানো?? ছেলেকি তোর খুব পছন্দ হইছে নাকি একে তো টাকলা।সে হেসেই মরে যায়। মাথায় কিছুই ঢুকলো না।

বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ, ছোটখাটো ভাবেই করছে কারন জলদি বিয়ে ঠিক হয়েছে এর জন্য। বুবু সকাল থেকেই সাজুগুজু করছে , আমার বেশ বিরক্তই লাগছে।সবার সাথে তালমিলাতে হলুদে উপস্থিত ছিলাম পরে কাথা মুরি দিয়ে এক ঘুম দিলাম। সন্ধ্যায় বাবা এসে ঘুৃম ভাঙ্গালো। অনেক কথা বলছে আমাকে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে, এবং আমাকে এলার্ম দিলো বুবু পরেই আমার টা এবং জলদি।

বিয়ের দিন শুক্রবার সকাল থেকেই সবাই খুব ব্যাস্ত কাজে। আমি এদিক ওদিক ওকি দিচ্ছি। বুবুকেও একফাকে দেখে আসলাম। সে কারো সাথে কথা বলছে। ওদিকে পাত্তা না দিয়ে মায়ের কাছে গেলাম কাছে যেতেই বল্লো তোর বুবুকে গোসলের ব্যাবস্থা কর। বল্লাম আচ্ছা।তারপর বুবুকে গিয়ে বলতেই বুবু উত্তর দিলো আমি পুকুরে করে নিবো। মা বারংবার নিষেধ দিলো না যেতে তাও সে যাবে। তারপর মাকে বুঝালাম থাক যেতে দাও বিয়েই তো হয়ে যাচ্ছে। মা আর কিছু বল্লো না। বেশ অনেকক্ষন হয়ে গেছে বুবু পুকুরে গেছে দুপুর হয়ে গেছে, বর আসবে বিকালে বুবুকে সাজুগুজো করাতে হবে আশ্চর্য এখনও আসছে না। মা কাকে জানি পাঠালো সারা পুকুর, পুকুরের আসেপাশে খুজে আসলো কোথাও পেলো না এখন সারাবাড়ি মরা কান্না শুরু হয়ে গেছে।

ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগছে কি করবো বুঝতেছিনা। মা বাবাকে বল্লো এখন কি করবে সব তো শেষ। বাবা বল্লো ধৈর্য্য ধরো কিছুতো করতে হবে। বাবা মাকে ঘরে নিয়ে প্রায় ঘন্টা ধরে কি সব আলোচনা করছে কেউই বুঝতে পারছিলাম না। কিছুক্ষন পর মা ঘর থেকে বের হলো মনে একটা আতংক নিয়ে, তারপর বাড়ির আর সবাইকে ফিসফিস করে কি জানি বলছে। আমাকে কেনো বলছে না।খুব আগ্রহ নিয়ে শোনার চেষ্টা করছি নাহ বুঝতেই পারছি না সবাই আবার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরছে ।

কিছুক্ষন পর বাবা আমাকে ডাকলো। বেশ খানিকক্ষন বুঝাচ্ছে কিন্তুু মনে হচ্ছে বাবা এখনোও আসল কথাটা বলছে না কিছক্ষন নিরব থেকে বলছে রোশা আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়েটা তোর সাথে হবে। আমি আমি?? বলে দাড়িয়ে গেলাম। মাথা ঘুরছে, মনে হয় যেকোনো সময় মাথাটা ঘুরে যাবে। উত্তর আর দিতে পারিনি সোজা ঘর থেকে বের হয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। মাথায় প্রায় অনেকক্ষন পানি দিলাম কতোক্ষন দিলাম জানিনা,স্বাভাবিক হতে প্রায় সময় নিলো এদিকে বর আসার সময় হয়ে গেছে, সবাই আমাকে সাজাতে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে গেছে। আমার সবকিছু অসার হয়ে গেছে। মাকে কিছু বলতেও পারছি না। কেঁদেই যাচ্ছি। বাবা এসে একপ্রকার ধমন দিলেন। চুপ হয়ে গেলাম।

বিয়েটা আমার হয়েই গেল।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।রাগ জিদ চেপে বসছে মাথায়।রাত প্রায় ৩ টা সব কিছু নিরব, আমি অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছি, আর মনে মনে বলছি বুবুকে কখনো মাফ করবো না আমি আর এই লোকটাকে দেখার আগে আমি মাটির নিচে চলে যেতাম। হঠাৎ দরজাট খট শব্দে বুঝলাম লোকটা আসছে।ফিরেও তাকাই না কিছু বলিও নাই। সে ২/৩ বার কাশি দিয়েও পাত্তা পেল না। কাদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানিনা।সকাল যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন গতকালের সেই দুর্ঘটনা মনে পরতেই পাগলের মতো ব্যাগ গুছাতে শুরু করি। কাউকে কিছু না বলে ঢাকা চলে আসলাম। বাসা থেকে মা বাবা যে কতোবার ফোন দিলো। রাগে একবারও ধরিনি। রুমে ঢোকেই ফ্রেশ হতে গিয়ে দেখলাম আমার হাতে খুব সুন্দর একটা রিং খেয়ালই করি নি সকালে, খেয়াল থাকলে লোকটার উপরই ঢিল দিয়ে আসতাম। আর বেয়াদ্দপটা কখন পরালো।রাগ লাগছে তাই খাটের নিচে ঢিল দিলাম।ফোন অফ শান্তি লাগছে।

তার ২/৪ পর দাড়োয়ান মামা খবর দিলো এক ভদ্রলোক আমার সাথে দেখা করতে আসছে, দুর থেকে দেখেই চিনে তাকে জানিয়ে দিলাম মামা বলবেন তাকে আমি চিনিনা। এভাবে ২/৩ দিন পর পরই আসতে লাগলো একবারেও জন্য যাই নি। দেখাও করিনি। আরেকদিন মামা এসে বল্লো আপা ওই লোকটা আইসা আপনার জন্য অনেক খাবার দিয়ে গেছে আর নাম্বার দিয়ে গেছে দরকার পরলে ফোন দিতে কইলো।খাবার গুলা বাড়ি থেকে আসছে বলে বান্ধবীদের খাওয়ালাম আর নাম্বার নেই নাই।

এভাবে ২মাস হয়ে গেছে সে আসছে। না করে দিলে চলে যায়।এদিকে দাড়োয়ান মামাও বেশ বিরক্ত। তাই ভাবলাম নিজে বলবো আর না আসতে।তারপর সে আবার আসলো আমি নিজে গেলাম।গিয়ে বল্লাম আপনি আর আসবেন না আপনাকে আমার সহ্য হয় না। তারপরও সে ৩/৪ বার এসেছিলো খবর পেয়েও যাইনি এইদিকে সবাই কানাঘুষা শুরু করলো।

১০ দিন পর হঠাৎ অস্থির লাগলো আজব এতোদিন হয়ে গেলো লোকটা আসছে না কারন কি?? কিছু হয়েছে কি??? দাড়োয়ান মামার থেকে নাম্বার নিলাম ফোন বন্ধ।আরও যেনো খারাপ লাগতে শুরু করলো। পরে তার মা আমাকে ফোন দিয়ে বলছে তার জ্বর হয়েছে। আমি শুনে সব কাপর গুছিয়ে,বিয়ের রিংটা পরে সন্ধ্যা তার বাসায় গিয়ে হাজির। খুব জ্বর,দেখে কান্না পাচ্ছিলো কপালে হাত রাখতেই চোখ মেলে তাকালো, কি বলবো কিছু না ভেবেই বলে ফেল্লাম কাদো কাদো ভাবে এখন থেকে আমি এখানেই থাকবো। আশ্চর্য লোকটাকে দেখে আমার এখন আর একটু খারাপও লাগছে না অদ্ভুদ ভালো লাগছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত