তিন দিন পর ছোট বোন বাসায় এসেছে। এই তিন দিন সে মামা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। আমি আমার রুমে শুয়ে আছি এমন সময় ছোটবোন আমার রুমে আসলো।আমার রুমে ঢুকেই ছোট বোন নাক মুখ ওড়না দিয়ে চেপে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি আমার ছোট বোনের পিছন পিছন গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম,
— কি রে, কি হয়েছে তোর? এইভাবে রুম থেকে চলে আসলি কেন? ছোট বোন আমার দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে বললো,
~ছি ছি ছি তুই এত খবিশ কেন?
— কেন আমি আবার কি করলাম?
~তোর রুমে তো ঢুকাই যাই না ঘামে ভেজা কাপড়ের গন্ধে।
আমি কয়েকদিন ছিলাম না আর তাতেই তুই কি না নিজের রুমটাকে গোয়ালঘর বানিয়ে ফেললি গরু কোথাকার। এই বলে ছোট বোন আমার রুমে ঢুকে আমার সমস্ত কাপড় ধৌতে নিয়ে গেলো… বাহির থেকে এসে দেখি ছোট বোন ভাত খাচ্ছে আর পাশে থাকা বিড়ালটাকেও খাওয়াচ্ছে। আমি আমার ছোট বোনকে বললাম,
— জান্নাত খুব ক্ষুধা লেগেছে কিছু খেতে দে তো।
~তুই দেখছিস না আমি খাচ্ছি? আমি পারবো না।তুই নিজের খাবার নিজে নিয়ে খা। আমি তখন আমার ছোট বোনের পাশে বসে বিড়ালটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— জান্নাত এই বিড়ালটাকে যদি জবাই করে এর মাংসটা বেশি করে পিয়াজ কাঁচামরিচ দিয়ে ভুনা করে রান্না করিস খেলে যা মজা লাগবে না। ইসস ভাবতেই আমার জিভেজল এসে গেছে। আমার এই অদ্ভুত টাইপের কথা শুনে ছোট বোন আবাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে রইলো। তারপর মুখ চেপে ধরে বাথরুমের দিকে দৌড়ে গেলো। ১৫ মিনিট পর বাথরুম থেকে বের হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো। আমার বোনের চিৎকার শুনে মা এসে বললো,
-কি হয়েছে জান্নাত? তুই এইভাবে চিৎকার করছিস কেন?
~ তোমার এই খাটাশ টাইপের ছেলের ফালতু কথা শুনে আমার বমি করতে করতে জীবন শেষ।
-মানে!
–মানে হলো তোমার ছেলেকে আমি ভাত বেড়ে দেয় নি দেখে ফালতু কথা বলে আমি যে ভাত খেয়েছিলাম সেই ভাত তোমার ছেলে আমার পেঠে থেকে বের করে নিয়েছে।
এক নাম্বারের খবিশ তোমার ছেলে। এই বলে আমার ছোট বোন আমার দিকে অগ্নিময় দৃষ্টিতে থাকালো আর আমি একটা বিজয়ের হাসি দিলাম সন্ধ্যে হবার সাথে সাথেই আমি তাড়াতাড়ি করে বাসায় ফিরলাম কারণ আজ ইন্ডিয়া আর ইংল্যান্ডের খেলা আছে।কিন্তু বাসায় এসে দেখি আমার ডাইনী ছোট বোন রিমোট হাতে নিয়ে তার প্রিয় সিরিয়াল দেখছে। এখন যদি আমি আমার বোনের সাথে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা করি তারপরেও আমার বোন আমায় রিমোট দিবে না। তাই আমি চুপচাপ আমার বোনের পাশে এসে বসলাম। আমার হঠাৎ এমন নিরবতা দেখে আমার বোন বললো,
~কি হয়েছে তোর? আমি মনমরা হয়ে বললাম,
— বোনরে সব কিছু মেনে নিতে হবে। জন্ম মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে। আমার কথা শুনে আমার বোন চমকে গিয়ে বললো,
~কেন? কার কি হয়েছে?
–মনটাকে শক্ত কর বোন।
~ভাইয়া বল না প্লিজ আমার খুব ভয় লাগছে।
— তোর বান্ধবী মেঘা আর নেই..
~কি বলিস ভাইয়া!! কিভাবে কি হলো?
— তুই তোর বান্ধবী শিমুকে ফোন দিলেই সব জানতে পারবি।
আমার কথা শুনে আমার ছোট বোন রিমোট ফেলে কাঁদতে কাঁদতে তার রুমে চলে গেলো। আর আমি এই সুযোগে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে খেলা দেখতে লাগলাম। ১০ মিনিট পর বোন রেগেমেগে এসে বললো,
~ঐ বারন্দ , তুই এমন করলি কেন?
— কি করেছি আমি?
~তুই মিথ্যা কথা কেন বললি? কেন বললি তুই মেঘা আর নেই?
–ঠিকিই তো বলেছি, মেঘা বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়েছে। বিশ্বাস না হলে বাহিরে তাকিয়ে দেখ বৃষ্টি হচ্ছে।
~তুই সব এই রিমোটের জন্য করলি তাই না? আমি মুখে আবার একটা বিজয়ের হাসি দিয়ে বললাম,
— হে, তুই ঠিক বুঝেছিস..
আমার ছোট বোনটা চোখের সামনে আস্তে আস্তে বড় হয়ে গেছে। আজ ওর বিয়ে হয়ে গেলো এখন ওর বিদায়ের পালা। চোখের সামনে ছোট বোনটাকে বিদায় দিতে পারবো না দেখে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি।
এমন সময় দেখি আমার ছোট আমার পাশে এসে দাঁড়ালো আর বললো,
~কি রে , আকাশ দেখছিস না কি? আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
~তোর চোখে মনে হয় কিছু একটা পড়েছে তাই পানি বের হচ্ছে।কারণ আমি তো তোর শত্রু। আমি চলে গেলে তোর খুশি হবার কথা কান্না করার তো কথা না। আমি এইবারও কিছু বললাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তখন ছোটবোন বললো,
~ভাইয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা বার আমায় জড়িয়ে ধরবি।
চিৎকার করে আমি শেষবার কবে কেঁদেছিলাম আমার মনে নেই।কিন্তু সেদিন আমি আমার বোনকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। বোনকে যখন বরযাত্রীর গাড়িতে তুলে দেয় তখন বোন বলেছিলো,
~ভাইয়া তোর মুখের বিজয়ী হাসিটা এখন একবার দিবি। আমি আমার ছোট বোনের কথা শুনে বিজয়ী হাসিটা ঠিকিই হেসেছিলাম কিন্তু কেউ জানে না সেই হাসিটা ছিলো আমার পরাজয়ের..