-“ফকির বাবা!!!!!”
-“(রেগে গিয়ে) ওই ছেমরি!!!!! আমারে দেখলে কি তোর ফকির মনে হয় হা?”
-“(জিহ্বায় কামড় দিয়ে) থুক্কু!!!! ভুল হয়ে গেছে দরবেশ বাবা।”
-“(আরও রেগে গিয়ে) আমি কি বুইড়া হইয়া গেছি নাকি আমার মুখে ইয়া বড় বড় সাদা দাড়ি যে দরবেশ বাবা কইয়া ডাকছিস?”
-“(কানে ধরে) সরি সাধু বাবা।”
-“(রেগে চিৎকার করে) আবার সাধু বাবা কইয়া ডাকছিস কেন বলদ মাইয়া কোনহানকার?”
-“(হতাশ হয়ে কপাল চাপড়ে) তাহলে কি বলে ডাকব আপনাকে আপনিই বলে দিন।”
-“(পরিতৃপ্তির স্বরে) প্রেম বাবা।” লিলি তো নাম শুনে হা করে তাকিয়ে রইল তার দিকে।
-“কিরে!!!! এইভাবে হা কইরা তাকাইয়া কি দেখছিস রে অবুঝ মাইয়া?”
-“কিছুনা প্রেম বাবা।”
-“হুমম এইতো মাইয়ার বুদ্ধি হইছে।অহন ক কি হইছে তোর।”
-“(কাঁদো কাঁদো স্বরে) প্রেম বাবা!!!!! আমি আমার কলেজের একটি ছেলেকে খুব বেশি ভালবাসি।দুজন একই ক্লাসে পড়ি।কিন্তু ছেলেটি আমাকে ভালবাসেনা।এমনকি আমার দিকে ফিরেও তাকায় না।আমি কত সুন্দর সুন্দর ড্রেস পড়ে,সাজুগুজু করে ওর সামনে ঘোরাঘুরি করি,তারপরও লাভ হয়না।এখন আমি কি করব আপনিই বলুন।”
-“হুমমমমমম!!!!!!! বুজবার পারছি।(তার ব্যাগ থেকে একটি তাবিজ বের করে) এই তাবিজডা নে।এই তাবিজডা তিনদিন পানিতে ডুবাইয়া ওই পোলারে খাওয়াবি। আর খবরদার!!!! তাবিজডা ভুলেও কহনও খুইলা দেখবিনা।তাইলে তুই জিন্দেগীতেও ওই পোলারে পাবি না।তিনদিন পর দেখবি ওই পোলাই তোরে বিয়া করবার জইন্য পাগল হইয়া গেছে।অহন এক হাজার টাহা দিয়া চইলা যা।” লিলি তো খুশিতে পারে তো সেখানেই নাগিন ফোঁস ফোঁস ড্যান্স দেয়।যাই হোক,অনেক কষ্টে তার সাধের ড্যান্সের ইচ্ছাটা মনের মধ্যে আটকিয়ে রেখে এক হাজার টাকা প্রেম বাবাকে দিয়ে সেখান থেকে বাসায় চলে যায়।
বাসায় গিয়ে নাগিন ফোঁস ফোঁস ড্যান্স,লুঙ্গি ড্যান্স,পাখি ড্যান্স,বানর ড্যান্স আরও কত নাম না জানা ড্যান্স আবিষ্কার করল তার হিসেব নেই। রাতে লিলির চোখে আর ঘুম আসে না।কখন যে সকাল হবে আর কখন সে তার মনের মানুষকে তাবিজ ডুবিয়ে পানি খাওয়াবে সেই অপেক্ষায় আছে।তিনদিন পর সে তার মনের মানুষকে কাছে পাবে,সে কিভাবে লিলিকে প্রপোজ করবে এসব অগোছালো চিন্তাভাবনা করতে করতে এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন….
লিলি কলেজে গিয়ে সবসময় সুযোগ খুঁজতে থাকল তার মনের মানুষ রিফাত কখন একটু বাহিরে যাবে আর সে কৌশলে রিফাতের পানির বোতলের মত হুবহু একই পানির বোতল যেটি লিলির কাছে আছে এবং যেটিতে তাবিজ ডুবানো হয়েছে সেটি অদলবদল করে নিবে।এই কাজটি লিলির পক্ষে করা সহজ হবে কারণ রিফাত সবসময় একই ব্র্যান্ডের বোতলে পানি পান করে।
অবশেষে লিলি সেই সুযোগটি পেল।রিফাত তার বন্ধুদের সাথে বাহিরে যাওয়ার কারণে লিলি ক্লাসের সবার চোখের আড়ালে তার পানির বোতলের সাথে রিফাতের পানির বোতল অদলবদল করে ফেলল। এভাবে তিনদিন যাবৎ লিলি এই কাজটি করতে থাকল। তিনদিন পর লিলি মহানন্দে খুব সুন্দর ড্রেস পড়ে সাজুগুজু করে কলেজে গেল।আজ তার সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন।কারণ,আজকে রিফাত তাকে প্রপোজ করবে।
লিলি কত রকম রঙিন জল্পনা-কল্পনা করতে করতে কলেজে গিয়ে দেখে মাঠের মাঝখানে ছোটখাটো একটি ভিড় জমেছে।লিলি ব্যাপারটি বুঝতে না পেরে ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখে সবার সামনে রিফাত তাদেরই ক্লাসমেট রুম্পাকে গোলাপফুল দিয়ে প্রপোজ করছে। লিলি এই দৃশ্য নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছেনা।
-“তাবিজ ডুবানোর পানি খাওয়ালাম আমি।আর রিফাত প্রপোজ করছে অন্য মেয়েকে?!!!!!!
এ কি করে সম্ভব? অতঃপর লিলি কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে যায়।বাসায় গিয়ে রাগে,দুঃখে,ক্ষোভে প্রেম বাবার দেয়া সেই তাবিজ অনেক কষ্টে খুলে ভিতরে রাখা কাগজটি পড়ল- “পাইলে পাবি আর না পাইলে নাই। তাতে আমার কি?”