একজন মহিলা যখন তার চোখের সামনে তার স্বামীকে অন্য একজন মহিলার সাথে ফোনে আলাপ করতে দেখে,তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন হবে তা আন্দাজ করা যায়। ভাত খেয়েছো? সাইদ বললো। ফোনের ওপাশ থেকে কি উত্তর এলো আলেয়া বুঝতে পারলো না।সাইদের মুখে হাসি দেখে আলেয়া আন্দাজ করল নিশ্চয়ই হাসির কিচ্ছু বলেছে। আচ্ছা রিমা,এখন ঘুমিয়ে পড়ো।ফোন রাখছি। সাইদ ফোন রাখলো।আলেয়াকে ঝাড়ি মেরে বললো,এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছো শুনি?ভাত টেবিলে আছে?নাকি আরও অপেক্ষা করতে হবে? আলেয়া চলে গেল। আলেয়ার বয়স পঁয়ত্রিশের মতো হবে।ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো সাইদ কে। দুজনেই চিটাগাং ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেছে।
ক্লাস থেকে বের হলেই সাইদ আলেয়ার পেছনে পেছনে ঘুরতো।অনেক ঘুরাঘুরি, চিঠি লেখা,বান্ধবীর মাধ্যমে প্রপোজ করা সহ অনেক কিছুর পর আলেয়াও সাইদের প্রেমে পড়ে যায়।তারপর চুটিয়ে এক বছর প্রেম,আর প্রেমের এক বছরের মাথায় দুজনে বিয়ে করে ফেলে।বাবা মায়ের অমতে বিয়ে করেছিলো আলেয়া।বিয়ের পর থেকে সাইদ আলেয়ার খুব যত্ন নিতো।কখনো এমন দিন যায়নি,যে আলেয়ার চোখে জল এসেছে।প্রথম তিন চার বছর দুইজনে টিউশনি করে সংসার চালিয়েছে।
তারপর সাইদ একটা ব্যাংকে জবে ঢুকলো।আলেয়াও জব করবে এমন ভেবেছিল।সাইদ করতে দেয়নি।ভার্সিটি লাইফে দুজনে স্বপ্ন দেখতো,তাদের একটা বাচ্চা হবে।যদি মেয়ে হয় তাহলে আলেয়ার নামের প্রথম অক্ষর “আ” আর সাইদের নামের শেষ অক্ষর “দ” থেকে “আদিবা” নাম রাখবে।ছেলে হলে কি নাম রাখবে এই নিয়ে জল্পনা কল্পনার অন্ত ছিলো না।সাইদের এক কলেজ ফ্রেন্ড ছিলো অয়ন।সে সুইসাইড করে মারা যায়।তাই সাইদ বলেছিলো,ছেলে হলে তার সেই বন্ধুর নামে নাম রাখবে অয়ন।কিন্তু এখন?কোথায় সেই আদিবা আর অয়নের জল্পনা কল্পনা? কোথায় চটপটি খাওয়া? কোথায় সেই চাদনী রাতে জল জোৎস্নার গল্প করা?
-কি,ভাত এখনও টেবিলে তোলা হয়নি? সাইদ বললো।
-হ্যাঁ এইতো।তরকারীটা গরম করে দিচ্ছি।
-না গরম করা লাগবে না।এতো টাইম আছে?ওভেনে গরম করে খেয়ে নিচ্ছি।
-আমি দিচ্ছি তো গরম করে।একটু ওয়েট করো।
-বললাম না লাগবে না?
সাইদের এরকম তিক্ত কথায় আলেয়া অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই মাস দুয়েক থেকে সাইদের চলাফেরায় অদ্ভুত রকমের পরিবর্তন এসেছে। আলেয়াকে এককথায় ইগনোর করে সে।কারণে অকারণে আলেয়ার সাথে বেড বিহেইভ করে।সাইদ ভাত খাচ্ছে।সাইদের মোবাইল বিছানায় রাখা।মোবাইলে একটা ম্যাসেজ নোটিফিকেশন এলো।আলেয়া দেখলো নাম লেখা,”রিমা” আর ম্যাসেজে লিখা,”কালকে অফিস থেকে সোজা এখানে চলে আসবা” সে রাতে অনেক কান্না করেছিলো আলেয়া।বিয়ের চৌদ্দ বছর হয়ে গেলেও তাদের কোন সন্তান হয়নি।এ কারণেই কি আলেয়াকে অবহেলা করছে সাইদ? আজকে সরাসরি প্রশ্ন করেই ফেললো সাইদকে।
-সাইদ,তুমি কি আমায় নিয়ে অসুখী?
-হঠাৎ এরকম কথা কেন হচ্ছে আলেয়া?
-রিমার সাথে তোমার কি চলছে?
-রিমা?হুয়াট ডু ইউ মিন আলেয়া?
-প্লিজ সাইদ।এক্টিং করো না।আমি যা বলছি তার উত্তর দাও। সাইদ বললো,
-না আমি বলতে পারবো না।ব্যস।
সাইদ রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো,আলেয়া ঘুমাচ্ছে।আলেয়াকে ডাকলো না সে।কপালে একটা চুমো খেয়ে রেডি হয়ে ব্যাংকে চলে গেলো। এগারোটা নাগাদ সে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে রিমার এনজিওতে এলো।রিমার সাথে সাইদের পরিচয় মাস ছয়েক আগে।রিমার একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তারপর রিমাকে রাস্তা থেকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করায় সাইদ।সেই থেকে রিমা সাইদকে নিজের ভাইয়ের মতো মনে করে।
আলেয়ার ব্লাড ক্যান্সার।এখন সেকেন্ড স্টেজে আছে।ডাক্তার বলেছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে।আর সবচেয়ে ভালো হয় ভারতে নিয়ে গেলে।সাইদ যেহেতু ব্যাংকে জব করে তাই তার স্যালারি ডকুমেন্ট দিয়ে এই এনজিও থেকে মোটা অংকের টাকা ঋণ নিতে পারবে ।ব্যাংক থেকেও দশ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছে। এই এনজিওটা রিমার বাবার।তাই রিমার সাথে এই নিয়ে আলাপ করছিল সাইদ।আলেয়া তার নিজের ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে কিছুই জানে না।সাইদ জানাবে না আলেয়াকে।তাহলে মন থেকে সে ভেঙ্গে পড়বে।সব ফর্মালিটি পূরণ করলো সাইদ।রিমা বললো,টাকাটা দুই দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।সাইদ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।এনজিও থেকে ব্যাংকে ফিরে আসলো। সময় তখন তিনটা হবে।সাইদের ফোনে কল এলো।বাসার ওয়াচ ম্যান কল করেছে।সাইদকে ফোনে শুধু বলল,
-স্যার,আপনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চইলা আইসেন বাসায়।
-কেনো?কি হয়েছে?
-বলতে পারুম না স্যার,তয় আইন্নে চইলা আইসেন তাড়াতাড়ি।
ব্যাংক থেকে ম্যানেজারকে বলে বাসায় রওনা দিলো সাইদ।বাসার গেটের সামনে মানুষের ভীড়।ভীর ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে পুলিশের গাড়ি। আলেয়া সুইসাইড করেছে। একটা সুইসাইড নোট পুলিশ সাইদের হাতে দিলো। সেখানে লিখা,
সাইদ, তোমাকে আদিবা কিংবা অয়ন দিতে পারলাম না।তোমার উপর একটা বোঝা হয়েই থাকলাম আজীবন।আজ চলে যাচ্ছি।তোমার আর রিমার যে মেয়ে হবে তার নাম আমার নামে দিও।কেমন?
ইতি,
আলেয়া।
আলেয়ার লাশের পায়ের কাছে গিয়ে সাইদ বললো,আলেয়া এই দেখো,তোমার পাসপোর্ট চলে এসেছে।তোমার অসুখের টাকার জোগাড় হয়েছে। আলেয়া,কথা বলছো না যে?
আলেয়া?
আলেয়া?