-“মেয়েটার সাথে কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল তোমার ?সাধারনত এই বয়েসেই বেশির ভাগ মধ্যবিত্তের নিষিদ্ধ এক্সপিরিয়েন্সটা হয়।” চোখে মুখে কৌতুহল । আমি মুচকে হেসে বললাম,
-“গল্প পুরোটুকু বলতে দেন ।আগেই হ্যা কিংবা না বলছি না।সাসপেন্স থাকুক।আর আপনার থিওরিতে আমি একমত নই।” অনিকেত বাবু গ্লাসে ভোদকা ঢেলে আমাকে একটু পঁচানোর সুরে বললেন,
-“দালালের মুখে সাসপেন্সের গল্প!আচ্ছা শুরু করো।”
আমি শুরু করলাম ,’মেয়েটার হাবভাব দেখে আমি অবাক শুদ্ধভাষায় কথা বলছে।বুঝাই যেত না যে সে নিতান্ত এ বাসার একজন কাজের লোক। বাবা যাত্রার নায়ক ছিল একসময়।এই কারনেই বোধহয় তার এত পরিশীলিত ছবির ভাষা!
মেঝমামা ওকে দুসেট থ্রিপিস এনে দিয়েছিলেন ।বেশ দামী।মামী খুব রাগ করে ছিলেন -“কাজের মেয়েকে কেউ হাজার টাকা দামের কাপড় দেয়!এমন বিহেভ করছো যেন ও তোমার শালী,এ বাড়ীতে নাইওর এয়েছেন”মেঝমামা বললেন,”দেখ শারমী,ও আমার একসময়কার বন্ধুর মেয়ে ।অবস্হা দোষে আজ ওর আমার বাড়িতে কাজ করতে হচ্ছে ।”মামী ঠোঁট ফুলিয়ে বললেন,”চাষা ভুষারাই তো তোমার বন্ধু ।” মামা বোঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,”বন্ধু না তেমন,কিশোরবেলায় এক সাথে দস্যিপনা করেছিলাম কিছু।” মেয়েটি দেখতে বেশ মায়াবী ছিল ।বাঁকা চাঁদ দেখতে ভ্রূ ,লম্বা গড়ন আর গায়ে রোদ না লেগে শহরের বাতাসে তার তামাটে বর্নের আড়ালে ঢাকা মাখন রঙ বেরিয়ে পড়ল। পনেরো ষোলতেই একটা যুবতী ভাব চলে এসেছিল।মূলত এই কারনেই মামী মেয়েটিকে দেখতে পারতেন না।এক রূপবতী আরেক রূপবতীকে সহ্য না করাটাই বোধহয় স্বাভাবিক—হঠাৎ অনিকেতবাবু আমায় থামিয়ে বললেন,”তখন থেকে মেয়েটি মেয়েটি করছো।নাম নেই ?” আমি খানিক বিরক্ত হয়ে বললাম,
-“আছে মশাই ।কাহিনি প্রসঙ্গে সামনে আসতো।আপনি যখন এতই ব্যস্ত তখন মেয়েটির নাম ছিল শুকতারা ।বাবা যাত্রা পালার নায়ক ,মেয়ের নাম কাব্যিক ভাবে রাখবে,এতে অবাক হবার কী।মামী অবশ্য খালি তারা বলে ডাকতেন।” যাইহোক,মামী শুকতারাকে সারাদিন খাটিয়ে মারতেন।আগের ছোট্ট কাজের মেয়েটাকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন।দুই যমজ বাচ্চাকে দেখাশুনা হতে রান্নাবান্না সব শুকতারাকে করতে হত।তবুও ওর চেহারার উজ্জ্বলতা ক্ষণিকের জন্যে ও নিষ্প্রভ হত না।কেন সে হাসিমুখে থাকতো,তার কারন কি আমি? একসকালে মামী কানের সোনার দুলজোড়া খুঁজে পাচ্ছিলেন না।ধরলেন শুকতারাকে।
-“তুই ছাড়া এই জিনিস কেউ নেয় নি।”
শুকতারার চোখ টলটল করছিল,”বিশ্বাস করুন মামীমা,আমি নিইনি।” আমি তখন ডাইনিংএ নাস্তা করছিলাম।মামী তারাকে বিশ্বাস করলেন না।কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি করলেন,ওর বাক্স প্যাটরা তছনছ করেও যখন পেলেন না তখন শুরু হল বেধড়ক মার।মোটা শোলার ঝাড়ু দিয়ে মেয়েটিকে খুব পেটালেন।
শুকতারা একটুও কাঁদলো না।যেন সে কল্পনাও করতে পারেনি এই কোমল পৃথিবীর কেউ তাকে মারতে পারে।কিন্তু তাকে মারতে দেখে আমার যমজ দুই বোন রুনু ঝুনু কেঁদে উঠল।এখনও ওদের কথা বলার বয়েস হয়নি।মামী বোধহয় শুকতারাকে পেটানোর জন্য মুখিয়ে ছিলেন। হঠাৎ কি যেন মনে হতে খাওয়া ফেলেই ছুটলাম বাথরুমে ।বেসিনে শ্যাম্পু রাখার কেসে পেয়ে গেলাম সেই মূল্যবান জিনিস যার জন্যে শুকতারা তার চোখ থেকে মুক্তা ঝরিয়েছে।ভোরে গোসল করার সময়ই দেখে ছিলাম।খেয়াল করিনি তখন।
নিজেকে খুব কষিয়ে চড় মাড়তে ইচ্ছে করল। ইস্,আরেকটু আগে মনে পড়লে শুকতারাকে এত্তগুলি মার খেতে হত না। মামীকে বলাতে,তিনি বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে বললেন-“ওহ,সরি ফাহিম।একটু ভুল হয়ে গেছে।কালকে বাথের সময় খুলে রেখেছিলুম পরে ওয়াশ করবো বলে দুলজোড়া।বেমালুম ভুলে গেছিলুম!” আমার খুব খারাপ লেগেছিল ঘটনাটায়। মামী আমাকে সরি বলেছেন,অথচ তারাকে একবার বলতে পারতেন,আমার ভুল হয়ে গেছে ।কিছু মনে করো না। মামা মামী শুয়ে পড়েছেন ।রাত্রি অনেক হওয়াতে আমিও পড়া শেষে শোবার তোড়জোড় করছিলাম।শুনতে পেলাম,তারা বেদম কাশছে।আমার বেডরুমের পাশের ছোট্ট স্টোর রুমটাতে ওর জায়গা।
শরীরে কমসে কম ২০-২৫ টা মোটা ঝাড়ুর বাড়ি ,সারাদিনে ম্যালা কাজ,একগাদা কাপড় কেঁচে বোধহয় অসুখ লেগেছে ওর।বেশি ভাবতে হয়নি ,কি যেনো এক মায়াতে উঠে এলাম।চৌকিটাতে শুয়ে আছে শুকতারা পুরোনো ইঁদুরে কাটা কম্বল মুড়ে। পাশের জানলা দিয়ে সোডিয়ামের আলোয় দেখলাম প্রচন্ড জ্বরে সে কাপছে।আমি ঘরটার আলো জ্বেলে দিলাম। শুকতারা আমাকে দেখে দারুন অবাক।একরাশ চুল ছড়িয়ে আছে কপালে মুখে ।আমি কপালে হাত সেকেন্ডের বেশি রাখতে পারলাম না।১০৪এর মতো জ্বর।এক দৌড়ে রুম থেকে প্যারাসিটামল আর আমার পানির বোতল এনে দিলাম।কাঁপাকাঁপা হাতে ঔষধ খেল।শুকতারা অদ্ভূত চোখে চেয়ে আছে।দেয়ালে পিঠ দিয়েছিল।হঠাৎ কঁকিয়ে উঠল ।
-“কি হল তারা?মৃদু স্বরে বলল,তোমার কাছে কোনো মলম হবে?”
-“দাড়াও আনছি!”মুভ নিয়ে এলাম।ওর তখন গা কাঁপছে।
আমার তখন অনেক সাহস ।এখন যদি মামা বা মামী এসে আমাকে শুকতারার ঘরে দেখে তবে আমি থোড়াই কেয়ার করি। মানুষের মনে পাপ থাকলেই যে তা আমাকে বিদ্ধ করবে,এমন দিব্যি তো কেউ দেয়নি।মামা আমাকে এখন এই অবস্হায় দেখতে পেলেও খুব যে মাইন্ড করবে এমনও না। মামার কাছে আমি এখনও নিতান্তই শিশু।কলাগাছের মতো চড়চড় করে লম্বা হয়ে উঠলেও আমার ভালো করে গোঁফ ওঠেনি।বয়েস পনেরো পেরিয়েছে কি? শুকতারাকে বললাম,”দেখি পিঠ দেখি।আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।তোমার অবস্হাতো ভীষন খারাপ ।আরে,লজ্জা করো না।” পিঠে দগদগে ঘা।সাদা রঙের রাজ্যে রক্তাভ সরু লম্বা লম্বা দাগ।শিউরে উঠলাম।আজ আমার বোনকে কেউ এরকম করে মারলে -উফফ্ আমি আর ভাবতে পারলাম না…