‘পাঁচ বছর ধরে ভাড়াটে খুনের পেশায় জড়িত আছি। শালারা এখনো, বুঝে না আমি জোড়ায় খুন করি। রাগে গজগজ করে বলতে থাকে রাসেল। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে, টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। ‘মিস্টার আসলাম, ভেবে দেখেছেন কিছু? আমি কিন্তু জোড়ায় খুন করি। নিয়ম ভঙ্গ করা যাবে না। রাজি থাকলে বলুন, না হয় যাচ্ছি।’ ‘আমার ভাবা শেষ, খুন জোড়ায় হবে।’ ‘কত দিবেন?’ ‘ দু’লাখ।’ ‘ছেলেমেয়ে দু’টোর ছবি দিন। কাজ হয়ে যাবে।’ ‘নিন,এখানে ছবি আর অগ্রিম এক লক্ষ টাকা দেওয়া আছে। বাকিটা কাজের পর।’ ‘এদের সাথে আপনার সম্পর্ক? ‘ ‘আমার মেয়ে রিতা। ছেলেটা ওর প্রেমিক।’
রাসেল পাঁচ বছর ধরে টাকার বিনিময়ে অনেকগুলো জোড়া খুন করেছে। কিন্তু এই প্রথম কোনো বাবাকে দেখছে মেয়ের খুনের জন্য খুনি ভাড়া করতে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালো সে। ‘নিজের মেয়ে খুন করবেন?’ ‘আপনার আপত্তি থাকলে, অন্য খুনি খুঁজে নিচ্ছি।’ ‘রাগছেন কেন? মেয়ে আপনার আমার কেন আপত্তি লাগবে? আমি খুনি। কাজ করে টাকা নিব এতটুকুই।’ ‘আমার কাছে সবচেয়ে আগে সমাজে নিজের মানসম্মান। মেয়ে থার্ড ক্লাসের একটা ছেলেকে ভালোবাসবে আমি সেটা মেনে নিয়ে নিজের মানসম্মান ধুলোয় মেশানোর লোক না। ‘ ‘আপনি চাইলে তো অন্য কারো সাহায্যে ছেলেটাকে খুন করতে পারেন।’
‘আপনি নাগ-নাগিন চরিত্রে কোনো ফ্লিম দেখেছেন?’ ‘হুঁ। ‘ ‘ভালোবাসা এমনই। একটাকে মেরে আরেকটা বাঁচিয়ে রেখে নিজের বিপদ বাড়ানোর লোক আমি না। ‘ ‘হুঁ, কাল সন্ধ্যায় কাজ হয়ে যাবে।’ রাসেল টেবিলে রাখা টাকা আর ছবিটা নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ে। রিতা তার বাবার মারুতিটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে পরন্তে বিকেল। মাঝ রাস্তা থেকে গাড়িতে তুলে নেই অনিকে। অনি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আর রিতা বড়লোক বাবার মেয়ে। সাঁই সাঁই করে তাদের গাড়িটা ছুটছে। পিছনে ফেলে যাচ্ছে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাছ। রাসেল আরেকবার ফোন দিল আসলাম শেখকে। ‘হ্যালো। ‘ ‘হ্যাঁ, বলুন।’
আপনার কথা মতো আমি আমার লোকেদের আপনার মেয়ের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছি। আজ সন্ধ্যার মধ্যেই উঠিয়ে নিয়ে আসব আমাদের ডেরাই। আপনি আরেকবার ভেবে দেখুন আপনার মেয়ের ব্যাপারে।’ ‘মিস্টার, রাসেল আপনার কি মনে হচ্ছে আমি ভাবা-ভাবিতে দূর্বল?’ ‘না, মোটেও না।’ ‘অবশ্য আমার নিজের মেয়ে হলেও।’ এতটুক বলে আসলাম শেখ কথা থামিয়ে দেন। ‘কি বললেন বুঝিনাই।’ ‘না, কিছু না। আপনাকে যেটা করতে বলেছি সেটাই করুন।’ ‘ঠিক আছে বলে ফোনটা রেখে দিল রাসেল।’ ফোন থেকে আরেকটা কল দিয়ে নির্দেশ দিল,’ ‘যেভাবেই হোক ছেলেমেয়ে দু’টোই আমার ডেরাই নিয়ে আসবি। সন্ধ্যার মধ্যেই। গল্পটা এতটুকু লিখে মৌরির ডাকে কি-বোর্ড থেকে হাত সরিয়ে উঠে পড়লো শাওন।
‘কী করেছ এতক্ষণ?’
‘ একটা গল্প লিখছিলাম’
‘শেষ?’
‘না, আরেকটু বাকি। পড়ে দেখবে?’
‘ অবশ্যই পড়ব। আগে চা খেয়ে নিই বসো।’
‘ওকে বেবি।’ চা খেতে বসল ওরা। চায়ে চুমুক দেওয়ার আগে মৌরির ফোন বেজে উঠলো। সে বেলকনিতে গিয়ে কথা বলছে।
রোজ রোজ চিনি ছাড়া চা খেতে শাওনের একদম ভালো লাগে না। তাই মৌরি বেলকনিতে যেতেই ওর চায়ের কাপটা নিয়ে কাপের অর্ধেক চা অদলবদল করে নিল শাওন। আরেকটু ধৈর্য ধর ডার্লিং। বেঁচে থাকতে ও কখনো আমাকে তোমার হতে দেবে না। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। হেসে হেসে কথাগুলো বলছে মৌরি। ‘একি, তুমি এখনো চা না খেয়ে বসে আছ?’ ‘একসাথে খাওয়ার জন্য।’ ‘নাও, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। আমিও খাচ্ছি। ‘ দু’জনে চায়ের পেয়ালা চুমুক দিল একসাথে।
জানলা দিয়ে সাঁ সাঁ করে বাতাস ঢুকছে। উড়ছে রুমটার ভেতরের পর্দা। সোফায় আধশোয়া অবস্থায় পড়ে আছে দু’টো নিথর দেহ। পড়ে আছে দু’টো চায়ের খালি পেয়ালা। কম্পিউটার স্কিনে বড় করে লেখা ‘জোড়া খুন’ শিরোনামের একটা গল্প।