অপবাদ

অপবাদ

ভাবীর রান্না অবশ্যই ভাল হয় ৷ কিন্তু আজকে তরকারীতে একটু লবন কম হওয়ায় আম্মু চোখ, মুখ লাল বানিয়ে চেঁচানো স্বরে ভাবীকে বলল,

—এক বছর হয়ে গেছে তুমি এ বাড়িতে বউ হয়ে এসেছো ৷ অথচ আজও রান্না করা শিখলেনা ৷ তা কবে শিখবে শুনি একটু? শোনো কাল থেকে তুমি আর রান্না করতে আসবেনা ৷ আমি কাজের মেয়ে রাখব, সেই রান্না করবে! ভাবী প্রতিত্তরে কিছুই বললনা ৷ মাথা নিচু করে অপরাধীর ভাবভঙ্গিতে চুপ করে রইলো ৷ ভাইয়া আম্মুকে কিছু বলবে সেই সাহসটুকুও সে হারিয়ে ফেলেছে ৷ ভাবীর হয়ে আমিই জবাব দিলাম ৷ আম্মুকে তীক্ষ্ণকন্ঠে বললাম,

—আম্মু তরকারী তো ঠিকই আছে ৷ একটু লবন কম হয়েছে, এরপরও তো খেতে ভালই লাগছে! আম্মু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—তুই তো রাক্ষস, যা তা গিলিস ৷ আমি তো তোর মত খাদক না যে অখাদ্য গিলবো ৷ তোর দাদী বেঁচে নেই, বেঁচে থাকলে জেনে নিতে পারতি যে আমি কেমন রান্না করতাম! কেউ কখনো আমার রান্না নিন্দাতে পারেনি ৷ শুধু রান্না কেন সব কাজেই দক্ষ আমি ৷ কোনো কাজে অক্ষম নই ৷ সত্যি বলতে কি সুন্দরী মহিলারা সব কাজেই পারফেক্ট হয় ৷ আমার ছেলেটা তো বোকা ৷ কালো একটা মেয়েকে ঘরে এনে তুলেছে ৷ দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ে ছিলনা বোধহয়!

আম্মুর কথা শুনে এবার ভাবী কষ্টই পেলো ৷ মুখটা লুকিয়ে বোধহয় চোখের জল বিয়োগ করলো ৷ আমি নিজেই আম্মুর কথাতে ব্যথিত হলাম ৷ আম্মু কিসব বলছে আজ? ভাইয়া ভাবীকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল এটা ঠিক, কিন্তু বিয়েটা তো দু-পরিবারের সম্মতিতে হয়েছে ৷ এমনকি আম্মু দু লাখ টাকা যৌতুকও নিয়েছে ৷ ভাবীর পরিবার যৌতুক দিতে প্রথমে আপত্তি জানালেও পরবর্তিতে তাদের মেয়ের কথা ভেবে যৌতুক দিতে বাধ্য হয় ৷ ভাবী কালো এটা ঠিক, তবে সে দেখতে তো যথেষ্ঠ সুন্দর ৷ কালো হলেই যে সেই নারী দেখতে সুন্দর হবেনা, এটা কে বলল? ভাবীর সৌন্দর্যের কাছে অনেক সাদা চামড়ার মেয়ে হার মেনে যাবে ৷ আম্মুকে নরম গলাতেই জবাব দিলাম,

—আম্মু একবার ভেবে দেখো তো! আমি তোমার রান্না করা খাবার খাওয়ার সময় খাদক হইনা, অথচ ভাবীর হাতের রান্না খেলে খাদক আর রাক্ষস হয়ে যাই ৷ তাহলে বুঝো ভাবী কত ভাল একজন রাঁধুনী! আম্মু আমার কথা শুনে রেগে তো গেলই রাগে ফোঁসফোঁস করতে লাগল আর কাচুমাচু করা শুরু করল ৷ ভাবী বোধহয় হাসলো ৷ সে আঁচলে মুখ লুকিয়েছে ৷ ভাইয়া হাস্যজ্জ্বল মুখে বলল,

—মা, তুলির রান্না নিয়ে তোমার টেনশন করতে হবেনা ৷ কাল থেকে সে রান্না কেন কোনো কাজই করবেনা ৷ তবুও তুমি ওকে কিছু বলোনা ৷ কালকেই কাজের মেয়ে পেয়ে যাবে! রাতে ড্রয়িংরুমে বসে ভাবী টিভি দেখছিল ৷ ভাবী ইন্ডিয়ান সিরিয়াল পছন্দ করেনা ৷ তার মনমানসিকতা শিশুদের মত৷ ডোরেমন আর টম জেরি দেখা তার নেশা ৷ আজও সে টম অ্যান্ড জেরি দেখছে ৷ আম্মু তার রুম থেকে জোরে জোরে বলছিল,

—-ঐযে তেঁতুলগাছের পেত্নী কার্টুন দেখা শুরু করেছে ৷ আল্লাহ কেন যে এমন মহিলাকে আমার ছেলের বউ করে পাঠালো! অসহ্য লাগে ৷ কাজের বেলায় কিছুই না টিভি দেখার বেলায় পাঁকা ৷ অকর্মার ঢেঁকি আমার বাসায় এসে জরো হয়েছে!

আমি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মোবাইল টিপছিলাম আর পাশের রুম থেকে আসা আম্মুর বকাবকি শুনছিলাম ৷ মাঝেমধ্যে ভাবীর দিকে লক্ষ্য করছিলাম ৷ সে আম্মুর কথায় কিভাবে রিয়্যাক্ট করে সেটা দেখারই চেষ্টা মাত্র ৷ ভাবীর হাস্যজ্জ্বল মুখ দেখে মনে হলো সে খুব আনন্দে আছে কার্টুন দেখা নিয়ে ৷ হঠাৎ আম্মু ড্রয়িংরুমে এসে সোজা টিভির ডিশ লাইনের তারটা ছিঁড়ে ফেলল ৷ ভাবী হতভম্ব হয়ে গেল সেই সাথে ভয়ও পেলো ৷ তবুও কিছুই বললনা ৷ একদম চুপচাপ! আম্মুর রাগী চেহারাটা দেখে নিজেই তাকে কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছি, সেখানে ভাবী আর কি বলবে?পরেরদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরেই দেখি মামা বাসায় এসে হাজির ৷ মামাকে দেখে হাস্যজ্জ্বল মুখে বললাম,

—-কখন এলে? মামা জবাব দিলো,
—-৫ মিনিট হলো ৷ কিন্তু বাসায় তো কেউ নেই ৷ তোর মা কই? তোর ভাবীকেও তো দেখিনা!
—-ভাবী বোধহয় ঘুমাচ্ছে!
—-ও আচ্ছা! পনের মিনিট পর আম্মু বাসায় চলে এলো ৷ এসেই মামাকে দেখে খুূব খুশি হলো ৷ আম্মু মামাকে তোড়জোর কন্ঠে বলল,

—-কতক্ষণ হলো আসছো? মামা মৃদ্যু হেসে বলল,
—-৩০ মিনিট হল ৷
—-তোমাকে চা-নাস্তা কিছু দেয়নি?
—-কে দিবে তুইও নেই, বৌমা তো ঘুমাচ্ছে!
—-কিহ? নবাবজাদী এখন ঘুমাচ্ছে? দাঁড়াও ওর দেখাচ্ছি মজা আজ!

এটা বলেই আম্মা জগ ভর্তি পানি নিয়ে গেলো রুমে ৷ আমিও পিছু নিলাম ৷ দেখি ভাবী জায়নামাজের পাটিতে শুয়ে আছে ৷ হয়তো নামাজ পড়ার পর ঘুমিয়ে গিয়েছিল ৷ আম্মু এসবের ধার না ধরে সোজা ভাবীর গায়ে পানি ঢেলে দিলো ৷ ভাবী হুড়মুড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠলো ৷ আম্মুকে বাঁধা দেবার সময়টুকুও পেলাম না ৷ ভাবী একটু রাগস্বরে বলল,

—-আম্মা এরকম একটা কাজ করতে পারলেন? একটুও কি চিন্তা বিবেচনা করে কাজটা করতে পারলেন না? এমনটা আশা করিনি! আম্মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো,

—-ঐ কালনাগিনী মহিলা তুই সারারাত কি করেছিস? রাতে না ঘুমিয়ে দিনে কেন ঘুমাবি? আমার ভাই ১ঘন্টা হলো এসেছে ৷ এসে ড্রয়িংরুমে বসে আছে ৷ আর তুই দরজা খোলা রেখে মনের সুখে ঘুমাচ্ছিস? তোর কোন ভাতার এসেছিল ঘরে যে দরজা খুলে রাখছিস? আম্মুর শেষ কথাটি শুনে ভাবী নিজেকে শামলাতে পারলোনা ৷ রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো ৷ ক্ষিপ্তস্বরে বলল,

—-আম্মা মুখ শামলে কথা বলবেন ৷ যা তা কথা আপনি বলতে পারেন না ৷ সেই অধিকার আপনাকে দেওয়া হয়নি ৷ শুধু আপনি কেন আমার স্বামীরও অধিকার নেই আমার চরিত্র নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলার!
—-তবে রে, আজকে সুপ্ত আসুক ৷ তোর খবর করে ছাড়বো ৷ তোকে এই বাড়িতে রাখছিনা এটাই শেষ কথা!
—-আমিও দেখবো কে আমাকে বাড়ি ছাড়া করে?

একথা শুনে আম্মুর রাগ আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে গেলো ৷ রাগে ছটফট করতে করতে ভাবীর দিকে এগিয়ে গেল এবং তার চুলের মুঠি ধরে টানতে লাগলো ৷ আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না ৷ আম্মুকে রুম থেকে জোর করে নিয়ে এলাম ৷ ঘটনার পর ভাবী শুধু কেঁদে চলল ৷ সন্ধ্যা পর আম্মু আর মামা কথা বলছিল ৷ তাদের কথোপকথন আমার কানে এলো ৷ মামা বলছিল,

—-আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়ে সুবিধার না ৷ তোকে সাবধানও করেছিলাম যে সুপ্ত একে বিয়ে করতে চাইলেও তোরা রাজি হইসনা ৷ সুপ্ত তাকে ভালবাসে ঠিক আছে, তার সাথে বিয়ে দিতে হবে কেন? ভালবাসলেই তার সাথে বিয়ের বন্ধনে জড়াতে হবে কে বলল? সুপ্তকে ভাল করে বুঝালে সে মেয়েটাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতো ৷ কিন্তু তোরাই তো সর্বনাশ করলি ৷ আমি চেয়েছিলাম আমার মেয়েকে সুপ্তের হাতে তুলে দিব ৷ কিন্তু সেই স্বপ্ন তোরা নষ্ট করলি ৷ আম্মু বলল,

—-স্বপ্ন নষ্ট হয়নি ৷ আমি এই মহিলাকে আজই বাসা থেকে বের করে দিবো ৷ একটা ফকিন্নির বাচ্চার সাথে সম্পর্ক করেছিল আমার ছেলেটা ৷ প্রথমে ভাল মনে হলেও এখন সব ক্লিয়ার হয়ে যাচ্ছে যে এই মহিলা নষ্টার নষ্টা ওর পরিবারও! আজ সুপ্ত আসুক ৷ যেভাবে হোক এই মহিলাকে বাড়ি ছাড়া করবো! রাতে ভাইয়া বাসায় এলো ৷ সে বাসায় আসা মাত্র আম্মু তাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্নার কান্না! কান্না করতে করতে আম্মু ভাইয়াকে বলছিল,

—সুপ্তরে তুই আমারে গলা টিপে মেরে ফেল রে ৷ আমি তোর সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি ৷ তোর বউ বলতেছে আমি নাকি বারো ভাতারী মহিলা ৷ নষ্টা মহিলা ৷ আমার চরিত্র খারাপ ৷ এই বাড়িতে আমার নাকি থাকার কোনো অধিকারই নাই!  আম্মুর কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ৷ আম্মু এরকম মিথ্যাবাদী আগে জানা ছিলনা ৷ ভাইয়াকে সত্যটা বলা জরুরি ৷ ভাইয়ার নিকট গিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বললাম,

—ভাইয়া তুই আম্মুর কথা একটাও বিশ্বাস করবিনা ৷ ভাবী এমনটা কখনো বলেনি! আম্মু আমার গালে কষে থাপ্পর মেরে ক্ষ্যাপাস্বরে বলল,

—-আমি মিথ্যা কথা বলি? এত তাড়াতাড়ি মাকে ভুলে গেলি? ভাবীর প্রতি এত দরদ? কথাটা বলেই হাউমাউ করে কান্না করার নাটক করলো ৷ ভাই আম্মুর কান্নাটা সত্য ভেবে কাতর কন্ঠে আম্মুকে জিজ্ঞেসা করল,

—-তুমি কি সত্য বলছো মা? আম্মু কান্নার আওয়াজ বাড়িয়ে বলল,
—-তুইও আমাকে বিশ্বাস করিসনা?
—-ঠিক আছে, যদি তোমার কথা সত্য হয় তাহলে তুলি তার কাজের শাস্তি পাবে!, ভাইয়া ভাবীর রুমে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে উচ্চ আওয়াজে বলল,
—-তুমি কি আম্মুর সাথে বেয়াদবি করছো? আম্মু যা বলছে তা কি ঠিক? ভাবী শক্ত কন্ঠে বলল,

—-একটাও সত্য না! এটা বলার সাথে সাথে ভাইয়া ভাবীর গালে থাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে জোর গলায় বলল,
—-এক্ষণি বাসা থেকে বের হবি ৷ তোর স্থান নেই এই বাসায়! ভাবী ছলছল চোখে ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকালো ৷ এরপর চোখের পানি অঝোরে ঝরিয়ে তার কাপড় চোপড় গুছাতে লাগলো ৷ ব্যাগে কাপড় ভর্তি করে চোখের পানি বিয়োগ করে আর হাতের তালু দিয়ে মুছতে মুছতে বাসা থেকে বের হতে লাগলো ৷ ভাবীকে আটকাতে গেলে ভাইয়া হুংকার মেরে বলল,

—তাকে আটকাতে গেলে তোকে এই বাসা ছাড়তে হবে! মামা ও আম্মু ভাইয়ার কথার সাথে তাল মিলালো ৷ ভাবীকে আটকাতে পারলাম না! পরেরদিন শুক্রবার ৷ দুপুর পর আমার বড় আপু কান্না করতে করতে বাসায় চলে এলো ৷ তার কান্না দেখে বুঝতে পারলাম নিশ্চয় কোনো ঝামেলা হয়েছে ৷ আপু কাঁদতে কাঁদতে আম্মুকে বলছিল,

—-আম্মু, রবিন বলছে সে আমাকে শীঘ্রই ডিভোর্স দিবে ৷ তার মায়ের কথায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে! আমি নাকি কাজ করিনা, সারাদিন টিভি দেখি ৷ পাড়া পাড়া ঘুরি ৷ আচ্ছা আম্মা তুমিই বলো আমি কি এরকম?
আম্মু শক্ত গলায় বলল,

—-আমার মেয়ে এরকম কখনোই না ৷ আমি আমার মেয়েকে চিনি তো ৷ তোরে ডিভোর্স দিবে? ওদের ডিভোর্স দেওয়া ছুটিয়ে দিবো ৷ ডিভোর্সের নামও যদি নেয় আমার সামনে, তাহলে সবকটারে জেলের ভাত খাওয়ায়ে ছাড়বো ৷ তুই চিন্তা করিস না!

—-আমি ৩ মাস হলো রান্না শিখেছি ৷ আমার রান্না নাকি বাজে হয় ৷ বলো তো আম্মু কার না মেজাজ গরম হবে? রান্না নিন্দা করার কারণে রবিনের উপর ক্ষেপে গিয়েছিলাম ৷ আর সে এই দেখে পিঠে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে ৷ তাতে কি আমিও কম না, আমিও কয়েকটা দিয়ে আসছি!

—-কিহ? তোর গায়ে হাত তুলেছে? রাফাত ফোনটা আন তো, রবিনকে ফোন দিতে হবে!

আম্মু রবিনকে ফোন দিলো এবং তাকে ও তার পরিবারের লোকদেরকে সন্ধ্যা পর আমাদের বাসায় আসতে বললো!
সন্ধ্যা পর রবিন ও তার পরিবার আমাদের বাসায় এলো ৷ বৈঠক শুরু হয়ে গেলো ৷ আপু প্রথমে সব খুলে বলল ৷ এরপর দুলাভাই বলতে লাগলো ৷ একপর্যায়ে দুলাভাই বলল,

—-তানিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল সেটা উঠে গেছে ৷ যেদিন ওকে মার্কেটে একটি ছেলের সাথে দেখলাম ৷ প্রথমে ভেবেছিলাম পরিচিত কেউ হয়, তাই সেদিন কিছু বলিনি ৷ কিন্তু যেদিন আমি অফিসের কাজে বাইরে ছিলাম সেদিন তানিয়া পার্কে ঐ ছেলেটার সাথেই দেখা করেছিল আর যা ইচ্ছা তাই করেছিল ৷ ঐদিন পার্কে আমার বন্ধুও ছিল ৷ সে ই ভিডিও ধারণ করে রেখেছে ৷ এরপরও তানিয়াকে সুযোগ দিয়েছিলাম যাতে সে ভাল হয়ে যায় ৷ কিন্তু সে আবারো ভুল করলো ৷ যখন তাকে ব্যপারটা বললাম তখন অস্বীকার করে বসলো ৷ এরপরও তাকে ছাড় দিয়েছিলাম ৷ কিন্তু গত তিনদিন হলো সে বাসার একটা কাজও করছেনা, সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে আছে ৷ আম্মু এসব নিয়ে কথা বলায় যা তা বলতো আম্মাকে! আমি বাসায় এসে আম্মুর সাথে তার বাজে ব্যবহারের কথা নিয়ে কৈফিয়ত চাইলে আমার ওপর তার সেইরকম ঝাঁড়ি ৷ এজন্য রাগ করে কয়েকটা থাপ্পর মেরেছিলাম ৷ আমার মাইর খেয়ে তানিয়া লাঠি দিয়ে আমাকে পিটিয়েছে!, এটা বলেই রবিন দুলাভাই হো হো করে কাঁদতে লাগলো ৷ আম্মু আপুকে শক্ত কন্ঠে বলল,

—-সে কি ঠিক বলেছে? আপু থতমত খেয়ে বলল,
—-আম্মু আমি তার সাথে সংসার করবোনা ৷

আমি আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড সোহাগের সাথে সম্পর্ক শুরু করেছি ৷ রবিনকে বিয়ের আগে সে চলে গিয়েছিল কিন্তু আবারো সে ফিরে আসছে ৷ তাই আমি চাইছি রবিনকে ডিভোর্স দিবো!
আর আমি সোহাগকে বিয়ে করবো! আপুর কথা শুনে আম্মু লজ্জায় লাল হয়ে গেল ৷ আমি মনে মনে বললাম হায়রে সৃষ্টিকর্তার রিভেঞ্জ! ভাইয়া বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল, বোধহয় ভাবীকে আনতে যাবে! এদিকে রবিন ভাইয়া তার পরিবারকে নিয়ে বাসায় চলে গেল! আম্মুকে ধীরস্বরে বললাম,

—-দেখছো আম্মু অন্যের মেয়ের দিকে অপবাদের তীর ছুঁড়লে নিজের দিকে এসে লাগে? আম্মুর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলনা, বিষাদে তার চেহারাটাকে ভূতুরে করে রেখেছে! আম্মু লজ্জিত ৷ হয়তো কখনো সে এমন ভুল করবে না!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত