Sফ্যাক্টর

Sফ্যাক্টর

এই নিয়ে আমি মীরার বাবার কাছে ২০বার এসেছি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে৷ প্রতিবারই এক কথা”মেয়ের জামাই হতে হলে বিসিএস লাগবে৷” কথাশুনে আমার চেহারা কালো হয়৷ আমি মাথা নিচু করে বসে থাকি৷ খানিকক্ষণ বাদে মীরা চা-বিস্কুট নিয়ে আসে৷ সাথে চানাচুর থাকে৷ গত ১৯বার ভিন্ন ভিন্ন রকমের বিস্কুট ছিল৷ কিন্তু ২০বারের বেলায় এসে ১৯-২০একরকম হয়ে গিয়েছে৷”

আমি ভাবলাম, এবার হয়তো ভিন্ন রকমের বিস্কুট আনতে ভুলে গিয়েছে৷ আমি গত ১৯বারের মতো কুটকুট করে প্লেটের অর্ধেক বিস্কুট শেষ করে দিলাম৷ বাকিটাও শেষ করার ইচ্ছে ছিল৷ চায়ের কমতি পড়াতে ভদ্রতার খাতিরে আর খাওয়া হয়নি৷” খাওয়া শেষে ঢেকুর তুলে উঠে দাঁড়াতেই মীরার আব্বা বলল, “১৯-২০ একই হওয়া নিয়ে ভাবলে কিছু?” আমি “না” বলে মাথা নাড়ালাম৷ মীরার আব্বা ভারী গলায় বলল, এটা তোমার সতর্কবার্তা৷ ১৯-২০ আমি মেনে নিলাম৷ ২০-২১হলেই অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিবো৷” আমি পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো মীরার দিকে তাকালাম৷ “তোমার বাবা বলে ছেড়ে দিলাম” টাইপ একটা চাহনী দিয়ে চলে আসলাম৷ রাস্তায় নেমে লম্বা শ্বাস নেয়ার পর মনে পড়লো, বুদ্ধি বয়সের পর আমার কারো সাথে মারামারি লাগে নি৷ অবশ্য আমিই লাগাইনি৷

ছোটবেলায় পাশের বাসার মেয়েটাকে ঘুষি মেরে আমি নিজের হাত ভেঙে ফেলেছিলাম৷ তাই আর মারামারি করার সাহস হয়নি৷” মুভি দেখে দেখে দু’একটা মেরে ফেলবো টাইপ লুক শিখেছি৷ ঐগুলা দিয়ে চালিয়ে চালিয়ে এতদূর আসা৷” মীরার বাবা বিসিএস করা পাত্র খুঁজলেও, মীরাকে বিবাহের জন্য চাপ দিচ্ছে না৷ যতদিন যোগ্য পাত্র পাবেন না৷ ততদিন বিয়ে করবেনা৷ মীরার সাথে দেখা হলেই, তার নরম হাতে আমাকে কিল দিয়ে বলে, বাবা পাত্র খুঁজতে খুঁজতে বিসিএস করে ফেলো তুমি!” আমি মীরার দিকে অসহায় মুখে তাকিয়ে বলি, তোমার সাথে প্রেম হওয়ার আগে আমি রেগুলার ফেইল মারতাম৷ এক তোমাকে বিয়ে করার জন্যই দাঁতে দাঁত চেপে সব শেষ করেছি৷ এখন আর অগ্নিপরীক্ষা নিও না৷” মীরা তার মিষ্টি মুখটা নীরষ করে বলে,

-আমাকে তুমি বিয়ে করবানা?”
-করবো৷
-কবে?

“আমার আব্বা-আম্মা, ছোটবোন, এমনকি আম্মার কাজে সাহায্য করা রহিমা খালা৷ ঘাড়ত্যাড়া দারোয়ান৷ যার সাথে আমার রেগুলার লাগতো৷ উনিও তোমাকে বাড়ির বৌ বানাতে রাজি৷ শুধু তোমার বাবা বাদে৷” মীরা তার বাবার প্রতি বিরক্ত হয়৷ মাথায় হাত দিয়ে মুখ নিচু করে রাখে৷ আমি মীরার হাতটা আমার হাতে নিয়ে বলি,

-মীরা একটা মন্দ কথা বলি?”
-আমি বারণ করলে তুমি না বলে থাকবে?”

“তোমার বাবা যদি আমার বন্ধু টাইপ কিছু হতো৷ তাহলে কানে কানে বলতাম, বিসিএস ক্যাডারদের বি মীরার লালচোখ দেখে আমি থামলাম৷” মীরা আবার মাথায় হাত দিয়ে মুখ নিচু করে রাখে৷” এই মেয়েটার অভ্যাসও খানিকটা তার বাবার মতো৷ মেয়েকে ক’বার বলেছি, চল বিয়ে করে ফেলি৷ তারপর যা হবার হবে৷” মেয়ে কিছুতেই রাজি না৷” আমিও বাধ্য প্রেমিকের মতো মীরার কথা মেনে নেই৷ আমি মীরার বাবার কথা ভাবি৷ শুনেছি, ভদ্রলোক নিজেও প্রেম করে বিয়ে করেছে৷ আমি যখন মীরার বন্ধু ছিলাম৷ তখন মীরার বাসায় গেলেই ভদ্রলোকের সাথে জমিয়ে আড্ডা হতো৷ উনি বীরদর্পে উনার প্রেমের কাহিনী শোনাতেন৷ মীরার মাকে নিয়ে বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে কীভাবে পালিয়েছিলেন৷ মীরার বাবার বন্ধুটা ছিলেন আমার গুণধর পিতা৷ তারপরের ইতিহাস সমগ্র৷” আমি মীরাকে মাঝেমধ্যে খোঁচা দিয়ে বলি,

-আমি তোমার বাবার মতো পালাবোনা৷ আমার পকেটে টাকা আছে৷ অভাব পড়লে দরকারে আব্বার পকেট,বোনের ব্যাংক মেরে দিবো৷ তবুও বন্ধুর কাছে টাকা ধার চাইবোনা৷” মীরা শুধু লালচোখে তাকায়৷ আমি আর কিছু বলিনা৷ মিনিট তিনেক পর মিনমিন করে বলি, তোমার চোখ কী জন্মগত ভাবেই লাল৷” তারপরে অগ্নিচাহনিটা দেখার সাহস হয় না আমার৷” মীরা এখনো মাটির দিকেই তাকিয়ে আছে৷ আমি উশখুশ করছি৷ এদিক ওদিক ফিরছি৷ সন্ধ্যে নামছে৷আমি মীরার কাঁধে টোকা দিয়ে বললাম,

-চলো নামিয়ে দিয়ে আসি৷” মীরা বলল,
-এতো তাড়াতাড়ি?”

“বাসায় আম্মার বান্ধবীর মেয়ে এসেছে৷ মেয়েটা সম্ভবত ডিপ্রেসড৷ সারাক্ষণ কাঁদছে৷ ওর মা সামনে গেলেও কাঁদে৷ আমাকে দেখলে যা একটু হাসে৷ বোধ হয় ওর খুশি লাগে৷ আমার আম্মা আবার মেয়েটাকে খুব মায়া করে৷ খুব মিষ্টি বুঝলে৷” কথা শেষ করে আমি মীরার দিকে তাকালাম৷ মীরা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সময় দেখলো৷  দু’একটা ফোন করলো৷ আমার হাতটা খপ করে ধরে বলল, কাজী অফিস খোলা থাকবে?” আমার জবাবের অপেক্ষা না করে হাত ধরে টেনে বলল, ব্যাপার না৷ চল৷”

কাজী অফিস থেকে সোজা বাসায় চলে এসেছি৷ আব্বা-আম্মাকে সালাম করেই মীরা ভেতরের দিকে গেল৷ কাকে যেন খুঁজছে৷ মিনিট দুয়েক বাদে আম্মার বান্ধবীর মেয়ে কেঁদে উঠলো৷ আমি দৌঁড়ে ভেতরে ঢুকি৷ আম্মার বান্ধবীর কোলে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে মীরা, আমি তাকিয়ে আছি মীরার দিকে৷ একটু শনশন আওয়াজ হলো৷ আম্মার বান্ধবীর মেয়ে মীরার কোলেই কাজ সেরে ফেলেছে৷” আম্মার বান্ধবী সেলী খালা এসে, আফসোস করলো৷৷” আমি হেসে বললাম, ভাবী বরণে ভিন্ন উপায়ে বরণ করে তাক লাগিয়ে দিল, অমুকের মেয়ে তমুক৷” “মীরা চোখেমুখে রাগ নিয়ে বলল, এটায় আম্মার বান্ধবীর মেয়ে?”

-হ্যা৷ আমি মিথ্যে বলেছি? বাচ্চা মেয়েটা আমাকে দেখলেই হাসে৷ আম্মা খুব মায়া করে তাকে৷ তুমি বল মীরা, আমি মিথ্যে বলেছি?” মীরা আর জবাব দেয় না৷ আমি ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত হলাম৷ গোছগাছ শেষ করে আব্বার সামনে যেতেই বলল,

-কই যাচ্ছো বাবা?”
-বাবা আমি মীরাকে হুট করে বিয়ে করেছি৷”
-কেন?
-ওর বাবার আমাকে পছন্দ নয়৷ ওর বাবার বিসিএস ক্যাডার পাত্র চায়৷”

আব্বা চোখেমুখে বিষ্ময় নিয়ে বলল, কেন তোর বি” আমি আম্মার দিকে তাকালাম৷ আম্মার ছোটভাই বিসিএস ক্যাডার৷ এটা নিয়ে আব্বা মজা করে মাঝেমধ্যে৷ আম্মা রাগে৷ এখনো ঠিক রেগে আছে৷” আব্বা আমার হাত থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে বলল,

-আস্তে দে মীরার বাবাকে৷” আব্বার মুখের কথা শেষ না হতেই দরজায় ঠুকঠুক আওয়াজ হলো৷ আমি আব্বার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ মীরাকে দেখলাম, আম্মার বান্ধবীর মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ দরজা খুলতেই মীরার আব্বা হনহন করে ঘরে ঢুকলো৷ আমি মীরার পাশে গিয়ে মিনমিন করে বললাম,

-একটা মন্দ কথা বলবো?” মীরা লালচোখে তাকায়৷ এই সময়ে সতীন কোলে নিয়ে বসে আছো?” বললাম আমি৷ মীরা মুখ চেপে বলল, আব্বা যদি মেনে নিতে না চায়৷ তবে বলবো এটা আমাদের মেয়ে৷” “মীরার আব্বা সামনে রাখা টেবিলে চড় বসিয়ে আব্বাকে বলল,

-বন্ধু তোমার ছেলেকে বল, আমার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিতে৷” আব্বা তার থুতনীর নিচে একগুচ্ছ দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন,
-আমার টাকা ফেরত দে৷
-কিসের টাকা?” বলল মীরার আব্বা৷
-ঐ যে প্রেমিকা নিয়ে পালিয়েছিলি৷ আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে৷”

সদ্য ব্যাংক থেকে নামিয়ে আনা খচখচে ৫০০টাকার নোট গুজে দিল আব্বার পকেটে৷ আব্বা ৫০০টাকার নোটটা বের করে বলল, বন্ধু এই ৫০০টাকা নহে৷ আমার প্রেমিকার দেয়া ৫০০টাকার সেই নোটটা ফেরৎ চাই! প্রেমিকা যেদিন থেকে তোর ভাবী হল৷ সেদিন থেকে খোটা শুনছি সেই মানিব্যাগের কোণে পরে থাকা ৫০০টাকার!
দাও ফিরিয়ে দাও৷” মীরার আব্বা কিছু বলছেনা৷ ভদ্রলোক কাঁপছে৷ আব্বা উনার কাঁধে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে কি যেন বলল৷ মীরার আব্বা একটা চাহনী দিয়ে বাসা ছাড়লো৷ শ্বশুর আব্বা চলে যাওয়ার পর আব্বাকে মিনমিন করে বললাম,

-কী বলেছো?” আব্বা বলল,
-মন্দ কথা বলেছি!
-কী?
-ছেলে আমার “S” নাহোক কিন্তু less নয়৷

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত