দত্তক

দত্তক

না খেয়েই শুয়ে পড়লে যে? শরীর খারাপ? না, ঠিক আছি। তুমি খেয়ে নাও গে। শোয়েব বুঝতে পারে বৃষ্টিকে আবার আঁটকুড়ো, অলক্ষীর মতো বিশেষণগুলো দাঁতে দাঁত চেপে শুনতে হয়েছে। ওদের বিয়ে হয়েছিল কার্তিকের প্রথম শনিবারে, সেই থেকেই যেন নানা শনি লেগে আছে দুজনের কপালে। বিয়ের বয়স ছয় পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টি একটাবারের জন্যও গর্ভধারণ করতে পারেনি, নানান দেশের চিকিৎসক, ফকির কিংবা কবিরাজ বেটে খেয়েও কোন ফায়দা হয়নি।

গত ছয়টা বছরে শোয়েবের ব্যবসার পুঁজি নুন আনতে পান্তা ফুরাই এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। শোয়েবের মা, চাচি কিংবা ফুপাতো, মামাতো বোনেরা জ্যোতিষ সেজে প্রতিটা দিনই বৃষ্টিকে মনে করিয়ে দেয় শোয়েবের ব্যবসায়ের ওমন দায় যতটা না শোয়েবের তার চেয়ে বেশি বৃষ্টির। মোটা ফ্রেমের চশমার গ্লাস দুটো নোনাজলে ঝাপসা হয়ে আসে, শোয়েব বাড়ি ফিরে যত্নে সেই গ্লাস দুটো মুছে দিয়ে বৃষ্টির চোখে পরিয়ে দিয়ে বলে, নতুন মুভি এসেছে, চলো দেখে আসি। বৃষ্টি কখনো ছেলে ভুলানো ওমন স্বান্তনায় পা বাড়িয়ে হলমুখী হয় আবার কখনো গুঙিয়ে কেঁদে উঠে শোয়েবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। শোয়েব বৃষ্টির পাশে শুয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, একটা খবর আছে। দারুণ খবর, শুনবে?

গল্পের তৃষ্ণার্ত কাকটা যেমনি হন্যে হয়ে একফোঁটা পানির জন্য তাবৎ দুনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছিল বৃষ্টিও তেমনি একটা ভালো খবরের কথা শুনতেই তড়িৎ বেগে শোয়েবের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, কী কথা? বৃষ্টির বড়ো বড়ো চোখ দুটো নিরব কান্নায় সাদা আকাশে লাল মেঘের মতো হয়ে আছে,শোয়েব বৃষ্টির মুখের কাছে মুখ এনে বলল, মা রাজি হয়েছেন বাচ্চা দত্তক নিতে। বৃষ্টি উচ্ছ্বাসের সাথেই বলল, সত্যি? হ্যাঁ, সত্যি। কাল যাবে নেত্রকোনা? হ্যাঁ যাব, কখন যাবে? ভোরবেলা, কেউ ঘুম থেকে ওঠার আগেই বেরিয়ে যাব। বাসার নিচের টঙের দোকান থেকে লম্বা টোস্ট আর দুধ চা খেয়েই রওনা দেব দুজন।

বৃষ্টি শোয়েবের গলাটা জড়িয়ে ধরে ক্লান্ত যোদ্ধার মতো চোখ বুজে নেয়। বৃষ্টি আসলেই খুশি হয়েছে নাকি নিজের অসহায়ত্ব, অক্ষমতা ঢাকতে খুশির ভান ধরেছে তা অস্পষ্ট ঠেকে শোয়েবের কাছে। প্রতিবারই শোয়েব ব্যাপাক আগ্রহ নিয়ে বৃষ্টিকে বলেছে, চলো একটা মেয়ে দত্তক আনি। আমেরিকারনরা প্রথম সাক্ষাতে যেমন সৌজন্যতা বিনিময়ে মেকি হাসি হাসে বৃষ্টিও প্রতিবার ওমনি হেসে জানান দিয়েছে, আনো তবে দত্তক। তবে শোয়েবের প্রবল আগ্রহ, বৃষ্টির ঈষৎ উচ্ছ্বাস প্রতিবারই মিইয়ে গিয়েছে শোয়েবের মা হুসনেয়ারার নির্লিপ্ত জবাবে। হুসনেয়ারার কথা হলো, পরের ছেলেমেয়ে এনে মানুষ করলে তারা আপন হবে না, পর পরই রয়ে যাবে, দরকার হলে আরেকটা বিয়ে কর তবুও পরের বাচ্চা না।

শোয়েব তার মাকে প্রতিটা দিনই নানা কায়দায় একে ওকে দিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে অবশেষে রাজি করাতে পেরেছে। সংসারে যেমনি রাক্ষস স্বামী আছে তেমনি অনেক শোয়েবরাও আছে যারা পকেটের টালমাটাল অবস্থা নিয়ে বন্ধ্যা স্ত্রীটার জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ায় অন্যর কথার গোলার সামনে, নানান চিকিৎসকের পরমার্শ নিয়ে তাবৎ ফার্মেসি ঘুরে বেড়ায় কয়েকটা ওষুধের জন্য, ক্ষয়ে যাওয়া জুতোর অবদানে পিচঢালা রাস্তায় পায়ের তলায় ক্ষত হলেও এরা ঘরে ফিরে হাসিমুখে বৃষ্টিদের মাথাটা বুকে টেনে নেয়। এরা কখনো আমাদের সামনে আসে না, আমরা সামনে আনি না। ভালোর সংখ্যা সব কালেই মন্দের চেয়ে কম ছিল, এই সত্যটুকু রোজ ঢাকা পড়ে হাজারটা মন্দের ভিড়ে। বৃষ্টি বোঝে শোয়েব যে মস্ত বড়ো অভিনেতা, বৃষ্টি তবুও চুপ রয়। ঐ অভিনয়টুকুনেরই জোরেই তো বৃষ্টি এখনো নিশ্বাস নিতে পারছে।

শোয়েবের দূরসম্পর্কের খালা হাফসা বানু৷ তারই বড়ো মেয়ে খাদিজার সন্তান সংখ্যা ছয়, পাঁচ মেয়ে আর এক ছেলে। হাফসা প্রায়ই শোয়েবকে ফোন করে বলত শোয়েব যেন তার স্বামী মরা মেয়েটার একটা মেয়েকে হলেও নিয়ে যায় যেন, মানুষের কাছে হাত পাততে পাততে তারা ক্লান্ত। শোয়েব যখন যতটুকু পারে ততটুকুই করে হাফসাদের জন্য, এই কৃতজ্ঞতাবোধ আর ভবিষ্যতে তাদের পাশে শোয়েবকে পাওয়া যাবে পালটা কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে এই ভেবেই হাফসা বানুর ওমন সিদ্ধান্ত । বৃষ্টি ইশারায় ডাকতেই খাদিজার দেড় বছরের মেয়ে আয়েশা বৃষ্টির কোলে এসে বসে, আয়েশা বৃষ্টির নাকে হাত দেয়, থুঁতনিতে হাত দেয় তার মাটিমাখা হাত দিয়েই। বৃষ্টির ভেতরটা কেমন যেন উষ্ণ হয়ে ওঠে মুহুর্তেই।

খাদিজা উঠানে বাঁধা ছাগলটার দড়ি খুলতে খুলতে বলল, আয়েশারে নিয়া যান , বাকিগুলারে একবেলা না খাওয়াইয়া রাখলেও মাইরের ডরে কানবো না। বৃষ্টি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই হনহনিয়ে ছাগলকে টানতে টানতে মাঠের দিকে নিয়ে চলে যায় খাদিজা। বৃষ্টির খাদিজার ব্যথা বুঝে নিতে কষ্ট হয় না, হাফসাকে ডেকে বৃষ্টি বলল, আয়েশার মায়ের খুব কষ্ট হবে আয়েশাকে ছাড়া থাকতে, আয়েশাকে এভাবে নেয়াটা ঠিক হবে কি? হাফসা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, না খাইয়া মইরা গেলে আরো কষ্ট হইবো, সারাজীবন কানবো। তুমি নিয়া যে নিজের চাইয়্যাও বেশি যত্নে রাখবা হেইডা খাদিজা জানে। মাইয়্যা খাইয়া পইরা বাইঁচা আছে এইডার কাছে মাইয়্যারে দূর কইরা দেওনের কষ্ট মামুলি জিনিস,লইয়া যাও আয়েশারে।

বৃষ্টি ঠিক শান্তি পাচ্ছে না, শোয়েব বুঝতে পারে বৃষ্টি দ্বিধাদ্বন্দের গেরোতে আটকে যাচ্ছে। শোয়েব প্রশ্রয় দেয় না। আয়েশাকে কোলে তুলে নিয়ে শোয়েব বলল, খালা, তাহলে আজ আসি। কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। চলো বৃষ্টি এবার যাওয়া যাক। বাড়ি ফিরেই আয়েশাকে সাবানে ডলে ডলে গোসল করালো বৃষ্টি, গা মুছে দিয়ে ফেরার সময় কিনে আনা লাল রঙা জামা পরিয়ে দিল। হুসনেয়ারা দেখেও সব না দেখার ভান ধরে থাকল। শোয়েব বাড়ি ফেরা পথে অয়েলক্লথ কিনে ফিরল।শোবার সময় দুজনের মাঝে আয়েশাকে রাখা হলো।

হুট করেই আজ নতুন একজনের আবির্ভাবে বৃষ্টি কিংবা শোয়েব দুজনেই বেশ আহ্লাদিত। অবাক করার বিষয় হলো আয়েশা একবারের জন্যও কাঁদেনি! সে অবাক হয়ে তার নতুন চোখে নতুন মানুষগুলোর কাণ্ডকারখানা দেখেছে। প্রথমবারের মতো কৃত্রিম নিপলটা সে কামড়ে কামড়ে দুধ খেয়েছে। যে আসছে সে বাঁকা চোখে তাকালেও আয়েশার মায়াভরা মুখটা দেখেই নরম হয়ে গিয়ে বৃষ্টিকে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে ভুলে যাচ্ছে। যারা টিপ্পনী কেটে বলছে পরের মেয়ে তো পরের মেয়েই তারাও অবাক হয়েছে শান্ত আয়েশাকে দেখে। আয়েশা বৃষ্টির কোলে আঠার মতো লেগে থাকে অন্য কেউ কোল নিলেই কেঁদে ফেলে। সবাই অবাক হয়ে তাকায় আয়েশার দিকে।

দিন গড়াতেই হুসনেয়ারারও কেমন যেন মায়া লাগতে শুরু করলো আয়েশার প্রতি। হুসনেয়ারা ইশারায় আয়েশাকে ডেকে চুমু খায়,মাথায় হাত বোলায়, গোপনে কিনে রাখা চকলেট দেয়। আয়েশা তার নতুন দাঁতে ইঁদুরের মতো কুটুস কুটুস করে সে চকলেট গুলো খেয়ে নেয়। বাড়ির প্রতিটা মানুষের কাছে চোখের মণি হয়ে উঠেছে অল্প দিনেই সে। সেদিন দুপুরে বৃষ্টি রান্নাঘরে যখন তরকারি রাঁধতে ব্যস্ত তখন কেউ একজন পেছন থেকে “মা… ” বলে ডেকে ওঠে। বৃষ্টি ঘাড় ঘুরিয়েই দেখে আয়েশা ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টি খানিকক্ষণ কিছু বলতে পারে না, কেবল চেয়ে তাকে আয়েশার দিকে। আয়েশা তার মায়ের নিরবতা দেখে চেচিয়ে উঠে আবার বলল, “মা” । বৃষ্টি চিলের মতো ছো মেরে আয়েশাকে কোলে তুলে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। আয়েশা ধীরে ধীরে বাবা, দাদি ডাকা শেখে। বর্ণমালার শেখার বইয়ের পাতায় তার ছোট্ট আঙুল রেখে মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে পড়তে থাকে, ” অ, আ, ই, ঈ.”।

ক্যালেন্ডারের পাতা বদলে যেতে থাকে, আয়েশার বয়সও দশে এসে ঠেকে। দশটা বছরে আয়েশা তার দাদির চোখের মণি হয়ে উঠেছে, বাবার আদুরে রাজকন্যা আর মায়ের অস্তিত্ব হয়ে উঠেছে। ঘরের প্রতিটা মানুষের ওপর খবরদারি করে সে। তার ছোট চাচা দেরি করে বাড়ি ফিরলে কিংবা তার বাবা ঘরে সিগারেট খেলে আয়েশা তার দাদিকে নিয়ে সালিশ বসায়, আয়েশা উকিলের মতো আসামি পক্ষকে জেরা করে, সবশেষে অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ করা মাত্রই তাৎক্ষণিক শাস্তিস্বরূপ আয়েশাকে নতুন খেলনা, বিশাল একখানা চকলেট বক্স দেবার আদেশ দেয় জজ সাহেবা। অপরাধীরা হাসতে হাসতে শাস্তি মাথা পেতে নেয়।

সময় গড়াতেই শোয়েবের ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে। বৃষ্টি সারাদিনই ব্যস্ত থাকে আয়েশাকে নিয়ে। আয়েশা এখন স্কুলে যায়, ক্লাস ফোরে পড়ে৷ দুই বেণি ঝোলাতে ঝোলাতে মায়ের আঙুল ধরে রোজ স্কুলে আসে যাওয়া আসা করে। বৃষ্টি স্কুলের অভিভাবক কক্ষে টানা পাঁচ ঘন্টা বসে থাকে কখনো কখনো, আয়েশা নাক ফুলিয়ে তার মায়ের গলা জড়িয়ে বলে, এতক্ষণ বসে থাকতে তোমার কষ্ট হয় গো মা, তুমি ছুটির পরে আসতে পারো না? বৃষ্টি চোখ পাকিয়ে বলে, বুড়ি হচ্ছো দিনদিন? আমার কোন কষ্ট নেই।

না, বৃষ্টির কষ্ট ঝড়ের মতোই হুট করে এসে সব উড়িয়ে দিয়ে যায়। সকাল সকাল আয়েশা স্কুলে যাবার জন্য ইউনিফর্ম পরছিল ওমন সময় পঞ্চাশোর্ধ এক বৃদ্ধা এসে হাজির শোয়েবদের বাড়িতে, শোয়েব সেদিন বাড়িতে ছিল না, ব্যবসার কাজে বেনাপোল ছিল। আয়েশা ঠিকই চিনতে পারে বৃদ্ধাকে, সে হাফসা বানু। বৃষ্টির দুনিয়াটা ঘুরে যায়, গত দশটা বছরে যে মানুষটা একবারের জন্যও এদিকে আসেনি সে, তবে আজ কেন! বৃষ্টি হুসনেয়ারাকে ডেকে আনে। হুসনেয়ারা শান্ত গলায় বলে, আপা তুমি না জানিয়ে এলে যে? টাকা পয়সার সমস্যা চলে? হাফসা বানু চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে কী যেন খোঁজে। আয়েশা ইউনিফর্ম পরে ঘর থেকে বেরোতেই হাফসা বানু প্রশস্ত হাসি দিয়ে বলে, আয়েশা! বইন আমার, নানির কাছে আহো। আয়েশা কপাল কুঁচকে তাকায়, অপরিচিত মহিলার এমন সম্বোধনে আয়েশা আর সামনে এগোয় না, মায়ের আঙুল ধরে দাঁড়ায়।

হাফসা বানু হুসনেয়ারার কথার জবাবে বলে, দিন খারাপ আইছিল তাই আয়েশারে দিছিলাম অহন দিন ফিরছে। আয়েশারে নিতে আছি গো বইন। বৃষ্টি ঠিক এই আশঙ্কটাই করছিল, বৃষ্টির শরীর ঘাম দেয় মুহুর্তেই, মাথাটা কেমন ঘোরাতে থেকে। হুসনেয়ারা ইশারায় আয়েশাকে ভেতরে নিয়ে যেতে বলতেই বৃষ্টি আয়েশাকে নিয়ে ঘরে ভেতর ঢুকে যায়, দরজাটাও সশব্দে বন্ধ করে দেয়।

হুসনেয়ারা আহত সর্পিণীর ন্যায় ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, এসব কী বলো তুমি! জন্মের পর তাহলে দিয়ে দিলে কেন? আর আমাদের কথা ছাড়ো, আয়েশা তো আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবে না, বৃষ্টিকে ছাড়া তো ও এক মিনিটও কোথাও থাকতে পারে না। তুমি বের হও আমার বাড়ি থেকে, এক্ষুণি বেরিয়ে যাও। আধঘন্টা মতো ধস্তাধস্তি, হাফসার হুসনেয়ারাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ পর্ব চলতে থাকে। হুসনেয়ারার ছোট ছেলে এসে বেশ জোর জবরদস্তি করেই হাফসাকে বের করে দেয়।

ঘন্টা দুয়েক যেতেই হাফসা পৌরসভার কাউন্সিলর মোনায়েম আলীর সঙ্গে পুলিশ নিয়ে আসে। শোয়েবদের আজন্মের শত্রু, প্রতিমুহূর্তে ক্ষতি করতে চাওয়া মোনায়েমও এই সুযোগটা লুফে নেয়। আয়েশাকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়, হাফসাও তাদের পেছন পেছন থানায় ছোটে। আয়েশা গগনবিদারী চিৎকার তুলে বারবার ডেকেছে, ও মা! মাগো, আমি যাব না কোথাও, ও মা, ও দাদু, ও চাচু… আমাকে এরা নিয়ে যাচ্ছে কেন? বৃষ্টি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে, শোয়েবের ছোট ভাইটাকে শক্ত করে ধরে রাখে আয়েশাকে। চিলে ছো মেরে মুরগীর বাচ্চা নিয়ে গেলে মা মুরগীটা যেমনি দিক বিদিক ছুটতে থাকে, করকর আওয়াজ তুলে বাতাসা ভারী করেও বৃষ্টিও ঠিক তেমনটা করে।

দিন দুয়েক পর শোয়েব বাড়ি ফিরেই বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়েই হাফসাদের বাড়িতে গিয়েছিল। গ্রামের লোকগুলো ওদের দা, বটি নিয়ে শাসিয়ে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বৃষ্টি একটা বারের জন্যও আয়েশার মুখখানা দেখতে পারেনি।
বাড়ি ফিরতেই দেখা গেল হুসনেয়ারা আয়েশার শোকে বিছানায় পড়ে গেছে৷ কে কাকে কী বলে স্বান্তনা দেবে সে ভাষা কেউ খুঁজে পায় না। পরদিন দুপুর বেলা হতে বেশ ঝড় শুরু হলো, সাথে শিলাবৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। শোয়েব ব্যবসা ফেলে ঘরে পড়ে রয়েছে, বৃষ্টি গতকাল থেকেই কিছু মুখে দেয়নি। একটু পরপর আয়েশার ছবি,ব্যাগ, কাপড় দেখে কান্নার বেগ বাড়ে তার।

কলিং বেলটা একনাগাড়ে অনেক্ষণ বেজে চলছিল, শোয়েবের ছোট ভাইটা দরজা খুলতেই চেচিয়ে বলল, ভাবি… আয়েশা এসেছে। আয়েশার নাম শুনতেই হুসনেয়ারা, বৃষ্টি বাইরে বয়ে যাওয়া ঝড়ের বেগকে হার মানিয়ে দরজা সামনে এসে দেখল, আয়েশা ভিজে চপচপ হয়ে গেছে, বেণি দুটো সেদিনের মতোই আছে, খোলা হয়নি একটাবারের জন্যও, গায়ে পরনের ইউনিফর্মটাও আছে সেদিনের মতোই। আয়েশা মা ও মা বলে বৃষ্টির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। বৃষ্টি এবার হাউমাউ করে কান্না শুরু করল।

আয়েশার সাথে আসা মধ্যবয়সী মহিলাটা শোয়েবকে বলল, আমি যে আয়েশাকে আইনা দিছি এই কথা কাউরে কইয়েন না, আর পারলে আয়েশারে কোথাও রাইখা আসেন, নাইলে আবার নিয়া যাইব। বৃষ্টি অপরিচিত মহিলার কথা কানে আসতে আরো জোরে জড়িয়ে নেয় আয়েশাকে৷

গাড়ি চলছে সিরাজগঞ্জের দিকে, সিরাজগঞ্জে শোয়েবের এক বন্ধুর বাড়িতে যেয়ে উঠবে আয়েশা। ভিসা হয়ে গেলেই সপরিবারে দেশের বাইরে চলে যাবার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে শোয়েব। পুলিশ কয়েক দফায় এলেও বৃষ্টি আর হুসনেয়ারার কান্নাভেজা চোখ দেখে আবার চলে গিয়েছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত