দুই বছর আগে ফেইসবুকে এক মেয়েকে বলেছিলাম আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।মেয়ে সাফ জানিয়ে দিল তার সরকারি জবওয়ালা ছেলে চাই।আমি শুধু ‘বাই’ বলে আর কখনো নক করিনি। মেয়েটা সেদিন আমায় ফোন দিল: জব পাইছ? না। আমার বিয়ে ঠিক হইছে। ওহ্! কনগ্রেইটস! আমায় নিয়ে পালাতে পারবা? না। ওকে।তোমার ঠিকানাটা বোলো।ইনভাইটেশন কার্ড পাঠিয়ে দিব।বিয়ে-খাইতে আইস। আচ্ছা। তারপর সে ফোনটা কেটে দিল।দুইদিন পর রঙিন কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট আসল ক্যুরিয়ারে।খুলে দেখলাম তার নিজের হাতে লেখা একটা চিঠি।
তুমি একটা কমবখত! যাইহোক বাবার পছন্দের ছেলেটা বিসিএস ক্যাডার।সদ্যই জয়েন করেছে।এবারের ৪৩ তম তে।ফরেন ক্যাডার!ম্যালা বেতন! অনেক স্মার্ট।তোমার থেকে মাশাল্লাহ দেখতে সুন্দর! মাথায় অবশ্য তোমার মত এলোমেলো চুল নেই।সামান্য টাক। তবে খুব গোছালো।আমাকে আশ্বাস দিয়েছে, খুব আদরে রাখবে।আশীর্বাদে আমায় গয়নায় মুড়িয়ে দেবে বলেছে।আমাকে সে রাণী করে রাখবে।তার বাড়িতে কোন কাজ করতে হবে না আমাকে।
ধুর! খালি ওকে নিয়ে বক্বক করে যাচ্ছি..আচ্ছা, তুমি সেই গল্পটা লিখে শেষ করেছ? যে-টা তুমি আমাকে নিয়ে লিখতে চেয়েছিলে? না-কি আমার পাত্তা না পেয়ে সে-গল্পটা ছেড়েই দিয়েছ? এবার গল্পটা কিন্তু অবশ্যই লিখবা।একটা আবদার।জানি,তোমাকে আবদার করার মত কোনো অধিকার আমার নেই, তবুও করছি, যদি পার আমার বিয়েতে একটা সিঁদুরের কাঁটা গিফট করো আমায়। অল্প দাম দিয়ে কিনো।তোমার হাতে সিঁদুর পরাটা আমার কপালে ছিল না হয়ত।কিন্তু তোমার দেয়া কাঁটায় সিঁদুর আাঁকতে তোমার নিশ্চয় আপত্তি থাকবে না!
-ইতি
অবনি ।
চিঠিখান পড়ে খুব আশ্চর্যান্বিত হলাম।একদিকে ভালোও লাগল।আমার মত উজবুককে কোনো মেয়ে সত্যিই ভালোবেসেছিল?
আমি নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে হাজির হলাম। মানুষে মানুষে জমজমাট আবহাওয়া।সবাই খুব ব্যস্ত।এত ব্যস্তত ভীড়ে অবনি’কে কোথাও দেখতে পেলাম না। উঠোনের এক মাথায় বরাসন। একটা কম বয়সী মেয়ে বরকে পাখার বাতাস করছে। আমি বরকে গিয়ে বললাম, আপনার ওখানে টোপর পরে আমার বসে থাকার কথা ছিল। বর হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করল, কে আপনি? আর এসব কথাই বা বলার সাহস আপনার কী করে হয়? আমি শান্তভাবে বললাম, আপনি যে মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন ঐমেয়েটা আমাকে নিয়ে পালাতে চাইছিল। আমি পালাই নি।এবার আপনিই ভেবে দেখুন।কেন সাহস পেলাম।
বর তেলেবেগুনে উঠে এসে আমার কলার ধরে নিয়ে গেল একটা ফাঁকা রুমে।একরকম হুলস্থুল বেঁধে গেল উঠোনজুড়ে। একটু পর মেয়ের বাপ আসল রুমে।উনার অগ্নিমূর্তিতে বাপ-বাপ ভাবই ছিল।তাই বুঝলাম উনিই বাপ।উনি বললেন, তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাসো? হ্যাঁ। আমার মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে? জানিনা।কিন্তু আপনি ওর বিয়ে ঠিক করলে ও আমাকে ওকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছিল।আমি না বলেছিলাম। তুমি কী করো? আপাতত একটা গল্প লেখার চেষ্টা করতেছি।
কব-ই! হুহ্! তা সারাজীবন কি আমার মেয়েকে গল্পই খাওয়াবে? না, মাঝে মাঝে কবিতাও শুনাবো। তুমি ত আচ্ছা বেয়াদব ছেলে!এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাও ব’লে কয়েকজন লোক দ্বারা আমায় কুকুরের মত তাড়িয়ে রাস্তায় বের করে দিল। হঠাৎ ঘেউ-ঘেউ শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল। যাক স্বপ্ন ছিল তাহলে! ২৩/০৩/২০২৩ তাং। সকাল সকাল সেজেগুজে রেডি হয়ে রওনা দিলাম।মনের ভিতর একটা অন্যরকম উদ্দীপনা চলছে।
ওঃ, টিউশনির টাকা দিয়ে সোনার একটা সিঁদুরকাঁটা বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম।গোধূলীতে পৌঁছালাম।রাস্তা থেকেই ঝলমলে পরিবেশ।গেইটের উপরে খুব সুন্দর করে জরি দিয়ে লিখা “টুডে অবনি’স ওয়ে’ডিং”। দুপাশের ছোটছোট মিউজিক বাল্বের মধ্য দিয়ে হেঁটে উঠোনে গিয়ে পৌঁছালাম। মানুষের কোন ব্যস্ততা নেই।কেমন শান্ত পরিবেশ।বরাসনে টেকোমাথার বর কই?এখনো পৌঁছে পারিনি বোধহয়। কেবল সূচিকর্মদ্বারা অলংকৃত সাদা কাঁথার উপর কয়েকটা নতুন বালিশ পড়ে আছে।
উঠোনের মাঝখানে বানানো গোলাকৃতির ছাঁদনাতলা। ছাঁদনাতলায় সাদা পিটুলির উপর লাল জবার আলপনা আঁকানো।দুটো কলসি, কলসির উপর আমের পল্লব আর দুটো কাঁঠালকাঠের পিঁড়ি পাশাপাশি।একটা বুড়ো ব্রাহ্মণ গায়ে গামছা পরে মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। উঠোনে আরো দু’চারিজন লোক এদিকে ওদিকে।উত্তর দিকে একতলা বড় পাকা বাড়ি।অনেকগুলো রুম। একটা রুমে কিছু মানুষের শোরগোল মনে হলো ।একটু এগিয়ে যেতেই মহিলার কান্নার স্বর শুনতে পেলাম।
ক্রন্দন করছে আর বলছে, অবনী রে! অবনী রে! তুই কুথায় গেলি মা! আমি দরজা দিয়ে ঢুকতেই একজন বলল, এই বোধহয় সেই ছেলেটি। দেখলাম অবনী শুয়ে আছে মেহগনির পালঙ্কে।লাল বেনারসি শাড়ি পরে কেমন-সুন্দর বউ সেজেছে আজ। দুহাতে লাল চুড়ির ‘পরে দুজোড়া শাদা শাঁখা। ওঁর কপালখানি খালি। প্রফুল্লশ্যামল মুখখানি কেমন স্নিগ্ধ শীতল মলিন। কেউ একজন এসে বলল, ওঁর বিছানায় একটা চিঠি পাওয়া গেছে। সম্ভবত এটা ও আপনাকেই লিখেছে।
তুমি এসেছো? আমি জানতাম তুমি না এসে পারবেই না।বিসিএস-পাত্র না দেখে অবাক হয়েছ?তুমি জান না, আমি এক ছন্নছাড়াকে ভালোবেসেছিলাম।বলিনি বলে রাগ করছ? আমার ক্যান্সার ছিল যে! কীকরে বলতাম বলো! কই, গল্পটা এনেছ? আজ খুব শুনতে ইচ্ছে করছে।পাশে বসে একবার শুনাও না? শোনো, ওরা একটু পর আমাকে স্নান করাতে নিয়ে যাবে। স্নানের শেষে আমার সিঁথিতে সিঁদুরের ফোঁটাটা দিয়ে দিও, প্লিজ।