-চাচ্চু?
-হ্যা আম্মা বলেন৷
-কাল স্কুলের মিস এর জন্মদিন৷ তোমাকে যেতে বলেছে!
মহিমার কথা শুনে অবাক লাগলো! স্কুলের মিস এর জন্মদিন আর আমাকে যেতে বলেছে!
ব্যাপারটা এমন না যে, মহিমাকে আমিই প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যায়৷ বা নিয়ে বাসায় নিয়ে আসি৷
এই কাজটা সবসময় আব্বা নিজে করে থাকে৷ মাঝে মাঝে ভাইয়া নিয়ে আসে৷ আর গার্ডিয়ানের জায়গায় ও ভাইয়ার নামই আছে৷ গার্ডিয়ানের নাম্বারটাও ভাইয়ারই৷
আমি শুধূ গত এক সপ্তাহ ধরে কাজটা করছি৷ এর আগে কখনো শুনিনি যে স্কুলের কোনো মিসের জন্মদিনে ছাত্রীর চাচ্চু স্পেশাল দাওয়াত পেয়েছে!
গোলাপি ফ্রেমের চশমার ভেতরের চোখ জোড়া আমার বড্ড পরিচিত৷ গালগুলো আগের চেয়ে নাদুস নুদুস হয়েছে৷ মুখে মিষ্টি হাসি৷ গালের টোলগুলো একটু গভীর হয়েছে৷ সলোয়ার কামিজ পরা চন্ঞ্ছল মেয়েটি আর নেই৷ সবকিছুতেই পরিণতর ছাপ৷
আমি মুগ্ধতার ঘ্রাণ পাই তানিশার দিকে তাকিয়ে৷ মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে তানিশা যে সামনাসামনি এসে পরেছে খেয়ালই করিনি৷
আমার কোল ছেড়ে তানিশার কোলে জায়গা করে নিলো মহিমা৷
মহিমার গালে চুমু খায় তানিশা৷ আদর জড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-পরিচয় করিয়ে দাও তোমার চাচ্চুর সাথে!
মহিমা বাধ্য মেয়ের মত পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে৷ আমি হাসি ৷ মনে মনে বলি,
পরিচয় করানোর কি দরকার তানিশা৷
তোর সাথে তো আমার জন্ম-জন্মান্তরের চেনা পরিচয়৷মহিমার চাচ্চু হিসেবে স্কুলের মিসের জন্মদিনে আমার দাওয়াত পাওয়ার কারণ পরিষ্কার হয়েছে এতক্ষণে৷
আমাদের দুই ঘর পরেই তানিশাদের ঘর৷ সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমার বন্ধূ বলতে তানিশাই ছিল৷ লুডু খেলা, আম চুরি করা, পুকুরে সাঁতার কাটা ! সবকিছুর সঙ্গী ছিল তানিশা৷ পড়ালেখাটাও একসাথে ছিল৷
আমার মন খারাপের সঙ্গি ছিল তানিশা৷ একজনের মনের বিষণ্নতাগুলো ছড়িয়ে পরতো অপরজনের মনে৷ আমার কান্না দেখে তানিশাও কাঁদতো৷
আমি খুশি থাকলে তানিশাও খুশি৷ কি সুন্দর করে হাসতো তানিশা৷ খিলখিল করে হাসতো৷ আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম৷ তানিশার মুক্তা ঝড়ানো হাসির সাথে সাথে আমার মন খারাপগুলোও গায়েব হতো৷
তানিশার লম্বা চুল৷ খোপা বাঁধতো মাঝে মাঝে৷ খোপা বাঁধা চুল আমার ভালো লাগতো না৷ তানিশার খোপা খুলে দিতাম৷ তানিশা সেকি রাগ করতো৷ চেহারা শক্ত করতো৷ আবার হেসে দিতো৷ আহ! মাতাল করা হাসি ছিল একদম৷
তারপর তানিশা আর খোপা বাধেনা৷ চুলগুলো ছড়িয়ে দেয়৷
চোখগুলো অসম্ভব রকমের সুন্দর ছিলো৷ কাজল কালো চোখ৷ কাজল ছাড়াই সুন্দর ছিল চোখগুলো৷ এরকম চোখ সবার থাকে না৷ থাকলে হয়তো কাজলের সৃষ্টিই হতো না৷
তানিশার গালগুলো নাদুস নুদুস ছিলো৷ দেখলেই টানতে ইচ্ছে করবে৷ তানিশার গালে হাত দিলেই তানিশা রেগে যেত৷ সে কি রাগ! ভয়ংকর রকমের রাগ করতো সবার সাথে৷
রাগী তানিশাকে আমি ভয় পাই৷ খুব ভয়৷ সে ভয়ের কোনো অর্থ পাইনি আমি৷ তানিশার গালটানার তীব্র ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখলাম অনেকদিন৷
অবশ্য খুব বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারিনি৷ ভরদুপুরে তানিশাদের বাড়ি গিয়েছিলাম একদিন৷ তানিশার জ্বর ছিল হালকা৷ আন্টি তানিশাকে বেরোতে দেয় নি৷ স্কুল ছুটির পর সোজা তানিশাদের দরজার সামনে৷ টোকা দিতেই আন্টি দরজা খুলে দিলেন৷
তানিশার কথা জিজ্ঞেস করার আগেই, আঙুলের ঈশারায় দেখিয়ে দিলেন৷ তানিশা ঘুমাচ্ছে৷ চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে৷ মুখের সাথে লেপ্টে আছে অল্পখানেক৷ মুখটা একটু শুকিয়েছে জ্বরের প্রভাবে৷
আমি আস্তে আস্তে তানিশার শিয়রে গিয়ে বসি৷ তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষণ৷
তানিশার গালগুলো টানি খুব সাবধানে৷ একবার, দু’বার করে কয়েকবার টানলাম৷ তারপর স্বাদ মেটে না আমার৷ আবার টানি৷
শেষবার টানার পরই অদ্ভূত কান্ড ঘটলো৷তানিশা ঘুমের মধ্যেই ফিক করে হেসে উঠে৷ আমার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়৷ ভয় পেলাম একটু৷
এই বুঝি তানিশা রেগে যাবে৷ কাজলকালো চোখ দু’টো রক্তলাল করে বলবে, আর আসবিনি আমার সামনে!
তানিশা উঠে বসে৷ আমার চোখের দিকে তাকালো একবার৷ আমি তাকানোর সাহস পাই না৷ তানিশা তাকিয়েই থাকে৷
আমার হাতের উল্টো পিটে হাত রাখে তানিশা৷ মিষ্টি হেসে বলল,
-এই পাগল! গাল টানতে ইচ্ছে হলে টানবি৷ এত ভয়ের কি আছে শুনি?
তানিশার কথায় অবাক হই আমি৷ মনে সাহস আসে একটু৷
-যদি তুই রাগ করিস! আমার সাথে কথা না বলিস!
তানিশা আবার হাসে৷ মুচকি হাসি নয়৷ মুক্তাঝড়ানো হাসি৷ আমার বোকা বোকা চেহারা দেখে তানিশা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে৷
আমার হাতটা তার গালের পাশে নিয়ে বলে,
-নে টান৷ ইচ্ছেমত টানবি৷ যখন ইচ্ছে তখনই টানবি৷ আমি রাগ করবো না৷
আর তোর সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারবো বল?
জবাবে আমি কিছু বলিনা৷ গালগুলো টানি যত্ন করে৷ আমার গালটানা দেখে তানিশা ভ্রু কুঁচকিয়ে বলে,
-গাল টানছিস! না মুরগির বাচ্চাকে আদর করছিস৷ আমি কিছু বলি না৷ নীরব থাকি৷ গাল টানতে ভালো লাগে আমার৷
শৈশব পেরিয়ে কৈশরে পা দিলাম৷ স্কুল পেরিয়ে কলেজ৷ আমি অনূভব করি৷ চন্ঞ্চল মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে গেছি আমি৷ আষ্ঠেপৃষ্টে জড়িয়ে পরেছি৷ শুধূ বলাটাই বাকি৷
আয়নার সামনে কত রিহার্সেল করেছি তার হিসাব নেই৷ কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি চাপা উত্তেজনায়৷
তানিশাকে ভালোবাসার কথা বলতে গেলে, অনূভব হতো এই বুঝি কলিজাটা ফেটে বেরিয়ে যাবে৷
অথচ কত বছরের পরিচিত আমরা৷
মনের আকাশটা একদম বিষন্ন হয়ে গেল এক রৌদ্রজ্জল সকালে৷ আম্মুর হাতে ভাত খেয়ে কলেজে গিয়েছিলাম৷ তানিশা একটু আগেভাগেই চলে গিয়েছিল৷ গত কয়েকদিনে তানিশার অাচরণে কষ্ট হয় আমার৷ গলার অগ্রভাগে ব্যাথা লাগে আমার৷ ঝকঝকা আকাশটাকে ও আমার মেঘলা মনে হয়৷
কলেজ মাঠের কোণার দিকে ডালপালা মেলা জলপাই গাছটার নিচে চোখজোড়া থমকে গেল আমার৷ সাথে কয়েকটা হূদস্পন্দন বাদ পরেছে জীবন থেকে৷ গলার ব্যাথাটা তীব্রতর হয়ে উঠে৷ চোখের কোণা বেয়ে বেরোনো পানিগুলোর ঘনত্ব একটু বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
সেদিনের আকাশটা রোদ্রজ্জল থাকলেও মনের আকাশটা বড্ড মেঘলা বিষণ্ণ হয়ে গেল৷ খুব করে চাচ্ছিলাম আমার মনের আকাশটার মত এই আকাশটাতে বৃষ্টি হোক৷ যে বৃষ্টিতে আমার চোখের জলগুলো খুব সহজেই লুকোতে পারবো৷
তানিশার ডাকে আমি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাই৷ ক্লাসের সেকেন্ড বয়টার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তানিশা৷ ছেলেটাকে চিনি আমি৷ ক্লাসমেট হিসাবে যতটুকু চেনা দরকার ততটুকু না৷ আমার সবকিছু জুড়ে শুধুই তানিশা৷ অন্যকাউকূ চিনতে চাই নি আমি৷ চেনার প্রয়োজন বোধ করিনি৷
আমার চোখ আর মন কে ফাঁকি দিয়ে তানিশা এই ছেলেটার প্রেমে পড়েছে৷ বুঝতেই পারিনি৷ নিজেকে নিজের কাছে বোকা মনে হচ্ছিল৷
এরপর থেকে লুকিয়ে কাঁদতাম৷ তানিশার সামনে গেলে চোখের জলগুলো অবাধ্য হয়ে যেত৷ বড় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যেতাম৷
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো, তানিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি, তানিশা! তুই শুধু আমার!
বলা হয়ে উঠে না আর৷ এখন আর রোজরাতে “ভালোবাসি” বলার রিহার্সেল করি না আমি৷
তার জায়গায় চোখ জল লুকোনোর রিহার্সেল করি৷
তানিশার সামনে যাওয়ার আগে মুখে পানি ছিটিয়ে যেতাম৷ চোখের জলগুলো ভালোই লুকোতে পারতাম৷ কথার জবালে হু, হা করতাম৷
বেশি কিছু বলতে গেলেই গলা চেপে আসতো৷
তানিশা হয়তো বুঝতে পেরেছিল আমার সবকিছু৷
কলেজ শেষে বাড়ি ফিরছিলাম৷ রাস্তার মোড়ে তানিশা দাঁড়িয়ে আছে৷ হাতের ঈশারায় কাছে ডাকে৷ আমার ভয় হয়৷ এই রে আজ তো মুখে পানি ছিটানো হয়নি৷ এই বুঝি ধরা পরে যাবো৷
নাহ! ধরা পড়িনি৷ তানিশা তো কথাই বলেনি৷ হাতে ছোট্ট একটা চিরকুট গুজে দিয়েই দৌঁড়ে পালালো৷
আমার অদ্ভূত লাগলো তানিশাকে৷ এই তানিশাকে আমি কখনো দেখিনি৷
চিরকুটখানা খুলে দুনিয়া থেকেই হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি৷
চিরকুটের “আমাকে ভুলে যা” তিনটে শব্দই আমার জীবনটাকে ভালোভাবেই বিশিয়ে তুলেছিলো৷”
মনের ভালোবাসা গুলো নিষ্ঠুরতার চাদরে ঢেকে দিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম শহরে৷ জনবহুল অথচ ভয়ংকর রকমের একাকিত্বে ভোগা এই আমার একবুক ভালোবাসা গুলো ধুলোবালি জমতে জমতে পুরু আস্তরণ জমে গিয়েছে৷ যে আস্তরণটা সাফ করা হয় নি কখনো৷ যত্নহীন পড়ে রয়েছে সেই দিন থেকে৷
তানিশাকে বলতে না পারা কথাগুলো স্থান পেয়েছে নীলরঙা ডায়রীটাতে৷
জোৎস্না রাতে ছাদের মাঝখানে বসে বসে পড়ি ডাইরিটা৷
ভালো লাগে না আমার৷ “হা করে চাঁদের জোৎস্না গেলার চেষ্টা করি আমি৷ আমার মনের আকাশটাও যদি এরকম জোৎস্নাময় হতো! ইশশ! কি সুখীটাই না হতাম আমি৷
পান্ঞ্জাবির পেছনটাতে টান পরতেই অতীতের ডায়রিটা বন্ধ হলো। মহিমা হাত দু’টো বাড়িয়ে দিয়েছে৷ আমি পরম মায়ায় বুকে টেনে নিই পিচ্চিটাকে৷
আমার প্রচন্ড মন খারাপের দিনে এই পিচ্চিটাকে বুকের সাথে লেপ্টে রাখি৷ পিচ্চিটাও আমার মন খারাপগুলো বুঝে৷
আমার গলা জড়িয়ে কানে ফিসফিস করে বলল,
-মিস বলেছে তোমাকে নিয়ে ছাদে যেতে!মহিমার কথা শুনে অবাক হই আমি৷
তানিশা কেন ছাদে ডাকবে আমাকে? ভয় হয় আমার৷ চোখগুলোর মায়ায় পরে যাবো আবার৷ গালগুলো টানতে ইচ্ছে করবে৷ এমনিতে দেখার পর থেকে মনটা নিষফিষ করেই চলেছে৷
গেটের দিকে পা বাড়ায় আমি৷ বাড়ি যাবো৷ মনটা এখনো ছাদেই পড়ে আছে! আমার কি যাওয়া উচিত৷উল্টোফিরে ছাদের দিকে হাটা দিলাম৷
“ভালোবাসি” বলতে না পারাটা আমাকে অনেক পুড়িয়েছে৷ শেষে যদি এই ছাদে না যাওয়াটাও পোড়ায় আমাকে৷
ছাদের কোণটাতে দাঁড়িয়ে আছে তানিশা৷ তানিশার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আমি৷ এখনো ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে৷
আমার গলার ব্যাথাটা আবার ফিরে আসে৷ চাপা উত্তেজনায় বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করি আমি৷
আজব তো! আমার কেন এমন লাগছে!
একজন বেঈমানের জন্য৷
একটু কাশলাম৷
ফাযিল মেয়েটা এখনো চুপ করে আছে৷ মহিমা আমার বুকেই ঘুমিয়ে পরেছে৷ দুই মিনিটের মধ্যে এই পিচ্চি ঘুমিয়ে পড়লো!
আমি গলায় কাঠিন্য ভাব এনে বললাম,
-কেন ডেকেছেন?
তানিশা ফিরে তাকায় আমার দিকে৷ গোলাপি ফ্রেমের চশমাটা নেই এখন৷ আমি আবার হারিয়ে যায় ভয়াল সুন্দর চোখগুলো মধ্যে৷
না! হারানো যাবে না৷ নিজেকে সামলিয়ে বলি,
-কি ব্যাপার? কেন ডেকেছেন বলুন৷ রাত অনেক হয়েছে বাসায় যাবো৷
তানিশা আরেকটু কাছে আসে আমার৷ আমার নাকটা টিপে দিয়ে বলে,
-আমার উপর খুব রাগ তাই না?
-না! আপনার উপর রাগ থাকার কথা আমার?
-অবশ্যই থাকার কথা৷
-জ্বী না৷
তানিশা একটু চুপ থাকে৷ হাঁটতে হাঁটতে আবারো ছাদের কোণটাতে গিয়ে দাঁড়ায়৷ আমি মুখে একটু বিরক্তি ভাব আনি৷ যদিও মন চাচ্ছে তানিশার সাথে আরো কিছুক্ষণ থাকি৷
ছাদের রেলিং ধরে তানিশা বলা শুরু করে,
-জানিস তো! তোকে ছাড়া আমার একটুও চলতো না৷ এখনও চলে না৷ তারপর জোর করে চালাচ্ছি৷
তানিশার কথা শুনে রাগ হয় আমার৷
-এতই যদি না চলে সেদিন ছেড়ে দিয়েছিলি কেন?
তানিশার শান্ত চোখে তাকায় আমার দিকে৷
-ডালিম তোর মনে আছে, আমার সামান্য অসুখ হলেই তুই মন খারাপ করতি! লুকিয়ে কাঁদতি৷ খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিতি!
হ্যা৷ তুই হয়তো অবাক হচ্ছিস আমি এসব কিভাবে জানলাম৷ তোর মায়ের কাছ থেকে জেনেছি আমি৷
যেদিন আমার টিউমার ধরা পরলো! সেদিন শুধু তোর মুখটাই ভেসে উঠছিলো বারবার৷ নিজের চেয়ে তোকে নিয়ে চিন্তা হতো বেশি৷
আমি জানতাম, আমার সামনে কথা বললেই তোর গলা ধরে আসে৷ চোখগুলো টলমল হয়৷
তারপরও তোর সামনে হাসিমুখে থেকেছি৷ তুই হয়তো ভেবেছিলি, তোর মন খারাপের বিষন্নতাগূলো আর আমার মনের আকাশে দাগ কাটেনা৷ তুই ভাবতি, ক্লাসের সেকেন্ড বয়টার সাথে ছুটিয়ে প্রেম করছি৷
কিন্তু বিশ্বাস কর, সেদিনের পর থেকে প্রত্যেকটা দিন আমার বিষণ্নতায় কেটেছে৷
তোর মনের ডায়রিতে হয়তো, এতদিনে আমার নামের সাথে “বেঈমান” শব্দটা জড়িয়ে গেছে৷
কিন্তু বিশ্বাস কর আমি নিজের জন্য বেঈমানি করিনি৷”
তানিশার বিপরীতে কিছু বলতে পারি না আমি৷ চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে আপনাআপনি৷ গলার ব্যাথাটা আর অনুভব করছিনা৷
মন খুলে শ্বাস নিই আমি৷
-তানিশা!
-হু!
-গালগূলো টানি?
-মানা করেছি কখনো?
-চুলের খোপা আমার একদম পছন্দ না৷
তানিশা হাসে৷ স্নিগ্ধ হাসি৷
চুলের খোপাটা খুলে দিলে কালো চুলগুলো ছড়িয়ে দেয় ছাড়িদিকে৷
হাত দু’টো বাড়িয়ে বলল,
-মহিমাকে আমার কাছে দে৷ তুই গাল টান ইচ্ছে মতো৷
মেয়েটা আগের মতোই চন্ঞ্চল এখনো৷ হয়তো এতোদিন আমার মতো বিষণ্ণতার ধুলোর আস্তরণ জমে গিয়েছিল তার চন্ঞ্চলতার উপর।