(১)
– এই ওঠ।
– কেন আম্মু?
– নীরা আসছে তোর সাথে দেখা করতে।
– কোন নীরা?ওয়েট..ওয়েট..ওয়েট। নীরা আসছে মানে?
– ওলে বাবা লে। এমন ভাব করছে যেন চিনেই না। সত্যি করে বল কি করছিস মেয়েটার সাথে? সেই সকাল থেকে আমার কাছে এসে কান্না করছে।
– আমি কি করবো? ও তো তোমার মেয়ের মতন। তুমিই ভালো জানো কেন কান্না করছে।
– তুই নাকি ওকে প্রপোজ করেছিস। ও না করে দিয়েছে তাই এখন প্রতিদিন ডিস্টার্ব করিস। কাল রাতে আবার ওর সাথে তোর ছবি ফেসবুকে আপলোড করে ক্যাপশন দিছিস with my oxygen. এগুলো কিন্তু ঠিক না। তোর এসব ছেলেখেলার জন্য ভবিষ্যতে ওর বড় ধরণের সমস্যা হতে পারে।
– কিহ্!কে বলছে এগুলা?
– নীরা নিজের মুখে আমার কাছে বলছে।আহারে বাচ্চা মেয়েটা।কান্না করতে করতে চোখ মুখ পুরো লাল বানিয়ে ফেলেছে।তোর বাবা আসুক।উনি এর একটা বিহিত করবেন।
– বিশ্বাস করো আম্মু ও যা বলছে সব মিথ্যা।উল্টো ও আমাকে কাল রাতে প্রপোজ করে থ্রেড করছে, আমি যদি রাজি না হই তাহলে আমাকে ইভটিজিং কেসে ফাসিয়ে জেলে পাঠাবে।তাতেও কাজ না হলে ধর্ষণ মামলা করবে।আর তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে হাত পা ভেঙে রাস্তায় ভিক্ষা করাবে।
– তোর এসব বাজে কথা রখ।নীরাকে আমি খুব ভালভাবে চিনি।হতে পারে ও একটু চঞ্চল কিন্তু তোর মতন বখাটের প্রেমে জীবনে পড়বে না।
– বাহ্।এখন পরের মেয়ে ভালো হয়ে গেলো আর নিজের ছেলে বখাটে।
– বেশি কথা বললে থাপ্পড় মেরে দাত ফেলে দিবো।ফ্রেস হয়ে ড্রয়িং রুমে আয়।নীরার কাছে ক্ষমা চাইবি।
– ক্ষমা!আমি করছি টা কি যে ক্ষমা চাবো?
– কি করছিস?লজ্জা করে না অন্যের মেয়েকে এভাবে হেনস্তার পরেও বড় গলায় কথা বলতে।আমার পাপ হয়েছিলো যে তোর মতন একটা জানোয়ার জন্ম দিয়েছি।
রাফি থতমত খেয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো।এদিকে নীরা পাশের রুম থেকে সব কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসতে।
মাঝে থেকে শাহেলা বেগম বিভ্রান্ত।
রাফি কাজটা করতে পারে বলে বিশ্বাস হয় না।কিন্তু নীরা?তাকেই বা অবিশ্বাস করবে কিভাবে?
ছোট থেকে চোখের সামনে বড় হয়েছে মেয়েটা।কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁর কোন ভুল চোখে পড়েনি।
তবে রাফি বা নীরা যেই সত্যি বলুক না কেন তাদের জুটিটা তৈরি করে দিতে পারলে শাহেলা বেগম নিশ্চিত হন।
কারণ শাহেলা বেগমের পরে যদি কেউ এই সংসারটা গুছিয়ে নিতে পারে সে নীরা।
(২)
রাফি নীরার পাশে বসতে নীরা রাফির গায়ে চিমটি কাটলো।
রাফি সাথে সাথে শাহেলা বেগমের উদ্দেশ্য করে বললো “আম্মু দেখছো?চিমটি দেয়।”
নীরা পরক্ষণে অবুঝের মতন মুখ করে বললো “আন্টি আমার দুই হাতই তো সামনে।চিমটি দিবো কিভাবে?”
ঠিক তার পর মুহূর্তে পেশার কুকার বেজে উঠলো।শাহেলা বেগম তাড়াহুড়ো করে কিচেনে চলে গেলেন।সুযোগ পেয়ে রাফি নীরার চুলে টান দিয়ে বললো;
– সমস্যা কি তোর?আম্মুর কাছে মিথ্যা নাটক করছিস কেন?একবার বলছি না আমার পক্ষে রিলেশন সম্ভব না।
– কেন সম্ভব না?
– গুন্ডা টাইপ মেয়ে আমার পছন্দ না।
– কোথাও ঘুরতে গেলে আমি, ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে গেলে আমি, টাকা না থাকলে আমি।আর এখন বলতেছিস গুন্ডা টাইপ মেয়ে তোর পছন্দ না।ওই শালা গুন্ডামির কি দেখলি আমার মধ্যে?
– সেদিন সিম্পল স্নিগ্ধার সাথে কথা বলছি বলে আমারে ধরে মারছিস।এটা কি?গুন্ডামি না?
– ওহ্ হো।মনে পড়ছে।ফারিয়া ইসলাম কে?রাত তিনটা পর্যন্ত দেখলাম কমেন্ট বক্সে লুটুপুটু চলছে।
– নতুন ফ্রেন্ড।ফেসবুকে পরিচয়।
– তোর সাহস তো কম না।ব্লোক দে এই মুহূর্তে।
– না।
– ব্লোক দিতে বলছি দে।না বলিস মানে?[অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে]
– আবার গুন্ডামি শুরু করছিস?
– গুন্ডামির কি দেখছিস তুই?
বলেই নীরা রাফির হাতের আঙুল বাঁকা করে ধরলো।
রাফি ব্যথায় চিৎকার করছে।নীরা রাফির মুখ চেপে ধরে বললো “ব্লোক দিবি না?”
রাফি চোখ বড় বড় করে হ্যা সূচক মাথা নাড়লো।
নীরা রাফির আঙুল আরও বাঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “আমার সাথে প্রেম করবি না?”
রাফি না করতে গিয়ে আবার হ্যা সূচক মাথা নাড়লো।
নীরা এবার রাফির আঙুল ছেড়ে দিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ এনে আলতো ভাবে আঙুলে বরফ দিতে দিতে বললো;
– এবার তোর করণীয় কি বলতো?
– তুই’ই বলে দে।
– আন্টির কাছে গিয়ে বলবি “আম্মু আমি নীরাকে ছাড়া বাঁচবো না।যেভাবে হোক তুমি নীরার বাবাকে রাজি করিয়ে ওর সাথে বিয়েটা দিয়ে দাও।” বাকিটা আমি সামলে নিবো।
– তোকে বিয়েও করতে হবে?
– কেন চান্দু?বিয়ে করবা না?
– তুই শুধু মাড়িস।
– আদরও করতে পারি।কিন্তু সেটা বিয়ের পর।
– ওকে বিয়ে করবো কিন্তু শর্ত আছে।
– কি শর্ত?
– বিয়ের পর মাড়বি না।আদর করবি।
– ভালোভাবে চললে মাড়বো না।
– আচ্ছে এখন থেকে ভালভাবে চলবো।
– গুড বয়।আঙুলে খুব ব্যথা পেয়েছিস?
– হুম।
– আর একটু বরফ ঘষি।তারপর মুভ লাগিয়ে দিবো।
– মুভ লাগালে খাবো কিভাবে?
– সেই টেনশন তোর করতে হবে না।
রাফি কোন জবাব না দিয়ে চুপচাপ নীরার দিকে চেয়ে রইলো।
মেয়েটার মুখে এখন আতংকের ছাপ।ব্যথা যেন রাফি নয় নীরা পেয়েছে।
এর মধ্যে শাহেলা বেগম এসে উপস্থিত হলেন।
– কিরে মা রাফির আঙুলে কি হয়েছে?
– আম্মু নীরা….।
– না আন্টি তেমন কিছু না।ওই দরজায় একটু চাপ লেগেছে।[রাফির মুখ চেপে ধরে]
– ওহ্।ছেলেটা হয়েছে।পুরো আকাইম্মার ঢেকি।
– ঠিক বলছেন।আচ্ছা আন্টি ওর ব্রেকফাস্ট কি রেডি?
– হুম।কিচেনেই রাখা আছে।
– ওকে।আপনি গিয়ে একটু রেস্ট নেন।আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার ডায়বেটিস আবার বেড়েছে।
– আর বলোনা।ডাক্তার বলেছে সকালে হাঁটাহাটি করতে।কিন্তু বাপ ছেলের জ্বালায় দম ছাড়ারও সময় পাই না।
– তাই তো দেখি।তাহলে রাফির বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন না কেন?নতুন কেউ আসলে আপনার কাজ সহজ হয়ে যাবে।
– রাফির আব্বুও এই কথা বলছে।কিন্তু এই আহাম্মককে বিয়ে করবে কে?
– নীরা আছে তো।নীরার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দাও।
কথাটা বলে রাফি নিজে থ হয়ে গেলো। এই স্বভাব তাঁর প্রথম না। এর আগেও সময় সুযোগ না বুঝে যা তা বলে ফেলেছে।
এদিকে নীরা রেগে লাল হয়ে আছে।
শাহেলা বেগম হতভম্ব হয়ে নীরার দিকে তাকিয়ে বললেন;
– তুমি কিছু মনে করোনা মা। রাফিকে তো চেনোই।
– আচ্ছা বাদ দেন আন্টি।আপনি ঠিকই বলেছেন ও আসলেই একটা আহম্মক। ওর দ্বারা গুছিয়ে বলা সম্ভব না। আসলে আমি আর রাফি দুজন দুজনকে পছন্দ করি। তাই আপনি যদি একটু….।
শাহেলা বাগম আরও হতভম্ব হয়ে বললেন;
– আহম্মকটার জন্য আমরাও তোমাকে পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু তুমি কি ভাবো না ভাবো তাই আর বলা হয়নি। এখন যখন সব ঠিকঠাক আছে তাহলে আর দেরি করে কি হবে। আমি আজকেই সবার সাথে কথা বলে দেখতেছি। কিন্তু মা একটা সত্যি কথা বলোতো, এই আহম্মককে তুমি কি দেখে পছন্দ করলা?
– হি হি হি। সবাই বলে না আমি আর আপনি এক। তাই আপনিও যেমন আহম্মকটাকে কোন কারণ ছাড়া পছন্দ করেন আমিও তেমন কোন কারণ ছাড়াই পছন্দ করি।
নীরার জবাবে শাহেলা বেগম খুশি মনে কিচেনে চলে গেলেন। এদিকে রাফি রেগেমেগে বসে আছে।
মানুষ গুলা কি নির্বোধ। সাধাসিধা এবং আহম্মকের মধ্যে কোন তফাৎ বুঝে না।