:মিনু,বলো তো আমাদের বিয়ের বয়স কত হল?
:এই তো তিন বছর হতে চললো।
:তুমি কি জানো আমার বয়স কত?
:সার্টিফিকেট এইজ ৩২
:আমার রিয়েল এইজ ৩৭
:হঠাৎ বয়সের কথা বলছো কেন?
:এই ৩৭ বছর ধরে আমি আমার বাবা মা কে দেখছি,তারা কেমন তা তোমার চেয়ে আমি অনেক ভাল জানি।এখন তাদের বিরুদ্ধে তোমার বলা এই বিবাহিত জীবনের তিন বছরের কথা বিশ্বাস করবো নাকি আমার ৩৭বছরে দেখা বাস্তব চিত্রটাকে বিশ্বাস করবো?
:আমি তো জানি তুমি আমাকে ভালবাস না।তারা আমার সাথে কি খারাপ ব্যবহার করে এ কারনে তুমি তা বিশ্বাস করতে চাও না।আমার পোঁড়া কপাল তাই এমন একটা সংসারে এসে পড়েছি!
:কথা ঘোরাবে না।তোমাকে ভালবাসার সাথে এটার সম্পর্ক কি?তাদের স্থান সবার উপরে তারপর বাকি সবার স্থান।
:আমি বাকি সবার মত?এই ছিল আমার কপালে!
:সব কিছুতে এত প্যাঁচ দাও কেন?অদ্ভুত নারী চরিত্র!!!
:খবরদার চরিত্র নিয়ে কথা বলবা না চোর কোথাকার!
:কি!!আমি চোর??ওই তোমার কি চুরি করছি বল?
:কেন মনে নেই কালকে যে বাবুর গুঁড়া দুধের কৌটা থেকে দুধ চুরি করে চিনি মিশিয়ে খেয়েছো বাথরুমে গিয়ে? ভেবেছো বুঝবো না তাইনা?ফ্লোরে চিনি ফেলা দেখেই বুঝে ফেলেছি।
:(থতমত খেয়ে)তাতে কি?আমি কিনে দিয়েছি আমি খেয়েছি তো কি হয়েছে?
:চুরি করে খেলে কেন?দুধ,চিনি শেষ হলে তো তখন আবার বল, মিনু এত তাড়াতাড়ি কিভাবে শেষ হল?এই না সেদিন এনেছি।আর কটাদিন বেশি চালাতে পারলে না?দজ্জাল মায়ের চোর ছেলে কোথাকার..
:এই এই মুখ সাবধান করো বলে দিলাম।আমার মা দজ্জাল হলে তোমার মা হল বিশ্ব কূটনী।মেয়ের সংসারে নাক গলিয়ে খালি কূট বুদ্ধি প্রদান করেন।এ জন্যই মামা কে বলেছিলাম ১০০ বার করে,”মামা,মেয়ে দেখার দরকার নাই,মেয়ের মা কে ভাল করে দেখেন।মা ভাল হলে মেয়ে অটো ভাল হবে সমস্যা নাই।”কিন্তু মামা তোমার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে তোমার মা কে দেখতে ভুলে গেছেন।তার জন্যই এখন এই অবস্থা!
:এই এই খবরদার আমার মা কে কূটনী বলবা না।তোমার মা যে কত ভাল তা তো দেখছি।সব কাজে ভুল ধরেন আর কথা শোনান।
:বাহ্ রে!ভুল করলে ভুল ধরবেন না?বলি এত ভুল করো কেন হ্যাঁ?কাজটাজ কি তোমার মায়ের কাছ থেকে কিছু সঠিকভাবে শেখনি?ভাত রাঁধতে গেলে জাও বানিয়ে ফেল,তরকারী রাঁধতে গেলে পুঁড়ে ছাই,আর বাথরুমে গেলে তো সারাদিন শেষ।বলি পাঁচ-ছয় ঘন্টা বাথরুমে কাজের ভয়ে বসে থাকলে মা কি তোমাকে বকা না দিয়ে চুমু দেবে নাকি হুম।নিশ্চিত এ সব বুদ্ধি তুমি তোমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছো যাতে তোমার কাজ করতে না হয়।
:চুপ করো বলে দিলাম।আমার মায়ের নামে আর কোন বাজে কথা বলবানা।
:ঠিক আছে বলবো না।তোমাকেও তবে আমার বাবা মা সম্পর্কে বাজে বকা বন্ধ করতে হবে।আমার বাবা মা এক কোটি অন্যায় করলেও তারা আমার বাবা মা।তারা ছোট বেলায় আমাদের সহস্র কোটি অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে আমাদের বুকে আগলে রেখেছেন তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা আমার কাছে বলবে না।পারলে সেবা করবে তোমার বাবা মায়ের মত না পারলে চুপ থাকবে কিন্তু কোন কূটনৈতিক কথা দিয়ে আমার হৃদয়ে তাদের প্রতি বিরূপ ভাব আনতে চেষ্টা করবা না বলে দিলাম কূটনী কোথাকার।
:তুমি আমাকে কূটনী বললা?হায় হায় রে!তোমার চেয়ে আমার বড় দুলাভাই আক্কাস অনেক ভাল।আপার প্রত্যকটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।আপা কত সুখি!দুলাভাই তারে কত ভালবাসে!
:থাম থাম,ওইটা কোন পুরুষ হইলো নাকি?মেরুদন্ডহীন একটা কাপুরুষ তিনি।তা না হলে বউয়ের কথায় বাবা মা ভাই বোন সবাই কে ছেড়ে আলাদা থাকে নাকি?বউ কে নিয়ে ব্যাটা প্রতি সপ্তাহে স্টার সিনেপ্লাক্সে ছবি দেখে আর বাবা মা টাকা চাইলে বলে নাই।হারামি একটা!
:এই তুমি আমার দুলাভাইকে বকা দিস?(জোরে জোরে কান্না শুরু)
রিয়াদ বউয়ের কান্না দেখে উল্টো ভাব দেখিয়ে ছাদে চলে এল।সে জানে তার বউ এখন তার শাশুরিকে ফোন দেবে এবং পরবর্তী কি করণীয় সে সম্পর্কে জানতে চাইবে।কথাগুলো মিস করলে চলবে না।বউ বুঁনো ওল হলে সে বাঘা তেঁতুল। তাই সে ছাদ থেকে নেমে একতলা বাসার নিচতলার পাশের বাগানে গিয়ে তার রুমের জানালার কাছে কান পেতে রইল। রুমের ভেতর মিনু….
:আম্মু কেমন ছেলের সাথে বিয়ে দিলে কোন ভাবে বশ করতে পারছি না।কি করবো বল এখন?
:শোন মিনু, রাতে ওর সাথে এক বিছানায় থাকা বন্ধ করে দে।কথা বলিস না কিছুদিন।দেখবি সোজা হয়ে গেছে।ছেলে মানুষ বুঝলি, ছেলে মানুষ এভাবেই কব্জা করতে হয়।
:আচ্ছা মা,আসি কথা বন্ধ করে দেব আর বিছানায় এক সাথে থাকবো না।এখন রাখি,চোরটা সব শুনে ফেললে বিপদ!
জানালার ওপাশ থেকে রিয়াদ মনে মনে বলল,আচ্ছা তাহলে এই কলা শিখালেন শাশুরি।শাশুরির ষোল কলাকে আঠারো কলা করে যদি আমি রিটার্ন না দেই তবে আর কিসের জামাই!আমি আক্কাস না আমি রিয়াদ এটা তারে এবার বুঝাবো। রুমে ঢুকেই রিয়াদ বউয়ের সাথে কোন কথা না বলে বিছানা থেকে বালিস নিয়ে আর একটা শীতল পাটি নিয়ে রিয়াদ ছাদের উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।মিনু অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,কই যাও?রিয়াদ কথা না বলে চুপচাপ বেড়িয়ে আসল।মিনু আবার তার মা কে ফোন দিল..
:আম্মু,ঘটনা তো উল্টা হল?ও তো রুম ছেড়ে কোথায় যেন চলে গেল।কোন কথাও বললো না।
:একটা কাজ কর,রাগ দেখিয়ে বাসায় চলে আয় বাবুকে নিয়ে।দেখবি দু দিন পর ঠিকই ছেলের মায়ায় তোর পায়ে এসে পড়েছে।
মায়ের বাধ্যগত মিনু শাশুরির সাথে রাগ দেখিয়ে রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে ছেলেকে নিয়ে রিকসায় করে বাবার বাড়ি চলে এল।বাসা কাছে হওয়ায় মিনিট দশের মধ্যেই পৌঁছে গেল।এদিকে রিয়াদ মায়ের মুখে শুনলো মিনু চলে গেছে।সে তার মা কে সান্তনা দিয়ে বলল সব ঠিক হয়ে যাবে।মা যেন কোন চিন্তা না করেন। দিন যায়,মাস যায় রিয়াদ বউয়ের কোন খবর নেয় না।বুকে পাথর চেপে ছেলের মুখটা ভুলে থাকার চেষ্টা করতে লাগল।দু মাস এহেন পরিস্হিতি দেখে মিনুর বাপ তাদের বাসায় আসলেন একদিন।
:বাবা রিয়াদ তোমার আর মিনুর মাঝে যা হয়েছে সব ভুলে যাও।আমি মিনুর হয়ে ক্ষমা চাচ্ছি।ওকে তুমি নিয়ে আসো প্লিজ।
:ছি ছি বাবা আপনি কেন মাফ চাইবেন?আপনি তো কোন অন্যায় করেননি।তবে আমি আপনার অনুরোধ রাখতে পারবো না।মিনু একা একা যেহেতু চলে গেছে তাই তার একা একাই ফিরে আসতে হবে।আমি আনতে যেতে পারবো না।
শশুর জামাইয়ের কথা শুনে প্রয়োজনীয় খোঁজ খবর নিয়ে বাসায় চলে গেলেন এবং বউ আর মেয়েকে রাগারাগি করলেন তাদের কৃতকর্মের জন্য।তবুও মিনু মায়ের কথা মত ইগো নিয়ে বসে রইল ফিরে গেল না। এদিকে মিনুর এক বান্ধবী এসে একদিন জানালো রিয়াদ আগামী শুক্রবার বিয়ে করতে যাচ্ছে।মিনুর কথাটা শুনে কান্না পেল।একটি ছেলে কিভাবে তার বউ বাচ্চাকে এতদিন না দেখে থাকতে পারে?এই কয়টা মাসেই সে তার বিয়ের পর ভালবাসার যে নিবীড় বন্ধন তাদের মধ্যে ছিল তা কিভাবে ভুলে গেল?নিজের বাচ্চাটাকেও একটিবার না দেখে কেমন করে থাকতে পারলো? প্রশ্নগুলো তার রিয়াদ কে জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন।তাই সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সব দিধা ভুলে ফোন দিল মিনু তার সব প্রশ্নগুলো একনাগারে করে কাঁদতে লাগল। রিয়াদ তাকে বলল,বিয়ের পর মাত্র ৩ বছরের ভালবাসার জন্য বাবা মায়ের দেয়া ৩৭ বছরের ভালবাসা তুমি কেন তবে আমায় ভুলতে বলো মিনু?
এ কয়েক মাসের মধ্যে তোমাদের না দেখে যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি তেমন কষ্ট তো আমার বাবা মা ও আমি আলাদা হয়ে গেলে পাবেন।তারা বছরের পর বছর আমায় না দেখে, কাছে না পেয়ে কত কষ্ট পাবেন একটু ভাবো।আমার সন্তানের জন্য আমার যতটা কষ্ট হচ্ছে আমার জন্য আমার বাবা মায়ের এতটা কষ্ট হবে।আমি আমার সব কুরবানি দিতে পারবো কিন্তু তাদের কষ্ট দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় মিনু।তোমাকে ভালবাসি তবে তোমার অন্যায়টাকে নয়।খুব কষ্ট হচ্ছে তোমায় ছাড়া,তোমাদের ছাড়া মিনু,প্লিজ অন্যায়গুলোকে ডাস্টবিনে ফেলে বিবেকটা জাগ্রত করো,ফিরে এসো আমার কাছে,বুকের মাঝে। মিনু মন্ত্রমুগ্ধের মত রিয়াদের সব কথা শুনলো,তার বিবেকের ঘরটা যেন হঠাৎ করে কেঁপে উঠল,নড়ে উঠল।সে আর কোন কথা না বলে বাবুকে কোলে নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।তার মা তাকে আটকাতে চাইলো কিন্তু সে বলল,
“মা আমি আমার ভালো বুঝতে শিখে গেছি,আমাকে আর কিছু বোঝাতে হবে না মা।তুমি ভাল থেকো তোমার স্বামীকে নিয়ে,আমিও আমার স্বামীর কাছে ফিরে গেলাম। ভালবাসার মাঝে আর ইগো কে বাঁধা হতে দেব না।যাকে ভালবাসি,তার সব ভালবাসার জিনিসগুলোকেও প্রানের চেয়ে বেশি ভালবাসবো এখন থেকে।বিদায়। মেয়ের চলে যাওয়ার পথে মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।