স্বামীর আত্মহত্যা

স্বামীর আত্মহত্যা

হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বুক চিড়ে বের হলো একটা দীর্ঘশ্বাস। ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে ভাবছি আমার অতীত।
আমি কে, কী ছিলাম এসব নাহ্‌।
ভাবছি আমি কী করেছিলাম।
ওর সাথে, নিজের পরিবারের সাথে।
আমার কিছুই মনে ছিলো না। ডায়রীটা পড়ার পর মাথাটা ঘুরে যায় আমার।

এটা আমি ছিলাম?
আমার সৎ মা হলেও আমি তাদের ভালোবাসতাম বলেই জানি। আর আমিই কি না…
এতোটা অমানুষ কী করে হতে পারলাম আমি?
আমার শাস্তি প্রাপ্য!
কঠিন শাস্তি…

***
ছাদ এর কিনার থেকে লাফ দেয়া পর্যন্ত মেয়েটার স্বামী অপেক্ষা করলো। মেয়েটা নিচে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ওর মনটা নেচে উঠলো আনন্দে।
যাক!
১০০ একর জমির উপর জমিদারী বাড়িটার আইনত মালিক আজ থেকে সে। আর কী চাই?
এখন শুধু নিজের শোকটা তুলে ধরতে হবে। সেটা কোনো ব্যাপারই না! ভাগ্য ভালো মেয়েটার স্মৃতিভ্রষ্ট রোগটা হয়েছিলো। এক্সিডেন্ট না মরলেও এতো সুন্দর সমস্যা মেয়েটাকে উপহার দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান লাগছে আজ তার।
ডায়রীতে নিজের পরিবার মারার মিথ্যে বর্ণনা পড়ে মেয়েটা নিজেকে শেষ করলো।

এখন ডায়রীটা সরাতে হবে।
পুলিশের হাতে পড়লে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে যাবে। সাধারণ এক্সিডেন্টকে খুনের কাহিনী বানানো কম কৃতিত্বের নয়। যা মেয়েটার স্বামী পেরেছে।

ডায়রীটা হাতে নিয়ে একবার পুরোটা উল্টালো। এক কাপ কফি নিয়ে ডায়রীটা পুরোটা পড়বে আবার সে। নিজের লেখা গল্প পড়ে শেষবারের মতো পৈশাচিক আনন্দ ভোগ করবে।

কফির মগটা হাতে নিয়ে একটানে পুরোটা শেষ করলো সে। বউটা পাশের বাসা আর ওদের বাসার মাঝামাঝি পড়ে আছে। থাকুক…
সবাই জানে সে বাসায় নেই। নাটক শুরু হবে রাতের পর।
ডায়রী পড়া শেষের দিকে। হঠাৎ একটা লাইন পড়ে হাতের কফির মগটা পড়ে গেলো তার।
বুক জ্বলছে। একটু একটু করে বাড়ছে।
ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো মেয়েটার লোভী স্বামী।
একটূ দূরেই পড়ে আছে ডায়রীটা। মাঝ পৃষ্ঠা খোলা তার। তাতে গোটা অক্ষরে লেখা আছে…

“কফি আর চিনি দুটোই তোমার জন্য।
এসো প্রিয়, আমি ওপারে অপেক্ষায় আছি।”

সর্বশেষঃ নিউজ হেডলাইন…
“ঘাতক স্ত্রীকে হত্যা করে স্বামীর আত্মহত্যা।”

——-সমাপ্ত——–

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত