শুনেছি বিয়ে করার পর না কি বউ জীবনের ১২টা বাজিয়ে দেয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। আমার জীবনের ১২টা আমার শ্বশুর বাজিয়ে দিচ্ছে। যার জন্য এখন আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি। সেদিন এক অনুষ্ঠানে আমার বন্ধুদের সাথে যখন আমার শ্বশুরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম তখন শ্বশুর আমার বন্ধুদের দেখে বললো,
~ তোরা তো ফকির। ছোটলোক কোথাকার। শ্বশুরের মুখে হঠাৎ করে এইসব কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। আমি আমার শ্বশুরকে বললাম,
— বাবা ওরা আমার বন্ধু। কিন্তু শ্বশুর মশাই তার উত্তরে আমায় বলবো,
~চুপ থাক বেয়াদব। তুই তো গরীব।
কি বলবো তখন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বন্ধুরা তখন আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলো, প্রেম করে বড়লোক বাড়িতে বিয়ে করলে যা হয় আর কি। তার কয়েকদিন পর অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি শ্বশুর মশাই বাবার সাথে সোফায় বসে হেসে হেসে বলছে, জানেন বেয়াই সাহেব আমার কোন দূর্বলতা নেই। শুধু একটাই দূর্বলতা তা হলো কচি কচি সুন্দরী তরুণী। কথাটা শোনার পর বাবা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি এতটাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম যে সেখান থেকে পালাবার পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এ আমি কি করলাম।প্রেম করে বিয়ে করে কোন শ্বশুরের খপ্পরে পড়লাম। রাত ১২ টার দিকে শ্বাশুড়ি আমায় ফোন দিয়ে বললেন আমি যেন তাড়াতাড়ি তাদের বাসায় আসি।আর একা যেন আসি। বাসায় গিয়ে দেখি শ্বাশুড়ি সোফায় বসে একা একা কাঁদছে। আমি শ্বাশুড়িকে গিয়ে বললাম,
— মা সব কিছু ঠিক আছে? বাবার কিছু হয় নি তো।
– কিছুই ঠিক নেই বাবা। লজ্জার কথা কি বলবো। তোমার শ্বশুর একটা মদের বোতল নিয়ে এসে আমায় বলে, মদ খা। মদ না খেলে তোর বুদ্ধি খুলবে না। বাবা তোমার শ্বশুর তো এমন ছিলো না কিন্তু এখন এমন করছে কেন?
— কেন এমন করছে মা আমিও বুঝতে পারছি না। তবে আপনি চিন্তা করবেন না আমার একটা বন্ধু আছে ডাক্তার আমি ওর সাথে কথা বলছি। তারপরের দিন আমি যখন আমার বন্ধুকে সব কিছু খুলে বলি তখন আমার বন্ধু হাসতে হাসতে আমায় বলবো,
~আরে তোর শ্বশুর তো সেফুদার খুব বড় ভক্ত।
–সেফুদাটা আবার কে?
~আর বলিস না এই সেফুদার জন্য ফেইসবুক আজ বিস্বাদময়। এই সেফুদা ফেইসবুকে এসে পোলাপান কে বলে মদ খেতে আর গালিগালাজ করে। তুই যেহেতু ফেইসবুক চালাস না তুই বুঝবি না। আমি অবাক হয়ে বন্ধুটাকে বললাম,
— তাহলে এইসব থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়।
~উপায় একটাই তুই তোর শ্বশুরের কাছ থেকে স্মার্টফোনটা কেড়ে নে আর বাসার নেট কানেকশনটা বন্ধ করে দে।
বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন বাসায় ফিরছি তখন দেখি রাস্তার মাঝে অনেক বড় ভিড়। গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখি শ্বশুর মশাই একটা টুলের উপর দাঁড়িয়ে মদের বোতল হাতে নিয়ে বলছে,
মদ খা খা*** পুলারা। মদ না খেলে তোদের বুদ্ধি খুলবে না। আর কতকাল তোরা ঘুমিয়ে থাকবি। ঘুম থেকে উঠ। দেখ দেশের আজ কি অবস্থা৷ আরো অনেক সরকার বিরোধী কথা বলছে আর খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করছে। এইসব কথা শুনে একদম হাততালি দিচ্ছে আর আরেকদল ক্ষেপে গেছে। পরবর্তী পর্যায়ে ২ দলের মাঝে মারামারি শুরু হয়ে গেল। আমি অবস্থা খারাপ দেখে কোন রকমে শ্বশুরকে নিয়ে পালিয়ে বাসায় ফিরলাম।
রাতে খাওয়ার পর আমি আর শ্বশুর মশাই বসে বসে টিভি দেখছি। এমন সময় একটা নিউজ দেখে চোখটা আটকে গেল, “আজ বিকাল ৫ টার দিকে চৌরাস্তার মোড়ে এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন হয়। নাম না জানা একজন ব্যক্তি মদের বোতল হাতে নিয়ে জনগণের মাঝে বক্তব্য দেন।বিরোধী দল বলছে এই বক্তব্য শুনে না কি জনগণের ঘুম ভেঙে গেছে । সরকারের ভিত নড়ে গেছে। আর সরকারি দলীয় লোক বলছে এটা না কি বিরোধী দলের চক্রান্ত। এইলোককে অচিরেই খুঁজে বের করে চৌদ্দগুষ্টি সহ শাস্তি দেওয়া হবে। খবরটা শোনার পর ভয়ে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল।আমি টিভিটা বন্ধ করে দিলাম। শ্বশুরের দিকে তাকাতেই শ্বশুর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
~কি হিংসা হয় আমাকে দেখে? আমার মত হতে চাও সেলিব্রিটি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কি জিনিস শিখালে সেফুদা এখন আমার জীবন নিয়ে টানাটানি.