“আজ দুপুরে আমার বাসায়,আমার সাথে লাঞ্চ করতে পারবে?” ফোনে কথা চলাকালীন সময়ে এক পর্যায়ে সুমন তার গার্লফ্রেন্ড নিপাকে একসাথে লাঞ্চ করার ইনভাইট করে। নিপা ও তেমন কিছু না বলে এক কথায় রাজি হয়ে যায়। কারণ, নিপা অনেকবার সুমনের বাসায় গিয়েছে। সুমন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের শেষ পর্যায়ে প্রায়, আর নিপা ফার্স্ট ইয়ার।
দুজনের রিলেশন প্রায় চার বছর ধরে। দুজন-দুজনকে খুব ভালোবাসে,সাথে অনেক বিশ্বাস ও করে। যার জন্যে এই চারবছরে তাদের মধ্যে একবার ও ব্রেকাপ হয়নি। লেখাপড়ার সুবিধার জন্য ভার্সিটির পাশের একটি বাসার ছোট রুমে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকে সুমন। আর নিপার বাসা ভার্সিটি থেকে বেশী দূরে নয়। দুজন একসাথে বসে খুব দুষ্টুমির মাধ্যমেই খাওয়ার পাল্লা টা শেষ করে। তন্মধ্যে একজন-আরেকজনকে খাইয়ে দেয়া তো আছেই।” নিপা তুমি রুমে গিয়ে বসো, আমি তোমার পছন্দের ব্ল্যাক কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি। ” সুমনের কথার সাথে নিপা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। কারণ, ব্ল্যাক কফি আসলেই নিপার খুব পছন্দের।
নিপা কফি পান করছে, আর সুমন এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে নিপার কফি পান করা দেখছে। এমনটা মনে হচ্ছে যেন, এটাই সুমনের নিত্যদিনের কাজ। কফি অর্ধেক শেষ হতে না হতেই নিপার মাথা ঘুরছে। সারা রাজ্যের ঘুম যেন ওর চোখে এসে ভড় করতেছে। মাথাটা যেন খুব ভারী হয়ে যাচ্ছে। নিপার এমন অবস্থা দেখে সুমন মুচকি হাসছে আর ভাবছে, “যাক ঔষধে কাজ করেছে”। নিপার এই অবস্থায় ও সুমনের হাসি টা লক্ষ করতে পারছে। নিপা ভাবছে, ” পাজিটা কফির সাথে নিশ্চই কিছু মিশিয়ে দিয়েছে, আর এখন হাসছে। খারাপ কিছু করবে না তো!”।
নিপার খুব ঘুম পাচ্ছে। কারণ, সুমন নিপাকে তার পছন্দের ব্ল্যাক কফির সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাইয়েছে। নিপা চেয়ার থেকে পড়ে যাবে পড়ে যাবে অবস্থা, তখনি সুমন ওকে ধরে ফেলে। নিপা তার চোখ গুলো খোলা রাখার চেষ্টা করে,কিন্তু কোনো কিছুতেই পারছে না। নিপা ভাবছে, “সুমন বুঝি তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করলো!”। নিপা খাঁটে শুয়ে অকাতরে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সুমন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিপার দিকে। সুমনের বন্ধুরা চারপাশে হাটাহাটি করছে। ফ্লোরে জুতা-সহ হাটার ফলে শুধুমাত্র ঠক ঠক আওয়াজ হচ্ছে। আর এই আওয়াজ ই সারা ঘর কে মাতিয়ে রেখেছে।
সুমন নিপার ঘাড়ের অংশে হাত দিলো এবং আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো নিপার দিকে। ধীরেধীরে সন্ধ্যা হতে লাগলো। সুমন আর তার বন্ধুরা অপেক্ষা করতে লাগলো সেই শুভক্ষণের। নিপা ঘুম থেকে উঠা মাত্র ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলো। নিপা ভাবছে, “তার পবিত্র ভালোবাসার মধ্যে অপবিত্রতার প্রবেশ করিয়ে দিলো শুভ!”। রুম টা খুব অন্ধকার। এতোটাই অন্ধকার যে, নিপা খাট থেকে নামতে ও ভয় পাচ্ছে। নিপা তার মোবাইল টা ও খুজে পাচ্ছে না। হয়তো সুমন নিয়ে গেছে মোবাইল টা। সারা রুমের মধ্যে অদ্ভুত একরকম ঘ্রাণ পাচ্ছে নিপা। হয়তো হাজারো রকমের স্প্রে সাথে হয়তো অন্য কিছু।
নিপা অন্ধকারের মধ্যেই খাট থেকে নেমে গুটি-গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেয়ালের দিকে। তার ইচ্ছে, দরজাটা খুজে বের করা। দেয়ালে হাত দিতেই নিপার হাতে কি যেন বিধে যায়। নিপার হাত দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। তবে কি যেন অদ্ভুত জিনিসে লেগে ওর হাতটা কেটে গেল, সেটা কিন্তু নিপার চেনা-চেনা লাগছে। কিন্তু আবারো হাত কাটার ভয়ে দেয়ালের দিকে হাত দেয়ার সাহস হচ্ছেনা নিপার। নিপা খাটে বসে আছে। আর ভাবছে, এখন অন্ধকার তো কি হয়েছে? সকাল তো হবেই। তখন রুম থেকে বের হতে পারবে। কিন্তু এখন কয়টা বাজে তা অবশ্য সে জানে না। তবুও সকাল হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে সে।
সুমনের এরকম প্রতারণা করার কথা নিপার মাথায় আসতেই আবারো কান্না শুরু করে নিপা। নিপা অঝোর ধারায় কান্না করেই যাচ্ছে। পরিবারের কথা মনে হতেই কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় নিপা। আর ভাবছে, সুমন আবারো এসে খারাপ কিছু করবে না তো? এতক্ষণে সুমনকে নিপা খুব খারাপ শ্রেনীর মানুষ ভেবে নিয়েছে। নিপা কান্না করছে। হঠাৎ এক শব্দ হওয়ার কারণে ভয়ে চুপসে যায় সে। নিপা ভয়ে ভয়ে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। কিন্তু অন্ধকার হওয়ার ফলে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। আর বুঝতে ও পারছে না এটা কিসের আওয়ার ছিল। হঠাৎ, রুমের অন্ধকার কে পিছনে ফেলে সারা রুমে লাইটে আলো ছড়িয়ে পড়ে । আর কয়েকটি সবল কন্ঠ বলে উঠে, “হ্যাপি বার্থডে, হ্যাপি বার্থডে”।
নিপা তাকিয়ে দেখে সুমন ও তার বন্ধুরা এসব বলছে।আর হাসছে। সাথে নিপার ক্লোজ ফ্রেন্ড সাদিয়া ও আছে। নিপা এবার দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে ঠিক বারোটা বাজে। নিপার মনে পড়েছে, আজ যে নিপার জন্মদিন! নিপা অবাক হয়ে সারা রুম টা এবার লক্ষ করলো। সারা রুমের দেয়াল সাদা ট্যাপ দিয়ে লাল গোলাপ লাগানো। সে বুঝতে পারলো, গোলাপের কাটাতেই তার হাত কেটেছিল। টেবিলের দিকে তাকাতেই সে আরো অবাক, টেবিলে একটি ইয়া বড় বার্থডে কেক রাখা। নিপা রাগান্বিত ভাব নিয়ে সুমনের দিকে তাকাচ্ছে আর সুমন তা দেখে মুচকি হাসছে।
“নিপা তোর গলায় এটা কি রে?” নিপার বান্ধবী সাদিয়া এটা বলতেই নিপা ভয়ে ভয়ে ওর গলার দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে একটা লকেট। গোল্ড এর লকেট। “এটাই তোমার জন্মদিনের গিফট। ” লকেটের দিকে তাকাতেই সুমন নিপাকে উদ্দেশ্য করে বলে। নিপা কেক কাটে আর সবাই বলে উঠে, “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ নিপা”। অনেক মজা করে কিছুক্ষণ। হঠাৎ নিপা বলে উঠে, “আমি বাসায় গিয়ে আব্বু-আম্মুকে কি বলবো? বলেই একধরণের পায়চারি শুরু করে। তখন সাদিয়া বলে উঠে,”আমি সব ম্যানেজ করে নিয়েছি।” সারা রাত সবাই মিলে অনেক আড্ডা দেয়। সুমনের প্রতি নিপার ভুল ধারণা টা ও দূরে সরে যায়। সকাল হতেই সুমন নিপাকে তার বাসার দিকে এগিয়ে দিয়ে আসছে। সুমন বলে উঠে, “উপহার টা তোমার পছন্দ হয়নি?”।
– নাহ, একদম পছন্দ হয়নি। (নিপা)
– কেন? কেন পছন্দ হয়নি?
– কারণ, তোমার দেখানো ভয়টাই আমার বেশী পছন্দ হয়েছে।
– হিহিহি।
সুমন হাটতে হাটতে কিছুক্ষণ হাসে। তারপর দুজন দুজনকে বিদায় দিয়ে চলে যায় যার যার গন্তব্যে। বাসায় নিপা একা একা বসে আছে আর ভাবছে, সুমনকে ও এরকম একটা ভয় দেখাতে হবে। এসব ভেবে হাসতে হাসতে লকেটের দিকে তাকায় নিপা। লকেটের সাথে গাথা গোল জিনিসটা খুলতেই অবাক হয়ে যায় নিপা। সেখানে যে নিপা আর সুমন দুজনেরি ছবি আছে। সুমনের পাগলামি দেখে নিপা আবারো হাসতে থাকে তখনি দরজার ওপাশ থেকে শোনা যায়, কিরে নিপা হাসছিস কেন? নিপা ভয়ে চুপ হয়ে যায় আর বলে উঠে, কিছুনা মা।