আমি বরাবরি প্রচন্ড রকমের ঘুমকাতরে যাকে বলা হয় তন্দ্রাবিলাসিতা। তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকলে দুনিয়া উল্টে গেলেও আমার খবর থাকেনা। কিন্তু সাধের সেই ঘুম ভাঙানোর জন্যই বোধহয়; এই সকাল সকাল টুনটুন করে ফোনকলটা বেজে উঠলো।
ঘুমঘুম চোখে ফোন রিসিভ করে বললাম, “হ্যালো,হু হু!” ওপাশ থেকে রাসেল একনাগাড়েে বলে চললো,”ইসরাত!তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও!এখনি! দেরি করোনা!নাহলে সমস্যা হবে। তাড়াতাড়ি! আর শোনো ঘুম টুমের দোহাই যেন না শুনি হুম।”আমি ঘুমে মজে যাওয়াতে তেমন পাত্তা দেইনি ওর কথাটাকে। বললাম,”হু আসছি।” বলেই কলটা কেটে দিলাম। কোথায় যাবো!কেনো যাবো! কিছুই জিগেস করিনি। ফোন রেখে আবার দে ঘুম! বিকেল ৪টা। ঘুম থেকে উঠে চোখ কপালে। ৩৪ মিসড কল! মনে পড়লো রাসেল সকালে ফোন করে বলেছিলো বেরুতে।আমি ওর কথা পুরোপুরি না শুনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর ও একের পর এক কল করে গেছে।মনে মনে বললাম,” নে!ইসু!এবার খেলা হবে!রেডি থাক!ফর আপকামিং ধোলাই।”
ভয়ে ভয়ে কল দিলাম। নাহ্!ওপাশ থেকে কোনো পাত্তাই নেই। সারাদিন গেলো ওর আর কোনো খোজ নেই। আমিও কাজ না পেয়ে আবার ঘুম দিলাম এক চোট। পরদিন সকালবেলা কল দিলাম। ফোন রিসিভ করতেই বললাম,”হ্যালো! শুনছো!আমিনা সরি!ঘুমে ছিলাম বলে কাল আসতে পারিনি। আর তুমি কাল সারাদিনে একটা খোজ ও নেওনি। এবার বলোতো কেনো যেতে বলছিলে? কোথায় যেতে বলছিলে?” ও কড়া গলায় বললো,”ঘুমাও তুমি! জানতে হবেনা! আর আগামী সাতদিনেও আমাকে কল দিবেনা।” আমি কিছু বলার আগেই লাইন কেটে গেলো। যাক বাবা!মহা মুশকিল! এ রাগ কেমনে ভাঙাই! আর ফোন দিতে না যেহেতু করছে তো ফোন দেওয়াই যাবেনা নাহলে মরার উপর খাড়ার ঘা পড়বে। আমি বরং ঘুমাই।
বিকেলবেলা আবার কল এলো। এবার ঘুমে থাকলেও রাসেলের কল মনে করে লাফ দিয়ে উঠে কল ধরলাম। কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়া ওপাশ থেকে বান্ধবী রিয়া বলে উঠলো!,”কিরে!ইসু! ঘুমাস নাকি!” আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,”হু!ঘুমাইতো! ঘুমে ঘুমে হেটে তোর সাথে কথা বলতেছি। এখন বল কল কেনো দিলি হঠাৎ! আবার কোথায় ঘুরতে যেতে হবে !তোদের তো এছাড় কোনো কথাই নেই।” ও হেসে বললো,”হুম ঘুমরানী!আমরা কাল চাদঁপুর বিজয় মেলায় যাবো ঘুরতে। আপনিও আসেন।” আমি দেখছি বলে ফোন রেখে দিলাম। আচ্ছা যাবো!কিন্তু রাসেলের কোনো খবর নেই। আমার এখন ডেংডেং করে ঘুরে বেড়ানো কি উচিত হবে!না না ওতো বলেছে এক সপ্তাহের আগে কথাই হবেনা। যাই,তাহলে বরং ঘুরেই আসি।
পরদিন রিয়া,মিথি,ফারিয়া,প্রভা আর আমি বিজয় মেলায়। মেলার সময় এ জায়গায়টায় প্রচুর কেনাবেচাঁ আর ভীড় লেগে থাকে। প্রায় বড় রকমের একটা উৎসব বললেই চলে। ৫ বান্ধবীর ঘুরাঘুরি শেষ হলে একটা অটো নিলাম বাসায় ফিরবো বলে। ততক্ষনে চারপাশ মোটামোটি অন্ধকার হয়ে গেছে,তবে হালকা আলোও ছিল। যাকে বলে গৌধূলী। অটোতে উঠতেই হঠাৎ রিয়া বলে উঠলো,”এই ইসু!দেখ এখানে কত ছেলেপুলে! আমি বললাম,”তো!” ও বললো,”চল ফ্রাংক করি!” আমি বললাম “মানে! রিয়া বললো,”মেলা থেকে সুন্দর সুন্দর ছেলেগুলো বের হবে। আমরা যাকে দেখবো তাকে টিজ করবো! প্রথম পালা তোর।
আমি ভীত গলায় বললাম,”ছেড়ে দে বোন!কেদেঁ বাচিঁ।এসব আমার দ্বারা হবেনা। ওরা বললো,”না না হবেনা। সবাই মিলে কোথায় মজা করবো আর তুই কিনা! আমি হতাশ হয়ে বললাম ওকে। অটোটা ধীরে ধীরে চলছিল,গৌধূলীর হালকা আলো আধাঁরের খেলায় লম্বা মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে চোখে পড়লো। অমনি অটো থেকে হুমড়ি খেয়ে বললাম,”হায় বেবি!এতো সুন্দর না হলে চলেনা!আমি তো তোমায় দেখে ফিদা হয়ে গেলাম গো! হাত দিয়ে হাই দিতেও ভুললামনা।
বান্ধবীরা সবাই মিলে হোহো করে হেসে দিলো। কিন্তু আমার আবার ঘুম পাচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম ছেলেটা অটোর পিছনে দৌড়ে আসছে। মহা মুশকিল,এবার কি ইভটিজিং কেইসে জড়াবে নাকি!” কিন্তু দৌড়ে কি আর গাড়ির সাথে পারে! আমি বাসায় এসে খেয়ে আবার ঘুম। সকালে উঠে আবারো চোখ কপালে। আজো রাসেলের ১৭টা মিসডকল।আমি ভয়ে ভয়ে ফোন তুলে বললাম,”হ্যালো।” ওপাশ থেকে রাসেল কড়া গলায় বললো,”এখনি বাসা থেকে বের হবে। কোনো এক্সকিউজ দিবেনা। আর না হয় আর কোনোদিন আমাকে কল দিবেনা।”এই শেষ কথা!” আমি পড়িমড়ি করে কোনোমতে তৈরি হয় বের হয়ে গেলাম। আমি আর রাসেল পার্কে মুখোমুখি বসে আছি। রাসেল বললো,”ছি!ইসরাত!তুমি এতোটা নিচে নেমে গেছো! ভাবতেও পারিনি। আমার চক্ষু চড়াকগাছ!
-ওমা! কি বলো এসব!কি করছি!
রাসেল বললো,”আমি তোমাকে সেদিন কল করে আসতে বলেছিলাম। আর তুমি!তুমি কিনা আমার সাথে দেখা করতেই আসোনি। তুমি জানো!বাবা তোমাকে দেখতে চেয়েছিলেন সেদিন। আমি স্বাভাবিক হয়ে বললাম,”ঘুমে ছিলামতো!আর এতে নিচে নামার কি আছে?” ও বললো,”এটা না!তুমি সেদিন বের হওনি। অথচ পরেরদিন বান্ধবীদের নিয়ে রাস্তাঘাটে ছেলেদের টিজ করো!ছি ছি! আমি হতভম্ব। তারমানে সেদিনের ছেলেটা ও ছিলো! আমি এবার হঠাৎ হেসে বললাম,”আরে না বোকা!সেদিন তো তোমাকে অটোর কাছে দেখেই আমি ওসব বলেছি,ওতো লোকের ভীড়েও আমি তোমাকে ঠিক চিনেছি।” রাসেল চোখ তুলে বললো,”তবে গাড়ি থামাওনি কেনো?” আমি নির্লিপ্তভাবে বললাম,”ঘুম পাচ্ছিলো।” ও বললো,”ওহ। একটু পর বললাম,”রাসেল! ও বললো,বলো।
-আমার না ঘুম পাচ্ছে।
ও চটপট রিকশা ডেকে আমায় বাসায় পাঠিয়ে দিলো। পরেরদিন রাসেলের কল।ফোন তুলে বললাম,”বলো” রাসেল বললো,”ইসরাত!আজ তোমাকে বাবা-মা দেখতে আসবে!আর শোনো! তুমি কিন্তু ওনাদের সামনে একদম ঘুমাবেনা হুম।” আমি খুশি হয়ে বললাম,”আরেনা!এখনি চা খাওয়া শুরু করবো।রাখি।” বিকেলবেলা আমি সেজেগুজে ঘোমটা দিয়ে বসে আছি। সামনে রাসেল,ওর বাবা মা আর বন্ধুরা বসে। কেউ একজন বললো “মা!ঘোমটা টা তুলো।”
আমি ঘুমটা তুলে তাকালাম। কিন্তু একি!ঘুমে চোখ ভারী হয়ে আসছে কেনো!না না ইসু!এখন ঘুমালে চলবেনা একদম। বিয়ের বেপারসেপার। রাসেল চোখ কটমট করছে। দু মিনিট পর আমি আর কিছু দেখতে পেলামনা।রাসেলের চেহারাটা দেখতে দেখতে ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। সুখের ঘুমটা সবার সামনেই দিয়ে দিলাম। পরদিন রাসেল ফোন করে আবার কড়া গলায় বললো,”এই!তোমার বিয়ে প্রেম!কিছু করতে হবেনা। তুমি শুধু ঘুমাও হুম।” আমি ওকে বললাম,রাসেল!একটু পরে কল করে ঝগড়া করো হুম। আমি একটু ঘুমাই।” কথাটা শেষ হওয়ার আগেই গাড় ঘুম আবারো আমাকে পেয়ে বসলো।