কোটিটাকার বাস্তবতা

কোটিটাকার বাস্তবতা

রিফাত হন্তদন্ত হয়ে বাবার ঘরে গিয়ে দেখে বাবা পত্রিকা পড়ছে আর চা হাতে নিয়ে বসে আছে । রিফাত রুমে ঢুকেই হড়বড় করে বললো, “আব্বা, এক কোটি টাকা আমার খাটের নিচে রাইখা আইছি !” হুট করেই টাকার কথা শুনে রফিক সাহেব চমকে ওঠে বললেন, “কি কইলি তুই ? কত টাকা ?”

– এক কোটি টাকা আব্বা ! সব এক হাজার টাকার নোট ! রিফাতের কথা শুনে পত্রিকা পড়া বাদ দিয়ে অবাক হয়ে তাকালেন রফিক সাহেব । জীবনে বিশ লক্ষ টাকা এক সাথে দেখেছেন কিনা তার মনে পড়ে না কিন্তু ছেলে বলে, এক কোটি টাকা নাকি তার খাটের নিচে পড়ে আছে !

– এতো টাকা তুই পাইলি কিভাবে ? সত্যি কি পাইছোস ?
– হ‌ আব্বা । একটা লোক আমার কাছে আইসা কইলো, “যদি টাকা পাইতে চাও তাইলে আমার সাথে আসো !”
– এ্যা ? টাকা কি নদীর পঁচা পানি নাকি যে চাইলাম আর পাইলাম ।

– তা জানি না । ওই লোকের কাছে যাইতেই আমি দেখি, চারপাশে বাড়িঘর নাই কোন । খালি বালু আর বালু ! ওই লোক আমারে কইলো, যদি বালু থেকে পানি খুঁইজা দিতে পারি তাইলে এককোটি টাকা দিবো ! এটুকু শোনার পরে রিফাতের বাবা বেজায় চটে গেলেন । দাত মুখ খিচিয়ে বললেন, “তুই কাম করছোস ? তুই নিজের প্লেট নিজে ধুইয়া খাস না আর করবি অন্যের কাম ? আর ওই বেটা তরে কোথায় নিয়া গেলো মুহূর্তের মইধ্যে ? ফাইজলামি মারাস হারামজাদা ? এক কোটি টাকা তোর দাদা-নানার গোষ্ঠীর কেউ দেখছে জীবনে ? রিফাত ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো, “আব্বা ! হইতে পারে যে ওইটা কোন ভালো জ্বীন ছিল । আমাগোর দারিদ্র্যতা দেইখা সাহায্য করতে আসছিলো !”

রিফাতের বাবা আরো ক্ষেপে গেলেন রিফাতের কথা শুনে । কখনো অভাব বুঝতে দেন নাই পরিবারের কাওকেই । আর ছেলে বলছে, দারিদ্র্যতা দেখেই নাকি জ্বীনেরা সাহায্য করেছে ! পারলে তো রিফাতকে তখনই চিবিয়ে খান তিনি। কিন্তু তার মনে তখন টাকার লোভ জন্মে গেছে । অলৌকিকভাবে টাকা আসতেও তো পারে ! এক কোটি টাকার মিথ্যা আশ্বাসকেও ফেলনা হিসেবে নেওয়া যায় না !

– তোরে কিসে চড়াইয়া নিয়া গেছিলো মরুভূমিতে ?
– কিছু দিয়াই না আব্বা । ওই বেটা কি একটা কইয়া চুটকি বাজাইলো আর মরুভূমিতে গেলাম গা !
– তারপরে বালু খুঁড়া শুরু করলি ?
– না না । এতোই সহজে দিবো নাকি ? কইলো এক লাফে ভাঙা পার হইতে হবো । নিচে পড়লেই শেষ ।
– পুল বা ব্রিজ কিছু আছিলো না ?
– না আব্বা । আমি প্রথমবার লাফ দিয়া নিচে পানিতে পইরা গেলাম আর কুমির আইসা আমারে খাইয়া ফালাইলো !

রিফাতের কথা শুনে ওর বাবার চোখ গোল আর বড় হয়ে গেলো । অবাক হয়ে বললো, “কি কইলি ? কুমির তরে খাইলে তুই আবার বাঁইচা ফিরলি কেমুন কইরা ?”

– আরে আব্বা ওইটা তো গেমের মতো আছিলো ! একবার মরছি, আরো দুইটা জীবন আছিলো । পরেরবার এক লাফে পার হইলাম ।
– চুপ চুপ চুপ । হারামজাদা আমারে বেকুব পাইছোস ? মইরা যাওয়ার পর আবার ফিরা আসা যায় নাকি ?
– উহহহহ আব্বা । শুনেন আমার কথা ! তারপর আমি সুপারম্যানের উড়া শুরু করলাম ওই বেটার সাথে সাথে । এক জায়গায় গিয়া সে কইলো বালু থেকে পানি বাইর করতে !
– কিহহহ ? বালুর মধ্যে তুই পানি পাইলি কেবা কইরা ?
– আর কইয়েন না আব্বা । দশ হাত গর্ত করার পরেও দেখি পানি নাই ! তাই আমি বুদ্ধি কইরা গর্তে মুইতা দিছি ! ভেজা বালু দেইখা গাধায় ভাবছে সত্যি সত্যি পানি পাইছি !

রফিক সাহেবের চোখ টাকার লোভে জ্বলজ্বল করতে লাগলো । আগ্রহী সুরে জিজ্ঞেস করলেন, “তারপর তোরে টাকা দিয়া দিলো ?” রিফাতও বিজয়ীর হাসি হেসে বললো, “তয় আর কইতাছি কি ! পুরা এক কোটি টাকা দিছে ! যে ভারী টাকার ব্যাগ ! রিফাতের বাবা তাড়াতাড়ি ওঠেই রিফাতের রুমের দিকে চললেন । বাবার পিছে পিছে রিফাতও গেলো টাকা বের করতে । এতোগুলো টাকা ওর বাবা একা টেনে বের করবে কিভাবে ? তিনটা টর্চ লাইট নিয়ে খাটের নিচে তল্লাশি শুরু হলো । কিন্তু দুইটা মরা তেলাপোকা আর টিকটিকির খসে পড়া লেজ ছাড়া কিছু পাওয়া গেলো না !

আধা ঘন্টা তল্লাশি করার পরেও টাকা না পেয়ে রিফাতের বাবার মাথা গরম হয়ে গেলো । তবুও নিজেকে শান্ত করে রিফাতকে বললেন, “কিরে ! টাকা কোথায় রাখছিলি ?” রিফাত জড়সড় হয়ে বললো, “খাটের নিচেই তো রাখলাম টাকার ব্যাগ ।”

হঠাৎ রিফাতের বাবার নজর গেলো বিছানার তোষকে । এতোক্ষণ খাটের নিচে থাকাতে ওপরেরটা দেখতে পান নি । তোশকের তুলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখে তার মুখ হা হয়ে গেল । কিছুক্ষণ পিন পতন নিস্তব্ধতা বিরাজ করলো ঘরে । তারপর শুরু হলো ঝড় । রফিক সাহেব আহাজারি করে ওঠলেন, “দিছে রে ! আমার তোশকের বারোটা বাজাইয়া দিছে ! এতো দামি তুলা দিয়া তোশক বানাইলাম, আর হারামজাদা স্বপ্নে দেইখা বালুর গর্ত তোশকে করছে !

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত