বিড়াল ভয়ঙ্কর প্রাণী

বিড়াল ভয়ঙ্কর প্রাণী

চৌকির নিচে খটখট, কটমট শব্দ হচ্ছে । সারাদিন বৃষ্টি ছিলো তাই আবহাওয়া মোটামুটি ভালোই ঠান্ডা !! কাথা নিয়ে শুয়েছিলাম । কিন্তু এখন তো ভয়ে ঘেমে একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছি । একমাত্র আল্লাহ মালুম, কোন জাতের জিনিস হান্দাইছে আমার চৌকির তলে !! শোয়ার আগে দরজা জানালা সব আটকে দিছিলাম । হুট করে যে দৌড়ে বের হয়ে যাবো সেই সাহসটাও পাচ্ছি না । যদি পেছন থেকে খাবলা দিয়ে ধরে ? আমি তো ওখানেই মরে যাবো ভয়ে !!

খটখট শব্দটা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে ! মৃত্যুর ভয় কেমন তা হারে হারে টের পাচ্ছি আজ ! বিকালেও সুন্দর ফুটবল খেললাম ! কাল থেকে আর ফুটবল খেলা হবে না । আরে বেঁচে থাকবো কিনা সন্দেহ ! আর ফুটবল খেলা তো অনেক পরের কথা !! কালেমা পড়ছিলাম অনবরত । খুব বেশি ভয়ের কারণে ঠিকমতো পড়তে পারছিলাম না । অর্ধেক পড়ে ভুলে যাচ্ছিলাম ! বেঁচে থাকার আকুতি জানানোর মতো কেউ নেই আশেপাশে । ভয়ে ভয়েই তানহাকে ফোন দিলাম । প্রথম বার রিং হলো কিন্তু ধরলো না !! দ্বিতীয় বার কল রিসিভ করেই ঝাড়ি শুরু করলো,

– এতো রাতে ফোন দিছো কেন ? তুমি জানো না আমি ঘুমাই ?
– আরে ঘুম তো পরেও থাকবে । কিন্তু আমি তো আর থাকবো না ।
– তুই মাল খাইছোস আবার ?
– না মাল খাই নাই ।
– তাইলে ওল্টা পাল্টা কথা বলোস ক‍্যান ?
– আমার খাটের নিচে যেন কি একটা শব্দ করছে ! আমাকে মেরে ফেলবে ওটা ।
– তবে রে হারামি !! এতো রাতে ফোন করে আমার ঘুম ভাঙিয়ে ওল্টা পাল্টা কথা কস ? তাড়াতাড়ি ফোন রাখ । মেজাজ কিন্তু গরম হইতাছে ! তারপর ফোন দিলাম সজলকে ‌। হারামজাদা হয়তো ফেসবুকে ছিল । সাথে সাথেই কল রিসিভ করলো । কান্না কান্না স্বরেই বললাম,

– দোস্ত, আমি আর বাচমু না রে !
– ক‍্যান কি হইছে ? তানহার সাথে ঝামেলা হইছে কি ?
– আরে নাহহহ ! আমার খাটের তলে কি জানি শব্দ করে !
– ওওও । এই কথা ?
– কেমন বন্ধু তুই ? আমার বিপদ শুনেও কোন চিন্তা নাই তোর !
– আমি এতো রাইতে কি করমু ?
– কিছু করতে হবো না তোর । শোন, তোর ট‍্যাকা আমার গিটারের ব‍্যাগে রাখা আছে । নিয়ে রাখিস আর আমার ফেসবুকে পাসওয়ার্ড তোরে টেক্সট করে দিছি । আর তানহারে আমার মরার খবরটা দিয়া দিস ।
– আইচ্ছা দোস্ত । আমি এখন ঘুমামু ।

খটখট আওয়াজ বেড়ে চলেছে । ভয়ে চোখ দিয়া পানি পড়তে পড়তে আমার বালিশ ভিজে গেছে ! কাপা হাতে আম্মার নাম্বার ডায়াল করলাম । আম্মা নিশ্চিত ঘুমাইয়া পড়ছে । রাত ১২ টা বাজে, ঘুমানোরই কথা ! কিন্তু আমার দিকটাও তো বিবেচনা করা উচিত ছিলো । আমি যে বিপদে আছি খুব ! কিন্তু আম্মা সেটা কিভাবে জানবে ?

মুখে বালিশে চেপে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলাম । আর নিজের পাপকর্মের কথা মনে করে তওবা পড়ছিলাম । কালকের আগের দিন একটা থাই গ্লাস ভেঙেছিলাম, রীনা খালার গাছ থেকে পেয়ারা চুরি করেছিলাম, ঝলকের টিনের চালে ঢিলাইছিলাম !! এখন সব পাপগুলা চোখের সামনে ভেসে ওঠছে । তওবার দোয়া মনে পড়ছে না তাই শুধু “তওবা তওবা” বলে গালে থাপড়াচ্ছি । দুই গালই জ্বলতেছে খুব, কিন্তু কিছুই করার নাই ‌! পাপ মোচন করার চেষ্টা তো করতেই হবে ।

বালিশটা ভিজে একেবারে ক‍্যাতা ক‍্যাতা হয়ে গেছে ! আমার কান্না কিছুতেই থামছে না । হঠাৎ খটখট শব্দটা বন্ধ হয়ে গেলো । আমি বুঝে গেলাম, নিচের টা খাওয়া শেষ !! এবার আমার পালা । আমি আরো জোরে শব্দ করে কান্না করতে লাগলাম । আমার কান্নার শব্দ দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল ! হঠাৎ আমার কন্ঠকেও ছাপিয়ে মেও শব্দ শুনলাম । ডীম লাইটের আলোয় দেখলাম একটা বিড়াল আমার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে !

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত